v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2005-11-30 20:35:02    
অভিবাদন সিয়াও পিং

cri
    গত ২২শে আগষ্ট চীনের প্রয়াত মহান নেতা তেং সিয়াও পিংয়ের জন্মশতবার্ষিকী, তেং সিয়াও পিংয়ের প্রতি চীনা জনগনের মমতা সুগভীর , যদিও তিনি ১৯৯৭ সালে আমাদের ছেড়ে চিরকালের জন্য চলে গেছেন , তবুও আজ পর্যন্ত চীনারা তাকে এই বলে সম্ভাষন করতে চান যে সিয়াও পিং , আপনি ভালো আছেন ? বিশ বছর আগে অর্থাত ১৯৮৪ সালের পয়লা অক্টোবর চীনের ৩৫ তমো জাতীয় দিবসে তেং সিয়াও পিং সহাস্যে থিয়েন আন মেন মঞ্চেসনসাধারনের শোভাযাত্রা পরিদর্শন করেন , পেইচিং বিশ্ববিদ্যালয়েরছাত্ররা নিজের তৈরী একটি বেনার তুলে থিয়েন আন মেন মহাচত্বর অতিক্রম করেছিলেন , বেনারে লেখা ছিলঃ সিয়াও পিং , আপনি ভালো আছেন ? সেই বছর তেং সিয়াও পিংয়ের বয়স ৮০ বছর , ছাত্রদের বয়স বিশ বছর । এই বেনার ছাত্রছাত্রীরা নিজে তৈরী করেছেন , সহস্তে লেখা অক্ষরগুলো নিজের বিছানাপত্রে এটেঁ দিয়ে তারা এই বেনারটি তৈরী করেছেন ।এই বেনার হচ্ছে তেং সিয়াও পিংকে সংস্কার ও মুক্তদ্বার নীতির সুফল পাওয়া চীনাদের একটি উপহার , এই সম্ভাষনের কথা থেকে মহান নেতার প্রতি জনসাধারনের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা ফটিয়ে তোলা হয়েছে ।

    ১৯৭৭ সালের জুলাই মাসে তেং সিয়াও পিং আবার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পর একটি বিজ্ঞান ও শিক্ষা বিষয়ক অধিবেশনে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা আবার অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নিলেন । তার এই রণনৈতিক সিদ্ধান্তের কল্যানে বেনার তৈরীকারী ছাত্রছাত্রীরা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হবার সুযোগ পেলেন । বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা দীর্ঘ দশ বছর বন্ধ হওয়ার পর সেই বছরের ডিসেম্বর মাসে আবার অনুষ্ঠিত হয় । মোট ৫৭ লক্ষ ছাত্রছাত্রী এই পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন , ছয় মাস পর অর্থাত ১৯৭৮ সালের গ্রীষ্মকালের পরীক্ষায় আবার ১১৬ লক্ষ লোক অংশ নিয়েছেন । চেচিয়ান প্রাদেশিক জলসেচ ব্যুরোর সিনিয়ার ইঞ্জিনিয়ার সুই উন পিং ১৯৭৭ সালের বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন । তিনি বলেছেন , এই পরীক্ষ আমার জীবন পরিবর্তন করেছে , এ কথা বলা যায় যে তেং সিয়াও পিংয়ের সিদ্ধান্ত চীনের বিপুল সংখ্যক যুবকযুবতীর ভাগ্য পরিবর্তন করেছে । শুধু তাই নয় , তেং সিয়াও পিং বিশ্বায়নে চীনের অংশ নেয়ার প্রয়োজনীয়তা সর্বপ্রথমে উপলব্ধি করতে পেরেছেন , তাই তিনি ১৯৭৭ সালের ২৩শে জুলাই বিদেশে ছাত্র পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিলেন । ছয় মাস পর নয়া চীনের ৫০ জন শিক্ষার্থী যুক্ত রাষ্ট্রে পৌছেন । ১৯৮৭ সাল থেকে ২০০২ সালের শেষ দিক পর্যন্ত সময়ের মধ্যে চীনের পাঁচ লক্ষ ৮০ হাজার ছাত্রছাত্রী পৃথিবীর এক শরও বেশী দেশ ও অঞ্চলে পড়াশুনা করেছেন , এদের মধ্যে দেড় লক্ষ লোক পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরে এসেছেন । তেং সিয়াও পিংয়ের অবদান শুধু একটি ঐতিহাসিক ভ্রান্তির অবসান ঘটানো নয় , তিনি চীনের এক উজ্জ্বল ভবিষ্যত সৃষ্টি করেছেন ।

    একজন বিদেশী নেতা তেং সিয়াও পিংয়ের মূল্যায়ন করে বলেছেন , তেং সিয়াও পিং ইতিহাসের উচ্চতা থেকে সমস্যা বিবেচনা করতেন । তেং সিয়াও পিং চীনা জনগনের তুলনামূলক সচ্ছল জীবনের লক্ষ্য হাসিলের জন্য চীনে সংস্কার ও মুক্তদ্বার নীতি কার্যকরী করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন । ২৬ বছর আগে পূর্ব চীনের আন হুই প্রদেশের ফোন ইয়ান জেলার সিয়াও কান গ্রামের আঠারটি পরিবার ঝুঁকি নিয়ে জমির পরিবার ভিত্তিক দায়দায়িত্ব ব্যবস্থার চুক্তিতেসই করেছে । দ্বিতীয় বছর এই গ্রামের কৃষকের মাথাপিছু আয় ২২ ইউয়ান থেকে চার শ ইউয়ান বাড়ে । তেং সিয়াও পিং এই গ্রামের পরিবার ভিত্তিক দায়দায়িত্ব ব্যবস্থা প্রশংসা করেন এবং পল্লী অঞ্চলের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার সংস্কার শুরু করেন । তেং সিয়াও পিং জীবীতকালে বার বার বলেছেন , উন্নয়ন হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার , তিনি তার প্রবন্ধসংগ্রহের তৃতীয় খন্ডে মোট পাঁচ শ' ৫৮ বার উন্নয়ন এই শব্দ ব্যবহার করেছেন । তার পরিচালনায় চীনের অর্থনীতির দ্রুত প্রসার হয়েছে । ১৯৭৮ সালে চীনের মোটউত্পাদনের মূল্য তিন শ' ৬২.৪ বিলিয়ন ইউয়ান ছিল , বর্তমানে চীনের উত্পাদনের মোট মূল্য এই সংখ্যার ৩২ গুন বেশী হয়েছে । তার জন্মস্থান-- সি ছুয়ান প্রদেশের কুয়ান আন জেলার বাসস্থান এখন একটি প্রদর্শনী কক্ষে পরিণত হয়েছে , দর্শকরা প্রদর্শনী কক্ষ পরিদর্শ করে দর্শকখাতায় নিজের মনের কথা লিখেন , এখন এই ধরনের খাতা এক শ'র বেশী হয়েছে , এই সব খাতায় তেং সিয়াও পিংয়ের সংস্কার ও মুক্তদ্বার নীতির প্রশংসা করেছেন এবং সুখী জীবনের জন্য তাদের কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেছেন । চীনের বিখ্যাত তত্ববিদ লি চুন চে বলেছেন , চেয়ারম্যান মাও ব্যতিরেকে নয়াচীন থাকত না , তেং সিয়াও পিং ব্যাতিরেকে আজকের চীন থাকত না ।

    ৪১ বছর বয়সের চান চি একটি ওষুধ কম্পানির ডিরেক্টর , বিশ বছর আগে তিনি পেইচিং বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন , তিনি ও তার সহপাঠীরা তেং সিয়াও পিংকে সম্ভাষন করার বেনার তৈরী করে থিয়েন আন মেন মহাচত্বর অতিক্রমন করেছিলেন । তিনি বলেছেন , বিশ বছর আগে চীনের পেইচিং বিশ্ববিদ্যালয় পড়াশুনার সুযোগ পাওয়ার জন্য চীনের কমিউনিষ্ট পার্টি ও সরকারকে , বিশেষ করে তেন সিয়াও পিংকে ধন্যবাদ জানাতে আমরা নিজের হাতে বেনার তৈরী করে শোভাযাত্রায় অংশ নিয়েছি , বিশ বছর পর আমরা অন্তরের অন্তস্থল থেকে ইতিহাসের মহান ব্যক্তিত্ব তেং সিয়াও পিংকে আমাদের কৃতজ্ঞা প্রকাশ করতে চাই , আমরা আবার তাকে বলতে চাইঃ সিয়াও পিং , আপনি ভালো আছেন ?

    ১৯৮৪ সালের ফেব্রুয়ারী মাসের এক দিন , তেং সিয়াও পিং সাংহাইয়ে দেখেছেন , প্রাথমিক স্কুলের ছেলেমেয়েরা কম্পিউটারের সামনে বসে খেলছে । তিনি তখনই উপলব্ধি করতে পেরেছেন যে ইন্টার নেট চীনের যুব সম্প্রদায়ের পক্ষে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । তিনি এই নির্দেশ দিয়েছেন যে ছেলেমেয়েদের ছোট বেলা থেকেই কম্পিউটার বিদ্যা শিক্ষাতে হবে । তার এই নির্দেশের কল্যানে বর্তমানে চীনে কম্পিউটারে ইন্টারনেট সংযুক্ত লোকের সংখ্যা দাড়িয়েছে সাত কোটি ৮০ হাজার । একজন নাগরিক ইন্টারনেটে লিখেছেন , আপনি চীনা জনগনের সন্তান , আপনার মাতৃভুমি ও জনগন আপনাকে গভীরভাবে ভালোবাসেন । তেং সিয়াও পিং চিরদিন চীনা জনগনের মনে থাকবেন , তার জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে আমরা আন্তরিকভাবে তেং সিয়াও পিংকে সম্ভাষন করতে চাইঃ সিয়াও পিং , আপনি ভালো আছেন ?