তৃতীয় কৃষি মেলা হচ্ছে চীনের কৃষি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এবং জাতীয় উন্নয়ন ও সংস্কার কমিশন, অর্থ মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, রাষ্ট্রীয় গুণগত মান তত্ত্বাবধান আর কুয়ারানটাইন প্রশাসন ,রাষ্ট্রীয় শুল্ক প্রশাসন , পেইচিং মহানগর গণ-সরকার ও চীনের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ত্বরান্বিতকরণ সমিতি , জাতীয় কৃষি প্রদর্শনীভবন, চীনের কৃষি মেলা কমিটি, বাণিজ্য উন্নয়ন সমিতির শাখার যৌথ আয়োজন। এবারকার কৃষি মেলা অক্টোবর মাসের ১৭ থেকে ২১ তারিখ পর্যন্ত পেইচিংয়ের জাতীয় কৃষি প্রদর্শনী ভবনে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এই কৃষি মেলায় " নতুন কৃষির প্রদর্শন, নতুন গ্রামের বর্ণনা" এই প্রধান বিষয়বস্তু উপস্থাপিত হয়েছে এবং " ফলাফল দেখানো, আদান-প্রদান ও বাণিজ্য ত্বরান্বিত করা" এই মেলার লক্ষ্য । এর আকার সবচেয়ে বড় , ব্যবসা বেশি , পণ্য আরও নিখুঁত , পরিসেবা আরও উন্নত বলে দেশ-বিদেশে এবারকার মেলার প্রভাব বেশি এবং তাহলো চীনের কৃষির " উত্কৃষ্টতা, উন্মুক্ততা ও বাস্তবতার " প্রতিমূর্তি । মোট ৬৩৬টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান এই মেলায় অংশগ্রহণ করেছে, তা আগের চেয়ে ৮৬টি বেশি । ইতালি, সুইজার্ল্যান্ড, ভিয়েত্নাম, জাপান, ফ্রান্স, ইসরাইল , ক্যানাডা , মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সৌদী আরব, স্পেন, ইউক্রেন, নিউজিল্যান্ড, ব্রিটেন, আয়ারল্যান্ড, পাপুয়া নিউ গিনি, চীনের তাইওয়ান, হংকং ইত্যাদি ১৭টি দেশ ও অঞ্চলের শিল্পপ্রতিষ্ঠান এতে অংশ নিয়েছে অর্থাত্ বাইরের দেশ ও এলাকার সংখ্যা ছ'টি বেড়েছে। বর্তমানে চীনে ব্যবসারত ওয়াল মর্টি, কারেফোর, চিন খলোং, ম্যাক্রো, হুয়াফু ইত্যাদি বড় বড় চেইনস্টোর এই মেলাতে পণ্য ক্রয় করার কথা বলেছে। চীনের ৩১টি প্রদেশ ও ত্রিশাধিক দেশ ও অঞ্চলের ১৭০০রও বেশি শিল্পাতি ও ব্যবসায়ী এবং ১০ হাজারের বেশি ক্রেতা এতে যোগ দিয়েছেন । আগের দুইবারের চেয়ে চীনের তৃতীয় আন্তর্জাতিক কৃষি মেলার চারটি প্রধান বিষয় হচ্ছে : এক, চমত্কার কৃষি প্রদর্শনী এলাকার প্রতিষ্ঠা । দুই , প্রদর্শনীর মেয়াদ দীর্ঘতর । তিন , প্রদর্শনীর আয়তন বৃহত্তর । চার , তাইওয়ানের কৃষিপণ্য প্রদর্শনী বৃদ্ধি।
এবারকার কৃষি মেলা " পণ্য-বৈচিত্র্য এবং শিল্পপ্রতিষ্ঠানের বৈশীষ্ট্য অনুযায়ী" শিল্প ও পণ্য বিশ্লেষণ এলাকা, পালিত গরু-মহিষ ও সংশ্লিষ্ট পণ্য প্রদর্শনী এলাকা, কৃষিপণ্য প্রদর্শনী এলাকা, জলজ পণ্য প্রদর্শনী এলাকা, ফুল প্রদর্শনী এলাকা এবং অন্য ধরনের ছয়টি পণ্য প্রদর্শনী এলাকা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ভেতরে কৃষি যন্ত্রপাতি প্রদর্শনী এলাকাও রাখা হয়েছে। মেলার অসংখ্য তত্পরতার কৃষি মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান, ক্রেতাদের জন্য বিশেষ অনুষ্ঠান, কৃষি পণ্যের আন্তর্জাতিক ক্রয় আলোচনা সম্মেলন, বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠান, কৃষি পণ্য রপ্তানি বাণিজ্য রিপোর্ট সম্মেলন, কৃষি পণ্যের নিরাপত্তা ও নিরাপদ কৃষি পুঁজি ফোরাম এবং বিশেষ কৃষি পণ্যের সুপারিশ সম্মেলন ইত্যাদি অনুষ্ঠানঅন্তর্ভূক্ত ।
সংবাদদাতা এবারকার কৃষি মেলার কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলেছেন। তাঁরা হচ্ছেন চীনের হেনান প্রদেশের হুয়াসিয়ান জেলার প্রযুক্তিবিদ চাং সিনলিং ও চিয়াকু গ্রামে গম প্রযুক্তিবিদ লি চিথাং । জানা গেছে এবারকার কৃষি মেলায় কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রথম প্রদর্শনী ভবনে একটি ১৫০০ বর্গমিটার আয়তনের একটি আধুনিক কৃষি বাগান স্থাপিত হয়েছে। এবং এখানে দর্শকদের কাছে কৃষি প্রযুক্তি অতিবৃদ্ধ কৃষকদের শেখানো এবং বৈজ্ঞানিক চাষাবাদের মাধ্যমে নিজেদের সম্পদশালী হওয়া এবং নতুন সমাজতান্ত্রিক গ্রাম গড়ে তোলার পদ্ধতি দেখানো হয়।
" পেইচিংয়ে প্রথম এসেছেন?" লি চিথাংকে সংবাদদাতা জিজ্ঞেস করেন। " প্রথমবার , এটা হচ্ছে আমার দশ বছরের স্বপ্নের বাস্তবায়ন । ৮ অক্টোবর গ্রামে ফোন করে আমাকে পেইচিংয়ে আসতে বলা হয়। প্রথমে বিশ্বাস করতে পারিনি" ৫৭ বছর বয়স্ক লি সাহেব আঞ্চলিক ভাষায় সংবাদদাতার কাছে এসব কথা বলেছেন এবং ১৩ অক্টোবর এই জেলার কৃষি ব্যুরোর কর্মকর্তা তাঁর বাড়ি গিয়ে এই ব্যাপারে তাঁকে নিশ্চিত করার পর, তিনি আর প্রযুক্তিবিদ চাং সিনলিং ট্রেন যোগে ১৬ অক্টোবর পেইচিংয়ে পৌঁছেন। " সত্যি কথা বলা দরকার , কৃষকদের মনের কথা কৃষি মেলাতে পৌঁছে দিতে হবে" তখন স্থানীয় ব্যুরোর প্রধান তাঁদেরকে এই কথা বলেছেন।
" কিভাবে কৃষকদের প্রযুক্তি শেখান?" সংবাদদাতা চাং সিনলিনকে জিজ্ঞাস করেন, তিনি বলেন " উন্নত প্রযুক্তি চাষবাস শেখাতে গিয়ে আমরা কখনো ক্লান্ত। কেন? কারণ আগে আমরা অফিসে কাজ করতাম , এখন গ্রামে চাষের কাজ করি। তাই অনেক ক্লান্ত, কিন্তু আমাদের সাহায্যে কৃষকরা যখন লাভবান হয়, তখন খুবই গৌরবান্বিত বোধ করি।" তিনি আরো বলেছেন " আমি পেইচিং আসার আগেও গ্রামে কাজ করতাম। এখন আমরা বলি কৃষিবিদ দরকার এবং প্রযুক্তিবিদ বা প্রযুক্তিসচেতন ' কৃষক' দরকার, মানে কৃষদের সঙ্গে বেশি বেশি কাজ করা দরকার। দেখুন, আমরা কী কালো হয়েছি। দেখে কি প্রযুক্তিবিদ মনে হয়?" একথা বলতে বলতে তাঁর মুখে অনেক লাজুক মৃদুহাসি দেখাযাচ্ছিল ।
তার এই মনের কথা শুনে , সংবাদদাতার বদ্ধমূল বিশ্বাস জন্মেছে যে কৃষকদের একটি আধুনিক সমাজন্ত্রিক নতুন গ্রাম প্রতিষ্ঠার ইচ্ছা আছে। তাদের প্রযুক্তি শিখার ইচ্ছা প্রবল। চীনের ৯০ কোটি কৃষকের জন্য আরো হাজার হাজার প্রাকৃতিক বাগান প্রতিষ্ঠা করার দরকার , আরো হাজার হাজার প্রযুক্তিবিদ উন্নয়ন করা দরকার। এই জন্যে কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রযুক্তি শিক্ষা বিভাগের বাই চিনমিং বলেছেন , বর্তমানে কৃষি মন্ত্রণালয় মিথেন-গ্যাস ব্যবহার করে বলে " প্রাকৃতিক বাগান পরিকল্পনা" অব্যাহতভাবে কার্যকরী করা হবে এবং নতুন ধরনের পণ্য , নতুন প্রযুক্তি তাড়াতাড়ি কৃষকদের দোরগোড়ার পৌঁছে দেয়া হবে , যাতে তাঁরা তা ব্যবহার করতে পারেন । কৃষকদের বেশি উপার্জন করার প্রয়োজনে প্রযুক্তির যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে, তা অনস্বীকার্য।
|