v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2005-11-04 19:56:57    
অর্থনীতির দ্রুত উন্নয়নে সিনচিয়াংয়ের কৃষকরা

cri
    সিনচিয়াং স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল চীনের বৃহত্তম প্রাদেশিক পর্যায়ের অঞ্চল । তার আয়তন চীনের মোট আয়তনের এক ষষ্ঠাংশ । এই অঞ্চলে এখন ৩০ লক্ষ হেক্টরেরও বেশি আবাদী জমি আছে । ওখানে আলো আর তাপ পর্যাপ্ত , দিন রাতে তাপমাত্রার ব্যবধান বেশি এবং হামি তরমুজ , আঙ্গুর প্রভৃতি ফলমূল আর তুলো প্রভৃতি শস্য উত্পন্ন করা হয় । গত কয়েক বছরে সিনচিয়াংয়ে ঐতিহ্যিক কৃষি সুসংবদ্ধ করার সংগে সংগে বিবিধ স্ববৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিল্পের বিকাশে সহায়তা করা হয়েছে । এতে বহু কৃষক আর পশুপালকরা কল্যাণ পেয়েছেন ।

    রুজি তুরসেন কাশ্ অঞ্চলের পাহাতাকলি থানায় বাস করেন । তিনি কৃষিকর্মের ওপর নির্ভর করে জীবনযাপন করতেন । তখন তিনি একেবারেই ভাবেন নি যে , তিনি পরে নতুন বাসায় থাকবেন , মোটর সাইকেল চালাবেন আর মোবাইল ফোন ব্যবহার করবেন । কিন্তু শুধু কয়েক বছর হয়ে গেছে , এই সব কিছু বাস্তবে পরিণত হয়েছে । তিনি সংবাদদাতাকে বলেছেন , গুরু লালন পালনে তার জীবনযাপনের মান ব্যাপকভাবে উন্নত হয়েছে । ৫ বছর আগে তিনি তার সকল সঞ্চয় ব্যবহার করে কয়েকটি গরু কিনে গবাদি পশু পারনবৃত্তি চালান । ফলে শুধু কয়েক বছরে গরু বিক্রি করে তিনি বেশ আয় করেন । গত বছর তিনি দেড় লক্ষ ইউয়ান রেন মিন পি খরচ করে নতুন বাসা নির্মাণ করেন এবং ট্রাক্টর ও মোটর সাইকেল কিনেন । এখন যখন কৃষিকর্ম কম আছে , তখন তিনি পরিবার পরিজনকে নিয়ে ভ্রমণে যান ।

    এখন আমাদের জীবনযাপন খুব ভাল চলছে । আগে শহরবাসীরা আমাদের ভাল চোখে দেখেন না । কিন্তু এখন আমাদের জীবনযাপন শহরবাসীদের কাছাকাছি হয়েছে ।

    রুজি তুরসেন মোট ৬০টি গরু পালন করছেন । এখন গ্রামবাসীরা অধিক থেকে অধিকতর গরু পালন করার দরুণ গরুর দাম হ্রাস পাচ্ছে । সুতরাং তিনি সুদহীন ঋণ ব্যবহার করে একটি হাঁস খামার নির্মাণ করবেন , যাতে আরো বেশি আয় করা যায় ।

    পাহাতাকলি থানায় রুজি তুরসেনের মতো গবাদি পশু পালনের মাধ্যমে ধনী হওয়ার কৃষক পরিবার আরো বেশি আছে । থানার প্রধান একবার তুলাহোং সংবাদদাতাকে বলেছেন , স্থানীয় সরকার বিবিধ ব্যবস্থা নিয়ে পশুপালকদের সাহায্য করে ।

    আমরা বিনাপয়সায় প্রতি পশুপালক পরিবারকে ০.০৬ থেকে ০.২ হেক্টর জমি সরবরাহ করি এবং ব্যাংক থেকে ঋণ পাওয়ার জন্য তাদের সাহায্য করি । গত বছর সমগ্র থানায় প্রতি পশুপালক পরিবারের আয় ৩০ হাজার ইউয়ান ছাড়িয়ে গেছে ।

    সিনচিয়াংয়ে বহু লোক পাহাতালিক থানার কৃষক ও পশুপালকদের মতো গবাদি পশু পালনের ওপর গুরুত্ব দেন । তারা এর মাধ্যমে ধনী হবেন বলে আশা করেন । গুরু পালনের কল্যাণে কোনো কোনো শহরবাসীও গ্রামাঞ্চলে আসেন । মিঃ চেন সিয়াং এমন একজন শহুরে কৃষক । তিনি অবসর নেয়ার আগে সিনচিয়াংয়ের রাজধানী উরুমুচিতে একটি স্কুলে চাকরি করেন । অবসর নেয়ার পর যখন তিনি শুনলেন একটি বিরাটাকারের দুধ প্রক্রিয়াকরণ কারখানা উরুমুচির নিকটবর্তী ছানচে হুই জাতি স্বায়ত্তশাসিত বিভাগে দুধেল গাই পালকদের গরু পালনের সুবিধের জন্য একটি গরু খামার গড়ে তুলেছে । সেজন্য চেন সিয়াং আর তার স্ত্রী ছানচেতে দুধেল গাই পালনের কথা বিবেচনা করেন ।

    তখন আমি এই কথা ভাবি যে , শহরে চাকরি করার চেয়ে আমাদের এখানে দুধেল গাই পালন করায় বেশি আয় করা যায় । কোম্পানি আমাদের জন্য বিনাপয়সায় গোশালা সরবরাহ করে । এই সুবিধাজনক চুক্তি বিশ বছর মেয়াদী । এই চুক্তি অনুযায়ী , টাটকা দুধ বিক্রয়ের চিন্তাও নেই ।

    দু'বছর আগে মিঃ চেন কয়েক লক্ষ ইউয়ান রেন মিন পি সংগ্রহ করে বিশাধিক দুধেল গাই কিনেন । এখন তার মোট ষাটেরও বেশি দুধেল গাই আছে । মাসে তার দুধ বিক্রযের আয় ১০ হাজার ইউয়ানে দাঁড়ায় । তিনি মনে করেন , গ্রামাঞ্চলে দুধেল গাই পালন করার ব্যবসা মন্দ নয় । এবছর তিনি আরো কয়েক ডজন দুধেল গাই কিনবেন ।

    চেন সাহেবের মতো সিনচিয়াংয়ে বহু লোক মনে করেন যে , ঐতিহ্যিক কৃষি আর পশুপালন শিল্প চালানোর মাধ্যমেও বেশ আয় করা যায় । তুলো সিনচিয়াংয়ের প্রধান কৃষি শস্য । পর্যাপ্ত সূর্য আলো আর উত্তাপ থাকার দরুণ এখানের তুলো যেমন গুণগত মান উত্কৃষ্ট , তেমনি তার উত্পাদন পরিমাণ প্রচুর । বহু বছর ধরে সিনচিয়াংয়ের তুলোর উত্পাদন পরিমাণ দেশের শীর্ষস্থলে রয়েছে । সুতরাং তুলো সিনচিয়াংয়ের কৃষকদের আয়ের অন্যতম প্রধান উতসে পরিণত হয়েছে । বর্তমানে তুলোর আয় সমগ্র অঞ্চলের কৃষকদের মাথাপিছু আয়ের শতকরা ৪০ ভাগ হয়েছে । সিনচিয়াংয়ের কৃষকরা তুলো উত্পাদনের ওপর অধিক থেকে অধিকতর গুরুত্ব দেন । তুলো সাদা শিল্প বলে গণ্য করা হয় ।

    অন্য দিকে সিনচিয়াংয়ে টমেটো লাল শিল্প বলে মনে করা হয় । বর্তমানে সিনচিয়াং বিশ্বের অন্যতম তিনটি বড় টমেটো উত্পাদনকারী এলাকায় পরিণত হয়েছে । ওখানে টমেটোর বার্ষিক উত্পাদন পরিমাণ ৪০লক্ষ টন ছাড়িয়ে যায় । স্থানীয় কতকগুলো বিরাটাকারের শিল্প প্রতিষ্ঠান টমোটোর সংগে সংশ্লিষ্ট শিল্পের ভবিষ্যত দেখে ব্যাপকভাবে এই লাল শিল্পের বিকাশ ত্বরান্বিত করছে । সিচিয়াংয়ের থুংহো কোম্পানির চেয়ারম্যান থান ইয়্যু লুং সংবাদদাতাকে বলেছেন , আগে তাদের কোম্পানি প্রধানতঃ গৃহ নির্মাণ সামগ্রী বিক্রির ব্যবসা চালাতো । কয়েক বছর আগে সিনচিয়াংয়ের কৃষিজাত দ্রব্যের পুংখানুপুংখ প্রক্রিয়াকরণ শিল্প বিকাশের ভবিষ্যত দেখে কোম্পানি কৃষিজাত দ্রব্যের প্রক্রিয়াকরণ শুরু করল । এখন এই কোম্পানি চীনের অন্যতম বৃহত্তম টমেটো সস উত্পাদনকারী শিল্প প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে ।

    গত বছর আমাদের টমেটো সসের উত্পাদন পরিমাণ ২ লক্ষ ৭০ টনেরও বেশি হয়েছে । বর্তমানে আমাদের টমেটো উত্পাদন সামর্থ্য সমগ্র দেশের মোট উত্পাদন পরিমাণের প্রায় অর্ধেকাংশ হয়েছে । আমাদের বেশির ভাগ পণ্যদ্রব্য রফতানি করা হয় । তা বিশ্বের টমেটো বাণিজ্য পরিমাণের শতকরা ১৭ ভাগ আর চীনের টমেটো মোট রফতানি পরিমাণের শতকরা ৪০ ভাগ হয়েছে ।

    মিঃ থান বলেছেন , তাদের কোম্পানি আর টমেটোর সংগে সম্পর্কিত ১৫টি শিল্প প্রতিষ্ঠান প্রতি বছর ২ লক্ষেরও বেশি কৃষক পরিবারের কাছ থেকে ৩৭ লক্ষ টন টমেটো কিনে নানা রকম পণ্যদ্রব্য প্রক্রিয়াকরণ করে ।

    কৃষি ক্ষেত্রে বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর পুঁজিবিনিয়োগকে সিনচিয়াং স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল সরকার খুব সমর্থন করে । এটা সিনচিয়াংয়ের কৃষি কাঠামের পুনর্গঠনে ব্যাপক ত্বরান্বিত করেছে ।