v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2005-11-21 20:52:42    
চীনের মানব-বাহী মহাকাশ কর্মসূচী নতুন পর্যায়ে উন্নত হয়েছে(ছবি)

cri
    চীনের "শেনচৌ" ৬ নম্বর মানব-বাহী নভোযান মহাশূন্যে পাঁচ-দিন যাত্রার পর গত ১৭ই অক্টোবর সাফল্যের সঙ্গে পৃথিবীতে ফিরে এসেছে। দু'জন চীনা নভোচারী নভোযান থেকে বেরিয়ে হাশি মুখে হাত নেড়ে নেড়ে সবাইকে সালাম দিয়েছেন। এতে চীনের মানব-বাহী নভোযানের দ্বিতীয় মহাশূন্য যাত্রা সাফল্যের সঙ্গে সমাপ্ত হয়েছে। এতে প্রতীয়মান হয় যে, চীনের মানব-বাহী নভোযান সংক্রান্ত প্রযুক্তির বিরাট অগ্রগতি হয়েছে।

    "শেন চৌ"৬ নম্বর নভোযান গত ১২ই অক্টোবর উত্তর-পশ্চিম চীনের চিয়ো ছুয়ান উপগ্রহ উতক্ষেপন কেন্দ্রে দু'জন চীনা নভোচারী বহন করে উতক্ষেপন করা হয়। চীনের মানব-বাহী কর্মসূচীর উপ-মহাপরিচালক হু শি সিয়াং মনে করেন যে, শেনচৌ ৬ নম্বর নভোযানের সাফল্য হলো চীনের মানব-বাহী মহাকাশ কর্মসূচী দ্বিতীয় পর্যায়ের রণনীতির এক শুভ সূচনা।

    "চীনের মানব-বাহী মহাকাশ কর্মসূচী তিনটি পদক্ষেপ আছে। এবার শেনচৌ ৬ নম্বর নভোযানে দু'জন নভোচারী বহন করে মহাশূন্যে কয়েকদিন ধরে কাজ করেছেন। তা হলো দ্বিতীয় পর্যায়ের রণনীতির সূচনা।"

    ১৯৯২ সালে চীনের মানব-বাহী মহাকাশ কর্মসূচী হাতে নেয়া হয়। সেই সময়ে তিনটি পদক্ষেপ নেয়ার কর্মসূচী প্রণয়ন করা হয়। এই কর্মসূচী অনুযায়ী প্রথম পদক্ষেপ হলো মানব-বাহী মহাকাশযানের মহাকাশে যাত্রার বাস্তবায়ন করা। এরপর আস্তে আস্তে কয়েক দিন ধরে বহু নভোচারীদের মহাশূন্যে যাত্রার বাস্তবায়ন করা, নভোযান থেকে বেরিয়ে নভোচারীদের বাইরে কাজ করা আর বিভিন্ন নভোযানের সংযুক্ত করা ইত্যাদি মৌলিক প্রযুক্তি বাস্তবায়ন করা। অবশেষে মানব থাকা মহাশূন্য স্টেশন স্থাপন করা। এই শ্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য চীন নভোযান ও রকেটের গবেষণা শুরু করেছে। দশাধিক বছরের প্রয়াসে ২০০৩ সালে চীন শেনচৌ ৫ নম্বর নভোযান সাফল্যের সঙ্গে উতক্ষেপন করেছে। চীনের প্রথম নভোচারী মহাশূন্যে ২১ ঘন্টার যাত্রা করেছেন। রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের পর চীন তৃতীয় মানব-বাহী নভোযানের অধিকারী দেশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাতে চীনের মানব-বাহী মহাকাশ কর্মসূচী প্রথম পদক্ষেপ হাসিল হয়েছে। দু'বছর পর চীন আবার সাফল্য জনকভাবে মানববাহী নভোযান ইতক্ষেপন করেছে। কিন্তু এবার নভোচারী একজন থেকে দু'জন হয়েছে এবং যাত্রার সময় একদিন থেকে ৫দিনে বেড়েছে। দু'জন নভোচারী প্রথমবারের মতো মহাশূন্য বৈজ্ঞানিক পরিক্ষায় অংশ নিয়েছেন।

    চীনের মানব-বাহী মহাকাশ কর্মসূচীর প্রধান ডিজাইনার ওয়াং ইয়ুং জি বলেছেন, পাঁচ দিন ধরে দু'জন নভোচারীর মহাশূন্যের যাত্রা সার্বিকভাবে শেনচৌ নভোযানের সামর্থ্য পরিক্ষা করেছে। চীনের মানব-বাহী মহাকাশ কর্মসূচীর সূচনা রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে কয়েক দশক দেরী হলেও এখন এ ক্ষেত্রে চীনের প্রযুক্তির মান পৃথিবীর প্রথম সারিতে উন্নীত হয়েছে। তিনি বলেছেন:

    "রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের নভোযান উতক্ষেপনের চল্লিশ বছর পরেই কেবল উতক্ষেপন করা হয়। কিন্তু তাদের এখনকার তুলনায় আমাদের প্রযুক্তি পিছিয়ে নেই।"

    শেনচৌ ৬ নম্বর নভোযান বর্তমানে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ব্যাসের নভোযান এবং তিনজন নভোচারী বহন করা যায়।

    চীনের মানব-বাহী নভোযানের প্রধান ডিজাইনার জাং পো নান জানান, নভোযানের ভেতরে নভোচারীদের জীবন ও কাজের জন্যে প্রয়োজনীয় বিভিন্ন রকম দৈনন্দিন জিনিস রাখা হয়। নভোযারীরা সেখানে সত্যিকার বাড়ির মতো আরাম বোধ করেন।

    "নভোযানের ভেতরে একটি গুড়া-সংগ্রহ যন্ত্রপাতি আছে, যাতে নভোচারীদের খাবারের গুড়া বা পানি নভোযানের অন্য জায়গায় ভেসে না যায়। নভোচারীরা ঘুমানো বেগে সুয়ে থাকে।"

    লাং-মার্চ২F রকেট শেনচৌ ৬ নম্বর নভোযানটি উতক্ষেপন করেছে। লাং-মার্চ২F রকেট হলো চীনের নিজস্ব গবেষণার ভিত্তিতে প্রণীত সবচেয়ে ভারী, সবচেয়ে লম্বা এবং সবচেয়ে জটিল রকেট। এই রকেটের প্রধান ব্যবস্থার বিকল্প আছে, যাতে প্রধান ব্যবস্থার সমস্যা হলে বিকল্প ব্যবস্থা তাত্ক্ষনিকভাবে ভূমিকা পালন করা যায়।চীনের মহাকাশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি গোষ্ঠীর ম্যানেজার জেনারেল জাং ছিং ওয়েই জানান, শেনচৌ ৬ নম্বর উতক্ষেপনের জন্য তারা ১৭টি গুরুত্বপূর্ন প্রযুক্তির রূপান্তর করেছে। এতে শুধু রকেটের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত হয়েছে তা নয়, নভোচারীদের আরামও বেড়েছে।

    "শেনচৌ ৫ নম্বর উতক্ষেপনের পর ১২০সেকেন্ড থেকে ১৬০ সেকেন্ডের মধ্যে নভোযানের কম্পের কারণে নভোচারীদের অস্বস্তি বোধ করে। তাই আমরা রকেটের কম্প ফ্রিকুন্সির পুনর্বিন্যাস করেছি। এভাবে নভোযারীদের আরাম হবে। এছাড়া, আমরা রকেটে চিত্র ব্যবস্থা স্থাপন করেছি যাতে পৃথিবীতে সরসরি নভোযানের অবস্থা অবলোকন করা যায়।"

    দু'বছরের মধ্যে চীন দু'বার মানব-বাহী মহাকাশযানের অভিযাত্রা সুন্দরভাবে বাস্তবায়ন করেছে। চীনের মানব-বাহী মহাকাশ প্রযুক্তি দিন দিন পরিপক্ক হচ্ছে। মানব-বাহী মহাকাশ কর্মসূচীর উপ-মহাপরিচালক হু শি সিয়াং বলেছেন:

    "২০০৭ সালে চীনের নভোচারীরা নিজেদের তৈরি করা মহাশূন্য কাপড় পরে নভোযানের বাইরে কাজ করবেন। ২০০৮ বা ২০০৯ সালে নভোযানের সংযুক্তি বাস্তবায়ন করব। তখন আরো বেশী চীনা নভোচারী মহাশূন্যে যাত্রা করবেন।"