v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2005-10-21 15:40:00    
শিক্ষিকা ছাও ইয়েন ও ইন স্যুয়েমেইর কাহিনী

cri
    ছাও ইয়েন নানচিং বিশেষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে স্নাতক হয়ে চীনে বিশেষ শিক্ষার সার্টিফিকেট পাওয়ার প্রথম কিস্তির শিক্ষিকা হয়েছেন । বিগত ১৬ বছরে তার শিক্ষাদানে একটির পর একটি বধির বাচ্চা কথা বলতে সক্ষম হয়েছে , একদলের পর একদল মেনিনজাইটিসভূগী ছেলেমেয়ে দাঁড়িয়ে হাটাহাটি করতে সক্ষম হয়েছে এবং এক দলের পর একদল প্রতিবন্ধী ছেলেমেয়ে অন্য লোকের সামনে নিজের মন খুলতে সক্ষম হয়েছে ।

    একজন শিক্ষিকা হওয়া ছাও ইয়েনের স্বপ্ন । ছোটো বেলায় নিজের সহপাঠির বাবামা শিক্ষক এ কথাটা শুনলেই ছাওইয়েন ইর্ষার দৃষ্টি নিয়ে সেই সহপাঠির দিকে তাকাতেন ।কিন্তু যখন তিনি সত্যি একজন শিক্ষিকা হিসেবে মঞ্চে দাঁড়িয়ে এক দল বিশেষ ছেলেমেয়ের সম্মুখীন হন,তখন তিনি অনুভব করেন যে,একজন যোগ্য শিক্ষিকা হওয়া সহজ নয় ।ছাও ইয়েন বধির ছেলেমেয়েদেরকে ভাষা প্রশিক্ষণ দেয়ার দায়িত্ব পালন করেন অর্থাত তাদেরকে কথা বলতে শেখান । তাকে a, o, e, i ,u, y সহজতর অক্ষর তাদের শতাধিক বার এমনকি হাজারবার শেখাতে হবে ।একজন বধির বাচ্চা যাতে কোনো এক শব্দের অথবা এক বাক্যের অর্থ বুঝতে পারে তা এক অত্যন্ত কঠিণ কাজ ।নিঃসন্দেহে এটা তার ধৈর্য ও দৃঢসংকল্প পরীক্ষার পরিচায়ক । ছাও ইয়েন বলেছেন ,একবার আমি প্রাকস্কুলবয়সী ছেলেমেয়েদের"বাবা""মা"দুটি শব্দ বলতে শেখাই, আমি অসংখ্যবার শব্দদুটি উচ্চারণ করলেও ছেলেমেয়েরা সঠিক উচ্চারণ করতে পারে না । তার পর আমি দুজনে মুখোমুখী কথা বলার পদ্ধতিতে অব্যাহতভাবে বারবার শেখাতে থাকি ।"মা" "মা"হঠাত আমার সামনের একছেলে উচুঁ স্বরেএবং স্পষ্ট উচ্চারণে একবার"মা"ডাকে।তার মুখের জল আমার গালে ছড়িয়ে পড়ে । দীর্ঘ দিন ধরে অপেক্ষা করার পর আমি অবশেষে এক স্পষ্ট "মা"শুনতে পেরেছি বলে আমি যে খুশি হয়েছি তা মুখের জল মুছে ফেলতে ভুলে গিয়ে বুড়ো আঙ্গুল তুলে ধরে বারবার তার প্রশংসা করি ।ঠিক এই সময় ছেলেটি আবার এমন একটা কথা বলেছে যা আমি ভাবতে পারিনি যে ,আপনি মার মতো ।

    ছাও ইয়েন প্রায় বলে থাকেন যে , যখন বধির ছেলেমেয়ে কথা বলতে শুরু করে তখন শিক্ষিকা হিসেবে তিনি যে আনন্দ পান তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না ।তাদের সঙ্গে যত বেশী সময় মেলামেশা হয় , ততই উপলব্ধি করা যায় যে,তাদের শারিরীক ত্রুতি থাকলেও তাদের অনুভূতি স্বাভাবিক মানুষের মতো,এমনকি তাদের অনুভূতি স্বাভাবিক মানুষের চেয়ে বৈচিত্র্যময় ও স্পর্শকাতর । আমি তাদেরকে বেশী সাহায্য করতে চাই ।তাদের স্বচ্ছ ,নির্মল ও আকাঙক্ষাপূর্ণ দুই চোখ দেখে কেউই প্রত্যাখ্যান করতে পারবেন না, কেউই এড়াতে পারবেন না ।

    হাসিখুশি সুন্দর মেয়ে ছাও ইয়েনের মন আন্তরিকতাপূর্ণ, তিনি বহু বিষয়ে দক্ষ মেয়ে ।গত ১৬ বছরে টেলিভিশন কেন্দ্র,বৈদেশিক পূঁজিবিনিয়োজিত শিল্পপ্রতিষ্ঠান সহ অনেক ইউনিটে তাকে যোগ দিতে আমন্ত্রণ জানিয়েছে,কিন্তু তিনি তাদের আমন্ত্রণ প্রত্যাখান করেছেন ।১৯৯৯ সালে ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ায় তাকে অপারেশন করতে হয়েছিল ।হাসপাতালে ভর্তি হয়ে অপারেশন করা থেকে হাসপাতাল থেকে বের হওয়া পর্যন্ত মাত্র দুসপ্তাহ লেগেছে ।কারণ তিনি তার এই সব ছেলেমেয়েদের ত্যাগ করতে চান না ।

    অজানা থেকে জানা আর ভালবাসা থেকে সমঝোতা হয়ে ধীরেধীরে ছাও ইয়েন ও তার ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে যে মনোভাব গড়ে উঠেছে তা যেমন বন্ধুর মধ্যকার মনোভাব তেমনি পরিবারপরিজনের মধ্যেকার মনোভাব ।ছাও ইয়েন বলেছেন , আমাদের ক্লাসে এক ছোটো মোটাছেলে শিক্ষিকাদেরকে ১ নম্বর মা, ২ নম্বর মা , ৩ নম্বর মা ….ডাকে ।আমাকে সে ৮ নম্বর মা ডাকে । আমাকে দেখলে সে আন্তরিকতার সঙ্গে আমাকে আলিঙ্গণ করে এবং বারবার ৮ নম্বর মা ডাকে ।তার নাকের জল ও অশ্রু আমাদের কাপড়ে লেগেছে বটে কিন্তু আমরা বিশেষ সুখ অনুভব করি ।ভালবাসা দেবার মাধ্যমে আমরা ছাত্রছাত্রীদের ভালবাসা পেয়েছি ।ছাত্রদের কাছে প্রয়োজনীয় হওয়া,ছাত্রদের পছন্দনীয় হওয়া এক আনন্দের ব্যাপার ।আমি কোনদিনই এ কাজ পরিত্যাগ করবো না,আমি এইকাজ ভাল করে চালাব এবং চিরকালই আমার ছাত্রছাত্রীদের পাশে থাকব ।

    ইন স্যুয়েমেই ৩০ বছর ধরে চিয়াংসু প্রদেশের চিনথান শহরের ছেন নান প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষকতা করেছেন ।তিনি জীবন -মরণ সমস্যায় প্রাণ দিয়ে আকস্মিক হুমকীর হাত থেকে নিজের ছাত্রছাত্রীদের বাঁচিয়েছেন । তারা সবাই কখনো তাকে ভুলবেন না , তার নাম চিরকালই সবার মনে থাকবে ।

    ২০০৫ সালের ৩১শে মার্চ স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা লাইন করে সিনেমা দেখতে রাস্তা পার যাচ্ছিল ।দ্বিতীয় শ্রেণীর শিক্ষিকা ইন স্যুয়েমেই ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে লাইনের সামনে যাচ্ছিলেন । হঠাত নিয়ন্ত্রণ হারানো এক গাড়ী ঘন্টায় ১২০ কিলোমিটার গতিতে রাস্তা অতিক্রমকারী ছেলেমেয়েদের দিকে ছুটে যায় ।ঠিক এই জীবন-মরণ মুহূর্তে শিক্ষিকা ইন স্যুয়েমেই নিজের প্রাণ উপেক্ষা করে সবশক্তি দিয়ে বাহু দুটো বাড়িয়ে ছাত্রছাত্রীদের ঠেলে দেন ।ছাত্রছাত্রীরা রক্ষা পেয়েছে !কিন্তু গাড়ি তাকে ধাক্কা দিয়ে ২৫ মিটার দূরে রক্তাক্ত অবস্থায় ফেলে দিয়েছে ।

    ছেলেমেয়েদের চোখে ইন স্যুয়েমেই মায়ের মতো স্নেহমমতাময়ী । তিনি সবসময়ে হাসিমুখে তাদের সঙ্গে কথা বলেন । তারা ভুল করলেও তিনি কখনো উচুঁ স্বরে তাদের সমালোচনা করেন না, বরং ধৈর্য্যের সঙ্গে তাদের ভুলত্রুটি উল্লেখ করেন ।তাদের অগ্রগতি দেখলে তিনি সঙ্গে সঙ্গে প্রশংসা করে তাদের উত্সাহ দেন ।

    ছাত্রছাত্রীদের রক্ষার জন্যে শিক্ষিকা ইন আহত হয়েছেন কথাটা শুনে অনেক লোক দূর থেকে হাসপাতালে এসে তাকে দেখতে আসেন ।সবার এক অভিন্ন আশা ,শিক্ষিকা ইন সুস্থহয়ে উঠবেন । অবশেষে গুরুতর আহত হবার দরণ তিনি মারা যান ।সেই দিন ছিল চীনের ঐতিহ্যবাহীছিংমিং দিবস ।

    শিক্ষিকা ইন,আপনি শুনেছেন ,আপনার সবচেয়ে পছন্দনীয় "লাইল্যাক ফুল "নামের গাণটি ?আপনার স্মরণে এক বিশেষে অনুষ্ঠানে সবাই গাণটি গেয়েছেন ।