জাং জিয়া জিয়ে দক্ষিণ চীনের একটি প্রসিদ্ধ দর্শনীয় স্থান। তার অতুলণীয় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আকর্ষণে সারা বছর দেশ-বিদেশের বিপুল সংখ্যক পর্যটক সেখানে ভ্রমণ করতে যান । পর্যটন শিল্পের উন্নয়নের দরুন স্থানীয় কৃষকদের আয় বেড়েছে এবং তাঁদের জীবনযাত্রার মানের উন্নতি হয়েছে ।
জাং জিয়া জিয়ে হুনান প্রদেশের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত । বিচিত্র প্রস্তর- স্তর , পূর্ণাঙ্গ প্রাকৃতিক শোভা আর স্নিগ্ধ আবহাওয়ার সমাবেশে সৃষ্টি হয়েছে জাং জিয়া জিয়ের স্বতন্ত্র মনোহর সৌন্দর্য । হুনান প্রদেশের জাং জিয়া জিয়ে ও উ লিং ইউয়ান ইউনেস্কোর প্রণীত উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত বিশ্বের প্রাকৃতিক সম্পদের নামের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত । গত শতাব্দির নববইয়ের দশক থেকে জাং জিয়া জিয়ে ভ্রমণ করতে আসা-পর্যটকের সংখ্যা বছরের পর বছর বেড়েছে । এখন জাং জিয়া জিয়ে-অভিমুখী সড়কে রোজ একের পর এক পর্যটন-বাসকে সবেগে ছুটতে দেখা যায় । স্থানীয় রেল-স্টেশনে প্রতিদিন দশ জোড়া যাত্রীবাহী রেল-গাড়ী গমনাগমন করে । প্রতিবছর আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে আসা-যাওয়া যাত্রীদের সংখ্যা দশ লক্ষেরও বেশী
প্রত্যন্ত এলাকায় অবস্থিত বলে অতীতে জাং জিয়া জিয়ে অর্থনীতির দিক থেকে অত্যন্ত পশ্চাদপদ ছিল । পর্যটন শিল্পের উন্নয়নের কল্যাণে ক্রমে ক্রমে স্থানীয় কৃষকদের জীবনযাত্রার মানের উন্নতি হয়েছে ।
প্রতিদিন ভোর হতে না হতেই ৫৩ বছর বয়সী কৃষক লু থাং ইউ পাথর ভেঙে রাস্তা তৈরী করতে যান । লু থাং ইউয়ের বাড়ি ইয়ু ছি গ্রামে । গ্রামটির আশাপাশে প্রকাণ্ড পাহাড় । আবাদী জমি খুবই কম ।তাঁর গ্রামের এক হাজারেরও বেশী কৃষক শুধু ভুট্টা চাষ করতেন ।অভাব-অনটন ছিল তাঁদের নিত্য সঙ্গী।
তিনি বলেছেন, আগে আমরা গরীব ছিলাম , আমাদের গ্রামের কৃষকদের মধ্যে যাদের ছেলেমেয়ে বেশী তাদের অবস্থা আরো শোচনীয় । আমাদের অল্প জমিতে উত্পন্ন খাদ্যশস্য আমাদের চাহিদা মেটাতে পারত না । তাই সরকার বিনামূল্যে আমাদের খ্যাদশস্য সরবরাহ করত ।এক বছর আমার আয় মাত্র কয়েক শো ইউয়ান ।
পর্যটন শিল্পের গুরুত্ব উপলব্ধী করার পর জাং জিয়া জিয়ের জনসাধারণের প্রচেষ্টায় একের পর এক অবকাঠামো প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে ।যেমন জাং জিয়া জিয়ে থেকে বাইরে যাওয়ার সুবিধার জন্য পাঁকা রাস্তা তৈরী করা হয়েছে এবং পর্যটকদের জন্য আধুনিক হোটেল নির্মিত হয়েছে ।
লু থাং ইউ একজন ঝানু রাজমিস্ত্রী । তিনি শহরে গিয়ে সেতু আর রাস্তা তৈরীর কাজ করেছেন । তাঁর গ্রামের অন্যান্য কৃষকও পর্যটন শিল্পের সঙ্গে সম্পর্কিত কাজ করছেন ।
লু থাং ইউ বলেছেন , তাঁদের মধ্যে কেউ গাছ লাগান ,কেউ ফুলের চাষ করেন , কেউ রাজমিস্ত্রীর কাজ করেন ,কেউ বা ঘন্টাভিত্তিক দৈহিক পরিশ্রম করেন।
পর্যটনের সঙ্গে সম্পর্কিত কাজকর্ম করার ফলে কৃষকদের আয় উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে । ইয়ু ছি গ্রামের কারো কারো বার্ষিক আয় দশগুণ বেড়েছে । অনেক কৃষক নতুন বাড়ি তৈরী করেছেন ।
অতীতে স্থানীয় অর্থনীতি অনুন্নত বলে জাং জিয়া জিয়ে বহু কৃষক টাকা উপার্জনের আশায় অন্যান্য প্রদেশে যেতেন । এখন পর্যটন শিল্প ও পরিসেবা শিল্প উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে টাকা উপার্জনের নতুন সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় বাইরে কর্মরত কৃষকরা দলে দলে ফিরে এসেছেন । লু থাং ইউ'র বড় ছেলে অতীতে উপকূলীয় অঞ্চলে কাজ করতেন । সম্প্রতি তিনি জন্মস্থানে ফিরে এসে একটি হোটেলে চাকরি পেয়েছেন ।
দু-তিন বছর আগে জাং জিয়া জিয়ে আদিম অধিবাসীদের রীতিনীতির উপর যে একটি যাদুঘর খোলা হয়েছে তাতে পর্যটকদের যেমন দেখবার মত একটি নতুন স্থান মিলেছে তেমনই কৃষকদের কর্মসংস্থানের আরো বেশি সুযোগও পাওয়া গেছে ।
সিও হুয়া সান যাদুঘর তু জিয়া জাতির একটি ব্যক্তিগত যাদুঘর । এই যাদুঘরে তু জিয়া জাতির নিত্যব্যবহার্য দ্রব্য ও হাতিয়ার সাজানো রয়েছে ।এ যাদুঘরে স্থানীয় নাচগানও পরিবেশন করা হয় এবং তু জিয়া জাতির শিল্পীদের আঁকা ছবি ও হস্তশিল্পজাতদ্রব্য বিক্রি হয় । প্রতিদিন বহু পর্যটক এই যাদুঘর দেখতে আসেন।
সিও হুয়া সান যাদুঘরের পরিচালক হো ছু হুয়া সাংবাদিকদে জানিয়েছেন, তাঁর যাদুঘরের ৪০জন কর্মী সবাই কৃষক । যাদুঘরে দেখানো ছবি ও হস্তশিল্পজাত দ্রব্য তৈরীর কাঁচা মালও সরবরাহ করেছেন কৃষকরা ।
তিনি বলেছেন , অতীতে ফসল তোলার পর কৃষকদের আর কোনো কাজ ছিল না ।এখন তাঁরা আমাদের যাদু ঘরের জন্য হস্তশিল্পজাত দ্রব্য তৈরী করছেন । এটা তাঁদের আয়ের একটি নতুন উত্স ।
জাং জিয়া জিয়ের পর্যটন সংস্থার কর্মী গুও থিয়ে জুন সি আর আইয়ের সংবাদদাতাকে জানিয়েছেন , পর্যটন শিল্প জাং জিয়া জিয়ের কৃষকদের জীবনে অনেক পরিবর্তন বয়ে এনেছে ।
তিনি বলেছেন , অতীতে স্থানীয় কৃষকরা পুরনো ধ্যানধারনার বাঁধনে আবদ্ধ ছিল , এখন তাঁদের মন যথেষ্ট উন্মুক্ত হয়েছে । উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় , দর্শনীয় স্থানে অনেক বৃদ্ধবৃদ্ধা ও ছেলেমেয়ে যে কোরিয় ভাষায় কথা বলতে পারেন আগে কেউ তা কল্পনা করতে পারত না ।
প্রতি বছর দক্ষিণ কোরিয়া থেকে প্রচুর পর্যটক জাং জিয়া জিয়ে ভ্রমণ করতে আসেন দেখে অনেক কৃষক কোরীয় ভাষা শিখেছেন । এখন তাঁরা কোরীয় ভাষায় কোরীয় পর্যটকদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন, তাঁদের জন্য পণ্যদ্রব্যের পরিচয় দেন এবং তাঁদের সঙ্গে দামাদামি করেন ।
দোকানদার ওয়াং মাও সেং সি আর আইয়ের সংবাদদাতাকে জানিয়েছেন : দু বছর হলো আমি ব্যবসা করতে করতে কোরীয় ভাষা শিখেছি । প্রতিদিন দক্ষিণ কোরিয়ার পর্যটকরা আমার দোকান থেকে প্রায় এক শো ইউয়ানের পণ্য কিনেন ।
পর্যটন শিল্প জাং জিয়া জিয়ের কৃষকদের সচ্ছলতার পথ সুগম করেছে ।
|