জার্মানির শক্তিসম্পদের মধ্যে তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস প্রধানত আমদানির উপর নির্ভরশীল। কয়লার আমদানিও দিন দিন বাড়ছে। শক্তিসম্পদ সংক্রান্ত নীতিতে জার্মান সরকার শক্তি-সাশ্রয় ও রি-সাইকেলযোগ্য শক্তিসম্পদ উন্নয়নের উপর গুরুত্ব দেয়।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০০৪ সালে জার্মানির বিদ্যুত সরবরাহের ৪৯ শতাংশ কয়লা থেকে উত্পাদিত হয় আর ২৮ শতাংশ পারমাণবিক শক্তি থেকে। বিদ্যুতের ১০ শতাংশ প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে আর ৯ শতাংশ জল ও বায়ু থেকে উত্পাদিত হয়। বিদ্যুত ব্যবহার হলো শক্তিসম্পদ ব্যবহারের প্রধান অংশ। বিদ্যুতের সাশ্রয় হলে কয়লা ও প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবহারও কম হয়। সুতরাং জার্মান সরকার বিদ্যুতের সাশ্রয়কে খুবই গুরুত্বপূর্ণ স্থানে দিয়েছে।
জন সাধারণের গার্হস্থ বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি কেনার সময়ে তার বিদ্যুত ব্যবহারের অবস্থা সহজে বোঝার জন্য জার্মানি ইউরোপীয় ইউনিয়নের "শক্তিসম্পদের ব্যবহর প্রতীক সংক্রান্ত নীতি" অনুসারে পণ্যের শক্তিসম্পদের ব্যবহারের লেবেল সংক্রান্ত ব্যবস্থা চালু করেছে। জনসাধারণের বিদ্যুতের সাশ্রয়ের অভ্যাস গড়ে তোলার জন্য সরকার টিভি, সি.ডি.প্লিয়ার, কম্পিউটার ও অন্যান্য বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার না করার সময়ে পুরোপুরিই সুইচ বন্ধ করার প্রস্তাব দিয়েছে। জার্মানির ফেডারেল পরিবেশ ব্যুরোর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রায় ১১ শতাংশের বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি পুরোপুরি বন্ধ না করার অবস্থায় ব্যয় হয়েছে।
জার্মানির শীত্কাল লম্বা বলে দালানকোঠার হিটিং ব্যবস্থার শক্তিসম্পদের ব্যবহার অন্য একটি প্রধান ক্ষেত্র। বহু বছর ধরে জার্মান সরকার দালানকোঠার হিটিং-সংরক্ষণ প্রযুক্তি উন্নয়নের মাধ্যমে শক্তি সাশ্রয়ের চেষ্টা চালাচ্ছে। কেউ জার্মানিতে বাড়ি ভাড়া করা অথবা কেনার সময় বাড়ির মালিকদের তাকে "শক্তির ব্যবহারের তালিকা" দেখাতে হবে। তালিকায় প্রতি বছরে দালানের শক্তি ব্যবহারের অবস্থা স্পষ্টভাবে লেখা উচিত, যেমন হিটিং, এয়ার কন্ডিশন ও গরম পানি সরবরাহ ব্যবস্থার বিদ্যুত ব্যবহার।
শক্তিসম্পদ সরবরাহের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য জার্মানি রি-সাইকেলের উন্নয়নকে শক্তিসম্পদ নীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে গ্রহণ করেছে। ২০০৪ সালের আগস্ট মাসে জার্মানী "রি-সাইকেল শক্তিসম্পদ সংক্রান্ত আইন" জারি করে। এই আইনে বলা হয়েছে, ২০২০ সালে রি-সাইকেল শক্তিসম্পদ থেকে উত্পাদিত বিদ্যুত মোট বিদ্যুত উত্পাদনের ২০শতাংশ হবে।
দীর্ঘ মেয়াদী লক্ষ্য হাসিলের জন্য জার্মান সরকার রি-সাইকেল সম্পদ উন্নয়ন-সম্পর্কিত "ভবিষ্যত পুঁজি বিনিয়োগ পরিকল্পনা" তৈরী করেছে। ২০০৪ সালের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত জার্মানী সরকার ১.৭৪ বিলিয়ন ইউরোর পুঁজি বিনিয়োগ করেছে। রি-সাইকেল সম্পদ উন্নয়ে জার্মান সরকার প্রতি বছর ৬ কোটিরও বেশী ইউরো পুঁজি বিনিয়োগ করেছে। তাতে রি-সাইকেল সম্পদ-প্রাপ্ত বিদ্যুতের পরিমান ক্রমাগত বাড়ছে। ২০০৪ সালে জার্মানিতে রি-সাইকেল সম্পদ থেকে উত্পাদিত বিদ্যুত সারা দেশের বিদ্যুত সরবরাহের ১০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
"২০০৪ সালে জাতীয় টিকসই উন্নয়ন রিপোর্টে" জার্মান সরকার বিকল্প জ্বালানি ও নতুন প্রেরণা উন্নয়ন রণনীতি প্রণয়ন করেছে, যাতে তেলের উপর নির্ভরশীলতা কম হয়।
বিকল্প জ্বালানি ও নতুন প্রেরণা উন্নয়ন রণনীতি অনুযায়ী, যদিও জীব-ভিত্তিক তরল জ্বালানি (BTL) অল্পদিনের মধ্যে বিরাটভাবে উত্পাদন করা অসম্ভব হলেও দীর্ঘ ও মাঝারি মেয়াদে BTL'র উন্নয়নের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। BTL'র কাঁচামালের দাম কম, পাওয়া সহজ এবং রি-সাইকেল ও পরিবেশের দূষণমুক্ত হওয়ার প্রাধান্য আছে। ওয়াল্কসওয়গেন ও ব্যাঞ্জ ইত্যাদি গাড়ী কম্পানি সম্প্রতি জার্মানীর কৃষি মন্ত্রণালয়ের কাছে দেয়া রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, ঐতিহ্যিক জ্বালানির তুলনায় BTL এর পুড়া গ্রীনহাউস গ্যাস ৬১ থেকে ৯১ শতাংশ কম। এই দু'টি গাড়ী কম্পানি এখন BTL ব্যবহৃত গাড়ীর উত্পাদনকে নিজেদের মাঝারি মেয়াদের উন্নয়ন রণনীতি হিসেবে বিবেচনা করছে। সঙ্গে সঙ্গে এই দু'টি কম্পানি জ্বালানি বেটারি গবেষণায় বেশী নজর রাখছে যাতে দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনায় হাইড্রগেন জ্বালানি ব্যবহৃত হতে পারে।
|