v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2005-12-12 20:35:35    
ই'উ শহরের  ছোটখাট পণ্যের পাইকারী  বাজারে বিদেশী  ব্যবসায়ী

cri
    ই'উ পূর্বচীনের চেচিয়াং প্রদেশের একটি ছোট শহর, এখানে ছোটখাট পণ্যদ্রব্যের একটি অতিবিরাট পাইকারী বিপণিকেন্দ্র আছে। এই সব পণ্য প্রধানত এই শহরে এবং আশেপাশের অঞ্চলে উত্পাদিত হয়। এই বাজারে মাল প্রচুর , তবে দাম খুবই সস্তা। ফলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ব্যবসায়ীরা এখানে এসে ভিড় জমায়। এখান থেকে প্রতিদিন এক হাজারের বেশি কন্টেনার মাল বিদেশে পাঠানো হয়।

    বিদেশী ব্যবসায়ীদের মধ্যে এক জন জার্মান বণিকের নাম ফ্লোরিয়ান । ই'উ শহরে তার ব্যবসা সম্পর্কে তিনি বলেছেন,

    " ই'উ জায়গাটিতে আমি খুবই সন্তুষ্ট। ই'উতে আমাদের নানা ধরনের পণ্যদ্রব্য কিনতে খুব সুবিধা । আমরা গোটা কন্টেনার মাল কিনতে পারি , আবার নমুনা হিসেবে খুব অল্প মাল কিনতেও পারি। এই বাজারে ব্যবসা চলছে খুবই দ্রুত এবং কার্যকরভাবে , আমাদের সঙ্গে সহযোগিতা চমত্কার!"

    ফ্লোরিয়ান এজজন আমদানী - রপ্তানী ব্যবসায়ী। ই'উ শহরে নিবন্ধিত তাঁর একটি কোম্পানির নাম: "ফুচিহুয়েনছিউ" । তিনি ইতালি থেকে জুতা এবং জার্মানি থেকে বিয়ার এবং ফ্রান্স থেকে ওয়াইন আমদানী করেন এবং চীনের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে নানান রকম মাল এনে এখানে বিক্রি করেন।

    ফ্লোরিয়ান ঐতিহ্যিক চীনা পোষাক পরেন । তার ব্যবসা বড় না হলেও তিনি ই'উ শহরের এই বিরাট বাজারে স্থাপিত তার কোম্পানির ভবিষ্যত্ সম্পর্কে খুবই আশাবাদী।

    ই'উ শহরের মোট লোকসংখ্যা ১৬ লাখ। এই শহরের গড়পড়তা ৮ জনের মধ্যেই একজন ব্যবসায়ী। ই'উর এই বিরাট বিপণিকেন্দ্রে চীন ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের উত্পাদিত ৩২০ হাজার ধরনের পণ্য বিক্রী করা হয়। এটা ছোটখাট ধরনের বৈচিত্র্যময় পণ্যের সমুদ্র এবং ক্রেতাদের স্বর্গ। চীনের সকল শহরের সকল বিপণিকেন্দ্রের মধ্যে এই বিপণিকেন্দ্রের বিক্রয় পরিমাণ একটানা ১৪ বছর ধরে প্রথম স্থানে রয়েছে । এটি বিশ্বের বৃহত্তম নিত্যব্যবহার্য জিনিসপত্রের লোজিস্টিক্স ও বিপণিকেন্দ্র এবং চীনা পণ্য রপ্তানীর গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি।

    শতাধিক দেশ ও অঞ্চলের মোট আট হাজারেরও বেশী বিদেশী ব্যবসায়ী ই'উ শহরে নিয়মিতভাবে ব্যবসা চালাচ্ছেন। তাদের মধ্যে বেশ কিছু লোক জর্দান, মিসর ও ফিলিস্তীনের মতো আরব দেশের নাগরিক ।

    ২৮ বছর বয়সী ফিলিস্তিনী হা'দ ই'উ শহরে আসার আগে সাংহাই কমিউনিকেশন বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেছেন। তিনি চীনা বলতে পারেন এবং , বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়েই আরব বন্ধুদের জন্য দোভাষীর কাজ করেছিলেন। তিনি চীনের বাজার এবং ই'উ শহর সম্পর্কে আগে থেকেই অনেক কিছু জানতেন । ই'উ শহরে এসে তিনি একটি আমদানী-রপ্তানী কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করলেন। তিনি বলেছেন, " যাদের সঙ্গে আমার দেখা বা যোগাযোগ হয়েছে, তাদের অনেকেই ই'উ শহর সম্বন্ধে জানেন এবং এখানকার পণ্যদ্রব্যের রকমারিতা আর গুণমানে সন্তোষ প্রকাশ করেন। চীনের উন্নয়ন হয়েছে বলে অনেক দেশের ব্যবসায়ীরা এখানে ব্যবসার সুযোগ আবিষ্কার করেছেন । আমিও এই সুযোগ আঁকড়ে ধরতে চাই । আমার কোম্পানির কাজ প্রধানত বিভিন্ন দেশের ব্যবসায়ীদেরকে এখানে উত্কৃষ্ট গুণমানের মাল খুঁজে বের করতে সাহায্য করা।"

    হা'দ জানিয়েছেন, তিনি এখানকার ধাতব দ্রব্য এবং ঘর সাজানোর জন্য সামগ্রী বা উপকরণ পছন্দ করেন এবং প্রতি মাসে ১৫ কণ্টেনার মাল মধ্যপ্রাচ্যে পাঠান। ই'উ-র পণ্যদ্রব্য মধ্যপ্রাচ্যে দেদার বিক্রী হয়। এখানে বিদেশী ব্যবসায়ীদের সংখ্যা ক্রমাগতই বাড়ছে বলে তিনি তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্মুখীন হচ্ছেন।

    গত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশক থেকে ই'উ শহরে প্রতি বছরই ছোট পণ্যদ্রব্যের মেলা আয়োজিত হয় । মেলায় চীন আর বিভিন্ন দেশের পণ্যদ্রব্য প্রদর্শিত হয়। চলতি বছরের অক্টোবর মাসের শেষ দিকে ই'উতে অনুষ্ঠিত পণ্য মেলায় দশ হাজারেরও বেশি বিদেশী ব্যবসায়ী অংশ নিয়েছেন এবং পণ্যদ্রব্য কিনেছেন।

    ক্যানাডার ব্যবসায়ী রুবান কাইণ্ট প্রতি বছরই চীনে আসেন এবং প্রত্যেক বারই ই'উ শহরে আসেন। তিনি জানিয়েছেন, ই'উর পণ্যের দাম সস্তা অথচ গুণমান ভাল । তিনি পাইকারীভাবে মাল কিনেন। তিনি বলেছেন, "আসলে আমি অনেক জিনিসের অর্ডার দিতে চাই । দামের অবস্থা অনুযায়ী আমি মাল ক্রয়ের পরিমাণ স্থির করবো।"

    ই'উর বৃহত্তম পাইকারী বিপণিকেন্দ্রের নাম: "আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নগর"। সারা বিশ্বে এটাই সম্ভবত আয়তনে বৃহত্তম পাইকারী বাজার। লম্বা ড্রাগন আকারের এই "বাণিজ্য নগরের " বেড় ৬ কিলোমিটার। এর ভেতরকার প্রত্যেক দোকানে গড়পড়তা এক মিনিট থামলে গোটা বাজার এক পাক ঘুরে আসতে দুই মাসেরও বেশি সময় লাগবে।

    ই'উ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নগরের বিদেশী ব্যবসায়ীদের একটি বিশেষ এলাকা আছে। এর একটি অংশ হলো দক্ষিণ কোরিয়া ভবন। তিন হাজারের বেশি দক্ষিণ কোরীয় ব্যবসায়ী ই'উ শহরে ব্যবসা চালাচ্ছেন বা কারখানা স্থাপন করেছেন। ৪৫টি দক্ষিণ কোরীয় কোম্পানি ই'উ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নগরে অফিস বা দোকান খুলেছে। ই'উ বাজারের মাধ্যমে তাঁরা বিশ্বের বিভিন্ন স্থানের ব্যবসায়ীদের কাছে দক্ষিণ কোরিয়ার বৈশিষ্ট্যপূর্ণ কারুশিল্পজাত দ্রব্য, ইলেক্ট্রোনিক্স ও বৈদ্যুতিক সামগ্রী,উপহার-উপঢৌকন, পোষাক ইত্যাদি বিক্রী করেন।

    একটি টেলিফোনের দোকানের দক্ষিণকোরীয় মালিক লি সোংইয়ং জানিয়েছেন ,তিনি গত বছরের জুলাই মাসে এই "বাণিজ্য নগরে" প্রবেশ করেছেন। তিনি সন্তোষের সঙ্গে বলেছেন, "এখানকার পরিবেশ খুব ভাল, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, ব্যবস্থাপনাও বিজ্ঞানসম্মত, তাতে আমাদের খুব সুবিধা হয়। বাণিজ্য নগর আমাদের জন্য অনেক প্রয়োজনীয় পরিসেবা যুগিয়ে দিয়েছে, যেমন যথাসময়ে ইণ্টার্নেট ও টেলিফোনের ব্যবস্থা বসিয়ে দিয়েছে, ফলে আমরা যথা সময়েই সংশ্লিষ্ট তথ্য পাই। এখানে দক্ষিণ কোরীয় রেস্তোরাঁও স্থাপিত হয়েছে, ফলে আমরা এখানেই দেশী খাবার খেতে পাই। এখানে কাজ করতে খুব ভাল লাগে।"

    বিদেশী ব্যবসায়ীরা সবাই মনে করেন, ই'উ শহরে ব্যবসা চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় গুদাম, লোজিস্টিক্স, কাস্টম, ব্যাংকিং, বীমা, ইণ্টার্নেট ইত্যাদি ব্যবস্থা খুবই সুবিধাজনক । বিদেশী ব্যবসায়ীরা গুটি কয়েক দিনের মধ্যেই এক কিস্তি পণ্য আমদানী বা রপ্তানীর যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে পারেন।