v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2005-12-16 14:46:07    
ক্ষুদ্র ঋণে চীনের মঙ্গোলীয়জাতির নারীদের জীবনযাত্রার পরিবর্তন হয়েছে

cri
    মঙ্গোলীয় জাতি উত্তর চীনের এক সংখ্যালঘুজাতি । দীর্ঘকাল ধরে পশুপালনের যাযাবর জীবনযাপন করেছে বলে ঘর সাজানো, কাপড় ধোয়া, খাবার তৈরী করা আর বাচ্চাদের লালনপালন করা অধিকাংশ মঙ্গোলীয় জাতি নারীর জীবনযাপনের প্রধান বিষয় । তারা বাইরের লোকের সঙ্গে কম যোগাযোগ করেন । সাত বছর আগে জাতিসংঘ উন্নয়ন ও পরিকল্পনা পরিষদ অন্তঃমঙ্গোলিয়া অঞ্চলে স্থানীয় নারীরা যাতে ধনী হতে পারেন তার জন্যে ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্প চালু করেছে ।

    আলাতানছিমুগে পূর্ব অন্তঃমঙ্গলিয়ার বালিন ইউছি জেলার একজন অন্তঃমঙ্গোলীয় মহিলা । তাদের এলাকায় তিনিই সবচেয়ে আগে ক্ষুদ্রঋণ গ্রহণ করেছেন । তাঁর উঠানে প্রবেশ করলে তিনটি ইটের তৈরী বাড়িঘর আমাদের চোখে পড়ে । উঠানে বসানো সৌর কুকার এই পরিষ্কার উঠানের আধুনিকায়নের নিদর্শন ।

    ঘরটির বড় বৈঠকখানায় হাল্কা রঙের চামড়া সোফা বসানো আছে । অতিথিরা সোফায় বসলে ঘরটির মালিক আলাতানছিমুগে সুগন্ধ দুধের চা ও দুধজাত খাবার খাওয়ান । তিনি জানান , এই সব খাবার তিনি নিজেই বানিয়েছেন । সাধারণ সময় তিনি দুধজাত দ্রব্য বিক্রয়ের মাধ্যমে উপার্জন করেন । ক্ষুদ্রঋণের সাহায্যেইতিনি দুধজাত খাবার তৈরী করার কৌশল আয়ত্ত করেছেন এবং এর উপর নির্ভর করেই স্বচ্ছল জীবনযাপন করতে সক্ষম হয়েছেন ।

    আলাতানছিমুগে বলেছেন , ১৯৯৮ সালে তিনি ক্ষুদ্র ঋন প্রকল্পে যোগ দিয়েছেন । প্রকল্পটি স্থানীয় নারী ফেডারেশন ও জাতিসংঘ উন্নয়ন ও পরিকল্পনা পরিষদের মিলিত উদ্যোগে চালু হয় । এই ক্ষুদ্র ঋণ কেবল স্থানীয় নারীদের দেয়া হয় এবং প্রত্যেক বছরে দশ হাজার রেনমিনপি দেয়া হয় । বিগত সাত বছর ধরে তিনি এই ঋণ দিয়ে চারা কিনে মরুভূমিতে গাছ লাগিয়েছেন । তাছাড়া তিনি এই ঋণ দিয়ে জাব-ঘাঁটি স্থাপন করেছেন এবং গরু ও ভেড়াকে দ্রুত মোটা করানোর ধারাবাহিক কলাকৌশলআয়ত্ত করেছেন । তিনি বলেছেন, ক্ষুদ্র ঋণ প্রকল্পটিতে তিনি সত্যিই উপকার পেয়েছেন । তিনি বলেছেন, আমাদের সবচেয়ে বড় উপকার হয়েছে তা হল নারীদের মর্যাদাও অবস্থান উন্নত হয়েছে । প্রকল্পটিতে অংশ নেয়ার পর আমার অর্থনৈতিক জ্ঞানবোধ বেড়েছে । পরিবার থেকে বেরিয়ে বাইরের মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করে আমি অত্যন্ত আত্ম-বিশ্বাসী হয়েছি । আমি পরিবার লালনপালন করতে সক্ষম হয়েছি ।

    আলাতানছিমুগের উত্সাহে গ্রামের নারী বোনেরাও ক্ষুদ্র ঋণ প্রকল্পটিতে অংশ নিয়েছেন । তিনি বর্ণনা করেছেন , ক্ষুদ্র ঋণের মাধ্যমে তাঁর মতো অন্তঃমঙ্গোলীয় নারীরা বাড়ি থেকে বেরিয়ে বাজার প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন । তাদের অর্থনৈতিক জ্ঞান বেড়েছে । নারী বোনেরা ঋণ নিয়ে বীজ , ছাগল ছানা প্রভৃতি কিনে চাষ বা গবাদিপশু পালন করেন বা হস্তশিল্প বা দুধজাত খাবার বানান এবং বিক্রয়ের মাধ্যমে প্রত্যেক মাসে ঋণ পরিশোধ করেন । বছর শেষে ঋণ পরিশোধের পর প্রত্যেক পরিবার দশ হাজার রেন মিনপি পায় । যার ফলে অনেক পরিবার দারিদ্র্য থেকে মুক্তি পেয়েছে ।

    আরও ভালভাবে ক্ষুদ্র ঋণ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করার জন্যে এই অঞ্চলে বিশেষভাবে এক সংস্থা গঠন করা হয়েছে । সংস্থাটির নাম নারী টেকসই উন্নয়ন সমিতি । ক্ষুদ্র ঋণ যাচাই ও বিতরণ করা সমিতিটির প্রধান কাজ । সমিতির দায়িত্বশীল ব্যক্তি মাদাম সাউলা বলেছেন , আমাদের সমিতির লক্ষ্য হল অর্থ ,তথ্য , আইন এবং স্বাস্থ্য রক্ষা দিক থেকে নারীদের সাহায্য দান করা । পারিবারিক উত্পাদন এখানকার নারীদের প্রধান কাজ । পারিবারিক শ্রমের বেশীর ভাগ নারীরা বহন করেন । আগে নারীদের অবদান স্বীকৃতি পেত না এবং নারীদের শিক্ষা লাভের সুযোগ কম ছিল । আমাদের চালানো প্রকল্প নারীদের গুণমান ও মর্যাদাউন্নত করার জন্যে সহায়ক হবে ।

    জানা গেছে , ২০০৪ সাল নাগাদ সমিতিটি মোট দেড় কোটি রেনমিনপি মূল্যের ঋণ বিতরণ করেছে । এ থেকে ৩৬০০জন নারী উপকৃত হয়েছেন । প্রত্যেক পরিবারের উপার্জন বছরে গড়ে ১৫০০ রেনমিনপি বৃদ্ধি পায় । ৭০ শতাংশ পরিবারের বার্ষিক আয় স্থানীয় দারিদ্র্য সীমারেখা ছাড়িয়ে গেছে ।

    ক্ষুদ্র ঋণে সবাইর এত বেশী উপকার হয়েছে দেখে মাদাম আলাতানছিমুগে আরও কিছু কল্যাণকর কাজ করতে চান । তিনি অনেক প্রচেষ্টা চালানোর পর অন্তঃমঙ্গোলিয়া স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল সরকারের কাছ থেকে দুলক্ষ রেনমিনপি ঋণ পান । যাতে স্কুলচ্যুত মেয়েরা অব্যাহতভাবে শিক্ষা লাভ করতে পারে এবং গোড়াথেকে নারীদের গুণমান উন্নতি হতে পারে তার জন্যে তিনি এই ঋণ দিয়ে এক " আশা প্রাথমিক স্কুল" প্রতিষ্ঠা করতে চান ।

    আলাতানমুছিগের শ্রেষ্ঠ আচরণের দরুণ ২০০৪ সালের অক্টোবর মাসে ক্ষুদ্র ঋণের সূফলভোগীহিসেবে তিনি জাতিসংঘ মহা সচিব কফি আনান ও তার স্ত্রীর সাক্ষাত পেয়েছেন । এ অভিজ্ঞতা স্মরণ করে তিনি গৌরবের সঙ্গে বলেছেন, গত বছরের ১১ অক্টোবর আমি পেইচিং এসে চীনস্থ জাতিসংঘ মিশনের ২৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপনী অভ্যর্থনানুষ্ঠানে অংশ নিয়েছি । ক্ষুদ্র ঋণের সূফলভোগীপশুপালকের নারী প্রতিনিধি হিসেবে আমি জাতিসংঘ মহাসচিব কফি আনানের সাক্ষাত পেয়েছি । আমি মঞ্চে ভাষণ দিয়েছি । আমি মঙ্গোলীয় জাতির নারীদের পক্ষ থেকে ক্ষুদ্র ঋণে নিজের উপকৃত হবার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছি । আমি মহাসচিব আনান ও তার স্ত্রীর সঙ্গে করমর্দন করেছি , তাদের সঙ্গে ছবি তুলেছি । আমি অত্যন্ত গর্বিত।

    আলাতানছিমুগে অন্য লোককে সাহায্য করতে আগ্রহীএকজন মানুষের সঙ্গে সঙ্গে তিনি একজন ভাল স্ত্রী ও স্নেহময়ী মা-ও । তার দুটো মেয়ে এ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে । এটা তার কাছে এক অত্যন্ত খুশীর বিষয় । অন্তঃমঙ্গোলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য বিভাগে অধ্যয়নরত বড় মেয়ে স্চছন বলেছেন , মাকে আমি শ্রদ্ধা ও সম্মান করি । তিনি স্নেহময়ীও মায়ামমতায়পূর্ণ। তিনি আশা করেন যে আমি একটি ভাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারি । আমি মার কাজকে সমর্থন করি । মা তার কাজ ভালভাবে চালাতে পারেন বলে আমি আশা করি । আমি চিরকালই মাকে সমর্থন করি ।