v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2005-11-07 17:48:43    
চীনের প্রত্যন্ত এলাকায় ইংরাজী শিক্ষিকা সুজান

cri

    চীনের কুইচৌ প্রদেশের একটি প্রত্যন্ত জেলায় ক্যানাডা থেকে আসা যে একজন শিক্ষিকা ইংরাজী পড়াচ্ছেন , তাঁর নাম সুজান স্টাইলেস । এই জেলায় তিনি আট বছর কাটিয়েছেন,শুধু  হান ভাষা নয় , স্থানীয় ভাষায়ও কথা বলতে পারেন তিনি।স্থানীয় অধিবাসীরা তাঁকে তাঁদের আপনজন বলে গণ্য করেন । কুইচৌ প্রদেশ দক্ষিণ পশ্চিম চীনে অবস্থিত । সুজান স্টাইলেস যখন প্রথম কুইচৌ প্রদেশের পিংথাং জেলায় কাজ করতে যান তখন তাঁর বয়স ছাবিশ বছর । কুইচৌ প্রদেশের রাজধানী কুই ইয়াং থেকে প্রায় দুশো কিলোমিটার দুরে অবস্থিত পিংথাং জেলা ভারী সুন্দর , এর একদিকে নীল পর্বত আর অন্য তিন দিকে কুল কুল রবে বহমান স্বচ্ছ নদী । এই জেলার জাতীয় মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৩৪ বছর বয়সের সুজান ইংরাজী পড়াচ্ছেন।

    সি আর আইয়ের সংবাদদাতা যখন এই মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রবেশ করলেন তখন ক্লাস শেষ হয়েছে। আমরা সুজানের সাক্ষাতকার নিতে এসেছি শুনে ছাত্রছাত্রীরা হুড়মুড় করে আমাদের ঘিরে ধরলো এবং তারা শিক্ষিকা সুজানকে কত ভালোবাসে তা আমাদের জানাল । ছাত্র১:শিক্ষিকা সুজান খুব ভালো মানুষ । ছাত্র ২ : শিক্ষিকা সুজান আমাদের আর্থিক সাহায্য দিয়েছেন বলে আমরা পড়াশোনার সুযোগ পেয়েছি ,তাঁর প্রতি আমরা অত্যন্ত কৃতজ্ঞ। ছাত্র ৩ :মন খারাপ হলে তাঁর কাছে গিয়ে প্রাণখুলে সমস্ত কথা বলা যায় ।

    ছাত্র ৪: পিংথাংয়ের স্থানীয় ভাষা তিনি বুঝতে পারেন । কথা বলতে না বলতে সুজান এসে পড়লেন । তাঁর গায়ের রং গৌর, নাকটা বেশ উন্নত , গভীর নীল চোখ বুদ্ধিতে উজ্জ্বল , ঝাঁকড়া সোনালী চুল বাতাসে আন্দোলিত । আসল বয়সের চেয়ে তাকে অনেক কম বয়সী বলে মনে হয়। সুজান বাকপটু । তাঁর সাক্ষাতকার নেয়া হয়েছে অন্তরংগ পরিবেশে ।চীনের একটি ছোটো জেলায় তিনি যে দীর্ঘসময়ে থাকতে পেরেছেন তার কারণ কী, আমাদের এই প্রথম প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছেন :এখানে আমার বহু পরিচিত লোক আছে , আমি যেন নিজের বাড়িতে আছি । যেখানে যাই সেখানে আমার ছাত্রছাত্রীর দেখা পাই । তাদের মাবাবা সবাই বলেন , আপনি আমাদের সন্তানের ভালো শিক্ষিকা । এখানে আমি সবার শ্রদ্ধার পাত্রী । বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমার উপরে যে আস্থা রাখে তা অত্যন্ত মুল্যবান । আমি পিংথাংকে ভালোবাসি । এখানে আমার নতুন জীবন পর্ব সবে মাত্র শুরু হয়েছে ,কাজের শেষ নেই , আমি কী করে এখান থেকে চলে যাব । সুজান সাবলীলভাবে চীনা ভাষায় কথা বলতে পারেন ।

    তিনি সি আর আইয়ের সাংবাদিককে জানিয়েছেন , তিনি ক্যানাডায় থেকে চীনা সংস্কৃতি শিখতে চেয়েছিলেন , চীনের কোথায় তা শিখা যায় তা তার জানা ছিল না। পরে জানা গেল ,তাঁর একজন আত্মীয় চীনের দক্ষিন কুই চৌ প্রদেশের শিক্ষক প্রশিক্ষন কলেজে অধ্যাপনা করছিলেন ,তাঁর সাহায্যে ১৯৯৬সালে তিনি এই কলেজে ভর্তি হয়ে চীনা ভাষা শিখতে শুরু করেন । কিছু দিন পর তিনি পিংথাং জেলার জাতীয় বিদ্যালয়ে ইংরাজী পড়ানো একজন বিদেশী বন্ধুর সংগে দেখা করতে যান । তাঁর বন্ধু শীগ্গিরই দেশে ফিরে যাবেন ,অথচ বিদ্যালয়ে বিদেশী শিক্ষকের একান্ত দরকার , তাই তাঁর বন্ধু তাঁর কাছে বিদ্যালয়টিতে ইংরাজী পড়ানোর প্রস্তাব দেন । তাঁর প্রস্তাব গ্রহণ করে সুজান ইংরাজী পড়ানোর সংগে সংগে চীনা ভাষাও শিখেন । এক বছর কেটে যেতে না যেতেই তিনি চীনা ভাষায় পিংথাংয়ের অধিবাসীদের সংগে কথা বলতে পেরেছেন । প্রধান শিক্ষক লিউ সিয়াং ইউয়ান সি আর আইয়ের সংবাদদাতাকে জানিয়েছেন , সুজানের অধ্যাপনার স্বতন্ত্র পদ্ধতি ছাত্রছাত্রীদের ইংরাজী শিখতে যথেস্ট উত্সাহ দিয়েছে । গরীব ছাত্রছাত্রীদের সাহায্য করার জন্য তিনি ক্যানাডার বহু সংখ্যক বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয় স্বজনের সংগে যোগাযোগ করে চাঁদা তুলেছেন ।

    এই জন্য পিংথাংয়ের অধিবাসীরা তাঁকে ভালোবাসেন ও শ্রদ্ধা করেন । লিউ সিয়াং ইউয়ান বলেছেন , সুজান যেখানেই যান সেখানে সবাই আন্তরিকভাবে তাঁকে শিক্ষিকা সু বলে ডাকেন এবং তাঁকে খাওয়ানোর দাওয়াত দেন । পিংথাংয়ে তিনি একজন খ্যাতনামা ব্যক্তি, সবাই জানেন ,তিনি দয়ালু ও স্নেহশীলা । পিংথাংয়ে চার বছর ইংরাজী পড়ানোর পর সুজান পুর্বচীনের জিয়াংসু প্রদেশের নানজিং শহরে চীন-মার্কিন যৌথ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত চীন মার্কিন সংস্কৃতি গবেষনা কেন্দ্রের মাস্টার্স কোর্সের শিক্ষার্থী হন । দু বছর ধরে অধ্যয়ন করে মাস্টার্স ডিগ্রি পাওয়ার পর তিনি আবার পিংথাংয়ে ফিরে আসেন । সুজান এখন পিংথাং জেলা শহরে যে একটি তিন তলা বাড়ি ভাড়া করেছেন তা একাধারে তাঁর বাসস্থান ও অফিস । এক তলা ও দুতলায় ছাত্রছাত্রীদের জন্য টেবিল টেনিস ঘর , পাঠাগার ও খেলার ঘর রাখা হয়েছে । সুজান আমাদের জানিয়েছেন , গতমাসে তিনি তাঁর বাড়িতে আনন্দমুখর পরিবেশে ছাত্রছাত্রীদের সংগে বড় দিন পালন করেছেন ।