দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে অবস্থিত চীনের তিব্বত স্বায়ত্ত শাসিত অঞ্চলের ইট্ থু জেলা ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশমিরের সংগে সংলগ্ন । সীমান্তে পেনকুং নামে বিশ্ববিশ্রুত একটি হ্রদ আছে । দেড় শো বর্গ কিলোমিটার এই হ্রদের দুই তৃতীয়াংশই এই জেলায় অবস্থিত । গত কয়েক বছরে স্থানীয় সরকারের উদ্যোগে কৃষক আর পশুপালকদের দারিদ্র্য দূরীকরণের জন্য যে সব ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে , তাতে সুফল অর্জিত হয়েছে । জেলা সরকারের কর্মকর্তা ছিয়াংফেতুচির নেতৃত্বাধীন দারিদ্র্য দূরীকরণ গ্রুপ এই সব ব্যবস্থার মধ্যে একটি ।
ছিয়াংফেতুচি দেখলে মনে হবে এক সাধারণ কৃষকের মতো । চর্ম তামাটে রঙ , মুখে মৃদু হাসি আছে , হাত দুটে কর্কশ আর বলিষ্ঠ । তিনি জেলার গণ কংগ্রেসের স্ট্যান্ডিং কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান , এই জেলায় তিনি ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে কাজ করেছেন ।
ইট থু জেলা তিব্বতের উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত , সমুদ্রসমতলের চেয়ে ৪৭০০ মিটার উঁচু । এই এলাকায় পর্বত বেশি আর জমি ও তৃণভূমি কম । গত কয়েক বছরে জন সংখ্যা বেড়ে যাওয়া আর তৃণভূমির প্রতি সরকার রক্ষামূলক ব্যবস্থা নেয়ার সংগে সংগে এই জেলার কৃষি আর পশুপালন এলাকায় বিপুল উদ্বৃত শ্রম শক্তি দেখা দিয়েছে । এতে ছিয়াংফেতুচি খুব চিন্তিত পড়লেন ।
আমাদের জেলায় বেশি দরিদ্র পরিবার ছিল । এই সব দরিদ্র পরিবারের যে কি ভাবে দারিদ্র্যমোচন করা যাবে , তা শুধু দেশের ত্রাণ আর ভর্তুকীর উপর নির্ভর করলে চলবে না । সেজন্য তিনি বাইরে চাকরি করার জন্য তাদের ব্যবস্থা করার কথা বিবেচনা করলেন । এক দিকে তারা সমাজের জন্য পরিসেবা করতে পারবেন , অন্য দিকে তারা পরিশ্রমের মাধ্যমে আয় করতে পারবেন ।
তার এই প্রস্তাব জেলা সরকারের প্রধান নেতৃবৃন্দের সমর্থন পেয়েছে । গত কয়েক বছরে তিব্বতে মহাসড়ক নির্মাণের জন্য বিপুল শ্রম শক্তি লাগল । সুতরাং ছিয়াংফেতুচি জেলার সবচেয়ে দরিদ্র কয়েকটি থানায় গ্রামীণ শ্রমিক সংগ্রহ করতে গেলেন ।
তিনি ইট্ থু জেলার দরিদ্রতম কুওপা গ্রামে গিয়েছিলেন । তার আন্তরিকতা আর পরামর্শে গ্রামবাসীরা খুব মুগ্ধ হন । মোট ৪৬জন গ্রামবাসী তার সংগে প্রথমবারের মতো জেলা নগরে যান । তাদের মধ্যে বহু লোকই পরিবার পরিজন । জেলা সরকার তাদের জন্য একটি মনোজ্ঞ অভ্যর্থনানুষ্ঠানের আয়োজন করে । সেতু , সড়ক আর জলসেচ প্রকল্প নির্মাণের তাদের ব্যবস্থা করা হয় ।
২০০১ সালে বাইরে চাকরি করার জন্য গ্রামবাসীদের ব্যবস্থার কাজ শুরু করার পর থেকে ছিয়াংফেতুচি আসলে কৃষক ও পশুপালকদের দারিদ্রমোচন দলের নেতা হয়েছেন । গ্রামীণ শ্রমিকদের মধ্যে বেশির ভাগ লোক স্থানীয় দরিদ্র পরিবারের লোক । তারা অশিক্ষিত আর চাকরি করার জন্য তাদের প্রয়োজনীয় নৈপুণ্যেরও অভাব । সেজন্য তুচি আর জেলা সরকার প্রতি বছর তাদের প্রশিক্ষণ দেন । তারা একদিকে তাদের প্রযুক্তি, তিব্বতী ও হান ভাষা , অংকবিদ্যা শেখান , অন্যদিকে পরিবেশ সংরক্ষণ আর পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ভাল লাগার আচার ব্যবহার গড়ে তোলার জন্য তাদের পরামর্শ দেন । গ্রামীণ শ্রমিকদের সংগে এক সাথে খাওয়া , থাকা আর পরিশ্রমের সুবিধার জন্য ছিয়াংফেতুচি তার জিনিসপত্রও নির্মাণস্থলে নিয়ে যান । তিনি ধৈর্যের সংগে তাদের কাজের নৈপুণ্য শেখান । কারো অসুখ হলে তিনি তাকে ওষুধ খেতে দেন বা চিকিত্সা গ্রহণের জন্য তাকে ডাক্তারের কাছে পাঠান ।
তার সাহায্যে ইট থু জেলা থেকে আসা গ্রামীণ শ্রমিকদের বার্ষিক আয় ৭ হাজার থেকে ৯ হাজার ইউয়ানে দাঁড়িয়েছে । তারা গ্রামে ফিরে গ্রামবাসীরা আনন্দের সংগে আবিষ্কার করেন যে , তারা আগের চেয়ে পরিশ্রমী , সুস্থ হয়েছেন এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা আর লেখাপড়া পছন্দ করেন । যারা বাইরে চাকরি করেন নি , তারাও বাইরে চাকরি চাওয়ার জন্য ছিয়াংফেতুচির কাছে দাবি জানিয়েছেন ।
কুওপা গ্রামের গ্রামবাসী কেসানতুংচু খুব কষ্টে জীবনযাপন করতেন । অন্যদের কাছে তার ৭ হাজার ইউয়ানেরও বেশি ঋণও ছিল । তার স্ত্রী তার কাছ থেকে বিয়ে বিচ্ছেদ করলেন । ২০০২ সালে কেসান তার বাচ্চা নিয়ে ছিয়াংফের সংগে বাইরে চাকরি করতে গেলেন । শুধু কয়েক মাস পর তিনি ১০ হাজার ইউয়ানেরও বেশি আয় করলেন । এখন কেসান তার সকল দেনা পরিশোধ করেছেন । তার একজন বন্ধু ফুপু বলেছেন ,
এখন কেসানের জীবনযাপনের মান অনেক উন্নত হয়েছে । তিনি একটি ট্রাক্টর কিনিছেন । তার স্ত্রীও তার কাছে ফিরে এসেছেন । পরিবার পরিজন প্রীতিতে থাকেন । বাড়িতে দশাধিক তিব্বতী গাই আছে ।
২০০৪ সালে ইট থু জেলা সরকারের উদ্যোগে বাইরে চাকরি ব্যবস্থা করার জন্য কৃষক ও পশুপালকদের একটু শ্রম শক্তি কোম্পানি প্রতিষ্ঠিত হয় । জেলা সরকারের পক্ষ থেকে ছিয়াংফেতুচি এই কোম্পানির কাজকর্মের প্রতি তত্ত্বাবধান আর ব্যবস্থাপনা করছেন । এই কোম্পানির উদ্যোগে সুপরিকল্পিতভাবে ২ শতাধিক গ্রামীণ শ্রমিককে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে এবং বাইরে প্রকল্প নির্মাণের কর্তব্য গ্রহণ করা হয়েছে । গত বছর স্থানীয় কৃষক আর পশুপালকরা কোম্পানির মাধ্যমে ৭ লক্ষ ইউয়ানেরও বেশি আয় করেছে ।
কৃষক ও পশুপালকদের দারিদ্র্যমোচন দল থেকে শ্রম শক্তি রফতানি কোম্পানি গড়ে তোলা পর্যন্ত ছিয়াংফেতুচি তার জন্য কর্মপ্রচেষ্টা চালিয়েছেন । কিন্তু তিনি এর মধ্যে এক পয়সার মুনাফাও পান নি । জেলার গণ কংগ্রেসের স্ট্যান্ডিং কমিটি একটি তত্ত্বাবধান সংস্থা । তার ব্যবসা আর অন্য বাণিজ্যিক তত্পরতায় অংশ নেয়া উচিত নয় । কিন্তু আমার মনে হয় , যে সব কাজ জনসাধারণের জন্য উপকৃত , সে সব কাজই করতে হবে । আমাকে সর্ব শক্তি দিয়ে সরকারের কাজ সমর্থন করতে হবে , যাতে কৃষক আর পশুপালকরা যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব দারিদ্র্যমুক্ত হন । তাদের আয় বেড়ে যাওয়া আর তাদের অর্থনীতি বিকশিত হওয়া হল আমাদের সবচেয়ে খুশির ব্যাপার ।
|