v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2005-10-26 16:14:00    
চীনের বিখ্যাত ভাস্কর লিউ ওয়ান ছি

cri
    পশ্চিম চীনের কুই চৌ প্রদেশের সাংস্কৃতিক মহলে ভাস্কর লিউ ওয়ান ছির নাম সবাই জানেন , সারা কুই চৌ প্রদেশেই তার ছাত্র আছে । লিউ ওয়ান ছির ভাস্কর্যকর্ম কুই চৌ প্রদেশের ভাস্কর্য শিল্পের মান প্রতিনিধিত্ব করে ।

    এ বছর লিউ ওয়ান ছির বয়স ৭০ বছর । পশ্চিম চীনের সি ছুয়ান প্রদেশে লিউ ওয়ান ছি জন্মগ্রহণ করেন । তার বয়স যখন ২১ বছর , তখন তিনি সি ছুয়ান চারুকলা শিল্প ইন্সটিটিউটের ভাস্কর্য বিভাগে লেখাপড়া শেষ করে কুইচৌ প্রাদেশিক চারুকলা গ্যালারীতে লোকশিল্পকর্ম সংগ্রহের কাজ করতে শুরু করেন । তিন বছর পর তিনি আবার পরীক্ষার মাধ্যমে পেইচিংয়ের কেন্দ্রীয় চারুকলা ইন্সটিটিউটে ভর্তি হন । তিনি সেখানে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের শিক্ষক ও চীনের বিখ্যাত ভাস্কর লিউ খাই ছুর কাছ থেকে ভাস্কর্য শিল্প শিখেন এবং মাস্টার্স ডিগ্রি পান। স্নাতক হওয়ার পর তখনকার চীনে তথাকথিত সাংস্কৃতিক বিপ্লব চলছিলো। দেশে বিশৃঙ্খল অবস্থা বিরাজমান ছিলো । লিউ ওয়ান ছি ভাস্কর্যকর্ম সৃষ্টির সুযোগ পান না । তাই তিনি অব্যাহতভাবে লোক- শিল্পকর্ম সংগ্রহের কাজ করেন । এটা পরবর্তীকালে তার ভাস্কর্য শিল্পকর্ম সৃষ্টির সুদৃঢ ভিত্তি স্থাপন করেছে ।

    কুইচৌ প্রদেশ একটি পাহাড়ী অঞ্চল । সেখানকার যানবাহন ব্যবস্থা অনুন্নত , অর্থনীতি ও সংস্কৃতিও অপেক্ষাকৃত পশ্চাত্পদ । কুইচৌ প্রদেশে মোট ৪০টিরও বেশি সংখ্যালঘু জাতির অধিবাসী বসবাস করেন । লিউ ওয়ান ছি গ্রামাঞ্চলে গিয়ে স্থানীয় অধিবাসীদের সঙ্গে পরিশ্রম করেন , তাদের বাসায় থাকেন এবং তাদের বাসায় খান । লোক- শিল্পকর্ম সংগ্রহের জন্য লিউ ওয়ান ছি দীর্ঘদিন গ্রামে থাকেন । তার সেই সময়কার অভিজ্ঞতা সম্বন্ধে লিউ ওয়ান ছি বলেছেন , আমি গ্রামের কৃষকদের সঙ্গে পরিশ্রম করতাম । প্রতি দিন ভোর বেলায় উঠতাম ।এই ধরনের পরিশ্রম আমার পক্ষে কষ্টকর বলা যায় । কিন্তু কৃষকদের সরল ও অকৃত্রিম মনোভাব আমার মনে গভীর ছাপ ফেলেছে । এটা আমার চিন্তাভাবনা ও শিল্পকর্ম সৃষ্টিরওপরও প্রভাব ফেলেছে ।

    লিউ ওয়ান ছি গ্রামে থাকাকালে বাঁশের মূল ও পাথরের উপর খোদাই করতেন । এই সব জিনিস শহরে পাঠানো কঠিন ছিল । পাশ করা গাড়ীর চালককে তার সংগৃহীত বাঁশের মূল ও খোয়াগুলো শহরে পাঠাতে অনুরোধ করার জন্য লিউ ওয়ান ছিকে মাঝেমধ্যে রাস্তার পাশে দীর্ঘসময় অপেক্ষা করতে হয়েছিল ।

    গত শতাব্দীর আশির দশক থেকে চীনে সংস্কার অভিযান শুরু হওয়ার পর অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে । লিউ ওয়ান ছির বাঁশের মূলের উপর খোদাইকর্ম হংকং ও পেইচিংয়ে প্রদর্শিত হয়েছে এবং সমাদৃত পেয়েছে । তার খোদাইকর্ম ঐতিহ্যিক কাঠ খোদাইকর্মের মতো নয় , তিনি পাশ্চাত্য খোদাই কৌশল ব্যবহার করে বাঁশের মূলের স্বাভাবিক আকার কাজে লাগিয়ে নানা ধরনের মানুষের প্রতিমূর্তি সৃষ্টি করেছেন । এই ধরনের বৈশিষ্ট্যময় ভাস্কর্যকর্ম দর্শকরা খুব পছন্দ করেন । তাই লিও ওয়ান ছির নাম শীঘ্রই দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে । ১৯৮৫ সালে ৫০ বছর বয়সী লিউ ওয়ান ছি কুইচৌ প্রাদেশিক চারুকলা বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন এবং এই বিদ্যালয়ে তার একটি ভাস্কর্য কর্মশালা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে । পরে তার এই কর্মশালার ভিত্তিতে কুইচৌ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিল্পকলা ইন্সটিটিউটের ভাস্কর্য বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হয় ।

    কুইচৌ প্রদেশ মালভূমিতে অবস্থিত বলে অর্থনীতি ও শিল্পকলার প্রসার অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে পশ্চাত্পদ । কিন্তু লিউ ওয়ান ছির ভাষ্কর্যকর্ম চীনের শিল্পকলা মহলে সুনাম জয় করেছে । তার ভাষ্কর্য শিল্পকর্মে কুইচৌ মালভূমির বৈশিষ্ট্য প্রতিফলিত হয়েছে । পাথরের উপর খোদাই করা ' মালভূমির ছেলে ' নামক ভাষ্কর্যকর্মে পাহাড়ী অঞ্চলের ছেলের সরল ও অকৃত্রিম ভাবভঙ্গি প্রতিফলিত হয়েছে । পিতের উপর খোদাই করা ' হেঁটে হেঁটে গান ' নামে একটি ভাষ্কর্যকর্মে সংখ্যালঘু জাতির অধিবাসীদের আনন্দমুখর জীবন প্রতিফলিত হয়েছে । লিউ ওয়ান ছির সৃষ্ট ভাষ্কর্যকর্মে মালভূমির সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্য সুস্পষ্ট । তিনি বলেছেন , আমি সহজ ও অকৃত্রিম জিনিস বেশী পছন্দ করি । এটা আমার চরিত্রের সঙ্গে সম্পর্কিত । আমি একজন অন্তর্মুখীব্যক্তি । তাই আমার সৃষ্ট ভাস্কর্য কর্মগুলোতে সাজানো জিনিস কম ।

    ২০০৪ সালে লিউ ওয়ান ছি যুব ভাষ্কর লিয়াও খাইয়ের সঙ্গে মিলে কুইচৌয়ের চুন ই সম্মেলন স্মৃতিভবনের জন্য ' ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষন ' নামে এক গুচ্ছ ভাস্কর্যকর্ম তৈরী করেছেন । ৭০ বছর আগে চীনের কমিউনিষ্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটি চুন ই শহরে পার্টির একটি পূর্ণাঙ্গ সম্মেলন অনুষ্ঠান করে পার্টিতে মাও সেতুঙয়ের নেতৃস্থানীয় অবস্থান প্রতিষ্ঠা করেছিলো । এই সম্মেলনের পর মাও সেতুঙয়ের নেতৃত্বে চীনের কমিউনিষ্ট পার্টি সংগ্রাম চালিয়ে সাফল্যের সঙ্গে নয়াচীন প্রতিষ্ঠা করেছে । চুন ই সম্মেলন ইতিহাসের সন্ধিক্ষণে কমিউনিস্ট পার্টি তথা গোটা চীনকে বাঁচিয়েছে । এই ভাস্কর্যকর্মে চুন ই সম্মেলনের দৃশ্য জীবন্তভাবে প্রতিফলিত হয়েছে । এই ভাস্কর্যকর্মে বিশাধিক ঐতিহাসিক ব্যক্তির জটিল সম্পর্ক , তাদের চরিত্র ও ভাবভঙ্গি চমত্কারভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে । এই ভাস্কর্যকর্মে মাও সে তুং হাতে সিগারেট নিয়ে শান্তভাবে চেয়ারে বসে আছেন , তার চোখের দৃষ্টি প্রখর , ভাবভঙ্গি গম্ভীর , পুরনো শীতের কাপড়ের বোতামগুলো খুলে যেন গরম লাগছে , এতে মাও সে তুঙয়ের আত্মবিশ্বাস ও দৃঢমনোভাব জীবন্তভাবে প্রতিফলিত হয়েছে ।

    লিউ ওয়ান ছি বলেছেন , তিনি একাধিকবার ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র সফর করেছেন । পৃথিবীতে শিল্পকলার নতুন প্রবনতার উপর তিনি নিনিড় দৃষ্টি রাখেন । তিনি অল্পবয়সীদের সঙ্গে আলাপ করতে পছন্দ করেন । অবসর নেওয়ার পরও তিনি মাস্টারস ডিগ্রি ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষাদানের কাজ বন্ধ করেন নি। তিনি বলেছেন , আমার ছাত্রছাত্রীদের অনেক দৃষ্টিভঙ্গি , চিন্তা ও পর্যবেক্ষণের পদ্ধতি নতুন , এগুলো আমাকে শিখতে হবে , তাই আমি তাদের সঙ্গে থাকতে পছন্দ করি । তা ছাড়া মাস্টারস ডিগ্রির ছাত্রদের শিখানোর জন্য আমাকে নতুন জিনিস শিখতে হয় । তাই আমি মনে করি আমি ও আমার ছাত্ররা পরস্পরের শিক্ষক ও বন্ধু ।

    বর্তমানে কুইচৌ প্রদেশের ভাস্কর্য শিক্ষক সবাই লিউ ওয়ান ছির ছাত্র । তাই অনেকে লিউ ওয়ান ছিকে শিক্ষকের শিক্ষক ডাকেন । তিনি বলেছেন , একজন শিক্ষক হিসেবে নিজের ভাবমূর্তি সৃষ্টি করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । শিল্পের চুড়ান্ত পর্যায়ে মনের অনুভূতি দিয়ে শিল্পকর্ম সৃষ্টি করতে হবে , এই ধরনের প্রচেষ্টার কোনো সীমা নেই ।

    যদিও লিউ ওয়ান ছি ভাস্কর্য শিল্পে বিরাট সাফল্য অজর্ন করেছেন , তবুও তিনি মনে করেন তার সৃষ্ট ভাস্কর্যকর্মগুলোতে কোনো শিল্পকর্মকে পুরোপুরি নিখুঁত বলা যায় না । সম্প্রতি লিউ ওয়ান ছি কুই চৌয়ের সংখ্যালঘু জাতির অধিবাসীদের জীবনের ভিত্তিতে এক গুচ্ছ ভাষ্কর্য সৃষ্টির কাজ করছেন । তিনি এই সব শিল্পকর্ম সৃষ্টির মাধ্যমে কুইচৌ প্রদেশের জনগণের ভাবমানস ও জীবনের প্রতি তাদের ভালোবাসা প্রতিফলনের চেষ্টা করছেন ।