v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2005-11-18 18:25:54    
বরফে আবৃত মালভূমির মা ও শিশুর স্বাস্থ্যরক্ষা

cri
    এ বছরের ২রা আগস্ট ২৫ বছর বয়সী তিব্বতী মেয়ে ছিরেনচোমার সবচেয়ে আনন্দের দিন । এ দিন তিনি তাঁর প্রথম সন্তানের মা হন । দ্বিতীয় দিন সন্ধ্যার দিকে আমাদের সংবাদদাতা তিব্বতের লিনচি এলাকার মাতৃমঙ্গল ও শিশু হাসপাতালে তাঁর সঙ্গে দেখা করেছেন । তখন তিনি দুটি বড় বড় চোখে পাশে এক ছোটো খাটে শুয়ে থাকা মেয়েকে দেখছিলেন।চোমা ও শিশুকে দেখাশোনার জন্যে  চোমার শ্বাশুড়ি ও স্বামী এ কয়েক দিন হাসপাতালে রয়েছেন ।

     চোমার বাড়ি লিনচি মাতৃমঙ্গল ও শিশু হাসপাতাল থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের লিনচি জেলার বুউচিউ থানায় অবস্থিত । চোমা বলেছেন,জনশুন্য বিশাল তিব্বতে জীবনযাপনকারীদের পক্ষে ৪০ কিলোমিটার বেশী দূর নয় । এই হাসপাতালে আমি গর্ভধারণের পরীক্ষা গ্রহণ করেছি এবং বাচ্চার জন্ম দিয়েছি।গর্ভের পরীক্ষা ও প্রসব করতে যে খরচ লাগে তা আমাদের সামর্থ্যের মধ্যে । 

    চোমা বলেছেন ,তার মেয়েকে জন্মের ২৪ ঘন্টার মধ্যে লীভার টিকা ও বসন্তের টীকা দেয়া হয় । তাছাড়া হাসপাতালটি তাঁকে বাচ্চার নানা টীকা দেয়ার তালিকা দিয়েছে । বাসায় ফিরে আসার পর তিনি তালিকাটি থানার ক্লিনিককে দিয়েছেন । ক্লিনিকের চিকিত্সকরা তালিকাটি অনুসারে তাঁকে সন্তানের নিয়ে টীকা নিতে ডাকবেন । তিনি জেলা মাতৃমঙ্গল ও শিশু হাসপাতালে আরও দশ-বারো দিন থাকবেন । বাসায় ফেরার পর তাঁরা তিব্বতীজাতির রীতিনীতি অনুযায়ী মন্দিরে যাবেন । মন্দিরের লামা তাঁদের অনুরোধক্রমে তাঁর মেয়েকে এক নাম দেবেন।

    চোমা ছাড়া লিনচি মাতৃমঙ্গল ও শিশু হাসপাতালে আশেপাশে অঞ্চলের সাত-আটজন গর্ভবতী প্রসবেরঅপেক্ষায় আছেন ।অতীতে তিব্বতীনারীরা নিজের বাড়িতে সন্তান জন্ম দিতেন । চোমার মতো এই সাত-আটজন গর্ভবতী পূর্বপুরুষদের বাড়িতে সন্তানের জন্ম দেয়ার পুরানো পদ্ধতিকে বিদায় দিয়ে সরকারের আর্থিক সাহায্যে নিরাপদে হাসপাতালে সন্তানের জন্ম দেন ।

    লিনচি মাতৃমঙ্গল ও শিশু হাসপাতালের পরিচালক ছোইয়ং মাত্র৩০ বছর বয়সের এক সুন্দরী নারী । তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন , হাসপাতালটিতে মোট ৩০টি খাট আছে , হাসপাতালটি নানা সাজসরন্জামে সজ্জিত । সাম্প্রতিক কয়েক বছরে অধিক থেকে অধিক তিব্বতী গর্ভবতীরা হাসপাতালে সন্তানের জন্ম দিতে আসেন । ২০০৪ সালে ১৮০জন তিব্বতী গর্ভবতী এখানে সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। কিন্তু চলতি বছরের জানুয়ারী থেকে জুলাই পর্যন্ত মাত্র সাত মাসে ১৬০জন তিব্বতী নারী এখানে সন্তানের জন্ম দিয়েছেন । এই সংখ্যা গোটা বছরের ৮৫শতাংশ ।

    কেন অধিক থেকে অধিক তিব্বতী নারী পুরানো পদ্ধতির পরিবর্তে হাসপাতালে সন্তানের জন্ম দান বেছে নেন? এসম্পর্কে হাসপাতালটির পরিচালক ছোইয়ং বলেছেন,কারণ আমরা নারী ও শিশু স্বাস্থ্য রক্ষার দায়িত্ব নিয়োজিত কর্মীরা ১০০ শতাংশ কৃষি ও পশু পালন এলাকায় গিয়ে শ্রেষ্ঠতর বাচ্চার জন্ম দেয়া ও শ্রেষ্ঠতর বাচ্চা লালনপালন করা সম্পর্কে রাষ্ট্রের নীতি প্রচার করেছি এবং নারী ও শিশু স্বাস্থ্য রক্ষা ,পরিবার পরিকল্পনা,প্রসবের স্বাস্থ্য রক্ষা প্রভৃতি ক্ষেত্রের পরিসেবা সরবরাহ করেছি । এছাড়া গর্ভবতীদের হাসপাতালে বাচ্চার জন্ম দিতে উত্সাহ দেয়ার জন্যে সরকার অনবরতভাবে আর্থিক সাহায্য বাড়িয়ে দেয় ।

    তিব্বত সায়ত্তশাসিত অঞ্চলের নারী ও শিশু স্বাস্থ্য রক্ষা ব্রত বিংশ শতাব্দীর আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে শুরু হয়েছে । ২০ বছরের প্রচেষ্টার পর তিব্বতের প্রতিটি এলাকায় মাতৃমঙ্গল ও শিশু হাসপাতাল প্রতিষ্ঠিত আছে ।একই সময়ে অধিকাংশ ইউনিয়নে কেন্দ্রীয় হাসপাতাল আছে এবং হাসপাতালে নারী-শিশু স্বাস্থ্য রক্ষা বিষয়ক চিকিত্সক আছেন ।

    ২৮ বছর বয়সী তিব্বতী মেয়ে তানচেন লিনচি জেলার বুচিউ ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় হাসপাতালে নারী ও শিশু স্বাস্থ্য রক্ষা বিষয়ক ডাক্তার। বুচিউ ইউনিয়নের ১৩টি গ্রামে ২৪০০জন কৃষক ও পশুপালক আছেন । নারী ও শিশু স্বাস্থ্য রক্ষার জ্ঞান আয়ত্তের জন্যে হাসপাতালটি তানচেনকে পরপর পূর্বচীনের চিয়াংসু প্রদেশে এবং তিব্বতের নিকটে সিছুয়ান প্রদেশে পাঠিয়েছে । নিজের কাজ সম্পর্কে তানচেন বলেছেন ,আগে আশেপাশে গর্ভবতীরা হাসপাতালে সন্তানজন্মদিতে এবং নারী বিভাগে গিয়ে পরীক্ষা করতে অনিচ্ছুক ছিলেন ।কিন্তু আমাদের প্রচারের পর এই অবস্থার বিরাট পরিবর্তন হয়েছে ।

    জানা গেছে ,নারী ও শিশু স্বাস্থ্য রক্ষা ব্রতের বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে তিব্বত সায়ত্তশাসিত অঞ্চলের গর্ভবতী ও প্রসূতিএবং শিশুর মৃত্যু-হার উভয়ই স্পষ্টভাবে হ্রাস হয়েছে । বিংশ শতাব্দীর ৫০-এর দশকের প্রথম দিকের তুলনায় গর্ভবতী ও প্রসূতির মৃত্যু হার ৫শতাংশ থেকে ০.৩১শতাংশে নেমেছে ।

    লক্ষ্যনীয় সাফল্য অর্জিত হলেও বিশাল আয়তনে লোকসংখ্যার হিসেবে নগণ্য, যোগাযোগের অসুবিধা ,দক্ষ মানুষের অভাবের কারণে তিব্বতের নারী ও শিশু স্বাস্থ্য রক্ষার কাজে কিছু সমস্যাও দেখা দেয় । নারী ও শিশু স্বাস্থ্য রক্ষার কাজ জোরদার করার জন্যে তিব্বতের বিভিন্ন এলাকা নানা ব্যবস্থা নিয়েছে ।

    তিব্বতের সংস্কৃতির উত্স শাননান এলাকার গণ সরকার বিভিন্ন জেলা , বিভিন্ন থানা ও বিভিন্ন ইউনিয়নের নারী ও শিশু স্বাস্থ্য রক্ষার মান উন্নত করার জন্যে প্রযুক্তিগত সাহায্য দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রশিক্ষণ দেয়া সমন্বয় করার ব্যবস্থা নিয়েছে । এ সম্পর্কে শাননান এলাকার বৃহত্তম বহুমুখী হাসপাতাল—গণ হাসপাতালের নারী বিভাগের প্রধান মাদাম ছাংচৌচোমা বলেছেন , প্রত্যেক বছরে আমাদের হাসপাতাল জেলা হাসপাতালগুলোতে নারী বিভাগের চিকিত্সক পাঠায় । নবজাত শিশু ত্রান, প্রসব-বেদনা প্রভৃতি ক্ষেত্রে আমাদের পাঠানো চিকিত্সকরা মূলস্তরের চিকিত্সকদের সাহায্য ,শিক্ষাদান ও প্রশিক্ষণ দেয়ার ভূমিকা পালন করেছেন ।

    জানা গেছে,গোটা অঞ্চলের নারী ও শিশু স্বাস্থ্য রক্ষার মান উন্নত করার জন্যে তিব্বত সায়ত্তশাসিত অঞ্চল মাতৃমঙ্গল ও শিশু হাসপাতাল নির্মান করার পরিকল্পনা নিয়েছে । পরিকল্পনা অনুযায়ী পরবর্তী পাঁচ বছরে নারী ও শিশু স্বাস্থ্য রক্ষা ব্যবস্থা পরিপূর্ণ করার প্রচেষ্টা চালানো হবে এবং সক্রিয়ভাবে গর্ভবতী ও প্রসূতি এবং ৭ বছরের নিচের শিশুদের স্বাস্থ্য রক্ষা ব্যবস্থা নির্মান করা হবে ।