v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2005-10-27 20:54:52    
আমার স্ত্রী একজন সরকারী কর্মচারী

cri

    সন্ধ্যা ছ'টার দিকে চীনের প্রসিদ্ধ উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান-- পেইচিং বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি আবাসিক ভবনে মি: জিন ইয়ং বিং খাবার তৈরী করতে শুরু করলেন । তিনি চটফট করে তরকারী পরিস্কার করলেন । তাঁর স্ত্রী লি চুয়ান বাসায় ফিরে আসতে আর বেশ দেরী নয়,তাই তিনি গ্যাসের চুল্লী খুলে হাঁড়িতে তেল ঢেলে তরকারী রান্না করতে লাগলেন।

    মি: জিন ইয়ং বিং অতীতে রান্না করতে জানতেন না । রান্নার সমস্ত ভার স্ত্রী লি চুয়ানের উপরে ছিল ।কিন্তু ২০০৩ সালে লি চুয়ান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সরকারী কর্মচারী হওয়ায় মি: জিন ইয়ং বিংকে রান্না শিখতে হয়েছে । প্রথমে আনকোরা ছিলেন , এক বছর চর্চার পর এখন কিছু অভিজ্ঞতা হয়েছে তাঁর । তাঁদের পরিবারকে চীনের বুদ্ধিজীবীদের আদর্শ পরিবার বলা যায় । তাঁদের বাড়ির মেঝের আয়তন প্রায় একশো বর্গমিটার । একাধিক আলমারিতে বইপুস্তক সাজানো । স্বামী স্ত্রী উভয়ের বয়স তিরিশ বছরের সামান্য বেশী এবং উভয়ই ডক্টরেট ডিগ্রী পেয়েছেন ।জিন ইয়ং বিং পেইচিং বিশ্ববিদ্যালয়ে চীনা সাহিত্য পড়াচ্ছেন । লি চুয়ান একসময়ে অন্য একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি পড়াতেন । শান্ত পরিমন্ডলে সহজভাবে তাঁদের দিন কেটে যাচ্ছিল। কিন্তু একটি দৈবাত সুযোগ মিলায় তাঁদের পারিবারিক জীবন বদলে গেছে ।

    এই সম্পর্কে লি চুয়ান সি আর আইয়ের সংবাদদাতাকে জানিয়েছেন :২০০৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসের এক দিন । ইন্টারনেটে ওয়েব সাইট পরিদর্শন করতে করতে পেইচিংয়ের উন্নয়ন পরিকল্পনা কমিশনের একটি বিজ্ঞপ্তি চোখে পড়ল । এতে বলা হয়েছে , পরীক্ষার মাধ্যমে ডক্টরেটডিগ্রিধারী দশ জন সরকারী কর্মকর্তাকে নিয়োগ করা হবে । দিনখানেক পর কৌতুহল নিয়ে নাম লিখিয়েছি । উন্নয়ন পরিকল্পনা ও সংস্কার কমিশন পেইচিং গণ সরকারের একটি গুরুত্বপুর্ণ অংগ । তার প্রধান কর্তব্য হলো পেইচিংয়ের সমাজ ,অর্থনীতি প্রভৃতি ক্ষেত্রের উন্নয়নের নীতি প্রণয়ন করা । দুই শতাধিক ডক্টরেটডিগ্রিধারী পরীক্ষার্থীদের মধ্যে লি চুয়ান সহ দশজন পরীক্ষার্থী কঠিন লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সরকারী কর্মকর্তাপদে নিযুক্ত হয়েছেন ।এক মাস পর পেশাগত বিদ্যার গভীরতা এবং মতামত প্রকাশের নিপুনতার সুবাদে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয় লাভ করে শিল্প পরিকল্পনা বিভাগের পরিচালকের ভার গ্রহণ করেছেন । তাঁর ইউনিটের মধ্যস্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে তিনিই এখন বয়কনিষ্ঠ । তিনি বলেছেন ,পরীক্ষায় উত্তীর্ন বিজয়ীদের সরকারী পদে নিয়োগের ব্যবস্থা প্রবর্তিত হওয়ায় বাইরের সামর্থ্যবানদের সরকারী কর্মকর্তাদের কাতারে স্থান পাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে । আমি মনে করি , এটি একটি সমতাভিত্তিক ন্যায্য ব্যবস্থা ।এই ব্যবস্থার কল্যাণে আমি সরকারী কর্মকর্তা হতে পেরেছি ।

    অতীতে প্রধানত: কর্মমেয়াদ ও বয়স বিবেচনা করে সরকারী কর্মচারীদের পদোন্নতি স্থির করা হত । তার বদলে এখন প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাধ্যমে কৃতী সরকারী কর্মকর্তাদের গুরুত্বপুর্ণ দায়িত্বভার দেয়া হয়। মাদাম লি চুয়ানের মত কয়েক ডজন হাজার লোক প্রতিবছর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে চীনের কেন্দ্রীয় সরকার ও স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন বিভাগের কর্মচারী হয়েছেন ।একটি অসমাপ্ত পরিসংখ্যান অনুযায়ী ১৯৯৪ সাল থেকে এই পর্যন্ত নানা কর্মস্থলের সাত লক্ষেরও বেশী লোক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে কেন্দ্রীয় সরকার থেকে মহকুমা পর্যন্ত বিভিন্ন সরকারী সংস্থার কর্মকর্তা হয়েছেন ।

    নতুন দায়িত্বভার গ্রহণের পর লি চুয়ান ও তাঁর সহকর্মীরা পেইচিংয়ের সকল শিল্পকে কেন্দ্র করে ব্যাপকভাবে তদন্ত চালিয়েছেন ।তাঁরা পেইচিংয়ের সকল বিভাগ ও জেলায় গিয়ে অর্থনৈতিক উন্নয়নে কৃষি ,শিল্প ও পরিসেবার যথোপযুক্ত অনুপাত অন্বেষনে আত্মনিয়োগ করেছেন । তদন্তের ভিত্তিতে লি চুয়ান যে পেইচিংয়ের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও নানা কর্মক্ষেত্রের শিল্প উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন করছেন তা পেইচিং গণ সরকার অনুমোদন করেছে। এই পরিকল্পনা এখন বাস্তবায়িত হচ্ছে । পার্কে ঘুরে বেড়ানো ও কবিতা লেখা লি চুয়ানের শখ । কিন্তু এখন তিনি ভীষণ ব্যস্ত ।

    গত একবছরে তিনি একবারও পার্কে বেড়াতে যান নি এবং একটা কবিতাও লিখেন নি । তবে সরকারী চাকরি থেকে অন্য রকম রস পেয়েছেন তিনি । তিনি বলেছেন :আমি আঞ্চলিক অর্থনীতি পড়েছি , সরকারী কর্মচারী হওয়ার পর সমাজের সংস্পর্শে যাওয়ার আরো বেশী সুযোগ মিলেছে ।পেইচিংয়ের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও নানা কর্মক্ষেত্রের শিল্প উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হতে দেখে নিজের পরিশ্রম সার্থক হয়েছে বলে আমি মনে করি । মি: জিন ইয়ং বিং ছিলেন লি চুয়ানের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহপাঠী । দুজনের ভালোবাসা অত্যন্ত গভীর । লি চুয়ানের চাকরি বদলে যাওয়ায় জিন ইয়ং বিংকে বেশীর ভাগ ঘরকন্নার কাজ করতে হয়েছে ।তবু তিনি স্ত্রীর বাছাই সমর্থন করেন স্ত্রীর কোনো বই দরকার হলে তিনি অবিলম্বে পাঠাগার থেকে ধার করে নিয়ে আসেন ।

    পেইচিং বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিষয়ক সেমিনার আয়োজিত হলে তিনি স্ত্রীকে নিয়ে বক্তাদের বক্তৃতা শুনতে যান । তিনি মনে করেন, এক বছর সরকারী কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করার পর লি চুয়ান অনেক বেশী পরিপক্ক্ হয়েছেন ।তিনি বলেছেন :সরকারী সংস্থায় এক বছর কাজ করার পর লি চুয়ানের আত্মবিশ্বাস আরো দৃঢ় হয়েছে । বৈজ্ঞানিক গবেষনায় তাঁর দক্ষতাও বেড়েছে । প্রতিদিন তিনি খুবই ক্লান্ত ,তবে তাঁর জীবন আনন্দে পরিপুর্ণ ও তাত্পর্যবহ। মাদাম উ কুই ইং লি চুয়ানের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও সহকর্মী । তিনি বলেছেন, লি চুয়ান সহ ডক্টরেট ডিগ্রীধারী কর্মচারীরা টাটকা রক্তের মত তাঁর ইউনিটে প্রাণশক্তি সঞ্চার করেছেন।এই সব ডক্টর সমৃদ্ধ জ্ঞান , অসাধারণ ব্যক্তিত্ব এবং বহু বিষয়ের গবেষণায় অর্জিত সাফল্য নিয়ে সরকারী সংস্থায় যোগ দিয়েছেন । তাঁদের প্রভাব পড়েছে পুরনো সহকর্মীদের উপরে।সবাই অনুক্ষণ উন্নতি সাধনের তাগিদ অনুভব করছেন। প্রতিদ্বন্দ্বিতা চালানোর আগ্রহও সবার প্রবলতর হয়েছে । ২০০৫ সালের নতুন কাজকর্মের উপরে তাঁর চিন্তাভাবনা সম্বন্ধে লিচুয়ান বলেছেন :আমি যেমন কর্মনিষ্ঠ তেমনই হাসিখুশি কর্মচারী হতে চাই। কারণ মন প্রসন্ন থাকলেই কাজ ভালোভাবে সমাধা করা যায় এবং আমি ও অন্যান্য সহকর্মী সবাই সন্তুষ্ট হবেন ।