ত্রয়োদশ সার্ক শীর্ষ সম্মেলন দু' দিন চলার পর ১৩ নভেম্বর বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় সমাপ্ত হয়েছে। এবারকার শীর্ষ সম্মেলনে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জিত হয়েছে।
শীর্ষ সম্মেলন শেষে 'ঢাকা ঘোষণা' গৃহীত হয়েছে।ঘোষণায় ৫৩টি বিষয়বস্তু অন্তভূর্ক্ত। এ থেকে প্রতিপন্ন হয়েছে যে, আঞ্চলিক সহযোগিতা, দারিদ্র-বিমোচন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন তরান্বিত করা, সন্ত্রাসবাদের উপর আঘাত হানা, রাজনৈতিক সহযোগিতা ইত্যাদি বিষয়ের উপর দক্ষিণ এশীয় দেশগুলো গুরুত্ব আরোপ করেছে। ঘোষণায় বলা হয়েছে, শীর্ষ সম্মেলনে অংশ গ্রহণকারী নেতারা মনে করেন, দারিদ্র হচ্ছে দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলেরসবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। শীর্ষ সম্মেলনে অংশ গ্রহণকারী নেতৃবৃন্দ ঘোষণা করেছেন, ২০০৬ সাল থেকে ২০১৬ সাল পযর্ন্তসময়পর্বকে 'সার্কের দারিদ্র বিমোচনের দশ বছর' বলে নিধার্রন করা হয়েছে। এর সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা এ অঞ্চলের বিভিন্ন দেশের উদ্দেশ্যে নিজ নিজ দেশের উন্নয়ন পরিকল্পনা সার্কের দারিদ্র বিমোচনর লক্ষ্যের সঙ্গে সংযুক্তকরার আহ্বান জানিয়েছেন। শীর্ষ সম্মেলনে দারিদ্রবিমোচন তহবিল গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এই তহবিল নিয়ে আলোচনার জন্যে এবারকার শীর্ষ সম্মেলনে চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসের আগে পাকিস্তানে বিভিন্ন সদস্য রাষ্ট্রের অর্থ মন্ত্রীদের বৈঠক আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
দারিদ্রবিমোচন ছাড়াও, আঞ্চলিক অর্থনীতির একায়ন তরান্বিত করাও আগামী দশ বছরে সার্কের সর্বপ্রধান কতর্ব্যগুলোর অন্যতম। 'ঢাকা ঘোষণায়' বিভিন্ন সদস্য রাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে চলতি বছরের শেষ দিকে সার্কের অবাধ বাণিজ্য সংক্রান্ত পরামর্শ সম্পন্ন করা এবং প্রাসঙ্গিক ব্যবস্থার প্রণালী প্রনয়ন করার আহ্বান জানানো হয়েছে। যাতে ২০০৬ সালের ১ জানুয়ারী সার্কের অবাধ বাণিজ্য চুক্তি বলবত হতে পারে। ২০১০ সালে দক্ষিণ এশিয়ার অবাধ বাণিজ্য অঞ্চল গড়ে তোলার লক্ষ্য যাতে বাস্তবায়িত হয় এবং ২০২০ সালে দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনৈতিক সংঘ প্রভৃতি লক্ষ্য প্রতিষ্ঠার প্রস্তুতি যাতে নেওয়া হয় সেই জন্য ঘোষণায় বিভিন্ন সদস্য রাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে অব্যহতভাবে অর্থনীতির একায়নের প্রক্রিয়া জোরদার করা, বিভিন্ন সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে সেবামূলক বাণিজ্য চালানো, পুঁজিবিনিয়োগ বাড়ানো, শুল্কযুক্ত আর শুল্কমুক্তবাণিজ্য বাধা দূর করার আহ্বান জানানো হয়েছে। শীর্ষ সম্মেলন চলাকালে বিভিন্ন দেশের শুল্ক বিভাগের মধ্যে সহযোগিতা জোরদার করা, সার্কের বিচার পরিষদ গড়ে তোলা এবং দ্বৈত কর এড়ানো সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। তা ছাড়া, সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে শুল্ক আর অ-শুল্ক বাধা দূর করার জন্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অন্যান্য সমস্য নিয়ে চুক্তি স্বাক্ষর করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
শীর্ষ সম্মেলনে অংশ গ্রহণকারী বিভিন্ন দেশ সন্ত্রাস দমন সহযোগিতার দিকে বিশেষ মনোযোগ দিয়েছে। সম্মেলন চলাকালে যারা ' সার্কের সন্ত্রাস দমন প্রটোকলেস্বাক্ষর করেনি তারা এবার স্বাক্ষর করেছে। শীর্ষ সম্মেলনে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে, নিরাপত্তা সমস্যা নিয়ে মিলিতভাবে আলোচনার জন্য প্রত্যেক বছর এক বার করে সার্কের বিভিন্ন দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী পর্যায়ের অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে।
এবারকার শীর্ষ সম্মেলনে আফগানিস্তানকেসার্কের নতুন সদস্যহিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে , এর সঙ্গে সঙ্গে চীন আর জাপানকে পর্যবেক্ষকের মযার্দাদেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার হয়েছে। প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠনিকতা সম্পন্ন হওয়ার পর আফগানিস্তান সার্কের আনুষ্ঠানিক সদস্য হবে। শীর্ষ সম্মেলন নীতিগতভাবে চীন আর জাপান সার্কের পযর্বেক্ষক হিসেবে গ্রহণ করতে রাজি হয়েছে এবং স্বাগত প্রকাশ করেছে। ২০০৬ সালের জুলাই মাসে অনুষ্ঠেয় সার্কের মন্ত্রী পরিষদে চীন আর জাপানকে সার্কের পযর্বেক্ষককরার বিশদ বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে।
শীর্ষ সম্মেলন চলাকালে কাশ্মির সমস্যায় ভারত আর পাকিস্তানের নেতারা খুব সংযম দেখিয়েছেন। ভারতের প্রধান মন্ত্রী মনমোহন সিং এবং পাকিস্তানের প্রধান মন্ত্রী আজিজের মধ্যে দু' বার বৈঠক হয়েছে। দু'বারের মধ্যে এক বার হল দু' জনের মধ্যে ত্রিশ মিনিটের বৈঠক । দুই প্রধান মন্ত্রী বতর্মান পাক-ভারত শান্তিপূর্ণ সংলাপের প্রক্রিয়ার স্বীকৃতি দিয়েছেন। বৈঠকের পর, আজিজ বলেছেন, দু'পক্ষের মধ্যে মনখোলা আর ফলপ্রসু কথাবার্তা হয়েছে। বৈঠকে কাশ্মির সমস্যা সহ সমস্ত দ্বিপাক্ষীক বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ১৯৮৫ সালের ডিসেম্বর মাসে সার্ক আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। বতর্মানে এর সদস্য দেশগুলো হল, বাংলাদেশ. ভুটান, ভারত, মালদ্বীপ, নেপাল, পাকিস্তান আর শ্রীলংকা।
|