চীনের প্রেসিডেন্ট হু চিন থাও ১০ নভেম্বর সন্ধ্যায় বার্লিনে ভাষণ দেযার সময় বলেছেন , চীন আর জার্মানীর মধ্যে আর্থ- বাণিজ্যিক সহযোগিতার অন্তর্নিহিত শক্তি বিরাট আর এর ভবিষ্যত ব্যাপক । তিনি দুদেশের মধ্যে সহযোগিতার বিস্তারিত ক্ষেত্র আরো সম্প্রসারিত করার কথাও উপস্থাপন করেছেন । প্রেসিডেন্ট হু চিন থাও বার্লিনে পৌঁছানোর একই দিন সন্ধ্যায় দুদেশের বন্ধুত্ব বাড়ানো আর দ্বিপাক্ষিক আর্থ-বাণিজ্যিক সহযোগিতা ত্বরান্বিত করার জন্য ইতিবাচক অবদান রাখা জার্মানীর অর্থনীতি বিষয়ক এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় কমিশন তার সম্মানে একটি ভোজসভার আয়োজন করেছে । ভোজসভায় হু চিন থাও অন্তরঙ্গ ও উত্সাহব্যঞ্জক ভাষণ দিয়েছেন । তিনি বলেছেন ,
আর্থ-বাণিজ্যিক সহযোগিতা যেমন দুদেশের সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ , তেমনি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ চালিকা শক্তি । দু'পক্ষের যৌথ প্রচেষ্টার মাধ্যমে দুদেশের আর্থ-বাণিজ্যিক সহযোগিতায় উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জিত হয়েছে । ২০০৪ সালে দুদেশের বাণিজ্য মূল্য ১৯৭২ সাল অর্থাত্ দুদেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার গোড়ার দিকের তুলনায় ২০০ গুণ বেড়ে ৫৪.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে । সীমেনজ্ , ভকসওয়াগন , দাইমলার ক্রাইস্লার , বি -এম - ডাবলিও , বি.এ.এস.এফ , বেয়ার , থাইসেন ক্রুপ্ ইত্যাদি জার্মানীর প্রসিদ্ধ কোম্পানির পুঁজিবিনিয়োগে চীনে যার যার শিল্প প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হয়েছে । জার্মানীতে চীনের ৬শোটি কোম্পানির পুঁজিবিনিয়োগে যার যার শিল্প প্রতিষ্ঠানও গড়ে তোলা হয়েছে ।
দুদেশের আর্থ-বাণিজ্যিক সহযোগিতা গভীর করার জন্য হু চিন থাও দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা সম্প্রসারণের পাঁচটি ক্ষেত্রও উপস্থাপনা করেছেন । তার প্রস্তাবগুলো হচ্ছে , এক , বাণিজ্যের মাত্রা বাড়ানো হবে আর বাণিজ্যিক কাঠামো উন্নত করা হবে । দুপক্ষের উচিত পণ্য অর্থনীতি বিকশিত করার সংগে সংগে হাইটেক , অগ্রসর প্রযুক্তি ও সরঞ্জাম ইত্যাদি ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদার করা ; দুই, পুঁজিবিনিয়োগের ক্ষেত্র প্রশস্ত করা হবে আর সহযোগিতার পথ উন্মুক্ত করা হবে । জার্মানীতে প্রকল্প নির্মাণ , শ্রম সহযোগিতা আর পুঁজিবিনিয়োগের জন্য চীনের শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোকে জার্মানীর সুযোগ-সুবিধা দেয়া হবে ; তিন, দুদেশের শিল্প প্রতিষ্ঠানের আদান প্রদান জোরদার হবে আর মাঝারি ও ছোট শিল্প প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা সম্প্রসারিত হবে ; চার , যোগ্য কর্মীদের প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্ব দেয়া হবে এবং পাঁচ, সংলাপের ব্যবস্থা পূর্ণাংগ করে তোলা হবে আর সহযোগিতার পরিবেশ উন্নত করা হবে ।
তিনি আরো বলেছেন , চীন মুক্তদ্বার নীতিতে অবিচল থাকবে , ডাবলিও টি ওতে অন্তর্ভুক্ত হবার সময় দেয়া প্রতিশ্রুতি মেনে চলবে , অব্যাহতভাবে বৈদেশিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা পূর্ণাংগ করে তুলবে , মেধাস্বত্ত রক্ষার কাজ জোরদার করবে , স্থিতিশীল ও স্বচ্ছ বৈদেশিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থা গড়ে তুলবে , ন্যায়পরায়ণ ও স্বচ্ছআইন ব্যবস্থার পরিবেশ সৃষ্টি করবে , অবাধ ও সুবিধাজনক বাণিজ্য ও পুঁজিবিয়োগের মাত্রা উন্নত করবে এবং পুঁজিবিনিয়োগের আরো সুষ্ঠু পরিবেশ গড়ে তুলবে ।
এবছর ই ইউ'র সংগে চীনের কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৩০তম বার্ষিকী । হু চিন থাও বলেছেন ,
চীন আর ই ইউ যথাক্রমে বৃহত্তম উন্নয়নমুখী দেশগুলো আর বৃহত্তম উন্নত দেশগুলোর গোষ্ঠী । সমতা আর পারস্পরিক উপকারিতার ভিত্তিতে আর্থ-বাণিজ্যিক সহযোগিতা চালানো যেমন অর্থনীতির বিশ্বায়নের সুষ্ঠু বিকাশ , তেমনি বিশ্বের বহুমেরুক রণ ত্বরান্বিত করার অনুকুল হবে ।
জার্মানীর অর্থনীতি বিষয়ক এশিয়া আর প্রশান্ত মহাসাগরীয় কমিশনের চেয়ারম্যান হেনরিচ্ ভন্ পিয়েরে তার ভাষণে বলেছেন , দুদেশের সরকারের মধ্যে সংলাপ জোরদার করা দুদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক গভীর করার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ । জার্মানীর অর্থনীতিক মহল রাজনৈতিক পর্যায়ে দুদেশের নিবিড় আদান প্রদানের প্রতি আন্তরিক অভ্যর্থনা জানাচ্ছে এবং দুদেশের ভবিষ্যতের সহযোগিতা ত্বরান্বিত করার জন্য প্রচেষ্টা চালাবে ।
|