
শ্রোতাবন্ধুরা প্রতি বছরের নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময় মান জাতির লোকেরা পেনচিন নামে একটি বিশেষ উত্সব উদযাপন করে থাকেন । এই উত্সবের আগে আর পরে চীনের বিভিন্ন অঞ্চলের মান জাতির লোকেরা প্রীতি- সম্মিলনী , প্রদর্শনী , সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ইত্যাদি তত্পরতার আয়োজন করেন । সম্প্রতি চীনের রাজধানী পেইচিংয়ে মান জাতির বেশ কিছু লোক এবছরের পেনচিন উত্সব উপলক্ষে ইন্টারনেটের মাধ্যমে একটি বিশেষ প্রীতি- সম্মিলনীর আয়োজন করেছেন । সংবাদদাতাও মান জাতির লোক । তিনি এই প্রীতি- সম্মিলনীতে অংশ নিয়েছেন ।
সৌভাগ্যবান মান জাতি নামে একটি ওয়েবসাইটের উদ্যোগে এই প্রীতি- সম্মিলনীর আয়োজন করা হয় । তা অনুষ্ঠিত হয় উত্সবের আগের দিনে । তাদের প্রীতি-সম্মিলনীর স্থান পেইচিংয়ের কেন্দ্রস্থল-থিয়েন আন মেন মহাচত্বর । তখন মান জাতির নেট নাগরিকরা মান জাতির ঐতিহ্যিক লম্বা পোষাক আর গেঞ্জি পরেন । এই বিস্ময়কর দৃশ্য পথচারীদের আকৃষ্ট করে । মান জাতির এই সব নেট নাগরিক দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এসেছেন । উত্সব ছাড়া অন্যান্য দিনে তাদের পরণে মা ন জাতির ঐতিহ্যিক লম্বা পোষাক আর গেঞ্জি খুব কম দেখা যায় ।
পেনচিন মান জাতির একটি বিশেষ উত্সব । এই জাতির নামের সংগে তা সম্পর্কিত । এই প্রীতি-সম্মিলনীতে অংশ নিতে আসা মান জাতির নেট নাগরিক মিঃ সু থাও এই প্রসংগে বলেছেন ,
পৃথিবীতে মান জাতি এমন একমাত্র জাতি , যে জাতি একটি প্রশাসনিক আদেশের মাধ্যমে সৃষ্টি হয় । ১৬৩৫ সালে ছিং রাজবংশের সম্রাটের একটি আদেশনামা অনুযায়ী , ন্যুই চেন জাতির পরিবর্তে মান জাতি নাম রাখা হয় ।
তার পর মান জাতির লোকেরা তার জাতির নাম বদলানোর দিনকে পেনচেন উত্সব ডাকেন । মান জাতির ভাষায় পেনচেন অর্থ নবজন্ম আর সমৃদ্ধি । তা জাতি ও দেশের সমৃদ্ধির পরিচায়ক । বর্তমানে মান জাতির লোকসংখ্যা ১ কোটিরও বেশি হয়েছে । হান জাতি আর চুয়াং জাতির পর তা চীনের তৃতীয় বড় জাতিতে পরিণত হয়েছে ।
মান জাতি চীনের ইতিহাসের সর্বশেষ সামন্ততান্ত্রিক রাজবংশ-ছিং রাজবংশ প্রতিষ্ঠিত করেছিল । চীনে দু'শোরও বেশি বছর স্থায়ী রাজত্বকালে মান জাতি স্থাপত্য , সাহিত্য , চিত্রাঙ্কন, পোষাক , ভাষা প্রভৃতি ক্ষেত্রে অসাধারণ অবদান রেখেছে এবং ঐশ্বর্যময় সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার রেখে গেছে । এই প্রীতি- সম্মিলনীতে অংশ নিতে আসা বেশির ভাগ নেট নাগরিক অল্পবয়সী। তারা মান জাতির সংস্কৃতিকে ভালবাসেন এবং এই প্রীতি-সম্মিলনীকে মান জাতির সংস্কৃতির রক্ষা ও উন্নয়ন এর একটি প্রধান বিষয় বলে ধার্য করেন । মিঃ লিউ ফেই সৌভাগ্যবান মান জাতি নামে একটি ওয়েবসাইটের প্রধান । এই প্রীতি-সম্মিলনীর প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে তিনি মান জাতির সংস্কৃতি প্রসংগে বলেছেন ,
মান জাতির সংস্কৃতি বহু দিক থেকে আমাদের মাধ্যমে উত্তরাধিকার সূত্রে গ্রহণ আর সম্প্রসারিত করতে হবে । চীনের সংখ্যালঘুজাতিগুলোর মধ্যে মান জাতির নিজের ভাষা ও নিজের লিখিত ভাষা আছে । এটা খুব দুর্লভ । মান জাতির ছিফাও নামে ঐতিহ্যিক পোষাকও স্ববৈশিষ্ট্যসম্পন্ন । বর্তমান যুগে আমাদের ছিফাও পোষাক বজায় রাখতে হবে এবং আধুনিক জীবনযাপনের সংগে খাপ খাওয়ানোর জন্য ডিজাইন আর রংয়ের দিক থেকে তাকে সংস্কার করতে হবে ।
দীর্ঘকাল ধরে হান জাতির লোকদের সংগে এক সাথে থাকার দরুণ এখন মান জাতির বেশির ভাগ লোক মান ভাষা বলতে পারছেন না । তাদের মধ্যে হান জাতির ভাষা আর লিখিত ভাষা প্রচলিত । আচার ব্যবহারের দিকে হান জাতির তুলনায় তাদের কোনো পার্থক্য নেই । সুতরাং তারা ধীরে ধীরে নিজের জাতির বহু চালচলন আর রীতি-নীতি ভুলে গেছেন । মান জাতির বেশ কিছু শ্রেষ্ঠ সংস্কৃতিও সংরক্ষণ করতে হবে । উত্তর চীনের হোপেই প্রদেশের পাওতিং শহর থেকে আসা নেট নাগরিক ইরকানচ্যুলো চাওওয়ে বলেছেন ,
আমি ছোট বেলা থেকেই ইতিহাসের ব্যাপারে কৌতূহলী । ইতিহাস অধ্যয়ণের মাধ্যমে আমার মান জাতির সংস্কৃতি সম্পর্কিত আমার জ্ঞান বেশি বেড়েছে ।
ইরকানচ্যুলো চাওওয়ে তার মার বানান একটি জাতীয় পোষাক পরেন । তিনি বলেছেন , যখন জাতীয় উত্সব পালিত হয় , তখন তিনি এই পোষাক পরেন । সবাই তার এই জাতীয় পোষাক খুব পছন্দ করেন ।
মেরকেনচ্যুলো ইউননিন পেইচিংয়ের মান জাতির একজন মেয়ে । মান জাতির ইতিহাস আর সংস্কৃতিতে তিনি খুব পারদর্শী । তিনি বলেছেন , নেট নাগরিকদের এই ধরণের প্রীতি-সম্মিলনী তার খুব ভাল লেগেছে । এতে পরস্পরের আদান প্রদানের জন্য একটি সুযোগ যুগানো হয়েছে ।
আজ এই প্রীতি-সম্মিলনীতে সকলের আদান প্রদানের জন্য সুবিধা দেয়া হয়েছে । মান জাতি হোক , মঙ্গোলিয় জাতি হোক আর হান জাতি হোক না কেন , কোনো ব্যবধান নেই । পরে আমি পুরানো পেইচিং আর মান জাতি সম্বন্ধে আরো বেশি অধ্যয়ন করবো । মান জাতির সংগে এই সব তথ্যের সম্পর্ক আছে।
যারা এই প্রীতি-সম্মিলনীতে অংশ নিয়েছেন , তাদের মধ্যে বেশির ভাগ লোক ইন্টারনেটের মাধ্যমে এই সম্মিলনীর খবর জেনেছেন । এর আগে যদিও তাদের কখনো দেখা হয় নি , কিন্তু প্রীতি-সম্মিলনীতে তারা পরিচিত লোকের মতো খুব আন্তরিকতা বোধ করেছেন । উত্তর চীনের উপকূলীয় থিয়েন চিন শহর থেকে আসা মিঃ গুয়ারজা ইহুই বলেছেন ,
এখানে আসার পর আমি নিজের বাসায় ফিরে আসার এক ধরণের আত্মীয়তা বোধ করেছি । যদিও আমি শুধু মুষ্টিমেয় কয়েকজনকে চিনি , কিন্তু আমাদের অভিন্ন বৈশিষ্ট্য আর জাতীয় পরিবেশের প্রভাবে আমি মুগ্ধ হয়েছি । আমি এখানকার প্রত্যেককে ভালবাসি ।
যারা এই প্রীতি-সম্মিলনীতে অংশ নিয়েছেন , তাদের মধ্যে মান জাতির বেশ কিছু বিশেষজ্ঞ ও পন্ডিত আর ছিং রাজবংশের কিছু বংশধরও ছিলেন । মাদাম আইসিংচ্যুলো চিনসে ছিং রাজবংশের বংশধর । তার বাবা চীনের মান জাতির একজন প্রসিদ্ধ পন্ডিত ছিলেন । তিনি নিজেও বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রফেসার । তিনি বলেছেন ,
আমি শুনেছি , এখন মান জাতির বহু অল্পবয়সীরা মান ভাষা অধ্যয়ণ করছেন । এই খবর জেনে আমি খুব খুশি হয়েছি । আশা করি , মান জাতির সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য উত্তরাধিকার সূত্রে বয়ে নিয়ে যাওয়া হবে এবং তা আরো সম্প্রসারিত হবে ।
|