v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2005-11-15 11:24:14    
চীনা তরুণ-তরুণীদের চোখে  জাপ প্রতিরোধ যুদ্ধ ও চীন-জাপান সম্পর্ক

cri
    চলতি বছর চীনা জনগণের জাপানী আগ্রাসন বিরোধী যুদ্ধে এবং বিশ্বের ফ্যাসিবাদ বিরোধী যুদ্ধে বিজয় লাভের ষাটতম বার্ষিকী।

    ১৯৩৭ সালের ৭ জুলাই পেইচিংয়ের উপকণ্ঠের লু কৌ সেতুর পাশে জাপান চীনের বিরুদ্ধে আগ্রাসী যুদ্ধ শুরু করে। ১৯৪৫ সালের ১৫ আগস্ট জাপান বিনাশর্তে আত্মসমর্পন করে । আট বছর স্থায়ী এই রক্তক্ষয়ী প্রতিরোধ যুদ্ধে চীনা জনগণকে বিরাট মুল্য দিতে হয়েছিল । একটি পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রতিরোধ যুদ্ধে হতাহত চীনা সৈনিক ও নাগরিকদের সংখ্যা সাড়ে তিন কোটিরও বেশী । যুদ্ধের ব্যয় ও সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতির মুল্য ছিল ৫৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার । ফ্যাসিবাদ বিরোধী যুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে চীনের জাপ প্রতিরোধ যুদ্ধ সর্বপ্রথম শুরু হয়এবং তা সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী ছিল আর সবচেয়ে নিষ্ঠুর ছিল । এই যুদ্ধের অবসান ঘটার পর ৬০ বছর অতিবাহিত হয়েছে । কিন্তু এই যুদ্ধের আঘাতে চীনা জনগণের মনে যে ক্ষত হয়েছে , তা এখনো শুকায় নি।

    নান জিং প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র সং জিয়াং নান মনে করেন , চীনের জাপ প্রতিরোধ যুদ্ধ হলো ন্যায় ও অন্যায়ের মধ্যকার যুদ্ধ ।তিনি বলেছেন ,কোনো চীনার এই যুদ্ধ ভুলে যাওয়া উচিত নয় । এই যুদ্ধে চীনা জাতি যেমন রক্তের শিক্ষা পেয়েছে তেমনি অবর্ণনীয় অবমাননা সহ্য করেছে । এই যুদ্ধে অংশগ্রহণের সুযোগ মিলে নি আমার ।কিন্তু বইপুস্তক পড়ে আর টিভি অনুষ্ঠান ও চলচ্চিত্র দেখে জানতে পেরেছি যে ,এই যুদ্ধ ছিল প্রলয়ংকর । আধুনিক যুগের তরুণ হিসেবে আমাদের সেই ইতিহাসকে চিরকাল মনে রাখা উচিত ।

    চীনা ভাষার ওয়েবসাইট- সৌহুর সফরকারীদের সংখ্যা পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশী। তার একটি জরীপ থেকে জানা গিয়েছে ,তার ৬৬ শতাংশ সফরকারী এই মত প্রকাশ করেছেন যে , ঐতিহাসিক সমস্যা চীন-জাপান সম্পর্কের উপর গভীর প্রভাব বিস্তার করবে । ৯৭ শতাংশ সফরকারী যুদ্ধাপরাধীদের স্মৃতিফলক বসানো ইয়াসুকুনি সমাধিতে জাপানী নেতাদের শ্রদ্ধাতর্পনের বিরোধিতা করেন ।

    একাদশ শতাব্দি নামক ইংরাজী পত্রিকা চীনা যুব ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে খুবই জনপ্রিয় । তার একটি জরীপ থেকে জানা গিয়েছে , জরীপের প্রশ্নগুলোর উত্তরদাতাদের ৭৭শতাংশই মনে করেন , চীন -জাপান সম্পর্কের সুষ্ঠু বিকাশের জন্য ঐতিহাসিক সমস্যা সঠিকভাবে বিচার করতে হবে ।

    চীনের যে সব তরুণতরুণী ইন্টারনেটে ইয়াসুকুনি সমাধিতে জাপানী প্রধান মন্ত্রী কোইজুমি জুনিচিরোর শ্রদ্ধা নিবেদনের নিন্দা করেছেন এবং চীনে জাপানের আগ্রাসী যুদ্ধ চালানোর ইতিহাস বিকৃত করার জন্য জাপানী দক্ষিণপন্থীদের অপপ্রয়াসের প্রতিবাদ জানিয়েছেন , মধ্যচীনের হো নান প্রদেশের আন ইয়াং প্রশিক্ষণ কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র হান পিনসাও তাঁদের মধ্যে একজন ।

    তিনি টেলিফোনে সি আর আইয়ের সংবাদদাতাকে জানিয়েছেন , ঐতিহাসিক সাক্ষ্য মুছে ফেলা যায় না । নানচিং শহরে জাপানী বাহিনী যে পৈশাচিক হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে এবং উত্তরপূর্ব চীনের ছিছিহার শহরে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে হানাদার জাপানী বাহিনীর পরিত্যক্ত ধাতব কলসী থেকে নি:সৃত বিষাক্ত মাসটার্ড গ্যাসে অনেক চীনা শ্রমিক যে জখম হয়েছেন তার অনস্বীকার্য প্রমান। জাপানের দক্ষিণপন্থীরা ইতিহাস বিকৃত করার যে অপেচেষ্টা চালাচ্ছে তাতে আমরা অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হয়েছি ।

    নানচিং গণ হত্যা নামক ওয়েব সাইটে গণ হত্যা সম্পর্কিত বহু মুল্যবান ঐতিহাসিক দলিল , প্রতিকৃতি , দেশবিদেশের সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট , এবং চীনের আদালত ও আন্তর্জাতিক আদালতে জাপানী অপরাধীদের বিচারের দৃশ্য আর অপরাধীদের স্বীকারোক্তি দেখানো হয়েছে । এই ওয়েব সাইট খোলার পরবর্তী একমাসে প্রতিদিনই ৫ লক্ষ নেট নাগরিক এই ওয়েব সাইট সফর করেছেন।

    জাপান সঠিকভাবে ঐতিহাসিক সমস্যা উপলব্ধি ও সুরাহা করতে পারচ্ছে না বলে জাপানের জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য হওয়ার প্রচেষ্টা চীনের তরুণতরুণীদের মনে বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে । পেইচিং প্রশিক্ষণ বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের মাসটারস কোর্সের শিক্ষার্থী ওয়াং ইন সাক্ষাতদানের সময় বলেছেন ,জাপান জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য হয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চে বিরাট ভূমিকা পালন করতে আগ্রহী , তবে তাকে প্রথমে এশীয় জনগণ বিশেষ করে প্রতিবেশী দেশগুলোর আস্থা ও সমর্থন পেতে হবে ।তিনি বলেছেন, জাপান তার প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে পারছে না । তাই জাতিসংঘে জাপান এশিয়ার প্রতিনিধি হতে পারবে কিনা ,তাতে যথেষ্ট সন্দেহ রযেছে ।

    তা সত্ত্বেও চীনের সিংহ ভাগ তরুণ তরুণী চীন-জাপান সম্পর্ক উন্নয়নে আশাবাদী । হো নান প্রদেশের আন ইয়াং প্রশিক্ষণ কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র হান পিন সাও বিশ্বাস করেন , অধিকাংশ জাপানী চীন-জাপান মৈত্রীর পক্ষপাতী । জাপানী জনগণ থেকে মুষ্টিমেয় চরম দক্ষিণপন্থীদের পৃথক করতে হবে ।

    তিনি বলেছেন ,সুন্দর ভবিষ্যত গড়ে তোলার গুরুদায়িত্ব যুব সমাজের উপর ন্যস্ত রয়েছে । চীন ও জাপানের যুব সমাজের মধ্যেকার আস্থাপুর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠলে দুদেশের ভবিষ্যত নিশ্চয় উজ্জ্বল হবে ।

    ড্রাগন ইষ্ট গ্রুপের শাংহাই শাখার চীনা কর্মকর্তা মাদাম ওয়াং হাই ইং সি আর আইয়ের সংবাদদাতাকে জানিয়েছেন , চীন ও জাপানের মধ্যে উদ্ভুত নতুন সমস্যা উন্নয়নের গতিপথে ধাপে ধাপে সমাধান করা যাবে ।

    তিনি বলেছেন ,চীন ও জাপানের অর্থনৈতিক আদানপ্রদানে দুদেশের জনগণের পর্যাপ্ত উপকার হয়েছে । অর্থনৈতিক আদান-প্রদান দুদেশের জন্যই কল্যানকর ।আমি মনে করি , দুদেশের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক এবং বেসরকারী সম্পর্ক উন্নয়নের প্রেরনায় চীন ও জাপানের রাজনৈতিক সম্পর্কের আকাশ থেকে ঐতিহাসিক সমস্যার কালো মেঘ নিশ্চয় মিলিয়ে যাবে ।