টিকা দিয়ে সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ করাই হলো সংক্রামক রোগের বিরুদ্ধে সংগ্রামে মানব জাতির অর্জিত এক গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রকাশিত একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে, বর্তমানে প্রতি বছর সংক্রামক রোগে মৃত্যু হওয়া শিশুদের মধ্যে ২০ লক্ষেরও বেশী শিশু টিকা নেয়ার মাধ্যমে সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ করার যাবে।
প্রথমে আমাদের এক মৌলিক এই প্রশ্নের উত্তর জানা উচিত, তা হলো টিকা কি? পেইচিং রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্র কেন্দ্রের বিশেষজ্ঞ উ চিয়াং বলেছেন:
"সহজ করে বলা যায়, টিকাদান হলো সংক্রামক রোগ ডেকে আনা ভাইরাস ও গার্ম সংশোধন করে সৃষ্ট এক ধরণের জীবজাত দ্রব্যকে ওষুধ ও ইনচেকশের মাধ্যমে মানুষের দেহে ঢুকে দেয়া। এতে মানব দেহে এক রকম পদার্থের উদ্ভব হবে। এই পদার্থ মানুষকে সংক্রামক রোগ থেকে রক্ষ করতে পারে।"
১৭৯৬ সালে ব্রিটিশ ডাক্তার আবিষ্কার করেছেন যে, কাওপোক্স ইঞ্চিক করে বসন্ত প্রতিরোধ করা যায়। তাতে বিশ্বের প্রথম টিকা- বসন্ত টিকার উদ্ভব হয়। ১৯৮০ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বসন্ত রোগ পুরোপুরিই বিলুপ্ত হওয়ার কথা ঘোষণা করেছে। তা হলো টিকার মাধ্যমে মানব জাতির খতম করা প্রথম রোগ। চিকিত্সা বিজ্ঞানীদের প্রয়াসের মাধ্যমে অর্ধেক শতাব্দী ধরে মানুষের উপর প্রভাব বিস্তারকারী অধিকাংশ সংক্রামক রোগের বিরোদ্ধে টিকা সৃষ্টি করা হয়েছে। যেমন বসন্ত, কলেরা, প্লেগ, টুবারকিউলাসিস, হুপো-কাশি, ডিফথেরিয়া, ধনুষ্টংকার, পোলিও, হাম ইত্যাদি।
সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ ক্ষেত্রে টিকার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ বলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ টিকাদানের উপরে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে এসেছে। চীনে টিকা দেয়ার কাজ পশ্চিমা দেশগুলোর চেয়ে দেরী হলেও অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে চীন টিকা দেয়ার কাজ নিয়মমাফিক উন্নয়নের পথে পদার্পণ করেছে। বিশেষ করে শিশুদের মধ্যে সুপরিকল্পিত টিকা দেয়ার কাজ পুরোদামে চালাচ্ছি।
সুপরিকল্পিত টিকা দেয়ার কাজ হলো সরকারের পুঁজিতে সাত বছর ও তার কম বয়সের শিশুদের জন্য পাঁচ রকম টিকা দেয়া। এই পাঁচটি টিকা হলো পলিওমিলিটিস টিকা, মিসিলস টিকা, হেপাটিটিস টিকা, এভাসিনেম কালমিট-গুরিনি টিকা এবং চিনকফ, ডিপথেরিয়া ও লোকচোর প্রতিরোধের যৌথ টিকা। বাবা মা শুধু অল্প পরিসেবামূলক ফি দিয়ে তাদের শিশুদের জন্যে এইসব টিকা নিতে পারবেন। বিংশ শতাব্দীর সত্তরের দশকের শেষ দিক থেকে চীনে এই কাজ শুরু করার পর উল্লেখ্যযোগ্য সাফল্য অর্জিত হয়েছে। চীনা শিশুদের ইমিউনিটি শক্তি ক্রমাগত বেড়েছে। চীনের বিখ্যাত শিশু ডাক্তার হু ইয়া মেই বলেছেন:
"২০০৩ সালে সার্সের প্রচলনের সময়ে চীনা শিশুদের মৃত্যু হার ছিলো শূন্য। তার পেছনে ছিলো শিশুর জন্যে চীনের টিকাদান প্রকল্পের অবদান। শিশুদের নেয়া টিকাগুলো সার্সের ভাইরাসের সঙ্গে সাদৃশ্য আছে। তাই টিকাগুলো সার্স রোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে কিছু ভূমিকা পালন করেছে। তাতে শিশুদের সার্স রোগে আক্রান্ত হওয়ার হার খুব কম।"
জানা গেছে, ১৫ বছর আগে চীনা শিশুদের টিকা নেয়ার হার ৮৫ শতাংশ হয়েছে। তা ইউনিসেফ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও চীনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বীকৃতি পেয়েছে। সুপরিকল্পিত টিকাদানের কাজ ব্যাপক পর্যায়ে চালানোর সঙ্গে সঙ্গে কিছু সংক্রামক রোগ খুব কম দেখা যায়। যেমন মিসিলস বিংশ শতাব্দীর ষাটের দশকের গোড়ার দিকের প্রতি লক্ষ মানুষে ২ হাজার থেকে প্রতি লক্ষ মানুষে ১০ জনে নেমে এসেছে। ১৯৬০ সালে বসন্ত রোগের বিলুপ্তির পর ২০০০ সালে পলিমিলিটিস রোগও চীনে বিলুপ্ত হয়েছে। ওই পাঁচটি টিকা নেয়া ছাড়া, চীনের বাবামারা নিজেদের খরচে শিশুদের জন্য অন্যান্য টিকাও নিতে পারবেন। তাছাড়া চীনের বয়স্ক লোকেরাও নিজেদের চাহিদা অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট টিকা নিতে পারেন। যেমন ফ্লু'র টিকা ইত্যাদি। যারা কুকুরের কামড়া পান তারা কানিন ম্যাডনিস টিকা নিতে পারেন।
মানুষকে সংক্রামক রোগ থেকে রক্ষা করার জন্য চীনের চিকিত্সা বৈজ্ঞানিকরা নতুন টিকা নিয়ে গবেষণা করছেন। নিখিল চীন রোগ প্রতিরোধ চিকিত্সা সোসাইটির বিশেষজ্ঞ হো সুং বলেছেন:
"রোগ প্রতিরোধের কিছু টিকার গবেষণার কাজ এখনো চলছে। যেমন এইডজের টিকা। তাছাড়া আমরা কিছু টিউমার ও ক্রোনিক রোগের টিকার গবেষণার কাজও চলছে।"
|