চীনের শানতুং প্রদেশের থাইআন শহরে অবস্থিত। পাহাড়ের প্রধান শৃংগের উচ্চতা সমুদ্র সমতল থেকে ১৫৪৫ মিটার। থাইসান পাহাড়ের দর্শনীয়স্থানে তিন শতাধিক শৃংগ আছে। তা ছাড়া ওখানে দু'হাজারাধিক প্রাচীন গাছ এবং ১১০টিরও বেশী প্রাচীন ধ্বংসাবশেষ রয়েছে। চীনের ইতিহাসে ৭২ জন রাজা অথবা অন্যান্য প্রশাসক থাইসান পাহাড়ে পূজা করতে যেতেন এবং ওখানে জাঁকজমকপূর্ণ পূজা তত্পরতার আয়োজন করতেন।১৯৮৭ সালে ইউনেস্কো থাইসান পাহাড়কে বিশ্বের প্রাকৃতিক আর সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারের তালিকাভূক্তকরেছে। জাপানী পযটর্ক য়াজিমা হাইনাকি মনে করেন, প্রাকৃতিক দৃশ্য আর সাংস্কৃতিক আকষর্ণ স্বাভাবিকভাবে এক সঙ্গে মিশে যাওয়ার ফলে থাইসান পাহাড় বিশ্ব বিখ্যাত।
থাইসান পাহাড় নি:সন্দেহে চীনের এক নম্বরবিখ্যাত পাহাড়। এখানে এসে আমি খুব আনন্দিত। থাইসান পাহাড় যেমন চীনা জাতির উত্তরাধিকার আর ইতিহাসের একটি সংযোগ সেতু।একজন বিদেশী হিসেবে এখানে সব কিছু অক্ষতভাবে সংরক্ষিতদেখে আমি খুব আনন্দিত। কারন এটা হল ইতিহাসের স্মৃতি স্তম্ভ। থাইসান পাহাড় পরিদর্শনের পদ্ধতি অনেক। অধিকাংশ পযটর্ক প্রথমে গাড়ীতে পাহাড়ের মাঝখানে জনতিয়েনমেন পৌঁছার পর ক্যাবলে পাহাড়ের শৃংগ নানতিয়েনমেনে পৌঁছেন। তারপর পাহাড়রের শৃংগে দাঁড়িয়ে পাহাড়ের দৃশ্য উপভোগ করেন। গাড়ীতে অথবা ক্যাবলে বাইরের দৃশ্য সবই নজরে পড়ে। অবশ্যই যারা পাহাড় আরোহনের মজা উপলদ্ধি করতে চান তারা হেঁটে হেঁটে পাহাড়ের উপর আরোহন করতে পারেন। তবে থাইসান পাহাড় আরোহন করা সত্যি সহজ কাজ নয়। পাহাড়ের গোড়া থেকে শৃংগ পযর্ন্ত শুধু একটি পথ আছে।এই পথ মোট সাত হাজারাধিক সিঁড়ি আছে। এই পথে বেয়ে পাহাড়ের শৃংগে আরোহন করা সত্যি একটি কষ্টকর ব্যাপার। তবে যারা হেঁটে পাহাড়ে আরোহন করতে পছন্দ করেন তাদের সংখ্যা মোটেই কম নয়। তাদের মধ্যে অনেকেই বৃদ্ধ-বৃদ্ধা। অনেক চীনা লোক থাইসান পাহাড় আরোহন করাকে জীবনের একটি মহান ঘটনা বলে মনে করেন। পাহাড়ের শৃংগে একজন বৃদ্ধকে পাওয়া গেল যিনি পাহাড়ের গোড়া থেকে শৃংগে আরোহন করেছেন। তিনি সংবাদদাতাকে বললেন, বিশ বছর আগে তিনি থাইসান পাহাড়ে বেড়াতে এসেছিলেন।এবার তিনি আরেকবার থাইসান পাহাড় আরোহন করেছেন। তিনি আনন্দের সঙ্গে বললেন,বিশ বছর আগে আমি এখানে পরিদর্শন করতে এসেছিলাম ।তখন আমার বয়স কম। বিশ বছর আগে পাহাড়ে ক্যাবলের ব্যবস্থা ছিল না। পথও আজকের মতো ছিল না।এখন ক্যাবলের ব্যবস্থা হয়েছে এবং পথগুলো পুণনিমির্ত হয়েছে। সে সময় হেঁটে আরোহন ছাড়া কোন উপায় ছিল না।
শৃংগের আয়তন বেশ বড় না হলেও সেখানে দোকানপাট এবং হোটেল আছে। আমোদ-প্রমোদের প্রকল্পও কম নয়। পাহাড়ের শৃংগে যে সড়ক আছে তার নাম খুব শ্রুতিমধুর। এই সড়কের নাম হল 'আকাশ সড়ক'। এই সড়কের ছোট-বড় দোকাপাটগুলো প্রাচীন শৈলীর স্থাপত্য। দেখতে খুব মনোরম। সাধারণত যারা পাহাড়ের তলা থেকে ধাপে ধাপে আরোহন করেছেন তারা পাহাড়ের শৃংগে এক রাত কাটান। পরের দিন শৃংগ সূর্যোদয় উপভোগ করেন। অনেক পযটর্ক এমনকি সারা রাত পাহাড়ের শৃংগের বিভিন্ন দোকানে ঘুরে ঘুরে জিনিসপত্র দেখেন অবথা বিভিন্ন খাবার আস্বাদন করেন। 'আকাশ সড়কে' একটি ছোট রেস্তোরাঁ আছে যেখানে শুধু শানতুং প্রদেশের বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন খাবার পাওয়া যায়। দু'জন আইরিশ পযটর্ক এক ধরনের পিঠা খাচ্ছিলেন। তাদের মধ্যে এমিয়া নামে একজন মহিলা বললেন, থাইসান পাহাড় তাঁর খুব পছন্দ হয়েছে। তিনি বললেন,এটা আমাদের প্রথম চীন সফর। থাইসান পাহাড় খুবই সুন্দর। দেখতে সুমহান। আসলে অনেক অনেক দিন আগে চীনা লোকেরা থাইসান পাহাড়ের সৌন্দর্যের প্রশংসা করেন। দু' হাজারাধিক বছর আগে চীনের বিখ্যাত চিন্তাবিদ কনফুসিয়াসের একটি বিখ্যাত কথা ছিল। তিনি বললেন, 'থাইসান পাহাড় আরোহন করার পর অন্যান্য পাহাড় কিছুই নয়। আমাদের এবারকার শানতুং ভ্রমণের পরবর্তী ধাপ হল কনফুসিয়াসের জন্মস্থান---শানতুং প্রদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের ছুইফু শহর।
গাড়ীতে থাইআন থেকে ছুইফু দু'ঘন্টার পথ। খৃষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীতে কনফুসিয়াসের জন্ম । তিনি চীনের বিখ্যাত চিন্তাবিদ, রাজনীতিবিদ এবং শিক্ষাবিদ।তাঁর জন্মস্থানে তার সঙ্গে সম্পর্কীত পুরাকীর্তি অনেক। কিন্তু পযর্টকদের সবচেয়ে পছন্দ জিনিস হল 'কনফুসিয়াস ভবনের খাবার'। এই খাবারে চীনের নানা স্থানের বিখ্যাত খাবারের সার অন্তর্ভূক্ত।পেইচিং ওয়াংফূ হোটেলের বিখ্যাত বাবুর্চি লি ছি সেন বললেন,এই খাবার দেখতে সুন্দর, খেতে সুস্বাদু। এতে চীনের বিভিন্ন জায়গার খাবারের স্বাদ পাওয়া যায়। খাবারের উপাদান বৈচিত্র্যময়। অনেক উপাদান বিশেষ সরবরাহ -কারীদের কাছ থেকে পাওয়া যায়। তাঁর ব্যাখ্যা শুনে আপনি কি এই খাবার আস্বাদন করতে চান? জানা গেছে, চীনের অনেক হোটেলে কনফিউসেস ভবনের খাবার পাওয়া যায়।কিন্তু ছিফুর কনফিউসেস ভবনের খাবার খাটি। সুতরাং চীন ভ্রমনের সুযোগ পেলে অবশ্যই কনফিউসিয়ার জন্মস্থানে 'কনফিউসিয়াস ভবনের খাবার' আস্বাদন করতে চান।
|