v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2005-11-11 09:30:18    
স্যূপ বৌদি চিয়াং রুই-ইং

cri
    চীনে নবজাতকের জন্যে মায়েরা বুকের দুধ বাড়ানো এবং স্বাস্থ্যের জন্যে স্যূপ খান । কি ধরনের সোপ খেলে ভাল ?

    মাঝেমাঝে আমি ভাবি যে , জীবন যেনো স্যূপ রান্নার মতো, মনোযোগের সঙ্গে রান্না করলে নানা ধরনের স্যূপ রান্না করা যায় । যিনি কথাটা বলেছেন তার নাম চিয়াং রুইইং, সবাই তাকে স্যূপ বৌদি ডাকেন । কারণ তিনি প্রসূতীদের জন্যে যে স্যূপ রান্না করেন তা তাদের বুকের দুধ বাড়াতে এবং তাদের স্বাস্থ্য আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে সহায়ক ।

    চিয়াং রুইইং নারী হাসপাতালের কাছে থাকেন ।এই সুবাদে ৩৩ বছর বয়সে কর্মচ্যুতচিয়াং রুইইং হাসপাতালের কাছে এক ছোটো দোকান  খুলেন।প্রসূতীদের পরিবারপরিজন প্রায়ই তাকে প্রসূতীদের জন্যে ভাত আর তরকারী গরম করার অনুরোধ করেন । তাই তিনি বাড়ির বারান্দাকে এক রান্নাঘরে রূপান্তরিত করেছেন ।দোকান চালানোর সঙ্গেসঙ্গে তিনি এই রান্নাঘরে প্রসূতীদের পরিবারপরিজনদের ভাত আর তরকারী গরম করতে সাহায্য করেন এবং    প্রত্যেকজনের কাছ থেকে ৫০ পয়সা নেন । মাসের শেষে তিনি মোট একশ ইয়ানেরও বেশী উপার্জন করেন ।

    তার ছোটো দোকান হাসপাতালের কাছে বলে তিনি দেখতে পান যে,প্রত্যেক দিন হাসপাতালে আসা-যাওয়া পরিবারপরিজনরা বাড়ি থেকে প্রসূতীদের জন্যে স্যূপ আনতে পারেন ।এটা দেখে চিয়াং রুইইং মনেমনে ভাবতে শুরু করেন যে,নিজের বাড়িতে গ্যাসের চুলা আছে ,আর অল্প খরচে কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস কিনলে তিনি এক স্যূপ রান্নার দোকান খুলতে পারেন। এই ভাবে তিনি প্রত্যেক দিন হাসপাতালের প্রসূতীদের জন্যে টাটকা মাছ বা হাড়ের স্যূপ বানাতে পারেন ।

    চিয়াং ভাবী স্বামীর সমর্থনে ২৯০ রেনমিনপি দিয়ে স্যূপ রান্নার হাঁড়ি ও অন্যান্য উপকরণ কিনেন । তার পর তিনি স্যূপ বিক্রির বিজ্ঞাপন দেয়ালে লাগিয়ে দেন । দুদিন পার হয়ে গেলো ,একজনও স্যূপ কিনতে আসেননি । স্যূপ রান্নার জন্যে কেনা মাছ ,হাড় ইত্যাদি উপকরণ আর টাটকা নয় বলে চিয়াং ভাবী বাধ্য হয়ে সেগুলো দিয়ে নিজের পরিবারের তিনজনের জন্যে রাতের তরকারী তৈরী করেন ।একদিকে সুস্বাদু খাবার খান অন্য দিকে তিজনের মন ভারী হয় । নিজের রান্নার স্যূপ কেউ কিনতে আসেন না, কি করা যায়? চিয়াং ভাবী হাসপাতালের প্রসূতীদের বিনাখরচে স্যূপ খাওয়ানোর সিদ্ধান্ত নেন ।প্রথম দিন তিনি নিজের রান্না করা স্যূপ চার প্রসূতীকে খেতে দেন,দ্বিতীয় দিনই এই চার প্রসূতীর আত্মীয়রা চিয়াং ভাবীর রান্না স্যূপ কিনতে আসেন । এই দিন চিয়াং ভাবী মোট চার বাটি স্যূপ বিক্রি করেন ।এক বাটি স্যূপ মাত্র দু-রেনমিনপি । বেশী না হলেও এটা তাকে বিরাট প্রেরণা দিয়েছে ।

    প্রথম মাসে চিয়াং ভাবী মোট ১০০০ বাটি স্যূপ বিক্রি করেন ।অনেক প্রসূতীর আত্মীয়-স্বজন তার কাছে আরও উন্নত মানের স্যূপ দেবার অনুরোধ জানান । কেউকেউ জিজ্ঞেস করেন যে,প্রসূতীর দুধ বেশী নয়, কি ধরনের স্যূপ খাওয়ালে প্রসূতীর দুধ বেশী হতে পারে ?কেউকেউ জিজ্ঞেস করেন যে, কি ধরনের স্যূপে পুষ্টি বেশী এবং প্রসূতীদের স্বাস্থ্যের জন্যে উপকারী? চিয়াং ভাবী ভাবতেও পারেননি যে,ছোটো এক বাটি স্যূপের মধ্যে এত বেশী জ্ঞান আছে।এজন্যে তিনি বাধ্য হয়ে প্রসূতীদের স্বাস্থ্য-রক্ষার বিদ্যা শিখতে শুরু করেন । তিনি বলেছেন,আমি স্বাস্থ্য রক্ষার নানা পত্রপত্রিকা পড়তে শুরু করি। প্রসূতীদের সম্পর্কে কোনো তথ্য থাকলে আমি তা কেটে এক ফাইল বানিয়ে রাখি ।যেমন আগে সবাই মনে করতো যে ,মুর্গীর স্যূপ প্রসূতীদের স্বাস্থ্য ও দুধ বাড়াতে সহায়ক,কিন্তু পত্রিকার নতুন তথ্যে বলা হয়েছে যে,মুর্গীর স্যূপ তেমন ভাল নয়,কারণ মুর্গীর ডিম্বকোষ দুধ উত্পাদনের উপাদান রোধ করে।আমি এ ধরনের তথ্য সুন্দর করে ফাইলে লিপিবদ্ধ করি ।যারা বিশ্বাস করেন না তাদেরকে আমি দেখাতে পারি ।

    স্যূপের পুষ্টির কাযকরীতা বাড়ানোর জন্যে চিয়াং ভাবী চীনা ঐতিহ্যিক হাসপাতালের বিশেষজ্ঞদের কাছে শিখতে যান । ধীরেধীরে তিনি মায়ের দুধ বাড়ানোর পদ্ধতি শিখেছেন । কিন্তু কিভাবে উপাদানগুলো স্যুপের ভেতরে মিশালে উত্তম কাযকরীতা পাওয়া যায় তা কেবল চিয়াং ভাবী নিজেকেই বাসায় বারবার পরীক্ষা করে নিতে হবে ।

    গরুর নাক মায়ের দুধ বাড়ানোর পক্ষে উপকারী শুনে চিয়াং ভাবী চারি দিকে গরুর নাক কেনার চেষ্টা করেন । তিনি গরুর নাকের স্যুপে কিছু চীনা ভেষজ ওষুধ মিশিয়ে দেন ।তিনি জানান,গরুর নাকের স্যুপে কয়েক ধরনের চীনা ভেষজ ওষুধ দিলে সম্ভবত স্যুপের কাযকরীতা ভাল হবে । স্যুপটা যত সাদা রঙ রান্না হয় ততই ভাল হয় । বাচ্চার জন্মের তিন দিন পরও যদি মায়ের দুধ না হয় তাহলে গরুর নাকের স্যুপ খাওয়ালে ভাল হবে । কিন্তু বাচ্চার জন্মের প্রথম দু-য়েক দিনে খাওয়ানো ঠিক নয় ।

    কপোতের স্যুপ রান্না করার সময় এ দুটো বিষয়ে মনোযোগ দিতে হবে যে,এক ,লাল নাকের কপোত পাখি কিনবেন,কারণ লাল নাকের কপোতের মাংস কচি । দুই , জবাই করার সময় কপোতের দম বন্ধ করে জবাই করতে হবে। এভাবে জবাই করা কপোতের রক্ত অত্যন্ত পুষ্টিকর ।

    প্রসূতীদের ভিন্ন-ভিন্ন প্রয়োজন অনুযায়ী ধীরেধীরে চিয়াং ভাবী ধারাবাহিক স্যুপ তৈরী করেছেন ।

    চিয়াং ভাবীর বহুমুখী স্যুপের মধ্যে সবচেয়ে নামকরা সোপ হল য়ুজি থাং অর্থাত প্রসবোত্তর মাসের স্যুপ। ধীরেধীরে অনেক ব্যবসায়ী চিয়াং ভাবীর দোকানে যোগ দেবার আনুরোধ জানান ।যারা তার শাখা দোকান হতে চান তিনি তাদের কাছে কঠিন শর্ত দিয়েছেন যে,কোনো গ্রাহক অভিযোগ করলে তিনি সঙ্গে সঙ্গে তার শাখা দোকানের যোগ্যতা বাতিল করে দেবেন চিয়াং ভাবী আরও দাবি করেছেন যে,শাখা দোকানগুলোর সব বিক্রয়কারী কর্মচ্যুত নারী শ্রমিক হওয়া উচিত । তিনি বলেছেন ,কর্মচ্যুত নারী শ্রমিকদের রান্না স্যুপের প্রতি আমার আস্থা আছে ।

    এখন চিয়াং ভাবী ১০টি দোকানের মালিক হয়েছেন । তার নেতৃত্বে বহু কর্মচ্যুত শ্রমিক হাসপাতালের কাছে স্যুপের ব্যবসা করছেন । তাদের রান্না স্যুপ প্রসূতীদের সমাদর পেয়েছেন ।