দক্ষিণ আফ্রিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট নেলসন ম্যান্ডেলার বয়স আশি বছরেরও বেশি । তিনি এখনো সুস্থ থেকে বিশ্বের রাজনৈতিক মঞ্চে তার ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে চলেছেন । তা হলে তার সুস্বাস্থ্য আর দীর্ঘায়ুর অভিজ্ঞতা কি ? তার উত্তর এই যে , অন্যদের প্রতি তার ভালবাসা আর সুস্থ শরীর ।
নেলসন ম্যান্ডেলা শ্বেতাঙ্গদের বর্ণবৈষম্য নীতি বিরোধী সংগ্রাম পরিচালনা করার দায়ে কারারুদ্ধ হন । তিনি ২৭ বছর ধরে আটল্যান্টিক মহাসাগরে একটি নির্জন দ্বীপে অবরুদ্ধ ছিলেন । এই সময়পর্বে তিনজন কারাপাল তাকে নিয়ন্ত্রণ করতো । তারা তাকে নানাভাবে নির্যাতন করতো । এর পরের ইতিহাস সবাই জানেন ।
১৯৯১ সালে নেলসন ম্যানডেলা দক্ষিণ আফ্রিকার ইতিহাসে প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট নিযুক্ত হন । শপথ গ্রহণের অনুষ্ঠানে তার উদারতা আর নমনীয়তায় সারা বিশ্ব আলোড়িত হয়েছে । শপথ গ্রহণ শুরু হবার পর তিনি অতিথিদের প্রীতি আর শুভেচ্ছা জানালেন । তিনি সকলের কাছে এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানদের পরিচয় করিয়ে দিলেন । তার পর তিনি বলেছেন , এই অনুষ্ঠানে এত বেশি বিশিষ্ট অতিথির উপস্থিতির জন্য তিনি খুব গৌরবান্বিত বোধ করেন । তিনি তাকে নিয়ন্ত্রণকারী তিনজন কারাপালকেও পরিচয় করিয়ে দিলেন এবং তাদের শুভেচ্ছা জানালেন । ম্যান্ডেলা যে এই উদার ও নমনীয় কার্যকলাপ গ্রহণ করেছেন , সবাই তাকে শ্রদ্ধা করেছেন । তার জন্য সবাই তার মনের উদারতা আর নমনীয়তার জন্য মুগ্ধ হয়েছেন ।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ক্লিনটনের স্ত্রী হিলারী তাকে জিজ্ঞেসকরলেন , তিনি কেন জটিল আর পরিবর্তনশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এত উদার আর নমনীয় মনোভাব অবলম্বন করেছেন? তিনি জবাবে আবেগের সঙ্গে বললেন , যখন তিনি কারামুক্ত হলেন , তখন আগের দুঃখ-দুর্দশা আর বিদ্বেষ ছেড়ে না দিলে তিনি কি সত্যি সত্যি কারামুক্ত হবেন ? ম্যান্ডেলা হিলারীকে আরো বলেছেন , কৃতজ্ঞতা আর উদারতা দিয়ে দুঃখ-দুর্দশাকে পরাভূত করা যায় । এই চরিত্র অর্জন করতে হলে নিজের মানসিক শক্তিকে নিরন্তর চর্চা করতে হবে ।
ম্যান্ডেলার সুচরিত্র আর ব্যবহারে হিলারী খুব মুগ্ধ হয়েছেন । তিনি নিজেকে বলেছেন , তিনি ম্যান্ডেলার কাছ থেকে এই সদগুণ শিখবেন এবং তার এই উদার মনোবল দিয়ে জীবনযাপনের মাধ্যমে সমস্ত দুঃখ-দুর্দশা দূর করতে চেষ্টা করবেন । কেউ কেউ মনে করেন যে , ১৯৯৮ সালে ক্লিনটনের যৌন কেলেঙ্কারী আবির্ভূত হবার পর , তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হিলারী অবশেষে তার স্বামীকে যে ক্ষমা করেছেন , তা ম্যান্ডেলার উদার মনোবলের সঙ্গে খাপ খায় ।
বাস্তবে প্রমানিত হয়েছে , প্রাচীনকাল থেকে আজ পর্যন্ত দেশ-বিদেশে যারা দীর্ঘায়ু , তাদের বেশির ভাগ চরিত্র উদার ও নমনীয় । কারণ নমনীয়তা মানুষের উন্মুক্ত-মন সৃষ্টির অনুকুল । এই ধরনের গুণসম্পন্ন মানুষের মনে কোনো মানসিক চাপ নেই । আর এই সব মানসিক সদগুণের প্রভাবে নানা রোগের কবল থেকে রেহাই পাওয়া যায় । চিকিত্সা গবেষনা থেকে জানা গেছে , নমনীয়তায় মানুষের মানসিক ভারসাম্য অর্জন করা যায় , আনন্দ ও তৃপ্তি সৃষ্টি করা যায় এবং তা রক্ত চাপের স্থিতিশীলতা ও সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য অনুকুল হবে । রোগে আক্রান্ত হওয়া সত্ত্বেও নমনীয়তা থেকে মানুষের রোগ প্রতিরোধ শক্তি বেড়ে যাবে এবং সুস্বাস্থ্যও যথাশীঘ্রই প্রতিষ্ঠিত হবে ।
এখন প্রবীণদের সুস্বাস্থ্য বিষয়ক নিয়মবিধি সম্বন্ধে আপনাদের কিছু বলা হবে ।
প্রথমতঃ নিজের প্রকৃতির দুর্বলতা আর ভুলত্রুটিহীনতা জানতে হবে । দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে হবে আর ভুলত্রুটিহীনতা আরো সম্প্রসারিত করতে হবে ।
দ্বিতীয়ত্বঃসুখী বোধ' মানুষের জীবনের সবচাইতে মূল্যবান অনুভূতি । মানুষের উচিত জীবনের অতৃপ্তি , দুঃখ আর দুশ্চিন্তার কবল থেকে রেহাই পাওয়া ।
তৃতীয়তঃ শ্রমের মাধ্যমে নিজের অন্তর্নিহিত শক্তি উন্নয়ন করা যাবে । ফলে নিজের অতিরিক্ত মনোযোগ ও অপ্রয়োজনীয় দুশ্চিন্তা দূর হয়ে যাবে এবং বাস্তবতার সঙ্গে মানুষের যোগাযোগ বজায় রাখা যাবে ।
চতুর্থতঃ মানুষে মানুষে সুষ্ঠু সম্পর্ক স্থাপন করা উচিত । এতে নিঃসঙ্গতা আর অসহায়ত্ব দূর হয়ে যাবে এবং মানসিক সুস্বাস্থ্য জোরদার হবে ।
|