ইশিন চীনের পূবাঞ্চলের চিয়াংসু প্রদেশের একটি ছোট শহর। চীনের বৃহত্তম শহর সাংহাই থেকে ওখানে যেতে গাড়ীতে মাত্র ২ ঘন্টার পথ। ছোট হলেও এই শহরের চার দিকের প্রাকৃতিক দৃশ্য খুবই মনোরম। শহরের পশ্চিম দিকে সারি সারি পাহাড় , উত্তর দিকে নীল পানির থাইহু হ্রদ।প্রাকৃতিক দৃশ্য ছাড়া ইশিন শহরের সাংস্কৃতিক আকর্ষণও প্রবল। এখানকার সংস্কৃতি অত্যন্ত প্রগাঢ়। যারা ইশিন শহরে পরিদর্শন করেছে তাদের মধ্যে অনেকেই এভাবে ব্যাখ্যা করে করেছেন: ' ইশিন শহরে বারবার আসলেও কোনো ক্লান্তিনেই' । সুদীর্ঘ ইতিহাস এবং প্রগাঢ় সংস্কৃতি ইশিন শহরের জন্যে সম্মৃদ্ধ উত্তরাধিকার এনে দিয়েছে। শহরের বিখ্যাত পুরাকীর্তি হল: চীনের তিন সম্রাজ যুগের সলেট পাথর , চীনের থাং রাজবংশের প্রাচীন ভাঁটি , উত্তর সুন রাজবংশের মহান লেখক সু ডং পুকে স্মরণ করার জন্যে নির্মিত ডং পু বই পড়ার ভবন। তা ছাড়া, পাঁচ হাজার বছর আগে অথার্ত নতুন পাথর যুগে স্থানীয় লোক চীনা মাটি আবিষ্কার করেন। তখন থেকে ইশিনের চীনা মাটি সারা চীনে বিখ্যাত। এখানকার চীনা মাটির মান চমত্কার। মিষ্টার নি জন ইউয়েন যিনি বেশ কয়েক বার ইশিন শহরে বেড়াতে এসেছেন তিনি এই ছোট শহর অত্যন্ত ভালবাসেন। একটি সাক্ষাত্কারে তিনি বলেছেন, 'আমার মনে হয় ইশিন শহর ছোট হলেও এখানকার প্রাকৃতিক দৃশ্য সুন্দর এবং সাংস্কৃতিক আকর্ষণও সম্মৃদ্ধ। এখানকার পাহাড় সবুজ, নদনদীর পানি সচ্ছল, গুহার অদভুত এবং পাথর সুন্দর।এখানকার চীনা মাটি বিশ্ববিখ্যাত বটেই। কিন্তু ইশিন শহরকে চিত্রাঙ্কনেরর জন্মস্থান বলা হয়। যারা চীনের চিত্রাঙ্কন পছন্দ করেন তাদেরকে ইশিন শহর পরিদর্শন করতে হবে।'
নি জন ইউয়েন ঠিকই বলেছেন। এই ছোট শহরে চীনের বেশ কয়েক জন নাম-করা চিত্রশিল্পী আছে। তাঁরা হলেন, শি পেই হং , উ ডা ইউ, ই সো সি এবং উ গুয়েন জন। তাঁদের চিত্রাঙ্কন চীনের শিল্পকলা মঞ্চের মূল্যবান সম্পদে পরিণত হয়েছে। বতর্মানে ইশিন শহরে বেশ কয়েক জন বিখ্যাত চিত্রশিল্পীর জন্ম হয়েছে। তাঁদের আকাঁ ছুবিগুলো সুনাম পেয়েছে। ইশিন শহরের রাস্তার দু'পাশের ছোট-বড় দোকনগুলোতে তাঁদের চিত্রাঙ্কন কিনতে পাওয়া যায়। এ সব চিত্রাঙ্কন এই ছোট শহরের একটি বৈশিষ্ট্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। 'পযর্টন জগত' নামক পত্রিকার প্রধান সম্পাদক লি পিন বলেছেন, ইশিন শহরের এই বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন সাংস্কৃতিক পরিবেশ এই বিশেষ ধরনের সাংস্কৃতিক আকর্ষণের রুপ ধরেছে। এটাও দেশ-বিদেশী পযর্টকদের আকর্ষণের অন্যতম কারণে পরিণত হয়েছে। তিনি বলেছেন, বতর্মানে ইশিন শহরে বেশ কয়েক জন সম্ভাবময় চিত্রশিল্পীর আবির্ভাব হয়েছে। একারকার শিল্পকলা ভবন দেশের বিভিন্ন জায়গার চিত্রশিল্পীদের সঙ্গে 'বন্ধুত্ব ' হয়েছে। এখানে দেশের বিভিন্ন জায়গার চিত্রশিল্পীদের চিত্রাঙ্কন প্রদর্শন করা হয়। কেবল ২০০৪ সালে এখানে ২৮বার প্রভাবশালী চিত্রাঙ্কন প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। এখানকার সাংস্কৃতিক পরিবেশ নি:সন্দেহে প্রাকৃতিক দৃশ্যের জন্যে একটি সংযুক্তি হিসেবে গণ্য করা হয়। সুতরাং এ সব দেখার জন্যে প্রত্যেক বছর অধিক থেকে অধিকতর দেশী-বিদেশী পযর্টক এখানে ভ্রমণ করতে আসছেন। তিনি ব্যাখ্যা করে বলেছেন, নব্বই শতাব্দীতে ইশিন শহরের স্থানীয় সরকার বেশ কয়েক জন বিখ্যাত চিত্রশিল্পীর স্মারক ভবন নিমার্ন করেছে। এ সব ভবনে নানা যুগের চিত্রশিল্পীদের চিত্রাঙ্কন সংগ্রহ করা হয়েছে। এখানকার গ্রামগুলোতেও নানা ধরনের চিত্রাঙ্কন সমিতি আছে। কৃষকদের মধ্যে অনেকেই চিত্রাঙ্কন আঁকতে পছন্দ করেন। তাঁরা কাজের ফাঁকে ফাঁকে এক সঙ্গে চিত্রাঙ্কন আঁকেন। এ সব সমিতিতে মাঝে মাঝে চিত্রাঙ্কন আঁকার প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। বতর্মানে এই ছোট শহরের দোকানগুলোতে যে সব চিত্রাঙ্কন বিক্রি করা হয় সে সব চিত্রাঙ্কনের মধ্যে অনেকেই স্থানীয় কৃষকদের কাজ। তাদের আঁকা চিত্রাঙ্কন পেশাদার চিত্রশিল্পিদের কাজের মতো দেখায়। তাদের চিত্রাঙ্কন দেশের চিত্রাঙ্কন প্রদর্শনীতে মাঝা মাঝে দেখানো হয়। এ সব চিত্রাঙ্কনের মধ্যে কোনো কোনো আন্তজার্তিক চিত্রাঙ্কন প্রদর্শনীতে যোগ দিয়েছে। ইশিন শহরে অনেক পুরাকীর্তি আছে। এখানকার বিখ্যাত খাস্টে ভূবৈচিত্রে শতের কাছাকাছি দক্ষ শিল্পীর জন্ম হন।এখানকার বেশ কয়েকটি গুহার এসব শিল্পির সঙ্গে সম্পর্ক আছে। ১৯৩৪ সালে উন্মুক্ত সেনশিয়েন গুহার এ সব গুহারের অন্যতম। ভূমিজ্ঞানীদের ধারণা অনুযায়ী, প্রায় দশ লক্ষ বছর আগে এই গুহারের রুপ ধরেছে। এই গুহারের নাম একজন কবির সঙ্গে সম্পর্ক আছে। কিংবদন্তিতে বলা হয়েছে, ৪ হাজার বছর আগে সেনশিয়েন নামে একজন লোক এখানে বসবাস করতেন। সেনশিয়েন গুহার ইশিন শহর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে। একটি বড় রাস্তা সড়াসড়ি এই গুহারের সামনে পোছানো হয়। সেনশিয়েন দশর্নীয়স্থার দায়িত্বশীল ব্যক্তি জেন বাও মিন ব্যাখ্যা করে বলেছেন, এই গুহারের প্রথম অংশ হল একটি পার্ক। গুহারের মাঝখানে একটি আমোদ-প্রমোদ এলাকা । এখন গোটা এলাকা একটি বিরাটাকারের দৃশর্নীয়স্থান হয়েছে । এটা সেনশিয়েন দৃশর্নীয়স্থান ডাকা হয়।
|