v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2005-11-02 12:42:05    
তাইওয়ানের নারী চিত্রশিল্পী চান ফু ইং

cri
    সম্প্রতি চীনের জাতীয় যাদুঘরে তাইওয়ানের নারী চিত্রশিল্পী চান ফু ইংয়ের একটি একক চিত্রপ্রদর্শনী আয়োজিত হয়েছে । চান ফু ইং শুধু একজন নামকরা চিত্রশিল্পীই নন , তিনি অনেক বছর ধরে গরীব শিল্পী ও ছাত্রদের আর্থিক সাহায্য দিয়ে আসছেন এবং প্রণালীর দুই পারের সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান বাড়ানোর চেষ্টা করেছেন ।

    মূলভূভাগে প্রদর্শিত চান ফু ইংয়ের একক চিত্রপ্রদর্শনীতে তার আকাঁ ৭০টি ছবি দেখানো হয়েছে । তার আঁকা ছবিগুলোর বেশীর ভাগই চীনের নামকরা দশর্নীয় স্থানগুলোর পাহাড় ও নদীর ছবি , যেমন চীনের আন হুই প্রদেশের হুয়াং শান পাহাড় , ইউনান প্রদেশের প্রস্তরবন, সি ছুয়ান প্রদেশের চিউ চাই কৌ , হুনান প্রদেশের চান চিয়া কৌ ইত্যাদি দর্শনীয় এলাকার ছবি । তার আঁকা ছবিগুলোতে চীনের সুন্দর সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য চমত্কাভাবে চিত্রিত হয়েছে ।

    মাদাম চান ফু ইংয়ের বয়স সত্তর বছর । তিনি তাইওয়ানের মিয়াও লি অঞ্চলের লোক । বয়স বেশী হলেও তার স্বাস্থ্য ভালো । ছোটবেলায় পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো নয় বলে তাকে অল্পবয়সেই পড়াশুনা ছেড়ে দিয়ে কাজ করতে হয়েছিলো । চান ফু ইং ছোটবেলা থেকে ছবি আকঁতে পছন্দ করেন । ছবি আঁকার ফি সংগ্রহের অভিজ্ঞতা স্মরণ করে চান ফু ইং বলেছেন , আমি গরীব পরিবারের মেয়ে । ছোট বেলায় পেট ভরে খেতে পেতাম না । তাই শিক্ষার ফি জমা দিয়ে ছবি আঁকা শেখা আমার পরিবারের পক্ষে একেবার অসম্ভব ছিল । তাই আমি বাবাকে বলেছি ,আমার শরীর দুর্বল , তাই শারীরিক পরিশ্রম করে টাকা উপার্জন করতে পারি না । তাই আমি তাইওয়ানের সিংচু নামে এক জায়গায় ছবি তোলার কৌশল শিখার সিদ্ধান্ত নিলাম । আমি সেখানে ছয়মাস শেখার পরই ছবি তোলার কৌশল আয়ত্ত করেছি । আমি অতিথিদের ছবি তোলা ছাড়াও সুন্দর সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্যের ছবিও তুলতাম । সেই সময় চান ফু ইংয়ের বয়স মাত্র ১৪ বছর । ছবি ডেভেলপ ও ছাপার সরঞ্জাম কেনার টাকা আমার ছিল না , তাই আমি ভেজা ছবিগুলো রোদেশুকাতাম এবং কয়েকটি কাগজের বক্স দিয়ে ছবি এনলার্জ করার সরঞ্জাম তৈরী করেছিলাম। আর্থিক অবস্থা ভালো না হলেও তার ছবি তোলার কৌশল ক্রমেই উন্নত হয়েছে। তার তোলা ছবি একাধিকবার জাপান , যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানীর আলোকচিত্র প্রতিযোগিতায় পুরস্কার পেয়েছে ।

    আঠারো বছর বয়সে চান ফু ইং আর্থিক ক্ষেত্রে স্বনির্ভর হলেন। তাই তিনি ছবি আঁকা শিখতে শুরু করেন । তিনি বলেছেন , ছবি আঁকার সুযোগ পেয়ে আমি সব কষ্ট ও দুঃখ ভুলে গেছি । আমি যখন ছবি আঁকি , তখন কয়েক শ' লোক পাশে থাকলেও আমি প্রভাবিত হবো না । আমার মন শুধু ছবির উপর , কেউ আমাকে থামাতে পারে না । সেই সময় আমার মন পানির মতো শান্ত ।

    পরে চান ফু ইং চীনের বিখ্যাত চিত্রশিল্পী হুয়াং চুন পির কাছ থেকে ছবি আঁকা শিখেন । চিত্রশিল্পী হুয়াং চুন পি চীনের ঐতিহ্যিক শৈলীতে ছবি আঁকার সঙ্গে সঙ্গে পাশ্চাত্যের শৈলীর ছবিও আঁকেন । তাই তার আঁকা ছবিগুলোতে ঐতিহ্যিক ছবিগুলোতে অনেক আধুনিক যুগের উপাদান মেশানো হয়েছে । চান ফু ইং ত্রিশাধিক বছরে শিক্ষক হুয়াং চুন পির কাছ থেকে ঐতিহ্যিক চীনা ছবি আকাঁর কৌশল শিখেছেন । তিনি মোট শতাধিকবার শিক্ষকের সঙ্গে বা এককভাবে চিত্রপ্রদর্শনীর আয়োজন করেছেন । চান ফু ইং মূলভূভাগের নদনদী ও পাহাড় পর্বত খুব পছন্দ করেন । তিনি বলেছেন , মূলভূভাগের পাহাড় ও নদীগুলো খুবই সুন্দর । অনেকে আমাকে ইউরোপ ও আমেরিকায় যেতে বলেছিলেন , কিন্তু আমি একবারও যাই নি । আমি জানি মূলভূভাগের নদনদী ও পাহাড়পর্বত আমার ছবির সবচেয়ে ভালো পটভূমি । বিশেষ করে সেখানকার পাহাড়ের পাথরগুলোর আকার ভারী সুন্দর । প্রতিবার আমি মূলভূভাগে মাত্র তিন-চার দিন থাকি , তবুও এই সীমিত সময়ের মধ্যে আমি অবশ্যই একদিনে মহাপ্রাচীর ও তার দুই পাশের পাথর দেখতে যেতাম ।

    ১৯৯০ সালে চান ফু ইং প্রথমবার মূলভূভাগে আসেন । ১৯৯২ সালে তার ছবিগুলো প্রথমবার মূলভূভাগে প্রদর্শিত হয় । ১৯৯৯ সালে চীনের ইতিহাস যাদুঘরে চান ফু ইংয়ের একক চিত্রপ্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয় ।সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তিনি প্রণালীর দুই পাশের সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান বাড়ানোর চেষ্টা করেছেন । ১৯৮৮ সালে পেইচিংয়ে তার শিক্ষক হুয়াং চুন পির একটি চিত্রপ্রদর্শনী আর হুয়াং চুন পির চিত্র সংক্রান্ত একটি আলোচনা সভার আয়োজন করেছেন । গত ৫০ বছরে মূলভূভাগে এটা চিত্রশিল্পী হুয়াং চুন পির প্রথম চিত্রপ্রদর্শনী ।

    তাইওয়ানের গরীব ও অসুস্থ চিত্রশিল্পীকে সাহায্য করা আর প্রণালীর দুই পারের চারুকলা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কৃতি ছাত্রদের স্কলারশিপ দেওয়ার জন্য চান ফু ইং হুয়াং চুন পি চিত্রশিল্প তহবিল প্রতিষ্ঠা করেন । তহবিলের অর্থ সংগ্রহের জন্য চান ফু ইং প্রতিটি পয়সা বাচাঁনোর চেষ্টা করেন । তার জীবন সহজসরল । তিনি সস্তা কাপড় পড়েন , রাত্রে শোবার বিছানা পর্যন্ত কিনেন না । তিনি দুটি নীচু আলমারির উপর কাঠ রেখে মাথার নীচে একটি বই রেখে বালিশ হিসেবে ব্যবহার করে বিশ্রাম করতেন । তার আঁকা ছবিগুলো বিক্রি করে তিনি যে অর্থ পান , তিনি তার সবই মূলভূভাগের গরীব ছাত্রদের দিতেন । তিনি বলেছেন , আমি আমার বাঁচানো টাকা দিয়ে আমার শিক্ষকের নামে ছাত্রদের সাহায্য করেছি । শিক্ষক হুয়াং চুন পির স্মৃতির জন্য এবং শিক্ষকের জন্য আরো বেশী যুবককে সাহায্য করার জন্য আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি । আমি আশা করি আমি যা করেছি , তাতে সমাজের উপকার হবে।

    চাং ফু ইং খুব ব্যস্ত মানুষ । তিনি ছবি আঁকা ছাড়াও একটি চিত্র গ্যালারী চালান , নিলামে অংশ নেন এবং ছাত্রদের পরামর্শ দেন । সারা দিন ব্যস্ত থাকার পর রাত্রে এগারটার পর তিনি ছবি আঁকতে শুরু করেন । ছবি আঁকার সময় তিনি খাওয়া ও বিশ্রাম সব ভুলে যান । চাং ফু ইংয়ের দুই হাতের কব্জিতে রিস্কার আছে , একবার হোচট খেয়ে তার এক হাতের কব্জি ভেঙ্গেছিল , তখন থেকে তার কব্জিতে প্রায়ই ব্যথা হয় । চান ফু ইং বলেছেন , ব্যথা হলেও তিনি ছবি আঁকার কাজ বন্ধ করবেন না । কারণ একজন চিত্রশিল্পীর চেষ্টার সীমা নেই ।