v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2005-11-28 11:39:14    
চীনে আয়-কর সংস্কার কোটি কোটি মানুষের মনোযোগ আকৃষ্ট করছে

cri
    সম্প্রতি চীনের আইন প্রণেতা সংস্থায় নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে " ব্যক্তিগত আয়-কর আইন" সংশোধনের প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে ।১৯৮০ সালে চীনে ব্যক্তিগত আয়-কর আইন প্রবর্তনের পর এটাই এই আইনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংশোধন। সংশোধনের প্রধান বিষয়বস্তু এই যে, অতীতে মাসিক আয় ৮০০ ইউয়ানের বেশি হলেই আয়-কর দিতে হতো , কিন্তু নতুন আইন অনুযায়ী মাসিক আয় ১৬০০ ইউয়ানের বেশী হলেই -কেবল আয়-কর দিতে হবে। তাতে ব্যাপক নিম্ন ও মাঝারি আয়ের মানুষের উপকার হবে । তাঁরা এই সংশোধনকে খুব স্বাগত জানিয়েছেন।

    নতুন সংশোধিত আয়-কর আইন অনুযায়ী , যাদের মাসিক আয় ১৬০০ ইউয়ানের নিচে, তাদের কোনো আয়-কর দিতে হবে না।

    উত্তরচীনের শানসি প্রদেশের মাদাম ছেন ইয়ুএ সিউ'র মাসিক আয় ১৭০০ ইউয়ানের মতো। নতুন আইন অনুযায়ী মাসিক আয়ের মধ্যে ১৬০০ ইউয়ান বা দুশো মার্কিন ডলার কর-মুক্ত। তিনি বলেছেন, " আমার আয় কম, বাড়ি কেনার সময়ে ব্যাংক থেকে নেয়া ঋণের সুদ মাসে মাসে কেটে নেয়, টেলিফোন ও ইণ্টার্নেট ইত্যাদি টেলিযোগাযোগ আর গাড়ি ভাড়া ইত্যাদি খাতে অনেক খরচ করতে হয়। নতুন নিয়ম অনুযায়ী ১৬০০ ইউয়ানের উপরের অংশটুকুর ওপরই শুধু নির্দিষ্ট হারে আয়-কর আদায় করা হবে। ফলে আমার আয়-কর আগের চেয়ে ৮০ ইউয়ান কম হবে। এটা আমার উপকার, তা বেশী না হলেও আগের চেয়ে কিছু উপকার তো হবেই।"

    পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, যদি পুরানো আইন অনুসরণ করে মাসিক আয় ৮০০ ইউয়ানের উপরের অংশের ওপর আয়-কর ধার্য করা হয়, তাহলে চীনের ৯০ শতাংশ লোককে আয়-কর দিতে হয়, পক্ষান্তরে নতুন আইন অনুযায়ী ১৬০০ ইউয়ানের উপরের অংশটুকুর ওপরই কেবল আয়কর আদায় করা হবে, তাহলে ৫০ শতাংশেরও বেশি লোককে কোনো আয়কর দিতে হবে না । বাকী লোকেরা অব্যাহতভাবে কর দিলেও , আগের চেয়ে কিছু কম দেয়া যাবে , কারণ তাদের মাসিক আয়ের মোট পরিমাণের মধ্যে ১৬০০ ইউয়ান হবে কর-মুক্ত। সারা দেশে বছরে চীনাদের আয়-কর খাতে মোট ২৮ বিলিয়ন ইউয়ান বাদ দেয়া হবে।

    দেশের জনসাধারণ নিজেদের আসল উপকারের জন্য এই আয়-কর সংস্কারের ওপর মনোযোগ রাখছেন। অর্থনীতিবিদরা দৃষ্টি রাখছেন: এই সংস্কার দেশের অর্থনীতির ওপর কি-রকম প্রভাব ফেলতে পারে, আর সমাজবিজ্ঞানীরা মনোযোগ রাখছেন : তাতে ধনী ও দরিদ্রদের মধ্যে ব্যবধান কমানো যাবে কি-না, এ সব বিষয়ের ওপর ।

    নতুন আইন অনুযায়ী উচ্চ আয়-ভোগীদের কাছ থেকে কর আদায়ের তত্ত্বাবধান জোরদার করা হবে, তাঁদের যথাযথভাবে নিজেদের আসল আয় অনুযায়ী আয়-কর দিতে হবে। কর -আদায় সংস্থা তাঁদের ওপর নজর রাখবে। ঠিক মতো কর না দিলে আইন অনুযায়ী জরিমানা আদায় করা হবে।

    আয়-কর সংশোধন-বিষয়ক কর্মকর্তা ইউ কুয়াংইউয়ান মনে করেন, নতুন ব্যবস্থা দেশের ধনী ও দরিদ্রদের মধ্যে ব্যবধান নিয়ন্ত্রণে আনার এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। তিনি বলেছেন, " মাসিক আয়ের মধ্যে কর-মুক্ত অংশ বাড়ানোর পর করদাতারা কম কর দিতে পারবেন। তাই নিম্ন-আয়ভোগীদের জীবনযাত্রা সুনিশ্চিত করা , আয়-বন্টনের অসমতা আর আয়ের ব্যবধান কমানো এবং সমাজের স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য নতুন আয়-কর আইন খুবই তাত্পর্যপূর্ণ।"

    মাসিক আয়ের মধ্যে আট শো ইউয়ান করমুক্ত ব্যবস্থা ১৯৯৩ সালে প্রবর্তন করা হয় । তার পর ১০ বছরেরও বেশি সময় পার হয়েছে, চীনের অর্থনীতি ও সমাজের উন্নয়ন, জনগণের আয় ও জীবনযাত্রার মানের বেশ কিছু উন্নতি হয়েছে । তাই কর-মুক্ত অংশটা যথাযথভাবে বাড়ানো প্রয়োজন। এই পরিপ্রেক্ষিতেই আয়ের মধ্যে কর-মুক্ত অংশটা ১৬০০ ইউয়ান পর্যন্ত বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। চীনের উপ অর্থমন্ত্রী লৌ চিওয়েই মনে করেন, এক দিকে নাগরিকদের বাস্তব জীবনের প্রয়োজনীয় ব্যয় বিবেচনা করতে হয়, অন্য দিকে সরকারের আর্থিক সামর্থ্যও বিবেচনা করতে হয়। তিনি বলেছেন, "আয়ের মধ্যেকার কর-মুক্ত অংশটার পরিমাণ ধার্য করা একটি জটিল সমস্যা। প্রথমত এই কর-মুক্ত অংশের পরিমাণ যে বাসিন্দাদের মৌলিক জীবনযাত্রার ব্যয় মেটাতে পারবে, তা নিশ্চিত করতে হবে। বর্তমানে চীনে মাথা-পিছু পারিবারিক জীবনযাত্রার ব্যয় ১১০০ ইউয়ানের মতো, তা'ছাড়া নিম্ন ও মাঝারি আয়ভোগীদের কর বেশি কমাতে হবে, উচ্চ আয়ভোগীদের কর কম কমানো হবে, বা এমন-কি কমানো হবে না। তা'ছাড়া বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে এবং বিভিন্ন জনগোষ্ঠির মধ্যে ভারসাম্য বা সুষম সম্পর্ক বজায় রাখার কথাও তো বিবেচনা করতে হয়।

    পেইচিং, সাংহাই, শেনচেন প্রভৃতি জায়গার বাসিন্দারা নানা বৈধ কলাকৌশল অবলম্বন করে আয়-কর আংশিকভাবে এড়িয়ে পরিবারের আয় কিছুটা বাড়িয়েছেন। যেমন , রাষ্ট্রীয়-বণ্ড কেনা, তাতে কোনো কর দিতে হয় না। তা'ছাড়া বিভিন্ন বীমা কোম্পানির কিছু লাভজনক আইটেম,আপাতত আয়-করের আওতাভুক্ত করা হয় নি।তাই সেগুলো খুব সমাদৃত হয়।

    পেইচিংয়ের মাদাম লিউ ইউ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অনেক বার রাষ্ট্রীয় বণ্ড কিনেছেন। তিনি জানিয়েছেন, রাষ্ট্রীয় বণ্ড কেনার ঝুঁকি খুব কম, এবং করও দিতে হয় না। পরে তিনি লাভজনক বীমায়ও পুঁজি বিনিয়োগ করবেন। " গত মাসে আমি কিছু রাষ্ট্রীয় বণ্ড কিনেছি, বছরে এক হাজার ইউয়ানেরও বেশি সুদ পাবো, তাতে কোনো আয়-কর দিতে হবে না, আমার মনে হয় , এতে আমার লাভ হয়।"

    বিশ্লেষকরা মন্তব্য করেছেন, এবার চীনের ব্যক্তিগত আয়-কর আইন সংশেধনে শুধু আয়ের মধ্যেকার কর-মুক্ত অংশটা বাড়ানো হয়েছে এবং উচ্চ আয়ভোগীদের কাছ থেকে কর আদায়ের ওপর তত্ত্বাবধান জোরদার করা হয়েছে । কিন্তু করের হার পরিবর্তন করা হয় নি, আয়-বন্টনের পুনর্বিন্যাস ইত্যাদি সমস্যা তো স্পর্শই করা হয় নি। পরবর্তী এক সময়পর্বে চাকরিজীবীরাই আগের মতো আয়-কর দেওয়ার প্রধান শক্তি । তাই আয়-কর আরও সংশোধন ও উন্নত করার অবকাশ থাকবে ।