চীনের নগরায়নের গতি দ্রততর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চীনের কমিউনিটি গঠনেও লক্ষণীয় অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে । বিশেষ করে চিকিত্সা , বৃদ্ধবৃদ্ধাদের প্রতিপালন ও বিশেষ মানব-সমষ্টির আত্মসংশোধন প্রভৃতি ক্ষেত্রে কমিউনিটি অর্থাত আবাসিক এলাকার কাজকর্ম অনবরত পুর্নাঙ্গ রুপ ধারণ করছে ।
সম্প্রতি সি আর আইয়ের সংবাদদাতা দক্ষিণ পশ্চিম চীনের ছঙছিং শহরের জেন উ আবাসিক এলাকায় সাক্ষাতকার নেওয়ার সময় লক্ষ্য করেছেন যে , সেখানকার চিকিত্সালয় প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় নাগরিকদের যথেষ্ট সুবিধা হয়েছে।মাদাম জাও ইয়ান ফাঙ বলেছেন :আমাদের আবাসিক এলাকার চিকিত্সালয়ের কর্মীরা সর্বান্তকরণে আমাদের সেবা করছেন । আমরা যে কোনো সময় সেখানে গিয়ে চিকিত্সা করাতে পারি । বাইরের হাসপাতালের চেয়ে এখানকার ওষুধের দাম সস্তা। ডাক্তাররা প্রতিবছর দুবার করে বিনামুল্য আমাদের স্বাস্থ্যের পরীক্ষা করেন । সবাই তাঁদের পরিসেবায় সন্তুষ্ট ।
চিকিত্সা চীনের কমিউনিটির সামাজিক কাজকর্মের অন্যতম । চীনের বড় বড় শহরের অনেক আবাসিক এলাকায় চিকিত্সালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে । পেইচিংয়ে আবাসিক এলাকার চিকিত্সালয়ের সংখ্যা সাতশোরও বেশী। নাগরিকদের চাহিদা মেটানোর জন্য চিকিত্সালয়ের প্রচুর আধুনিক চিকিত্সা সাজসরঞ্জাম কেনা হয়েছে। চিকিত্সালয়ের কর্মীদের সংখ্যাও ক্রমাগত বাড়ছে । উত্তর চীনের তালিয়ান শহরের আবাসিক এলাকার চিকিত্সালয় নাগরিকদের পরিসেবায় সারাদেশের জন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে । এই শহরের সি কাং ডিষ্ট্রিক্টের সি তাও আবাসিক এলাকার চিকিত্সালয় প্রতিষ্ঠার সময় এতে মাত্র দশ-বারো জন কর্মী ছিলেন । কিন্তু এখন তাঁদের সংখ্যা চল্লিশেরও বেশী । এই চিকিত্সালয়ের পরিচালক লিউ পিঙ বলেছেন :আমি ও আমার সহকর্মীরা এই আবাসিক এলাকায় বসবাসকারী নাগরিকদের ব্যাধি নিবারন ও চিকিত্সা , স্বাস্থ্য সংরক্ষণ , স্বাস্থ্য পুনরোদ্ধার ও জন্মনিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব পালন করি । সচরাচর ঘটিত ব্যাধি ও সার্বক্ষনিক ব্যাধি নিরাময়ের ক্ষমতা আমাদের আছে ।
বৃদ্ধবৃদ্ধাদের প্রতিপালনে কমিউনিটির ভূমিকাও উল্লেখযোগ্য । অতীতে চীনে বৃদ্ধবৃদ্ধারা প্রধানত: ছেলেমেয়েদের উপর নির্ভর করে অথবা বর্ষীয়ান কল্যাণ কেন্দ্রে গিয়ে জীবনযাত্রার শেষ সময়টুকু কাটাতেন। এখন কমিউনিটির পরিসেবার পরিধি প্রসারিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বৃদ্ধবৃদ্ধাদের প্রতিপালনের নতুন পদ্ধতির সন্ধান পাওয়া গিয়েছে । সরকারের আর্থিক সাহায্যে প্রশিক্ষণ- প্রাপ্ত পরিচারিকারা বৃদ্ধবৃদ্ধাদের বাড়িতে গিয়ে তাঁদের দেখাশোনা করেন । ফলে বৃদ্ধবৃদ্ধারা নিজেদের পরিচিত পরিবেশে নিশ্চিন্তে বার্ধক্য যাপন করতে পারছেন । পেইচিংয়ের ইয়ুথান পাড়া কমিটির অধীনস্থ ছিনান আবাসিক এলাকায় গত বছর "দেওয়ালবিহীন বর্ষীয়ান কল্যাণ কেন্দ্র" খোলা হয়েছে । দেওয়ালবিহীন বর্ষীয়ান কল্যাণ কেন্দ্রের মানে হলো , বর্ষীয়ান কল্যাণ কেন্দ্রের পারিবারিক পরিচর্যা ও চিকিত্সা প্রভৃতি পরিসেবার কাজ সম্পন্ন করা হয় এখন আবাসিক এলাকায়। বৃদ্ধবৃদ্ধাদের বিশেষ কোনো পরিসেবার দাবি জানালে অনতিবিলম্বে তা মেটানো যায় । বর্তমানে এক হাজার তিন শো বৃদ্ধবৃদ্ধা নানা রকম পরিসেবা উপভোগ করছেন। এই প্রসঙ্গে বৃদ্ধ ওয়াং সি লিয়াং বলেছেন :আমি এখন নিজের বাড়িতে বার্ধক্য জীবন যাপন করছি । আমার মেয়ে ও আমার বাড়ি ছেড়ে না গেলেও আমি বর্ষীয়ান কল্যাণ কেন্দ্রের যাবতীয় সুযোগ সুবিধা পাচ্ছি ।
চীনের কোনো কোনো শহরের কমিউনিটি বিশেষ জন-সমষ্টির আত্মসংশোধনের ভার গ্রহণ করেছে । ২০০৩ সালের জুলাই মাস থেকে যারা লঘু অপরাধ করেছেন , অথবা কারাদণ্ড কার্যকরী করার সময় শালীন ব্যবহারের জন্য যাদের কারাদণ্ডের মেয়াদ কমিয়ে দেয়া হয়েছে, আদালত তাঁদের কারাগারের বদলে যার যার আবাসিক এলাকায় থেকে আত্মসংশোধন করার অনুমতি দেয়। বর্তমানে পেইচিং , সানতং , জিয়াং সু প্রভৃতি ছ'টি প্রদেশ ও কেন্দ্রশাসিত মহানগরের আবাসিক এলাকায় তাঁদের আত্মসংশোধনের সুযোগ দেয়া হচ্ছে । পেইচিংয়ের আবাসিক এলাকাগোলোতে চার হাজার অপরাধীর আত্মসংশোধন চলছে । ভুল শুধরানোর সময় কমিউনিটির কর্মীরা সঠিক জীবনবোধ ও মুল্যবোধ গড়ে তুলতে তাঁদের উপদেশ দেন।এ ছাড়া তাঁদের জনহিতকর কাজেও অংশ নিতে দেয়া হয় , যাতে তাঁরা আশেপাশের বাসিন্দাদের সঙ্গে মেলামেশা করে অনায়াসে সমাজে স্থান পেতে পারেন । পেইচিংয়ের সমাজবিজ্ঞানী মি: চৌ জেন জি কমিউনিটির এই ভূমিকার প্রশংসা করেছেন ।তিনি বলেছেন , মনুষ্যত্বের মনোবৃত্তির দিক থেকে বিচার করলে দেখা যায় যে , উচুঁ প্রাচীর, বৈদ্যুতিক কাঁটা তারের বেষ্টনী, ইলেক্ট্রিক চোখের সামনে সময় কাটাতে অপরাধীরা প্রবল মানসিক চাপে পড়ে । কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে সমাজে ফিরে তাঁরা জানেন না , কিভাবে আশেপাশের মানুষদের সঙ্গে মিশবেন , আগে থেকে আবাসিক এলাকায় আত্মসংশোধন করলে সমাজে মিশে যাওয়া তাঁদের পক্ষে সহজসাধ্য হবে ।
মি: চৌ সি আর আইয়ের সংবাদদাতাকে জানিয়েছেন , শিল্পোন্নত দেশের তুলনায় চীনের আবাসিক এলাকায় আত্মসংশোধনকারী অপরাধীদর সংখ্যা অনেক কম । তবে আবাসিক এলাকায় অপরাধীদের আত্মসংশোধনের প্রবণতা উত্সাহব্যঞ্জক ।
চীনের কোনো কোনো শহরে শহরজোড়া কমিউনিটি-পরিসেবা ব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়েছে ।পেইচিংয়ের কমিউনিটি পরিসেবা কেন্দ্রের উপপরিচালক মি: জি সিং তাঁর কেন্দ্রের কর্মসুচী সম্পর্কে সি আর আইয়ের সংবাদদাতাকে জানিয়েছেন , তাঁরা ইতিমধ্যে কমিউনিটি পরিসেবার অংশ হিসেবে অনেক হট-লাইন খুলেছেন । তিনি বলেছেন , আধুনিক টেলি-যোগাযোগ ও কম্পিউটার প্রযুক্তি ব্যবহার করে আমরা পাড়া কমিটি ও কমিউনিটির টেলিফোন - এক্সচেন্জ সংযুক্ত করেছি । নতুন টেলিফোন - ব্যবস্থার সাহায্যে পরিচারিকা সরবরাহ , বহুমুখী মেরামতি , চিত্তবিনোদন , স্বাস্থ্য রক্ষা , আইন প্রভৃতি ব্যাপারে রোজ নাগরিকদের প্রায় এক হাজার প্রশ্নের উত্তর দেয়া হয় ।
|