v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2005-12-13 14:54:14    
গুই ইয়াং শহরের শিশু নৃত্যগীত দল

cri
    দক্ষিণ পশ্চিম চীনের গুইচৌ প্রদেশের রাজধানী গুই ইয়াং শহরের শিশুরা গভীর আগ্রহে নাচগান শিখছে । শিশু শিল্পীদের পরিবেশিত জাতীয় বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন সাংস্কৃতি অনুষ্ঠান দেশবিদেশের অতিথিদের ভূয়সী প্রশংসা পেয়েছে । শিশুদের নৃত্যগীত দল গুই ইয়াং শহরের নেম-কার্ডে পরিণত হয়েছে ।

    চলতি বছরের জুন মাসের একদিন । সি-আর- আইয়ের সংবাদদাতা ছোট ফুল নামে গুই ইয়াং শহরের একটি শিশু নৃত্যগীত দলের সাক্ষাত্কার নিতে গেলেন। মহড়া চালানোর প্রেক্ষাগৃহে ইয়ু য়ু জু নামে একটি মেয়ে সি-আর-আইয়ের সংবাদদাতাকে জানিয়েছে , তাদের পরিবেশিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সর্বত্রই সমাদৃত হয়েছে । সে ও তার সাথীরা চীনের অনেক শহর ও কয়েকটি দেশ ও অঞ্চলে অনুষ্ঠান পরিবেশন করেছে ।

    ইয়ু য়ু জু বলেছে , আমরা অনেক জায়গায় গিয়ে নাচগান পরিবেশন করেছি এবং প্রচুর আনন্দ পেয়েছি । কিছুদিন পর আমরা হংকংয়ে গিয়ে সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নেব ।আমরা যে কত পুরস্কার পেয়েছি তার ইয়াত্তা নেই । বিশ্ব অলিম্পিক সমবেত সংগীত প্রতিযোগিতায় আমরা ব্রোঞ্জ পদক পেয়েছি ।

    ছোট ফুল -শিশু নৃত্যগীত দলের মত আরো অনেক শিশু নৃত্যসংগীত দল গুইইয়াং শহরে আছে ।রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে চোখে পড়বে নানা ধরনের শিশু নৃত্যগীত দলের সাইনবোর্ড । কাঁচের শোকেসে দেখা যায় শিশু শিল্পীদের ছবি ও তাদের জয় করা পুরস্কার-কাপ । গুই চৌ প্রদেশের পল্লীগ্রাম থেকে পেইচিংয়ের প্রেক্ষাগৃহ পর্যন্ত , ফ্রান্সের মাটা আন্তর্জাতিক শিশু শিল্প উত্সব থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানী, ইটালী প্রভৃতি দেশের আয়োজিত প্রাচ্যের শিশু শিল্পকলা উত্সব পর্যন্ত তারা দেশ-বিদেশের দর্শকদের জন্য চিত্তাকর্ষক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশেন করেছে । গত বিশ বছরে একমাত্র শিশু প্রাসাদের শিল্প দলই এক হাজার দু শোটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছে ।

    গুই ইয়াং শহরের ছোটো শিল্পীদের পরিবেশিত অনুষ্ঠানের জনপ্রিয়তার কারণ কী -এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া গেছে গুই ইয়াং শহরের নৃত্যনাট্য দলের নৃত্যের পরিচালক ইয়াং খাই লিয়াংয়ের কাছে থেকে । তিনি ইতিমধ্যে অবসর গ্রহণ করেছেন । তাঁর পরিচালিত একাধিক শিশু নাচ দেশবিদেশে পুরস্কৃত হয়েছে ।

    তিনি বলেছেন , গুই ইয়াং শহরের ছেলেমেয়েদের কী ধরনের নাচগান শিখানো উচিত,আমাকে এই প্রশ্ন করা হলে উত্তরে বলেছি ,নিশ্চয় জাতীয় নাচগান । কারণ, জাতীয় বৈশিষ্ট্য আছে, শুধু এমন নাচগানই বিশ্ব শিল্পকলার প্রাসাদে স্থান পেতে পারে । গুই চৌ প্রদেশের সংখ্যালঘু জাতির শিশুদের জীবন অবলম্বন করে যে নাচগান সৃষ্টি করা হয়েছে তা দেখে দেশবিদেশের অসংখ্য দর্শক মুগ্ধ হয়েছেন।

    গুই ইয়াং এক বহু জাতি বিশিষ্ট শহর । মিয়াও জাতি , থুজিয়া জাতি ,থং জাতি প্রভৃতি সংখ্যালঘু জাতির মানুষরা এই শহরের আদিম অধিবাসী । গুই ইয়াং শহরের শিশু নৃত্যসংগীত দলের যাত্রাপথে সংখ্যালঘু জাতির বিশিষ্টতাকে প্রাধান্য দিয়ে যে সব নতুন নাচগান রচিত হয়েছে তা শিশু-জীবনের রসে পরিপূর্ণ । উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় , " রঙীন স্কার্ট " নামক নাচে মিয়াও জাতির তামার ঢাক আর লুসেন নামক জাতীয় বাঁশী বেজে উঠতেই রঙীন স্কার্ট পরা -মিয়াও জাতির একদল মেয়ে নাচ করে উত্সব পালন করে । যখন তারা টের পায় , কোনো কোনো মেয়ে দর্শকের রঙীন স্কার্ট নেই তখন তাদের রঙীন স্কার্ট উপহার দেয় এবং তাদের নাচ করার আমন্ত্রণ জানায় । এই নাচের বক্তব্য হলো এই , নিজদের আনন্দের ভাগ অন্যদের দিলে আনন্দের মূল্য বেড়ে যাবে ।

    গুই ইয়াং শহরে শিশুদের মধ্যে শিল্পকলার শিক্ষা প্রসারের ইতিহাস নাতিদীর্ঘ । তার সুত্রপাত ঘটে গত শতাব্দির আশির দশকে।তখন শিল্পকলার কাজে নিয়োজিত একজন শিক্ষকের প্রচেষ্টায় "মিয়াও মিয়াও" নামে প্রথম শিশু নৃত্যসংগীত দল গঠিত হয় । শিশুদের কচি স্বর ও নির্মল অভিনয় স্নিগ্ধ বাতাসের মত দ্রুতভাবে সারা গুই ইয়াং শহরে শিশুদের মধ্যে শিল্পকলার ফুল ফুটিয়ে দেয় । গুই ইয়াং শহরের গণ সরকারও যথাসময় শিশুদের মধ্যে শিল্পকলা প্রচলন ঘটানোর পদক্ষেপ গ্রহণ করে । গুই ইয়াং শহরের সংস্কৃতি অধিদফতরের কর্মকর্তা তেং জি ইয়ং এই প্রসঙ্গে বলেছেন :আমরা চার দিক থেকে ছেলেমেয়েদের মধ্যে শিল্পকলা প্রচলনের ব্যবস্থা নিয়েছি । প্রথমত: আমরা প্রয়োজনীয় প্রেক্ষাগৃহ নির্মান করেছি । দ্বিতীয়ত: আমরা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ নেওয়ার সুযোগ যুগিয়েছি । তৃতীয়ত: আমরা শিশুদের নাচগান শিখানোর পথ সুগম করেছি । চতুর্থত: আমরা নতুন নাচগান রচনা করতে শিল্পীদের উত্সাহ দিয়েছি । বহু সংখ্যালঘু জাতির মানুষ থাকে গুই ইয়াং শহরে । তাঁদের জীবনকে উপজীব্য করে যে শিল্পকর্ম সৃষ্টি করা হয় তার প্রাণশক্তি অক্ষুন্ন থাকবে ।

    সি-আর-আইয়ের সংবাদদাতা সাক্ষাতকার নেওয়ার সময় জানতে পেরেছেন যে , গুই ইয়াং শহরের সকল শিশু প্রাসাদ ও নৃত্যনাট্য দল স্কুলের ছাত্রছাত্রদের জন্য অবসরকালীন শিক্ষাকোর্স চালু করছে ।এতে ছাত্রছাত্রীদের স্বাভাবিক পড়াশোনা ব্যহত হয় না । ছাত্রছাত্রীদের মা-বাবার মতামত শোনার পর শিক্ষক-শিক্ষিকা ছেলেমেয়েদের শখ ও দৈহিক বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী স্থির করেন , কে কী শিখবে যাতে শিখার সময় তাদের উত্সাহ-উদ্দীপনা থাকে।

    শিশু প্রাসাদের কর্মকর্তা মাদাম ছেন লু বলেছেন , ছেলেমেয়েরা শিল্পকলার পরিমণ্ডলে নাচগান শিখার ইচ্ছা নিয়ে আমাদের শিশু প্রসাদে এসেছে । নিরলস প্রচেষ্টায় তাঁদের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি ।

    গুই ইয়াং শহর চীনের শিল্পীদের দোলনায় পরিণত হয়েছে । গুই ইয়াং শহরের অনেক ছেলেমেয়ে চীনের কেন্দ্রীয় সংগীত কলেজ, সাংহাইয়ের সংগীত কলেজ এবং পেইচিংয়ের নৃত্য কলেজে ভর্তি হয়েছে ।তাদের মধ্যে কেউ কেউ চীনের নৃত্যাঙ্গন ও সংগীতাঙ্গনের খ্যাতনামা শিল্পী হয়েছেন

    চীনের স্থানীয় টিভি কেন্দ্র ও কেন্দ্রীয় টিভি কেন্দ্রে গুই ইয়াং শহরের শিশু শিল্পীদের পরিবেশিত অনুষ্ঠান চীনের ৩৬ কোটি ছেলেমেয়েকে পর্যাপ্ত আনন্দ যুগিয়েছে ।