v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2005-10-26 08:35:09    
তিব্বতে সমাজের ব্যাপক পরিবর্তন

cri

    শ্রোতাবন্ধুরাঃ আপনারা যা শুনেছেন , তা মাদাম ছিরেনরামের গাওয়া একটি গান । বর্তমানে ৭৯ বছর বয়স্ক ছিরেনরাম তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের শাননান অঞ্চলের একটি ছোট জেলায় থাকেন । তিনি স্বস্তিতে শেষ জীবন কাটাচ্ছেন। বৃদ্ধা সাধারণতঃ গানের মাধ্যমে নিজের আবেগ ও অনুভূতি প্রকাশ করেন । তিনি সংবাদদাতাকে বলেছেন , চল্লিশাধিক বছর আগে তিনি ছিলেন একজন ভূমিদাস । মালিকের চোখে তিনি মাত্র কথা বলতে এমন একটি গবাদি পশু বলে মনে করা হতো । তখন তিনি কখনো এই কথা ভাবেন নি যে , তিনি নিজে গরু , ভেড়া ও জমির মালিক হবেন এবং পরে তিব্বতের স্থানীয় ক্ষমতা সংস্থার একজন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি হবেন ।

    মাদাম ছিরেনরামের এই ধরণের অভিজ্ঞতা তখনকার ১০ লক্ষ ভূমিদাস বিশিষ্ট পুরানো তিব্বতে কম দেখা যায় নি । যদিও পুরানো তিব্বতের সকল ভূমিদাস পরে ছিরেনরামের মতো উচ্চপদস্থ সরকারী কর্মকর্তা হন নি , কিন্তু তাদের ভাগ্যের সত্যি ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে । তিব্বত কেমন করে সামন্ততান্ত্রিক ভূমিদাস ব্যবস্থার কাছ থেকে যে বিদায় নিয়েছে , আজ এই অনুষ্ঠানে সে সম্বন্ধে আপনাদের কিছু বলছি আমি…

    দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে অবস্থিত তিব্বত গত শতাব্দির মাঝামাঝি সময় পর্যন্তই সামন্ততান্ত্রিক ভূমিদাস ব্যবস্থার শাসনাধীনে ছিল । ভূমিদাসের মালিক , উচ্চ বংশ , স্থানীয় সরকার আর উচ্চ পর্যায়ের সন্ন্যাসীদের সংখ্যা তিব্বতের মোট লোকসংখ্যার ৫ শতাংশেরও কম । তবে তারা তিব্বতের ৯৫ শতাংশেরও বেশি জমি আর উত্পাদন সামগ্রী অধিকারী ছিলেন । তিব্বতে ভূমিদাস আর দাসের সংখ্যা তিব্বতের মোট লোকসংখ্যার ৯৫ শতাংশেরও বেশি ছিল। তাদের মানবাধিকার ছিল না , সম্পত্তি তো আরো দূরের কথা । ভূমিমালিকরা তাদেরকে খুশি মতো ক্রয়-বিক্রয় করতেন বা অন্য উপায়ে তাদের ব্যবস্থা করতেন ।

    ১৯৪৯ সালের ১ অক্টোবর নয়া চীন প্রতিষ্ঠিত হয় । চীনের কমিউনিস্ট পার্টি ক্ষমতাসীন হয় । নয়া চীন প্রতিষ্ঠিত হবার আগে অনুমোদিত অস্থায়ী সংবিধানের ভূমিকাসম্পন্ন 'যৌথ কর্মসূচি' অনুযায়ী , নয়া চীনের বিভিন্ন জাতি সমান অধিকার ও দায়িত্ব ভোগ করে । চীনে সকল জাতির সমতা , জাতীয় সংহতি , সংখ্যালঘুজাতি অধ্যুষিত এলাকার স্বশাসন নীতি আর ধর্ম বিশ্বাসের স্বাধীনতা নীতি পালন করা হয় । ১৯৫১ সালের ২৩ মে পেইচিংয়ে কেন্দ্রীয় সরকার আর তিব্বতের আঞ্চলিক সরকারের মধ্যে ' তিব্বতের শান্তিপূর্ণ মুক্তি অর্জনের উপায় সংক্রান্ত প্রটোকল' স্বাক্ষরিত হয় । এটাই বিখ্যাত '১৭ দফা প্রটোকল' । ফলে তিব্বত শান্তিপূর্ণ উপায়ে মুক্তি পেয়েছে ।

    তিব্বতের খ্যাতনামা ইতিহাস-রচয়িতা পাসানয়ানতুই মনে করেন যে , তিব্বতের শান্তিপূর্ণ মুক্তি তিব্বতের একটি যুগান্তকারী ঘটনা । তিনি বলেছেন ,

    তিব্বত শান্তিপূর্ণ মুক্তি পাওয়ায় দেশের সার্বভৌমত্ব সুদৃঢ় আর ভূখন্ডের অখন্ডতা রক্ষা করা হয়েছে এবং তিব্বতী জাতি আর সমগ্র দেশের সব জাতির সমতা আর সংহতি বাস্তবায়িত করা হয়েছে ।

    তিব্বতে শান্তিপূর্ণ মুক্তি পাওয়ার পরবর্তী কয়েক বছরের মধ্যে সামন্ততান্ত্রিক ভূমিদাস ব্যবস্থা অব্যাহত ছিল । এই ক্ষেত্রে পাসানয়ানতুই ব্যাখ্যা করেন যে , তিব্বতের শান্তিপূর্ণ মুক্তি সংক্রান্ত ১৭ দফা প্রটোকলে স্পষ্টভাষায় লিপিবদ্ধ করা হয়েছে যে , তিব্বতের সংস্কার বিষয়ক সংশ্লিষ্ট ব্যবস্থার উপর কেন্দ্রীয় সরকার কিছু চাপিয়ে দেবে না । তিব্বতী আঞ্চলিক সরকারকে স্বয়ং সংস্কার প্রবর্তন করতে হবে । জনগণ সংস্কার চাইলে তা নিষ্পত্তি করার জন্য তিব্বতের নেতৃবৃন্দের সংগে শলা পরামর্শ করতে হবে ।

    ১৯৫৫ সালের মার্চ মাসে চীনের প্রয়াত শীর্ষনেতা মাও সে তুংয়ের প্রস্তাবে আর তিব্বতের দু'জন ধর্মীয় নেতা চতুর্দশ দালাইলামা আর দশম পানচেন লামার অনুমতিতে কেন্দ্রীয় সরকার তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের প্রস্তুতি কমিটি গঠন করার সিদ্ধান্ত নেয় । দালাই লামা আর পানচেন লামা যথাক্রমে এই কমিটির চেয়ারম্যান সদস্য আর ভাইস চেয়ারম্যান সদস্য নিযুক্ত হন । তিব্বতে সংখ্যালঘুজাতির স্বশাসন প্রবর্তনের জন্য যে প্রস্তুতি নেয়া হয় , তারা এই কাজ নেতৃত্বের দায়িত্ব বহন করেন । এক বছর পর যখন এই কমিটি লাসায় আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় , তখন কমিটির ৫১জন সদস্যের মধ্যে ছিলেন ৪৮জন তিব্বতী সদস্য ।

    তিব্বতী ইতিহাস-রচয়িতা পাসানয়ানতুই বলেছেন , তিব্বত শান্তিপূর্ণ মুক্তি পাওয়ার পর তিব্বতে কেন্দ্রীয় সরকার দুটো বড় কষ্টকর সমস্যার সম্মুখীন হয় । এক দিকে অনুন্নতি , অন্ধকার আর জনগণের দারুণ দারিদ্র্যের কারণে তিব্বতের অবশ্যম্ভাবী সংস্কার প্রবর্তন করা প্রয়োজন । অন্য দিকে ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় উপাদান , দীর্ঘকাল ধরে তিব্বতে যুক্তরাষ্ট্র আর ব্রিটেনের উস্কানি এবং চীনের ছিং রাজবংশের শেষ সময়পর্ব আর কুওমিনতাং সরকার আমলে সংখ্যালঘুজাতি অধ্যুষিত এলাকায় সংখ্যালঘুজাতির বিরুদ্ধে বৈষম্য আর নির্যাতন নীতি প্রবর্তনের দরুণ তিব্বতী জাতি আর হান জাতির মধ্যে গভীর বৈষম্য ছিল ।

    ১৯৫৯ সালের ১০ মার্চ তিব্বতের উচ্চ স্তরের শাসক চক্রের অল্পসংখ্যক লোক সামন্ততান্ত্রিক ভূমিদাস ব্যবস্থার চিরস্থায়ী অপরিবর্তন বজায় রাখার জন্য যুক্তরাষ্ট্র প্রভৃতি বহিরাগত শক্তির সমর্থনে হঠাত্ সার্বিক সশস্ত্র অভ্যুথ্থান ঘটায়। তাদের অপচেষ্টা চীন থেকে তিব্বত পৃথক করা । অভ্যুথ্থান ব্যর্থ করে দেয়া হয় । কেন্দ্রীয় সরকার প্রাক্তন তিব্বতী আঞ্চলিক সরকার ভেঙ্গে দেয়ার কথা ঘোষণা করে । তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের প্রস্তুতি কমিটির পুনর্গঠন করা হয় এবং তা কর্তৃক তিব্বতের আঞ্চলিক সরকারের দায়িত্ব পালন করা হয় । দশম পানচেন লামা কমিটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সদস্য হন । পাসানয়ানতুই মনে করেন যে , ১৯৫৯ সালে তিব্বতে গণতান্ত্রিক সংস্কারের প্রবর্তনে যেমন তিব্বতের সামন্ততান্ত্রিক ভূমিদাস ব্যবস্থা বাতিল করা হয়েছে , তেমনি তা তিব্বতের সমাজের জন্য বিরাট পরিবর্তন বয়ে এনেছে ।

    ১৯৬১ সালে তিব্বতের বিভিন্ন অঞ্চলে ইতিহাসের অভূতপূর্ব সাধারণ নির্বাচন আয়োজন করা হয় । মুক্তিপ্রাপ্ত ব্যাপক সংখ্যক ভূমিদাস প্রথম বারের মতো নির্বাচন করার আর নির্বাচিত হবার অধিকার পান । ১৯৬৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় । এ থেকে প্রতিপন্ন হয় যে , তিব্বতে গণতান্ত্রিক প্রশাসন প্রতিষ্ঠিত হয় এবং সংখ্যালঘুজাতির আঞ্চলিক স্বশাসন ব্যবস্থার সার্বিক প্রবর্তন শুরু হয় ।