v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2005-12-02 13:15:57    
মঙ্গোলিয় জাতির সাদা রংয়ের শ্রদ্ধা

cri

    উত্তর চীনের বিস্তীর্ণ অন্তঃমঙ্গোলিয়া তৃণভূমিতে পশুপালন-নির্ভর জাতি হিসেবে মঙ্গোলিয় জাতি বাস করে । নীল আকাশ আর সাদা মেঘের নীচের অসীম তৃণভূমিতে সাদা সাদা মঙ্গোলিয় পশুপালকদের তাবু আর সাদা সাদা ভেড়ার পাল মুক্তোর মতো ছড়িয়ে পড়ে । এটা মঙ্গোলিয় পশুপালকদের নিত্য-নৈমিত্তিক জীবন। তাদের প্রাত্যহিক জীবনযাপনে যেখানে-সেখানে সাদা রং দেখা যায় ।

    মঙ্গোলিয় জাতি যে সাদা রং পছন্দ করে , তা যেমন জীবনযাপনের পরিবেশ , তেমনি তাদের নিত্যকার জীবনযাপন ও এই জাতির রুপ কথার সংগে সম্পর্কিত । মঙ্গোলিয় জাতি প্রধানতঃ উত্তর চীনের বিশাল তৃণভূমিতে থাকে । ওখানে শীতকালে শীতের বেশি দিন দীর্ঘস্থায়ী । তখন তৃণভূমি বরফে আবৃত । মঙ্গোলিয় জাতির লোকেরা বরফের শীতের জন্য অসুবিধা অনুভব করেন না , বরং সাদা আর বিশুদ্ধ বলে তাকে স্বজাতির পূর্ব পুরুষ আর দেবতা হিসেবে শ্রদ্ধা করেন । মঙ্গোলিয় জাতির মধ্যে এই জাতির পূর্বপুরুষের জন্ম সম্পর্কে একটি রুপকথা প্রচলিত রয়েছে । মঙ্গোলিয় জাতির মেয়ে সাইটনা এই রূপকথা প্রসংগে বলেছেন ,

    মঙ্গোলিয় জাতির প্রথম লিখিত ইতিহাস গ্রন্থে এই প্রাচীন রুপকথা রচিত আছে । এই রুপ কথায় বলা হয়েছে , নেকড়ে আর সাদা হরিণের মিলনে মঙ্গোলিয় জাতির জন্ম । সুতরাং তারা নিজেকে নেকড়ে আর সাদা হরিণের বংশধর বলে মনে করেন ।

    মানুষের দেখা আর ঐতিহ্যিক রীতিনীতির দিক থেকে সাদা রংয়ে মানুষের পছন্দ আর তৃপ্তি মেটানো যায় । আরামের দিক থেকে সাদা রং অন্যান্য রংয়ের চেয়ে আকর্ষণীয় , তা নির্মলতা , উজ্জ্বলতা , বিশুদ্ধতা আর সততার পরিচায়ক । চীনের সমাজ বিজ্ঞান একাডেমীর সংখ্যালঘুজাতি বিষয়ক গবেষণাগারের প্রফেসার হো সিং লিয়ান বলেছেন ,

    সাংস্কৃতিক দিক থেকে আচার ব্যবহারে জাতির সংস্কৃতির উপরও প্রভাব পড়ে। মঙ্গোলিয় জাতি যে রং শ্রদ্ধা করে , তার সংগেও তা সম্পর্কিত । যেমন দুধ , ছাগলের দুধ আর পশমী তাবু সাদা রংয়ের ।

    প্রফেসার হো বলেছেন , জাতির সংস্কৃতির সংগে রং পছন্দের রীতিনীতির নিবিড় সম্পর্কও আছে । মঙ্গোলিয় জাতির লোকেরা বংশপরম্পরায় তৃণভূমিতে বাস করেন । দীর্ঘকাল ধরে তৃণভূমিতে পশু পালকের জীবনযাপন করার দরুণ মঙ্গোলিয় জাতি ধীরে ধীরে মনখোলা আর নির্ভীক স্বভাব গড়ে তুলেছে । তারা উন্মুক্ত , বিশাল আর গম্ভীর সৌন্দর্য পছন্দ করেন । সাদা , শান্ত আর বিশুদ্ধ বৈশিষ্ট্য তাদের এই ধরণের রীতিনীতির সংগে খাপ খায় । যুগ যুগ ধরে মঙ্গোলিয় জনগণের এই আচার ব্যবহার ভাল লাগে ।

    মঙ্গোলিয় জাতির লোকেরা সাদা রং যে শ্রদ্ধা করেন , তা তাদের নিত্যকার জীবনযাপনেও দেখা যায় । যেমন যখন মঙ্গোলিয় জাতির লোকেরা দেবতাকে শ্রদ্ধা করেন আর অতিথিদের স্বাগত জানান , তখন তারা হাদা নামে শুভেচ্ছামূলক এক ধরণের সাদা রেশমী ওড়না উপহার দেন এবং একটি রূপার বাটি দিয়ে সাদা ঘোড়ার দুধ খেতে দেন । মঙ্গোলিয় পশুপালকরা বিশেষ করে সাদা ঘোড়া আর সাদা উট পছন্দ করেন । তারা এই দুই ধরণের প্রাণীকে তাদের পরিবারের সুখ ও সম্পত্তির পরিদর্শন বলে মনে করেন ।

    মঙ্গোলিয় জাতির আবাস- মঙ্গোলিয় তাঁবুও তাদের সাদা রংয়ের প্রতি শ্রদ্ধার পরিচায়ক । সাদা রেশমী কাপড় দিয়ে নির্মিত মঙ্গোলিয় তাঁবু আর তৃণভূমিতে চরা সাদা ভেড়ারপালে মঙ্গোলিয় জাতির সাদা রং শ্রদ্ধা করার চালচলন প্রতিফলিত হয় । মঙ্গোলিয় জাতির ইতিহাসে সুবিখ্যাত রাজনীতিক আর সেনানায়ক চেঙ্গিস খানের মৃত্যুর পর যে ৮টি সাদা তাঁবু রেখে দিয়েছিলেন , তা মঙ্গোলিয় জাতির চোখে তীর্থের মতো।

    ত্রয়োদশ শতাব্দির গোড়ার দিকে চেঙ্গিস খানের মৃত্যুর পর তার বংশধররা তার ঘোড়ায় চড়ার সময় ব্যবহৃত গদি , চাবুক আর রণক্ষেত্রে ব্যবহৃত সৈন্যদলের পতাকা ইত্যাদি এই ৮টি তাঁবুতে রেখে দিয়েছিলেন, যাতে তাদের পূর্বপুরুষের প্রতি শ্রদ্ধা করা হয় । এই শ্রদ্ধা করার জন্য বিশেষ উপাসনা বানী আর নিয়মবিধি ব্যবস্থা করা হয় । এই নিয়মবিধি অনুযায়ী , বছরের চারটি ঋতুতে আলাদা আলাদাভাবে বিরাটাকারের উপাসনা তত্পরতার আয়োজন করা হয় । তার পর বিভিন্ন অঞ্চলে বসবাসকারী মঙ্গোলিয় জাতির লোকেরা এই উপাসনা তত্পরতাকে নিজের গৌরব আর পূর্বপুরুষের প্রতি শ্রদ্ধা করা আর ইতিহাস স্মরণ করার এক ধরণের গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি বলে মনে করেন ।

    খাওয়া দাওয়ার ব্যাপারেও মঙ্গোলিয় জাতির সাদা রংয়ের সংগে সম্পর্কিত এক পূর্ণাংগ চালচলন গড়ে উঠেছে । মঙ্গোলিয় জাতির ঐতিহ্যিক রীতিনীতি অনুসারে যখন প্রাচুর্যময় ফসল পাওয়া যায় আর সেনাবাহিনী জয় লাভ করে , তখন এই ধরণের সাদা ভোজসভার আয়োজন করা হয় । এতে সৌভাগ্য আর সুখ ব্যক্ত করা হয় । এখানে যে তথাকথিত সাদা ভোজসভার কথা বলা হয়েছে , তাকে সাদা রংয়ের খাবার প্রধান ভোজসভা বলে মনে করা হয় । এই ভোজসভায় দুধজাত দ্রব্য প্রধান খাবার হিসেবে পরিবেশন করা হয় । অন্তঃমঙ্গোলিয়ার তৃণ ভূমিতে বৈচিত্র্যময় সাদা দুধজাত দ্রব্য পাওয়া যায় । যেমন মাখন , দুধ চা , দুধ মদ আর দই ইত্যাদি মঙ্গোলিয় জাতির পছন্দনীয় প্রাত্যহিক খাবার । মঙ্গোলিয় জাতির নারী আলাতেনকিমুক্ দুধজাত দ্রব্য বানাতে পারদর্শী । তিনি বলেছেন ,

    মঙ্গোলিয় জাতির ঐতিহ্যিক পদ্ধতি অনুযায়ী , টাটকা দুধ ক্রমাগত গরম হবার ভিত্তিতে রকমারি দুধজাত দ্রব্য তৈরী করা হয় । মঙ্গোলিয় জাতির বিয়ের অনুষ্ঠানেও সাদা রংকে সৌভাগ্যের প্রতীক বলে মনে করা হয় । বিয়ের সম্বন্ধ অনুষ্ঠানে উভয় পক্ষেরই হাদা নামে শুভেচ্ছামূলক সাদা রেশমী ওড়না উপহার দিতে হয়। বিয়ের সম্বন্ধের ভোজসভায় ঘটক বা ঘটকী পাত্রীপক্ষের কাছে এক বোতল মদ উপহার দেন। মদ সাদা চীনা মাটির বোতলে রাখা দরকার । এর সংগে সংগে হাদা নামে সাদা রেশমী ওড়না , দুধজাত দ্রব্যসহ বিবিধ দ্রব্যও উপহার দেয়া প্রয়োজন। পাত্রপাত্রীকে স্বাগত জানাবার সময় কোমরে একটি সাদা সূতী ওড়না জড়ানো এবং পাত্রীর সংগে মিলে এক বাটি সাদা টাটকা দুধ পান করা দরকার । বিয়ের উদযাপনী অনুষ্ঠানে উপস্থাপকের উদ্যোগে বর ও বধূর হাত দুটো একটি সাদা থলিতে ঢুকিয়ে অতিথিদের প্রতি শুভেচ্ছা জানাতে হয়।