আমার মেয়ে চিংচিং প্রাথমিক স্কুলের তৃতীয় শ্রেনীতে পড়ছে । এক দিন চিংচিং স্কুল থেকে ফিরে আমাকে বলল যে , তার এক সহপাঠী লিউক্যামিয়া রোগে আক্রান্ত হয়েছে ।তার জন্যে স্কুল ছাত্রছাত্রীদেরকাছে চাঁদা দেয়ার আবেদন জানিয়েছে ।
চিংচিংর বয়স মাত্র আট বছর । সহপাঠীর জন্যে চাঁদা দেয়ার সুযোগকে সে গৌরব বলে মনে করে ,কিন্তু সে জানে না যে ,লিউক্যামিয়া রোগ এক ভয়াবহ রোগ ।
"মা, আপনি বলুন , আমাকে কত চাঁদা দিতে হবে ?" চিংচিং মাকে জিজ্ঞেস করে। শিক্ষক আমাদের প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীকে কমপক্ষে ১০ ইউয়ান চাঁদা দিতে বলেছেন এবং অভিভাবকদের চাঁদা দেয়ার আশাও প্রকাশ করেছেন । মা চিংচিংকে বলেন, তুমি আগে চাঁদা দাও । দু-এক দিন পর আমি হাসপাতালে গিয়ে তোমার ঐ ছোটো সহপাঠীকে দেখতে যাব, তখন আমি সরাসরি তার কাছে চাঁদা দেব , কেমন ?
মা নিজের ঐ সহপাঠীকে দেখতে যাবেন কথাটা শুনে চিংচিংয়ের চোখেমুখে আনন্দ ফুটে উঠল। সে মাকে বলল , আমাদের শিক্ষক বলেছেন , লিউক্যামিয়া রোগটি চিকিত্সা করতে তিন-চার লক্ষ রেনমিনপি লাগে । মা , আজ থেকে আমি আর কোকাকোলা ,আইস্ক্রিম খাব না । এ থেকে বাঁচানো সব টাকা-পয়সা ঐ সহপাঠীকে দেব, কেমন মা ?
আমি মেয়ের কথায় খুব মুগ্ধ হয়েছি । আমি নিশ্চিত হয়েছি যে, আমার মেয়ে বড় হয়েছে । সে এখন এই তত্ব বুঝেছে যে, চাঁদা দিয়ে নিজের সহপাঠিকে বাঁচানো নিজের আইসক্রিম , কোকাকোলা খাওয়ার চেয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ।
একটা সময় ধরে আমার মেয়ে প্রতিদিনইস্কুল থেকে বাসায় ফিরে প্রথমে আমাকে জিজ্ঞেস করত ,মা ,আজ আপনি হাসপাতালে গিয়েছেন ?আপনি আমার ঐ সহপাঠিকে চাঁদা দিয়েছেন ? আমি প্রায় তাকে বলতাম, একয়েক দিন মা খুব ব্যস্ত,মা এখনো সময় করে তাকে দেখতে যাইনি । একটানা কয়েক দিন ধরে একই কথা জিজ্ঞেস করল এবং অবশেষে মেয়ে রাগ করে আমাকে বলল , মা, আপনি কবে হাসপাতালে যাবেন ? যদি আপনি আর না যান , যখন সহপাঠি হাসপাতাল থেকে বের হবে ,তখন আপনার চাঁদা কি আর কাজে লাগবে ?
এক দিন চিংচিং স্কুল থেকে ফিরে আমাকে বলল , আমাদের স্কুল মাত্র ১৪ হাজার রেনমিনপি চাঁদা পেয়েছে । এটা যথেষ্ট নয় , আমার ক্ষুদে সহপাঠী কবে সুস্থহতে পারবে ? মা , আপনি এক উপায় খুঁজে বের করুন । আপনি তাকে কিছু বেশী চাঁদা দেবেন ! মেয়ের বারবার জিজ্ঞেস করায় আমি লজ্জিত হই ।এমন একটি ভাল মেয়ের জন্যে আমি গোর্বিত । আমি আন্তরিকভাবে চিংচিংকে বলেছি যে, ঠিক আছে , মা কথা দিচ্ছি , মা তোমার ঐ ক্ষুদে সহপাঠিকে যথাসাধ্যসাহায্য করব ।
মেয়ের মায়ামমতায় আমি সত্যি মুগ্ধ হয়েছি । মাত্র দু'মাস আগে চিংচিং এই স্কুলে পড়তে এসেছে । ঐ ক্ষুদে সহপাঠির সঙ্গে তার পরিচয় নেই । কারণ তারা একই শ্রেণীর এবং একই ক্লাসের সহপাঠি নয় । আমার মেয়ে এক করুণাময়ী মেয়ে । তাই আমি সচেতনভাবে মেয়েকে এক স্নেহময়ী মেয়ে হিসেবে লালনপালন করতে শুরু করেছি ।
একবার আমি সাক্ষাত্কার নিতে অনাথাশ্রমেযাই । আমি বিশেষভাবে চিংচিংকে নিয়ে যাই । আমি চাই চিংচিং বাবামা হারানো কয়েকজন অনাথ ছেলেমেয়ের সঙ্গে বন্ধুত্ব স্থাপন করুক । আমি মনে করি ,সন্তানদের করুণা ও স্নেহমমতার প্রতি সম্মান করতে হবে এবং তাকে ছোটোবেলা থেকে বুঝাতে হবে যে ,বিশ্বে এমন অসংখ্য বুড়াবুড়ি ও অনাথ ছেলেমেয়ে আছে , যাদের ভালবাসা এবং যত্ন ও স্নেহ প্রয়োজন । এতে তারা সারা জীবনে উপকৃত হবে ।বন্ধুরা ওয়াং ইয়ুথাই নামে এক মায়ের লেখা "আমার মেয়ে চিংচিং" গল্পটি শুনলেন । যদি আপনারা নিজের সন্তানকে স্নেহময়ী মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে চান তাহলে আপনারা সচেতনভাবে ছোটোবেলা থেকে তাদের লালনপালন শুরু করুন । আশা করি সব বাবামা ও তাদের সন্তানরা ভালবাসা ও স্নেহময়ী মানুষ হবেন ।
বাকি সময়ে কিভাবে ক্ষীণ দৃষ্টি এড়ানো যায় বিষয়টি নিয়ে কিছু আলোচনা করা যাক । সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনের কিশোরকিশোরীদের মধ্যে ক্ষীণ দৃষ্টিরহার বেড়ে যাওয়ার প্রবনতা দেখা দিয়েছে । তাহলে কিভাবে ক্ষীণ দৃষ্টি এড়ানো যায়?এক,জীবনযাপনের ভাল রীতিনীতির অভ্যাস করতে হবে ।যেমন বই পড়া বা লেখার সময়েসঠিকভাবে বসতে হবে অর্থাত বই বা কলম চোখ থেকে তিনভাগের এক মিটার দূরে রাখতে হবে ,আলো খুব বেশী হলেও চলে না, ঝাপসাও হবে না । দুই , পর্যাপ্ত ঘুম বজায় রাখা দরকার । তিন,উপযুক্তভাবে ঘরে বাইরে শরিরচর্চা করতে হবে এবং দূরের সবুজ উদ্ভিদ দেখতে হবে । চার,খাদ্যের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে,অতিরিক্ত মিষ্টি আর অতিরিক্ত প্রোটিন গ্রহণএড়াতে হবে ।
|