কিছুদিন থেকে চীনের উ ছাও জেলার আ্যক্রব্যাটিকস স্কুলে আফ্রিকার তবলার ধ্বনি মাঝে মাঝে শোনা যায় । তবলাটি বাজিয়েছেন গোদফ্রেই মওয়াইপুনগু। তাঁর চীনা বন্ধুরা তাঁকে সংক্ষেপে গোদফ্রেই বলে ডাকেন ।তিনি এখন এই স্কুলে আ্যক্রব্যাটিকস শিখছেন , চীনা শিক্ষকদের যত্ন-মমতায় ও সহপাঠীদের সাহায্যে গোদফ্রেই চীনা জীবনে অভ্যস্ত হয়েছেন ।
পেইচিংয়ের সংগে সংলগ্ন হোপেই প্রদেশের উ ছাও জেলা চীনা আ্যক্রব্যাটিকসের অন্যতম উত্পত্তিস্থল । টানা নয় বছরে সার্থকভাবে আন্তর্জাতিক আ্যক্রব্যাটিকস উত্সব আয়োজনের জন্য উ ছাও জেলা দেশবিদেশে সুনাম অর্জন করেছে । এখন উ ছাও জেলার আ্যক্রব্যাটিকস স্কুলে দেশ বিদেশের ছাত্রছাত্রীরা আ্যক্রব্যাটিকস শিখছেন । জিজ্ঞেস করে জানা গেছে , এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকার তিরিশ জনেরও বেশী ছাত্রছাত্রী এই স্কুলে আ্যক্রব্যাটিকস শিখেছেন । প্রশিক্ষণ কক্ষে গিয়ে গোদফ্রেইয়ের দেখা পেলাম আমরা ।তিনি ও অন্য তিন জন ছেলে লাইনে দাঁড়িয়ে " টুপি নিক্ষেপ" চর্চা করছেন । একটির পর একটি টুপি শূণ্যে নিক্ষেপ করে আবার তাঁরা মাথায় পরেন । এই আইটেম চর্চায় তাঁরা বেশ নিপুন হয়েছেন বলে মনে হয় । গোদফ্রেই লম্বা নন , মুখে লেগে আছে নির্মল হাসি । তিনি চীনে এসেছেন মাত্র চার মাস আগে । তবে ভাঙ্গা ভাঙ্গা হান ভাষায় আমাদের সংগে কথা বলতে পেরেছেন ।
তিনি বলেছেন :আমার নাম গোদফ্রেই,আমার বয়স উনিশ বছর ।আমি চীন ও চীনের অ্যাক্রব্যাটিকস ভালোবাসি । ২০০৪সালের সেপ্টেম্বর মাসের শেষ দিকে গোদফ্রেই সহ আফ্রিকার ১৮ জন ছেলেমেয়ে অ্যাক্রব্যাটিকস শিখতে উ ছিয়াওয়ে আসেন । তাঁদের মধ্যে সবচেয়ে বড় শিক্ষার্থীর বয়স ২০ বছর এবং সবচেয়ে ছোটো শিক্ষার্থীর বয়স মাত্র ১২ বছর ।তাঁরা চীনে একবছর অ্যাক্রব্যাটিকস শিখবেন । এই এক বছরের মধ্যে অনেকগুলো সুন্দর আইটেম আয়ত্ত করে আগামী অক্টোবর মাসে তাঁদের পেইচিংয়ে পরিবেশন করতে হবে । এটা ছাত্রছাত্রী আর শিক্ষকদের পক্ষে নি:সন্দেহে একটি কঠিন কর্তব্য ।
গোদফ্রেইয়ের শরীরের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী তাঁকে টুপি নিক্ষেপ , সাইকেল চালানো ও শারীরিক কসরত সহ তিন চারটে আইটেম শিখানো হচ্ছে । শিক্ষক ছেন সু জুন সি আর আইয়ের সংবাদদাতাকে জানিয়েছেন , গোদফ্রেই নিষ্ঠার সংগে নানা বিষয়ে শিখছেন । মাঝে মাঝে তিনি নিজেই নির্দ্ধারিত প্রশিক্ষণের সময় বাড়িয়ে দেন । এখন তারঁ কলাকৌশল ক্রমশই পরিণত হয়েছে। গোদফ্রেই অধ্যবসায়ের সংগে প্রশিক্ষণ নেন , দেহের জোর ও লম্ফের শক্তির দিক দিয়ে তাঁর দ্রুত অগ্রগতি হয়েছে। গোদফ্রেই তাঞ্জানিয়ার একটি নৃত্যনাট্য দলের শিল্পী ছিলেন । অ্যাক্রট্যাটিকসের উপরে তাঁর তেমন দখল ছিল না । নানা আইটেমে তাঁর যে উন্নতি হয়েছে তা তাঁর কঠোর পরিশ্রমের সংগে সম্পর্কিত । প্রতিদিন সুর্য উঠতে না উঠতেই তিনি প্রথম প্রশিক্ষণ কক্ষে প্রবেশ করে ঊরুতে জোরে চাপ দেয়া, গড়াগড়ি দেয়া, ঝাপ দেয়া , মাটিতে হাতের উপরে দাঁড়ানোর মত শারীরিক কসরত করতে থাকেন ।
সপ্তাহান্তে অন্যরা বিশ্রাম করেন , কিন্তু গোদফ্রেই অন্যান্য দিনের মত যথাসময়ে প্রশিক্ষণ নিতে আসেন । বিদেশী ছাত্রছাত্রীদের প্রশিক্ষণ কক্ষের পাশে চীনা ছাত্রছাত্রীদের প্রশিক্ষণ কক্ষ । প্রতিদিন চীনা ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে তাঁর দেখা হয় । তিনি যে অনেক চীনা বন্ধু পেয়েছেন সু মিন মিন তাঁদের মধ্যে একজন । সুমিন মিন বলেছেন , আমরা ভালো বন্ধু । তিনি যে ক্রীড়া দফা ন চর্চা করছেন তা এখন আমি করতে পারি । তাঁর ভুল হলে সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে জানাই আমি । কিভাবে করতে হবে তাও দেখিয়ে দিই । আমি এখন যা শিখছি তিনি তা করতে পারেন না ।তাই ক্লাস শেষ হলে আমাদের প্রশিক্ষণ কক্ষে দেখতে আসেন তিনি । চীনা শিক্ষক ও বন্ধুদের সাহায্যে গোদফ্রেই অ্যাক্রবাটিকসের বহুকৌশল আয়ত্ত্ব করেছেন ।
তিনি বলেছেন ,টুপি নিক্ষেপ সহ অনেক আইটেম মোটামুটি আমার আয়ত্তে এসেছে । প্রশিক্ষণ শেষে দেশে ফিরে আমি একটি অ্যাক্রবাটিকস দল গঠন করব এবং আমার দলের শিল্পীদের নিয়ে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে অনুষ্ঠান পরিবেশন করব । দুপুরের খাওয়া-দাওয়ার সময় এসে পড়ছে ।বিদেশী ছাত্রছাত্রীদের বিশেষ রান্নাঘরের দুজন বাবুর্চি রান্না নিয়ে ব্যস্ত হয়ে উঠলেন । আজ গোদফ্রেই ও অন্য কয়েকজন মুসলমান ছাত্রছাত্রীর জন্য গরুর মাংসের পুর ও তরকারী সহ তিনপদের ব্যঞ্জন তৈরী করা হবে । দৈনন্দিন জীবনে বিদেশী ছাত্রছাত্রীদের দেখাশোনার ভার মাদাম লিউ জি সিয়ার উপরে। তিনি বলেছেন , বিদেশী ছাত্রছাত্রীদের যাতে অসুবিধা না হয় তার জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষ চেষ্টার ত্রুটি করে নি । তিনি বলেছেন ,প্রশিক্ষণ নিতে তাঁদের দেহের প্রচুর শক্তি ব্যয় হয় । তাঁদের সবল সতেজ রাখার জন্য প্রতিবেলায় মাংস সহ তাঁদের সুস্বাদু খাবার খেতে দেয়া হয় । তাঁরা চীনের ঐতিহ্যিক খাবার খেতেও পছন্দ করেন ।
গোদফ্রেই ও তাঁর সহপাঠীরা শীতের কাপড় নিয়ে আসেন নি । স্কুল কর্তৃপক্ষ তাঁদের জন্য কিনে দিয়েছে সুক্ষ্ম পালক -গাদানো - জ্যাকেট । তাঁরা থাকেন হিটার ব্যবস্থা সম্পন্ন আবাসিক ভবনে । তাঁদের সকলের রুমে আছে টিভি সেট । গোদফ্রেই চীনাভাষায় কথা বলেন , চীনা গান শিখেন এবং চীনা রন্ধনশৈলীতে তৈরী খাবার খেতে খুব পছন্দ করেন । তিনি বলেছেন , আফ্রিকায় আমার চীনা খাবার খাওয়ার সুযোগ হয় নি। চীনা ফাঁপা রুটি , ভাত এবং মাংসের পুর দেয়া নোন্তা স্বাদের পিঠা সবই আমার ভালো লাগে । ২০০৪ সালের ডিসেম্বর মাসে উ ছাও অ্যাক্রবাটিকস স্কুলের ১২জন আফ্রিকান ছাত্রছাত্রী চীনের সাংস্কৃতিক প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসেবে ইথিওপিয়ায় অ্যাক্রবাটিকস পরিবেশন করেছেন , চীন-আফ্রিকা সহযোগিতা ফোরামে অংশগ্রহণকারী চীনের প্রধান মন্ত্রী ওয়েন জিয়াবাও ও আফ্রিকার তিরিশ জনেরও বেশী রাষ্ট্রপ্রধান তাঁদের চিত্তাকর্ষক অনুষ্ঠান উপভোগ করে তাঁদের ভুয়সী প্রশংসা করেছেন সেই অনুষ্ঠান পরিবেশনে অংশ নেয়ার সুযোগ গোদফ্রেইয়ের মিলে নি । তবে তাঁর সহপাঠীদের সাফল্য তাঁকে যথেষ্ট প্রেরণা যুগিয়েছে ।তিনি অদূর ভবিষ্যতে তাঁর জন্মস্থানে ফিরে দেশবাসীদের জন্য অ্যাক্রবাটিকস পরিবেশনের স্বপ্ন দেখছেন ।
|