v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2005-12-14 14:54:26    
নারী সাংবাদিক ফান ছুন কো

cri
    কিছু আগে চীনের জাতীয় যাদু ঘরে ' চেন হোর নৌযাত্রার লাইন ' নামে একটি আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে , এই প্রদশর্নীতে চীনের নারী সাংবাদিক ফান ছুন কো ছয় শ' বছর আগে চীনের বিখ্যাত নাবিক চেহোর নৌযাত্রার লাইন অনুসরণ করে তোলা প্রচুর মূল্যবান ছবি দেখানো হয়েছে ।

    জাতীয় যাদুঘরের প্রদর্শনী কক্ষে প্রবেশ করে সি আর আইয়ের নিজস্ব সংবাদদাতা দেখেছেন দেওয়ালে ফান ছুন কোর তোলা অনেক ছবি । এই সব ছবির মধ্যে আছে ইন্দোনেশিয়ার সান পাও মন্দিরের ছবি । সান পাও হলো নাবিক চেন হোর আসল নাম । নৌযাত্রার সময় তিনি ইন্দোনেশিয়া সফর করেছিলেন , স্থানীয় অধিবাসীরা তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য লাল রংয়ের ইট দিয়ে এই মন্দির তৈরী করেছেন । আরেকটি ছবি হলো ইরানের কিশ দ্বীপের ছবি , চেন হো নৌযাত্রার সময় এই দ্বীপে অবতরণ করেছিলেন । ছবিতে শান্ত সমুদ্রের পিছনে সুর্যাস্তের সুন্দর লাল মেঘ । আরেকটি ছবি ভারতের কোছিন দ্বীপে তোলা হয়েছে , ছবিতে জেলেরা চীনের তৈরী জাল দিয়ে মাছ শিকার করছেন। ফান ছুন কো আমাদের সংবাদদাতাকে বলেছেন , চীনের প্রাচীন নাবিক চেন হোর নৌযাত্রার সাংস্কৃতিক আদান প্রদান ও নৌপথের বিভিন্ন দেশের প্রাকৃতিক দৃশ্য ও জীবনযাত্রা প্রতিফলনের জন্য আমি চেন হোর নৌপথ অনুসরণ করে নৌযাত্রা করেছি । এই বছর চেন হোর নৌযাত্রার ৬ শ' তম বার্ষিকী , এর স্মৃতিচারণের জন্য চীনে নানা ধরনের কর্মসূচিনেয়া হয়েছে , এই আলোকচিত্র প্রদর্শনী এই সব কর্মসূচির অন্যতম ।

    নারী সাংবাদিক ফান ছুন কোর বয়স ৪৬ বছর । বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হওয়ার পর তিনি সাংবাদিক হিসেবে কাজে যোগ দেন । তিনি বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে ছবি তুলতে ও সাক্ষাত্কার নিতে পছন্দ করেন । তিনি সাইকেল চালিয়ে চীনের জনবিরল পশ্চিমাঞ্চলে গিয়েছিলেন এবং ট্রাকে চড়ে তিব্বতের চার হাজার মিটার উচু তুষার পাহাড়ে গিয়েছিলেন । তার পক্ষে সবচেয়ে স্মরণীয় যাত্রা হলো ১৯৯৮ সালে চীনের পর্যবেক্ষক দলের সঙ্গে তার দক্ষিণ মেরুযাত্রা । তিনি বলেছেন , দক্ষিণ মেরু যাত্রা অবিস্মরণীয় । এই অভিজ্ঞতার আলোকে আমি সাহসের সঙ্গে এ বছরের চেন হোর নৌযাত্রার পথ পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব গ্রহণ করেছি । দক্ষিণ মেরু যাত্রার সময় আমাদের জাহাজ ড্রেইক প্রণালী অতিক্রম করার সময় সমুদ্রের ঢেউ ২০ মিটার উচু ছিল , এই ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা আমাকে ছয় শ' বছর আগে চেন হোর নৌযাত্রার কষ্ট ও অসুবিধা উপলব্ধি করতে সাহায্য করেছে এবং চেন হো ও তার সফরসঙ্গীদের প্রতি আমার শ্রদ্ধা বাড়িয়েছে ।

    ফান ছুন কো উ হান শহরের উ হান সান্ধ্য পত্রিকার একজন সাংবাদিক । মধ্য চীনে অবস্থিত উ হান শহর চীনের ইয়াংসি নদীর মধ্য ও নিম্ন অববাহিকা অঞ্চলের নৌপরিবহণ কেন্দ্র । ফান ছুন কো নৌ যাত্রা সম্পর্কিত প্রতিবেদন লিখতে চান । এই বছর চেন হোর বিদেশ নৌযাত্রার ছয় শ'তম বার্ষিকী , তাই ফান ছু কো প্রাচীন চীনের বিখ্যাত নাবিক চেন হো সম্পর্কিত প্রতিবেদন লেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন । তিনি বলেছেন , চেন হোর সাত বার বিদেশ নৌযাত্রা চীনের ইতিহাসের এক বিরাট ঘটনা । তার আকার পাশ্চাত্য দেশগুলোর নাবিকদের নৌযাত্রার চেয়ে বড় , সময়কাল তাদের নৌযাত্রার চেয়ে আগে । চেন হোর নৌযাত্রার পুরাকীর্তিগুলো ভালো করে সংগ্রহ করা হয় নি বলে উ হানের এই পত্রিকা চেন হোর নৌযাত্রা পথ পর্যবেক্ষনের মাধ্যমে চীনের ইতিহাসের এই নৌযাত্রা সম্পর্কে আরো বেশী তথ্য সংগ্রহের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ।

    ২০০০ সাল থেকে ফান ছুন কো একা তার কষ্টকর যাত্রা শুরু করেন। তিনি চেন হোর নৌযাত্রার পথ বেয়ে ভারত মহাসাগর অতিক্রম করে দু বছর সময় এশিয়া ও আফ্রিকার ১৮টি দেশ সফর করেছেন । তিনি একটি দেশে পৌঁছেই চেন হোর নৌযাত্রার খোজখবর নেন । কাম্বোডিয়ায় ফান ছুন কো আবিষ্কার করেন , চেন হো ও তার সঙ্গীদের ডাইরীতে লেখা তথ্যগুলো ওয়াট মন্দিরের অবস্থার সংগে সংগতিপূর্ণ । ইন্দোনেশিয়ায় তিনি চেন হোর নৌযাত্রার সময় ব্যবহার করা লোহার নোঙ্গর দেখেছেন । শ্রীলংকায় তিনি চেন হোর রেখে যাওয়া একটি ফলক দেখেছেন । তিনি চেন হোর সফর করা এই সব দেশ ঘুরে ঘুরে দেখার সঙ্গে সঙ্গে প্রবন্ধ লেখেন এবং ছবি তোলেন । প্রবন্ধগুলো ও ছবিগুলো তিনি সঙ্গে সঙ্গে চীনে পাঠান। দুই বছরে তিনি মোট দুই লক্ষ চীনা অক্ষরের প্রবন্ধ , সাক্ষাত্কার ভিত্তিক প্রতিবেদন ও প্রায় দশ হাজারটি ছবি পাঠিয়েছেন ।

    দুই বছরে অনবরত কাজ করার দরুণ ফান ছুন কো বেশ কয়েকবার অসুস্থ হয়েছিলেন । ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ১১ সেপ্টেম্বর হামলার পর বিভিন্ন দেশের পরিস্থিতি উত্তেজনামুখর হয়েছিল , এটা ফান ছুন কোর ছবি তোলা ও সাক্ষাত্কার নেয়ার পক্ষে এক বড় অসুবিধা সৃষ্টি করে । কিন্তু ফান ছুন কো তার কাজ বন্ধ করেন নি । তিনি মনে করেন ,একজন সাংবাদিক হিসেবে বাধাবিঘ্ন ও অসুবিধার সম্মুখীন হলেও কর্তব্য সম্পন্ন করার চেষ্টা করতে হবে । তিনি বলেছেন , আমি আশা করি , ইতিহাসের কোনো বিশেষ ঘটনার স্মৃতিচারণ শুধু এই ঘটনার বার্ষিকী উদযাপন বা প্রচার অভিযানের সময়ে সীমাবদ্ধ হবে না। চেন হোর নৌযাত্রার পথ বেয়ে সাক্ষাত্কার নেয়া ও ছবি তোলা এক কষ্টসাধ্য কাজ , কিন্তু ফান ছুন কো এই ধরনের কাজ করতে পছন্দ করেন। তিনি বলেছেন , বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে সাক্ষাত্কার নেয়া ও প্রবন্ধ লেখা তার জীবনের একটি কায়দায় পরিণত হয়েছে । তার বাবা মা দুজনই চিত্রশিল্পী , ছবি আকাঁর জন্য তারা প্রায়ই নানা জায়গায় বেড়াতে যান । ছোট বেলা থেকেই ফান ছুন কো এই আশা পোষন করেন যে বড় হয়ে তিনিও বিভিন্ন জায়গার মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করতে পারেন এবং বিভিন্ন স্থানের অধিবাসীদের জীবন সম্পর্কেজানতে পারেন । ফান ছুন কো মনে করেন , পুরুষ সাংবাদিকের তুলনায় নারী সাংবাদিকের প্রাধান্যআছে। তিনি বলেছেন, নারী সাংবাদিকদের সহানুভূতি বেশী , তাই তারা অন্যের অনুভূতি আরো ভালোভাবে উপলব্ধি করতে পারেন । তা ছাড়া , নারী সাংবাদিকের পর্যবেক্ষণ পুরুষের চেয়ে সুক্ষ এবং তারা পুরুষের চেয়ে সহজেই অন্যান্য ব্যক্তির সঙ্গে মেলামেশা করতে পারেন ।

    ফান ছুন কোর নিরলস প্রচেষ্টা সফল হয়েছে । তার লেখা প্রবন্ধগুলো একাধিকবার পুরস্কার পেয়েছে । তিনি চীনের সাংবাদিক মহলের সর্বোচ্চ পুরস্কার-- ফান ছান চিয়ান সাংবাদিক পুরষ্কার পেয়েছেন। তিনি বলেছেন , পুরষ্কার পাওয়া তার প্রধান লক্ষ্য নয় , অনবরত নিজের কর্মদক্ষতা বাড়ানোই আমার আকাঙ্খা ।