v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2005-10-24 21:25:40    
একটি বয়োজ্যেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী ক্লাসের

cri

    পেইচিংয়ের একটি বয়োজ্যেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসরুমে পেইচিং বৈদেশিক বাণিজ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকা ২০ জনেরও বেশী বুড়োবুড়ীকে ইংরেজী পড়াচ্ছেন। তাদের বয়স ৫০ বছর থেকে ৮৫ বছর পর্যন্ত। অনেকের চুল একেবারে সাদা হলেও প্রত্যেকেই মনোনিবেশের সংগে ইংরেজী পড়ছেন। বৃদ্ধবৃদ্ধাদের এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম হলোঃ চীনের রেল ওয়েই বয়োজ্যেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়, এটা চীনের ১৯ হাজারটিরও বেশী অনুরূপ বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম। বয়োজ্যেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ১২টি বিশেষ বিষয় পড়ানো হয়, শিক্ষার্থীদের সংখ্যা প্রায় এক হাজার।

    মাদাম তু সি হুয়া দু বছর আগেই অবসর নিয়েছেন, এখন তিনি রোজ এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যান। এখানে তিনি কম্পিউটারবিদ্যা, ইংরেজী ভাষা, লাটিন নাচ, ইত্যাদি চর্চা করেন। চর্চার মাধ্যমে এখন তিনি কম্টিউটার ব্যবহার করতে শিখেছেন এবং কম্পিউটারমোদী হয়েছেন। তিনি ইন্টার্নেটে নানা তথ্য জানতে পান এবং লন্ডনে শিক্ষারত তাঁর মেয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতে থাকেন। গত বছর মাদাম তুর মেয়ে লন্ডনের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপত্যবিদ্যায় মাস্টার ডিগ্রী কোর্স করার সুযোগ পেয়েছেন। আজকাল মাদাম তু রোজই ইন্টার্নেটের মাধ্যমে মেয়ের সঙ্গে কথা বিনিময় করেন। তিনি বলেছেন, ওখানে আমার মেয়ের জীবনযাত্রা সম্পর্কে আমি মোটামুটি সবকিছু জানতে পারি, তার কি অসুবিধা আর কি প্রয়োজন, তার কি অবস্থা সে রোজই আমাকে অবহিত করে, আমিও অন-লাইনে তাকে অনুপ্রেরণা দিই, এবং নানা উপদেশপরামর্শ দিয়ে থাকি। তাতে খুব সুবিধা হয়। নইলে এতো দূরে যোগাযোগ রাখা সম্ভব হতো না। ইন্টার্নেট ব্যবহার করে আমি সবকিছু জানতে পেরেছি, এবং স্বস্তি বোধ করি। যেন রোজই মেয়ের সঙ্গে দেখা করি। এখন আমি আউটলুকের মাধ্যমে নিজের মেইল বক্সে ঢুকতে পারি, এটার অনেক সুবিধা আছে, এর মাধ্যমে ইমেল পাঠালে খরচ খুব কম। চীনে বৃদ্ধবৃদ্ধাদের জন্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা শুরু হয় ১৯৮৩ সাল থেকে। অবসরপ্রাপ্ত বুড়োবুড়ীদের জ্ঞান আহরণের চাহিদা মেটানোর জন্যে চীনের অনেক শহরের সরকারী সংস্থা, প্রতিষ্ঠান, সেনা ইউনিট আর বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে আলাদা আলাদাভাবে বয়োজ্যেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। এ পর্যন্ত এই সব বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষারত বুড়োবুড়ীদের সংখ্যা ১৮ লক্ষেরও বেশী।

    চীনের বয়োজ্যেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয় প্রসঙ্গে চীনসরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ইউয়ান সিনলি বলেছেন, বৃদ্ধ বৃদ্ধাদের জীবন আরও বৈচিত্র্যময় ও পরিপূর্ণ করে তোলায় জন্যে এ ধরনের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। তরুণ বয়সে তাঁরা সাধারণত শিক্ষাক্ষেত্রে বেশী দূর এগিয়ে যেতে পারেন নি, জ্ঞানাজর্নের জন্যে তাঁদের সময় ছিল কম, অবসর নেয়ার পর তাঁরা এই ক্ষতি পূরণ করতে চান, যাতে যুগের অগ্রগতির সঙ্গে নিজেদের খাপ খাওয়াতে পারেন। এ ধরনের বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্যে সরকার বেশ কিছু অর্থ বরাদ্দ করে থাকে, আর শিক্ষার্থীরা শুধু সামান্য শিক্ষা ফি দেন। মানে এটাই বৃদ্ধ বৃদ্ধাদের জন্যে সরকারের দেয়া একটি বাস্তব সহায়তা। এই ধরনের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার উদ্দেশ্য ডিগ্রি বা চাকরি পাওয়া নয়, বরং শিক্ষার আনন্দ পাওয়ার এবং নিজেদের ব্যক্তিত্ব পুরোপুরী বিকশিত করার লক্ষ্যে বার্দ্ধক্য জীবন সমৃদ্ধ করে তোলা আর জীবনযাত্রার গুণমান উন্নততর করা। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার জন্যে পরীক্ষা দিতে হয় না। যার যার শখ বা ইচ্ছা অনুসারে শিক্ষার্থীরা পড়ার বিশেষ বিষয় বেছে নিতে পারেন, শিক্ষকদেরও বেছে নিতে পারেন। এ সব বিশ্ববিদ্যালয়ে হস্তলিপিশিল্প, চিত্র অংকন, সাহিত্য, ইতিহাস ইত্যাদি বিষয় পড়ানো হয়, তা ছাড়া রান্নাবানার কলাকৌশল, স্বাস্থ্যরক্ষা ইত্যাদি বিষয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে খুবই সমাদৃত হয়। কারণ এই সব বিষয় বুড়োবুড়ীদের জীবনযাত্রার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত।

    সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কতকগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার, সিকিউরিটিস, ইংরেজী ইত্যাদি আধুনিক জীবনের সংগে জড়িত বিষয়গুলো পড়ানোর ব্যবস্থাও নেয়া হয়েছে। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে বুড়োবুড়ীদের পছন্দমতো হস্তলিপিশিল্প, এবং চিত্র প্রদর্শনি, কবিতা পাঠ, সেমিনার নাচগান পরিবেশনা, রান্নার প্রতিযোগিতা, শেয়ার বাজার বিশ্লেষণ এবং কম্পিউটার ব্যবহার প্রতিযোগিতা ইত্যাদি ইত্যাদি আয়োজিত হয়। চিলিন প্রদেশের বয়োজেষ্ঠ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রেন শাংপিন হস্তলিপিবিদ্যা আর চিত্র অংকন পছন্দ করেন, কিন্তু অবসর নেয়ার আগে সেগুলো চর্চা করার সময় তাঁর ছিল না। অবসর নেয়ার পর দশ বছরেরও বেশী সময়ে তিনি এ রকম বিশ্ববিদ্যালয়ে লিপিবিদ্যা আর চৈনিক চিত্রঅংকনের কলাকৌশল চর্চা করছেন। এখন তিনি সেই প্রদেশে একজন বিখ্যাত হস্তলিপিবিদ। তিনি বলেছেন, আমি দেশের জাতীয় পর্যায়ের হস্তলিপিবিদ্যা প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছি, এবং রৌপ্যপদক জয় করেছি। হস্তলিপি ক্লাস থেকে স্নাতক হবার পর আমি চৈনিক ঐতিহ্যিক পেইন্টিং শিখেছি, প্রাথমিক কোর্স থেকে শুরু করে মাধ্যমিক কোর্স আর সিনিয়ার কোর্স পড়েছি, মোট ছ বছর সময় লেগেছে। নিজের শিক্ষা জীবনের অভিজ্ঞতার সারসংকলন করতে গিয়ে রেন শাংপিং বলেছেনঃ ব্যাপকভাবে লোকদের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তোলা, স্বাছন্দ্যে বা স্ফুর্তির সঙ্গে জীবন যাপন করা, জ্ঞান বাড়ানো, শরীরটা ঠিক রাখা তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার উদ্দেশ্য ।