|
|
(GMT+08:00)
2005-12-19 10:57:08
|
|
মুক্তাংগনের খেলাধুলা চীনাদের ভালোলাগে
cri
বহুতল ইমারতে বসবাসীকারী ও অফিসভবনে কর্মরত চীনারা ক্রমশই মুক্তাংগনের খেলাধুলার দিকে ঝুঁকে পড়ছেন । তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ গাড়ি চালিয়ে দুরদুরান্তে ভ্রমন করতে যান ,কেউ কেউ পর্বত আরোহণ করেন , কেউ কেউ বা খোলা মাঠে পায়ে হেটে নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপভোগ করেন । তাঁদের চাহিদা মেটানোর জন্য চীনের বিভিন্ন স্থানে মুক্তাংগনের ক্রীড়ার সরঞ্জামের দোকান খোলা হয়েছে এবং নানা ধরনের ক্রীড়া ক্লাব গঠিত হয়েছে । মিং জাং ইউয়ান পেইচিংয়ের একটি কোম্পানির কর্মচারী । তিনি নির্দিষ্ট সময়ের আগে তার উপরে ন্যস্ত একটি প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করেছেন ।তাই তিনি গাড়ি চালিয়ে তিন চার জন বন্ধুর সংগে মিলে পশ্চিম চীনে ভ্রমন করবেন বলে স্থির করেছেন । তিনি বলেছেন ,তিনি নিজের দেহমন হালকা করার যে এই উপায় গ্রহণ করেছেন তার একটি প্রধান কারণ হলো, তাঁর নিজের গাড়ি আছে ।তিনি বলেছেন :অনেক বছর হলো আমি শহরে বাস করছি । রোজ একই খাট ,একই চেয়ার ,একই অফিস রুম, এবং অতি পরিচিত মুখগুলো চোখে পড়ে , একঘেঁয়ে পরিবেশে মনে যে বিতৃঞ্চা জাগে তা স্বাভাবিক । মিং জাং সি আর আইয়ের সংবাদদাতাকে জানিয়েছেন , গাড়ি চালিয়ে ভ্রমন করার যথেষ্ট সুবিধা আছে । যেখানে বেড়াতে যেতে চাই সেখানেই বেড়াতে যাব । যেখানে ঘুমাতে চাই সেখানেই ঘুমাব ।গাড়িই আমার অবলম্বন । সব কিছুই নিজের ইচ্ছার উপরে নির্ভর করে । বিমান বা রেলগাড়িতে করে বাইরে গেলে সীমাবদ্ধতার নাগপাশে বাঁধা পড়তে হয় ।সময় থাকলে তিনি বছরে দু' তিন বার গাড়ি চালিয়ে ভ্রমন করবেন , কখনো কখনো পেইচিংয়ের আশেপাশে স্বল্প পাল্লার ,কখনো কখনো বা এবারের মত দীর্ঘপাল্লার । মিং জাং ইউয়ানের সংগে মাদাম জেন ইয়ুর সখ সম্পুর্ণ আলাদা ।মাদাম জেন ইয়ু পর্বত আরোহন করতে পছন্দ করেন ।কারন ,তিনি যে শহরে থাকেন তা সিচুয়ান প্রদেশে অবস্থিত ।সেখানে অনেক প্রসিদ্ধ পর্বত আছে । বড় বড় উত্সব উপলক্ষে চীনের বিভিন্ন স্থানের পর্বতারোহন অনুরাগীরা সিচুয়ান প্রদেশে যান । মাদাম জেন সি আর আইয়ের সংবাদদাতাকে জানিয়েছেন ,অতীতে তিনি একটি কার্ড কিনে নিয়মিত বায়ামবগারে গিয়ে শরীরচর্চা করতেন । কিন্তু এখন তার কৌতুহল গিরিশৈল আর পর্বত আরোহনের উপরে । তিনি বলেছেন অতীতে আমি দৌড়-যন্ত্রের উপরে দৌঁড়াতাম , ক্রীড়ার সরঞ্জাম ব্যবহার করে শরীর চর্চাও করতাম , সেটা নিরস বলে মাঝে মাঝে মনে হয় । পরে অপ্রত্যাশিতভাবে গিরিশৈল আরোহনের সুযোগ মিলল আমার । ক্রীড়ার পদ্ধতি, গায়ের জোর প্রয়োগ কিংবা পরিবেশের দিক থেকে বায়ামবগারের ভেতরে শরীর চর্চার চেয়ে গিরিশৈল আরোহন অনেক চিত্তাকর্ষক । টাকা নেই , সময় আছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন ছাত্রছাত্রীরা জন বিরল স্থানে হেঁটে বেড়াতে পছন্দ করেন । তাঁরা ঠাট্টা করে বলেন , এটা তাঁদের আত্মনিপীড়নের ভ্রমন ।তাঁরা কোনো পর্যটন দলের সদস্য হিসেবে ভ্রমন করতে চান না , তাঁর ভারী ব্যাগ পিঠে নিয়ে বিজন পাহাড়ী এলাকায় গিয়ে কৃষকদের বাড়িতে , অথবা তাঁবু খেটে রাত কাটান। সংগে নিয়ে যান সস্তা দামের খাবার । মিস লিন ওয়েই জিন জিয়াং সু প্রদেশের নানজিং শিক্ষক প্রশিক্ষণ বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের এজন ছাত্রী , গত বছর থেকে এই আত্মনিপীড়নমুলক ভ্রমনের উপরে তাঁর কৌতুহল জন্মেছে । তিনি বলেছেন :আমি মনে করি , এই ধরনের ভ্রমন বিপদ ও উত্তেজনায় পরিপুর্ণ , প্রতিবার আমাদের প্রচুর দৈহিক শক্তি ব্যয়িত হওয়ার পর দেহমন অতি হালকা মনে হয় । প্রকৃতির সান্নিধ্যে আমাদের যথেষ্ট উপকার হয়েছে । আকাশের নীচে ক্রীড়ামোদীদের সংখ্যা বৃদ্ধির সংগে সংগে চীনের কিছু কিছু শহরে মুক্তাংগনের ক্রীড়া সাজসরঞ্জামের দোকান একটার পর একটা খোলা হয়েছে । সি আর আইয়ের সংবাদদাতা পেইচিংয়ের তিন নম্বর রিং রোর্ডের পাশে একটি দোকানে ঢুকে দেখেছেন , তাকে তাকে পিঠে ঝোলানোর ব্যাগ , তাঁবু, স্লিপিং ব্যাগ , গরম কাপড় , আর্দ্রতা রোধক তোশক ও চুল্লি সাজানো । দোকানের একজন কর্মী সি আর আইয়ের সংবাদদাতাকে জানিয়েছেন ,এই দোকানে যে চার হাজার প্রকার পন্যদ্রব্য বিক্রি হয় তার অধিকাংশই চীনের তৈরী , কোনোকোন পন্যদ্রব্য ক্যানাডা , সুইজার্ল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া প্রভৃতি দেশ থেকে আমদানী করা হয়েছে । গত দু তিন বছরে চীনের অনেক স্থানে মুক্তাংগনের ক্রীড়া ক্লাবগুলো গঠিত হয়েছে । সাংহাইয়ের পশু পালক ক্রীড়া ক্লাব পূর্বচীনের বৃহততম ক্লাব । এই ক্লাব গঠনের পরবর্তী দু বছরে তার সদস্যসংখ্যা দশ হাজার ছাড়িয়ে গেছে । প্রতি সপ্তাহে এই ক্লাবের উদ্যোগে দু তিনবার ক্রীড়া তত্পরতার আয়োজন করা হয় । খোলা মাঠের শিবিরে রজনী যাপন ও পর্বতারোহন তার সদস্যদের কাছে সমাদৃত হয়েছে । এই ক্লাবের উদ্যোক্তা মি: লি ছুন কাং সি আর আইয়ের সংবাদদাতাকে জানিয়েছেন , তাঁর ক্লাবের সদ্স্যরা নানা মহলের নানা স্তরের । তবে তাঁরা সবাই চান , তাঁদের জীবন আরো বৈচিত্র্যময় হোক । তিনি বলেছেন : আমাদের সদস্যদের ক্লাবে যোগদানের উদ্দেশ্য এক নয় । তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ সবেমাত্র সাংহাইয়ে এসেছেন , তাঁরা মনে করেন ,এখানে এসে তাঁরা বন্ধুবান্ধব পাবেন ।কেউ কেউ কেবল শরীরকে সবল করে তোলার জন্য তাঁর ক্লাবের সদস্য হয়েছেন । সাংহাইয়ে কর্মরত মাদাম লিউ সিযাও ই নতুন জগত নামক ক্রীড়া ক্লাবের সদস্য । অতীতে তিনি ছিলেন স্বল্পভাষী ।এখন তিনি চঞ্চল ও মুক্ত মনা ।তিনি বলেছেন : আকাশের নীচে হাঁটতে দৌড়াতে মনের গ্লানি আপনাআপনিই মিলিয়ে যায় । পর্বতের কোলে আশ্রয় পেয়ে আমার আর কোনো চিন্তাভাবনা নেই । শহরের বাইরের ক্রীড়াচর্চা ক্লান্তিকর ঠিকই , কিন্তু আমার অনেক উপকারও হয়েছে । অন্যদের সংগে থাকতে থাকতে আমি সহযোগিতা চালাতে শিখেছি । আমার মন এখন উদার হয়েছে ।
|
|
|