চীনে অনেক ছোট-বড় পাহাড় আছে।এগুলোর মধ্যে কয়েকটি খুবই নাম-করা। এর আগে আপনাদের চীনের কয়েকটি বিখ্যাত পাহাড়ের পরিচয় দিয়েছি। আশা করি আপনাদের পছন্দ হয়েছে। আজকের আসরে কিন্তু আমরা পাহাড় নিয়ে আলোচনা করবো না। কবে যে জায়গার পরিচয় আপনাদের দিবোতা একটি বিখ্যাত পাহাড়ের সঙ্গে সর্ম্পকিত। কারণ এই জায়গা চীনের বিখ্যাত দশর্নীয়স্থান--হুয়াংশান পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত। চীনের আনহুয়ে প্রদেশের পূর্বাঞ্চলে এই বিখ্যাত পাহাড় অবস্থিত। জায়গাটি এই বিখ্যাত পাহাড়ের কল্যাণে ইতিমধ্যে সুনাম কুড়িয়েছে। এই জায়গার নাম হল ই জেলা। যারা হুয়াংশান পাহাড়ে ভ্রমণ করতে যান তারা অবশ্যই এই জেলা দেখতে যাবেন। আপনারা হয়তো প্রশ্ল করবেন এই জায়গায় দেখার মত কি কি আছে? এখন আমি আপনাদের ওখানে বেড়াতে নিয়ে যাবো।
ই জেলা চীনের পূর্বাঞ্চলের আনহুয়ে প্রদেশে অবস্থিত। এই জেলা বেশ বড় নয়। কিন্তু ছোট হলেও এই জেলায় এখন পযর্ন্ত ৩৬০০টি প্রাচীনকালের বসতবাড়ী অক্ষতভাবে সংরক্ষিত আছে। চীনা ভাষায় ই শব্দ মানে 'কাল' । প্রাচীনকালে হুয়াংশান পাহাড়কে ই পাহাড় বলা হতো। পাহাড়ের গোড়ায়অবস্থিত বলে জেলার নাম হয়েছে ই জেলা । প্রাচীনকালের স্থাপত্যগুলো হুয়াংশান পাহাড়ের নিকটবর্তী এলাকা সহজেই নজরে পড়ে। সবুজ পাহাড়ের প্রেক্ষাপটেএ সব স্থাপত্য দেখতে বৈশিষ্ট্যময়। চাং ওয়েই ফং ই জেলায় জন্ম গ্রহণ করেন এবং বড় হয়েছেন। তিনি বললেন, ওখানের বিশেষ ভৌগলিক পরিবেশের কারণে ই জেলার প্রাচীন বসতবাড়ী সুন্দরভাবে সংরক্ষিত হয়েছে। তিনি সংবাদদাতাকে বলেন,
ই জেলায় বহু পাহাড় আছে। অতীতে এখানে পরিবহণ প্রায় ছিল না বললেই চলে। সুতরাং প্রাচীনকাল থেকে এই জায়গা কখনও যুদ্ধের শিকার হয়নি। এখানকার প্রাচীন বসতবাড়ী অক্ষতভাবে সংরক্ষিত রয়েছে। এখানকার প্রাচীনকালের স্থাপত্যএত বিরাটাকারের যা চীনের অন্যান্য জায়গায় প্রায় দেখা যায় না। ই জেলার এ সব প্রাচীন বসতবাড়ী ৫০০ বছর আগে অথার্ত চীনের মিন আর ছিন রাজবংশ সময়কালে নিমির্ত হয়। চীনের প্রাচীনকালের বৈশিষ্ট্যসুচক সিদি আর হোংছুন গ্রামকে 'চীনের মিং আর ছিং রাজবংশের আমলের জাদুঘর' হিসেবে গণ্য করা হয়। ২০০০ সালে এ দুটো গ্রাম এক সঙ্গে ইউনেস্কোর বিশ্বসাংসংস্কৃতি উত্তরাধিকার তালিকাভুক্ত হয়েছে।
সিদি গ্রামের ইতিহাস ছ'শতাধিক বছরের। কিন্তু এখানকার প্রাচীন বসতবাড়ীগুলো অক্ষতভাবে সংরক্ষিত রয়েছে। জানা গেছে, যদি আকাশ থেকে এই গ্রাম দেখেন গোটা গ্রাম একটি জাহাজের মতো দেখায়। গাইড লি বলেছেন, সিদি গ্রামের স্থাপত্য বিন্যাস উল্লেখযোগ্য। চীনের সব জায়গায় এ ধরনের স্থাপত্য দেখা যায় না। তিনি বললেন,
গ্রামে সারি সারি বাড়ীঘর একটি বিরাট জাহাজের মত দেখায়।গ্রামের চার দিকের মাঠ যেন বিশাল সমুদ্র। সিদি গ্রাম যেন একটি বিরাটাকারের জাহাজের মত শান্ত পোতাশ্রয়ে নোঙ্গর গেঁড়ে বসে আছে।
সিদি গ্রামের প্রাচীন বসতবাড়ীগুলোর মধ্যে একটি ভবন অক্ষতভাবে সংরক্ষিত আছে যার নাম সিওলো । এই ভবন দেখতে একটি প্ল্যাটফোর্মেরমতো। জানা গেছে, প্রাচীনকালে ধনী পরিবারের মেয়েরা এই ভবনের অলিন্দে দাঁড়িয়ে তার পছন্দের কোনো ছেলে চোখে পড়লেই একটি রেশমের তৈরী বল তার গায়ে ছুড়ে মারতেন।
প্রত্যেক দিন বিকাল ৪টার পর এই সংগীতের সঙ্গে একজন অল্প বয়সী মেয়ে গায়ে প্রাচীনকালের লাল কাপড় পরে ভবনের নীচের দিকে কিছুক্ষণতাকিয়ে দেওয়ার পর ভিতরে ফিরে যান। অনেক ক্ষণ পর ভিতর থেকে বেরিয়ে আসা একজন প্রাচীনকালের কাপড় পরা সুন্দরী মেয়ে লোকেদের চোখে পড়ে। তিনি লজ্জা পাওয়ার ভান করে কাপড়ের আস্তিন দিয়ে মুখ আড়াল করে রাখেন। তবে তিনি আস্তিনের ফাঁক দিয়ে নীচের দিকে এক পলক তাকিয়েই ত্রস্ত পায়ে ভিতরে ফিরে যান। একটু পর এই মেয়ে আবার ভিতর থেকে বাইরে আসেন। তিনি অনেক ক্ষণ নীচের দিকে তাকান। তারপর তিনি হাতের রেশমী কাপড়ের তৈরী বল মানুষের ভীড়ের মধ্যে ছুঁড়তে প্রস্তুত। কিন্ত তিনি ছোঁড়েন না। এমনভাবে কয়েক বার চেষ্টা করার পর তিনি অবশেষে একজন পুরুষের গায়ে বল নিক্ষেপ করেন। তবে যে পুরুষের গায়ে এই মেয়ের বল লেগেছে তিনি মেয়েটিকে বিয়ে করবেন না। তিনি শুধু এই অলিন্দে উঠে মেয়ের সঙ্গে একটি ছুবি তুলতে পারেন। এই তত্পরতা দেশী-বিদেশী পযটর্কদের সমাদর পেয়েছে। উত্তর চীনের মিস হুওয়াং বললেন, এ দুটো গ্রামেআসলে তার মনে হয় তিনি দুর অতীতে ফিরে গিয়েছেন। তিনি বললেন,
আমি লক্ষ্য করেছি, এখানকার বাড়ীঘর স্ববৈশিষ্ট্যময়। নকশার দিক থেকে এ সব স্থাপত্যের বিন্যাস খুবই সুচারু।এই বাড়ীঘর পুরাতন হলেও দেখতে মনোরম। এখানে হেঁটে হেঁটে বেড়ালে মনে হয় আমি সুদূর প্রাচীনকালে ফিরে গিয়েছি।
সিদি গ্রাম থেকে বিশ কিলোমিটারের কম দূরে হোংছুন গ্রামও বৈশিষ্ট্যময়। গোটা গ্রাম দেখতে একটি গরুর মতো। মনে হয় এই গরু সবুজ পাহাড়-বেষ্টিত মাঠে পা গুটিয়ে শুয়ে আছে। দুর থেকে গ্রামের দিকে তাকালে দেখা যায় গ্রাম সারি সারি সবুজ গাছে আবৃত।
স্থানীয় লোকেরাবলেন, অতীতে এ সব বাড়ীর মালিকরা সবাই ব্যবসায়ী ছিলেন। তারা বাইরে ব্যবসা করে ধনী হয়ে দেশে বাড়ীঘর নির্মান করেছিলেন। এখন অনেক বাড়ীঘরের মালিক পরিবর্তিত হয়েছে। অনেক ঘর খালি পড়ে আছে। প্রত্যেক বছর এ দুটো গ্রাম অজস্র দেশী-বিদেশী পযর্টককে আকৃষ্ট করে। পযটর্করা এ দুটো গ্রামে চীনের মিং আর ছিং রাজবংশ আমলের বৈশিস্ট্যময় স্থাপত্য উপভোগ করতে পারেন।
|