
দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে বসবাসকারী ই জাতি তার সুদীর্ঘকালীন ইতিহাস আর প্রাচুর্য সংস্কৃতির কারণে অধিক থেকে অধিকতর পন্ডিতদের মনোযোগ আকর্ষণ করছে । গত কয়েক বছরে ই জাতির ধর্ম বিশ্বাস , ভাষা , কবিতা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে গবেষণা দ্রুত বিকশিত হয়েছে । বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র , জাপান প্রভৃতি দেশ ই জাতি বিষয়ক গবেষণাগার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে । আজ এই অনুষ্ঠানে ই জাতি বিষয়ক তত্ত্ব অধ্যয়ণে ব্রতী এই সব প
ন্ডিত সম্পর্কে আপনাদের কিছু বলছি আমি…
ই জাতি তত্ত্ব অধ্যয়নের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটল শহরের ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের মানব তত্ত্বের প্রফেসার হারেল স্টেভেন অসাধারণ অবদান রেখেছেন । ১০ বছর আগে সিয়াটলে তার উদ্যোগে দেশ-বিদেশের পন্ডিতরা ই জাতি তত্ত্ব সংক্রান্ত প্রথম আন্তর্জাতিক সেমিনারের আয়োজন করেছেন । তার পর এই ধরণের সেমিনার জার্মানী আর চীনেও অনুষ্ঠিত হয় । এ পর্যন্ত মোট ৪ বার আয়োজিত হয়েছে । দেশ-বিদেশের বহু ই জাতি তত্ত্ব পন্ডিতরা এই সেমিনারে অংশ নেয়ার জন্য গৌরব বোধ করেন ।
হারেল লম্বা, ভারী এবং তার মাথাভর্তি টাক । অধ্যয়নের কাজ চালাবার জন্য তিনি বছরে প্রায় অর্ধেক সময় সিছুয়ান , ইয়ুননান , কুইচৌ প্রভৃতি ই জাতি অধ্যুষিত এলাকায় কাটান । তিনি ই জাতির পুরুষদের ঐতিহ্যিক পোষাক পরেন , ই জাতির গ্রামে গ্রামে ঘুরে বেড়ান । লম্বা দেহে তার পোষাক একটু

ছোট ও সংকুচিত দেখায় । এতে হারেল মোটেই এ দিকে খেয়াল করেন না ।
হারেল ই ভাষা আর হান ভাষায় স্থানীয় বাসিন্দাদের সংগে কথাবার্তা বলেন । এখানে বহু লোক তাকে চেনেন এবং তার সংগে কথাবার্তা বলতে পছন্দ করেন । সিছুয়ান প্রদেশের লিয়াংসান ই জাতি স্বায়ত্ত শাসিত বিভাগে অনুষ্ঠিত চতুর্থ ই জাতি তত্ত্ব বিষয়ক
সেমিনারে হারেল সংবাদদাতাকে সাক্ষাত্কার দিয়েছেন । তিনি বলেছেন , বিশাধিক বছর আগে ই জাতি তত্ত্বের পন্ডিত কম ছিলেন । তিনি ই তত্ত্বকে তার অধ্যয়নের বিষয় হিসেবে বেছে নিলেন । এখন ই জাতি আর ই জাতি বিষয়ক তত্ত্ব তার জীবনের এক অংশে পরিণত হয়েছে ।
যে দিন আমি ই জাতি বিষয়ক তত্ত্ব অধ্যয়ন শুরু করেছি , সে দিন ওটা আমার জীবনের একটি প্রয়োজনীয় চাহিদায় পরিণত হয়েছে । আমি দেশের অন্যান্য পন্ডিতদের সংগে মিলে ই জাতি তত্ত্ব বিষয়ক দুটো বই রচনা করেছি । ই জাতি বিষয়ক অধ্যয়নের সংগে সংগে আরো কিছু রচনা প্রকাশিত হবে ।
আসলে চী

নের অন্যতম পুরানো জাতি হিসেবে ১৯তম শতাব্দির শেষার্ধ থেকে বিদেশী পন্ডিতরা ই জাতির ওপর মনোযোগ দিয়েছে । তখন ইউরোপের পন্ডিত , পর্যটক আর ধর্মপ্রচারকরা ই জাতি অধ্যুষিত এলাকায় তদন্ত চালিয়ে সংশ্লিষ্ট প্রবন্ধ প্রকাশ করেছেন । বিংশ শতাব্দির বিশ থেকে তিরিশের দশকে চীনের বিখ্যাত সমাজ বিজ্ঞানী ফি সিয়াও থুং প্রমুখ পন্ডিতরা ই জাতি তত্ত্ব অধ্যয়নের ওপর খুব গুরুত্ব দেন । তবু গত শতাব্দির আশির দশক থেকেই ই জাতি তত্ত্ব
একটি প্রকৃত গবেষণার বিষয়ে পরিণত হয়েছে । চীনে ই জাতি তত্ত্ব অধ্যয়নের জন্য কতকগুলো বিশেষ ইনস্টিটিউট আর বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে । বেশ কিছু পন্ডিত এই অধ্যয়নের কাজে নিয়োজিত থাকেন । যুক্তরাষ্ট্র , জার্মানী , জাপান প্রভৃতি দেশের মানব তত্ত্ব পন্ডিতরাও ই জাতি অধ্যুষিত এলাকায় গিয়ে তদন্ত আর গবেষণার কাজ শুরু করেন ।
জাপানের খানাকাও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসার কেনজি সানো বহু বছর ধরে ই জাতির ধর্মবিশ্বাস নিয়ে অধ্যয়নের কাজে নিয়োজিত থাকেন । আধুনিক সমাজে পুরানো যুগের ঐতিহ্য যে কেমন করে উত্তরাধিকার সূত্রে গ্রহণ করা হবে , সে সম্বন্ধে তিনি বিশেষ একটি তত্ত্ব উপস্থাপন করেছেন । বর্তমানে তিনি একজন সুবিখ্যাত ই জাতি তত্ত্বের পন্ডিত হয়েছেন । তিনি মনে করেন যে , ই জাতির ধর্ম বিশ্বের এমন অন্য

তম প্রাচীন ধর্ম , যা এখনো সবচেয়ে ভাল অবস্থায় সংরক্ষিত আছে । ই জাতি তত্ত্ব অধ্যয়নের মাধ্যমে তিনি এই সত্যতা আবিষ্কার করেছেন যে , তা জাপানী জাতি সম্পর্কে আরো বেশি জানার অনুকুল হবে ।
আমি মনে করি যে , লোকেরা সাধারণতঃ নিজের পেছনের জিনিস দেখতে পান না । সংস্কৃতিও একই কথা । আমি জাপানী জাতির আচার ব্যবহার বিষয়ে অধ্যয়ন করি । আমার মনে হয় , নিজের সংস্কৃতি বাইরের দিক থেকে দেখা উচিত । জাপানেও প্রাচীন ধর্ম আছে । আমার মনে হয় , পি মু অর্থাত ই জাতির ধর্মপ্রচারক বিষয়ক সংস্কৃতি গবেষণা করার ফলে আমি জাপানের সমাজের আচার ব্যবহার সম্বন্ধে আরো গভীরভাবে জানতে পারবো ।
পি মু ই জাতির ধর্মপ্রচারক । ই জাতিতে পি মুর কর্তব্যঃ পূর্ব পুরুষ , প্রকৃতি আর দেবতার সংগে মানুষের যোগাযোগের দায়িত্ব পালন করা । উচ্চ শিক্ষিত পি মু দর্শন , চিকিত্সা আর ভূতত্ত্ব জানেন । গত সহস্রাধিক বছর ধরে পি মু ই জাতির ঐতিহ্যিক সংস্কৃতির উত্তরাধিকার সূত্রে গ্রহণ করার দায়িত্ব পালন করেন । কেনজি সানো আমাদের বলেছেন , একবার যখন তিনি ই জাতি অধ্যুষিত এলাকায় পরিদর্শন করছিলেন , তখন তিনি অসুস্থ ছিলেন । স্থানীয় একজন পি মু তাকে আরোগ্য করলেন । তিনি মনে করেন যে , পি মু সংস্কৃতির নিজের লিখিত ভাষা আছে । এই সংস্কৃতি বিশ্বের সংস্কৃতির উত্তরাধিকার হিসেবে গ্রহণ করা উচিত ।
চীনের অভ্যন্তরীণ ই জাতি বিষয়ক পন্ডিতদের সংগে আদান প্রদান জোরদার করা এবং আরো গভীরভাবে ই জাতি তত্ত্ব গবেষণা করার জন্য বহু বিদেশী পন্ডি ত হান ভাষা আর ই ভাষা শিখতে শুরু করেন । মার্কিন ওহাইয়ো অঙ্গরাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মিঃ মার্ক এ. বেন্দার তাদের মধ্যে একজন । তিনি ই জাতির কবিতার নিবিড় ভক্ত । বিশেষ করে ই জাতির কবিদের কবিতা আবৃত্তি শুনতে পছন্দ করেন । তিনি বলেছেন , প্রাচীন হোক বা আধুনিক হোক না কেন , ই জাতির কবিতার বিষয়বস্তু প্রকৃতির পরিচায়ক । বর্তমানে তিনি ই জাতির কতকগুলো কবিতা ইংরেজী ভাষায় অনুবাদ করছেন ।
ই জাতির কবিতা প্রাচুর্যময় । এ পর্যন্ত আমরা ৬৭টি কবিতা অনুবাদ করেছি । এর মধ্যে বেশ কয়েকটি যুক্তরাষ্ট্রে প্রকাশিত হয়েছে । ই জাতির কবিতা অনুবাদ করতে হলে এই জাতির সংস্কৃতি জানতে হয় । আমি ই জাতির কবি আর লোকদের সংগে একসাথে কাজ করি । অনুবাদের সময় সমস্যা থাকলে তারা আমাকে বুঝিয়ে দিতে পারেন ।
তিনি আরো বলেছেন , এখন বহু বিদেশী ই জাতির সংস্কৃতি জানতে আগ্রহী । ই জাতি সম্বন্ধে জানতে বিদেশীদের সহায়তা করার জন্য তারা আরো বেশী বই অনুবাদ করবেন ।
|