v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2005-12-08 20:21:53    
ছেন সুলানের গল্প

cri
    এক দিন এজন বুড়িমা চিয়াংসি প্রদেশের নানছাং শহরের এক জেলখানায় গিয়ে জেলবন্দী লি হাইলিনকে দেখতে যান ।ডাকাতি করার অপরাধে ১৯৯৬ সালে লি হাইলিনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয়া হয়েছে ।যার ফলে তাকে কারাগারে তার বাকি জীবন কাটাতে হবে বলে সে মনে করে । কিন্তু ১৯৯৭ সালের এক আকস্মিক সুযোগে ছেন সুলানের সঙ্গে লি হাইলিনের পরিচয় হয়েছে …..

    মাডাম ছেন সুলান চিয়াংসি প্রদেশের পিংসিয়াং শহরের পা-ই আবাসিক এলাকার নাগরিক কমিটির অবসরপ্রাপ্তপরিচালক ।১৯৯৭ সালের এক দিন , তিনি চিয়াংসি প্রদেশের নানছাং শহরের এক জেলখানা থেকে পাঠানো এক চিঠি পেয়েছেন , লি হাইলিন নামে এক জেলবন্দী চিঠিতে ছেন সুলানের প্রতি তার শ্রদ্ধা ও সম্মান এবং জেলখানার বাইরের বৈচিত্র্যময় বিশ্ব সম্পর্কে তার আশা ব্যক্ত করেছে । চিঠির শেষে লি হাইলিন তাকে তার দত্তক পুত্র গ্রহণ করতে ছেন সুলানকে অনুরোধ করেছে । যদিও ছেন সুলান চিঠি লেখার লোক সম্বন্ধে কিছুই জানেন না , তবে তিনি শীগ্গিরই লি হাইলিনকে এক জবাবী চিঠি দিয়েছেন ।

    লি হাইলিন অত্যন্ত মুগ্ধ হয়েছে এবং বিশ্বাস করতে পারে না যে , ছেন সুলান তার মতো এক জেলবন্দীকে চিঠি দিতে পারেন ।সে চিঠিতে ছেন

    সুলানকে জানায় যে, ছোটোবেলায় বাবামার যত্ন ও দেখাশোনার অভাবে শেষ পযন্ত সে অপরাধ সাধনের পথে পা বাড়িয়েছিল ।জেলখানায় বন্দী থাকাকালে তার একমাত্র আশা হল পরিবারপরিস্বজনের সঙ্গে দেখা করা । কিন্তু একটানা দশ-বারোটি চিঠি লিখলেও সে কোনো উত্তর পেলো না ।একবার মার জন্মদিনের আগে সে ভাবল যে,সে মাকে মুগ্ধ করতে পারে এমন একটা উপহার দেবে। জেলখানায় নিজেকে কিভাবে নতুন করে মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা যায়, সে সম্পর্কে সে মাকে জানাতে চায় ।সে মাকে চিঠি লিখেছে । চিঠি পাঠানোর পর অনেক দিন পার হয়ে গেছে,কিন্তু সে কোনো উত্তর পায়নি । লি হাইলিন গভীর দুঃখ-বেদনায় নিমজ্জিত হয় । ছ' মাস পর সে একই গ্রামের এক লোকের কাছ থেকে জানল যে, ডাকাতি করার অপরাধে সে জেলবন্দী হয়েছে শুনে সৈন্যবাহিনী থেকে অবসরপ্রাপ্ত বৃদ্ধ-বয়সী বাবা ক্ষুব্ধ ও লজ্জিত হয়ে মস্তিস্কের রক্তক্ষরণে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ।তার মা অতি দুঃখে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে খাটে শুয়ে আছেন ।

    পরিবারের পরিবর্তনে লি হাইলিনের গভীর পরিতাপ হয় । পরিবারপরিজনের যত্ন ও সমর্থন হারিয়ে লি হাইলিন ভীষণ হতাশ হয় ।১৯৯৭ সালের একদিন , লি হাইলিন আকস্মিকভাবে পত্রিকায় প্রকাশিত ছেন সুলানের বিপথগামী যুবকযুবতীকে সাহায্য করার প্রবন্ধ পড়েছে, সে অত্যন্ত মুগ্ধ হয়েছে ।সে সাহস করে ছেন সুলানকে এক চিঠি লিখেছে । লি হাইলিনের চিঠি লেখার কারণ বুঝেছেন ছেন সুলান । অনেক চিন্তা-ভাবনার পর ছেন সুলান লি হাইলিনকে নিজের পোষ্যপুত্রহিসেবে গ্রহন করার সিদ্ধান্ত নেন ।

    এর পর থেকে লি হাইলিনের সঙ্গে ছেন সুলান চিঠি বিনিময় শুরু করেন । মাসে গড়ে তিন-চারটা চিঠি লিখেন তারা । ছেন সুলান চিঠিতে লি হাইলিনকে নিজেকে নতুন করে মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে উত্সাহ দেন আর লি হাইলিন চিঠিতে মন খুলে ছেন সুলানকে নিজের সব কিছুই জানায় । কয়েক মাস পর ছেন সুলান বিশেষভাবে লি হাইলিনের জন্য কেনা দৈনন্দিন ব্যবহার্যজিনিসপত্র নিয়ে নানছাং গিয়ে তাকে দেখতে যান ।ফলমুল নিয়ে দূর থেকে নিজকে দেখতে আসা ছেন সুলান মাকে দেখে লি হাইলিন কেঁদে উঠল । সে বলল, যখন আমার আত্মিয়স্বজন আমাকে ছেড়ে দেন তখন আপনিই আমাকে জীবনের সাহস ও আশা দিয়েছেন । আমি কোনোমতেই আপনাকে নিরাশ করব না , আমি ভাল করে নিজেকে মানুষ হিসেবে গড়ে তুলব । লি হাইলিনের নিজেকে পুনরায় মানুষ হিসেবে গড়ে তুলার দৃঢসংকল্প দেখে ছেন সুলান অত্যন্ত আনন্দিত । কিন্তু এক বিষয় ছেন সুলান সবসময় মনে রাখেন যে , লি হাইলিনের সত্যিকারের পরিবারপরিজন ও লি হাইলিনের মধ্যে সমঝোতা করা ।কারণ পরিবারপরিজনের সমঝোতা পেলেই কেবল লি হাইলিন সত্যিকারভাবে মুক্তি পেয়ে নতুন করে নিজেকে মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারবে ।

    এ জন্যে ছেন সুলান বিশেষভাবে লি হাইলিনের বাসায় একবার গিয়েছেন ।তিনি লি হাইলিনের বড় ভাইয়ের সংগে সাক্ষাত করেছেন । দুজনের মধ্যে দীর্ঘ সময় ধরে কথাবার্তা হয়েছে । ছেন সুলানের আচরণ লি হাইলিনের পরিবারের সবাইকে মুগ্ধ করেছে । বড় ভাই লি হাইলিনের প্রতি তিনি বড় ভাইয়ের দায়িত্ব পালন করেননি বলে আত্মসমালোচনা করেন ।কিন্তু তারা যে নানছাংয়ে গিয়ে লি হাইলিনকে দেখতে যান না তার আর একটা কারণ আছে যে,পরিবারের আর্থিক অবস্থা অত্যন্ত খারাপ ।তিনি মাসে মাত্র ২৩০ ইউয়ান আয় পান, এই ২৩০ ইউয়ান দিয়ে তিনি গোটা পরিবারের সংসার চালান।কিন্তু একবার নানছাং যাওয়া-আসার খরচ ৪০০ইউয়ান লাগবে,এই বোঝা তাদের গ্রহনযোগ্য নয় ।তাদের অসুবিধার কথা শুনে ছেন সুলান নিজের বেতন থেকে অর্থ দিয়ে লি হাইলিনকে দেখা করতে তাদের তাগিদ দেন । ছেন সুলানের মধ্যস্থতায় অবশেষে পরিবারের সকলেই লি হাইলিনকে ক্ষমা করেছেন ।১৯৯৮ সালের ডিসেম্বর মাসে লি হাইলিনের বড় ভাই ও ছোটো বোন নানছাং শহরে গিয়ে লি হাইলিনকে দেখতে যান । সেই দিন লি হাইলিন অত্যন্ত আনন্দিত হল এবং বাচ্চার মতো তারস্বরে কেঁদে উঠল ।আত্মীয়স্বজনেরভালবাসা তার জীবনে ইতিবাচক ভুমিকা পালন করেছে ।১৯৯৮ সালে তাকে যাবজীবন কারাদন্ড থেকে ১৭বছরের দন্ডকমিয়ে দেয়া হয়েছে ।এর পর লি হাইলিনের কারাদন্ডআরও দুবার বিপুলমাত্রায় কমিয়ে দেয়া হয়েছে এবং ২০০২ সালে আরও ১৪মাস কমানো হয়েছে । শ্রেষ্ঠ অভিব্যক্তির কারণে ২০০৪ সালে লি হাইলিন জেলখানায় রূপান্তরিত সক্রিয় ব্যক্তি ও দক্ষ শ্রমশক্তি উপাধি পায় ।

    শুধু লি হাইলিন একা ছেন সুলানের সাহায্য পেয়েছে তা নয় । বিশাধিক বছর ধরে তিনি প্রায় ১০০জন বিপথগামী যুবকযুবতীকে সাহায্য করেছেন ।আসলে ছেন সুলানের পরিবারের আর্থিক অবস্থা তেমন ভাল নয় । তার সন্তানরাকর্মচ্যুত হয়েছে এবং তার তৃতীয় সন্তান বিকলাঙ্গ । তা সত্ত্বেও "একজনকে ত্রান করা মানে আমাদের সমাজের জন্যে এক ভাল কাজ করা, যতদিন বেঁচে থাকি , আমি একাজ চালাতে থাকব" বললেন দৃঢপ্রত্যায়ী ছেন সুলান ।