v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2005-10-19 20:40:37    
পেইচিংয়ের রাজপ্রাসাদের চার পাশে সংরক্ষণ অঞ্চল প্রতিষ্ঠিত হবে

cri
    কিছু দিন আগে দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত ২৯তম বিশ্ব সম্পদ সম্মেলনে চীনের দাখিলকৃত পেইচিংয়ের রাজপ্রাসাদের চার পাশে সংরক্ষণ অঞ্চল প্রতিষ্ঠা সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে । চীনের পুরাকীর্তিবিদরা বলেছেন , এই সংরক্ষণ অঞ্চল প্রতিষ্ঠার কল্যাণে পেইচিংয়ের প্রাচীন রাজপ্রাসাদ অর্থাত্ নিষিদ্ধ নগরের পরিপূর্ণতা ও পরিবেশ রক্ষা নিশ্চিত হবে ।

    পেইচিংয়ের রাজপ্রাসাদ ১৪২০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় । প্রাসাদের মোট আয়তন ১৮০ একর । পেইচিংয়ের প্রাচীন রাজপ্রাসাদ পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ও পূর্ণাঙ্গ কাঠের তৈরী স্থাপত্যকর্ম। চীনের ইতিহাসে দুটি রাজবংশের মোট ২৪জন রাজা এই প্রাসাদে প্রশাসনিক কাজ করেছিলেন এবং বাস করেছিলেন । এই রাজপ্রাসাদ চীনের সামন্ততান্ত্রিক রাজবংশের শিষ্টাচার , রাজনৈতিক ব্যবস্থা ও রীতিনীতির প্রতীক হয়ে আছে । ১৯৮৭ সালে জাতিসংঘের শিক্ষা , বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা ইউনেস্কো চীনের রাজপ্রাসাদকে বিশ্ব সাংস্কৃতিক সম্পদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে ।

    বিশ্বসম্পদ সংরক্ষণের একটি দলিলে বলা হয়েছে , বিশ্বসম্পদ সংরক্ষণের জন্য বিশ্ব সম্পদের চার পাশে একটি সংরক্ষণ অঞ্চল প্রতিষ্ঠা উচিত । কিছু দিন আগে গৃহীত পেইচিংয়ের রাজপ্রাসাদের সংরক্ষণ অঞ্চল প্রতিষ্ঠা সংক্রান্ত প্রস্তাবে বলা হয়েছে , রাজপ্রাসাদের সংরক্ষণ অঞ্চলের মোট আয়তন হবে তিন হাজার চার শ' ৪৩ একর । এই সংরক্ষণ অঞ্চল এক বড় ছাতার মতো রাজপ্রাসাদকে রক্ষা করবে ।

    চীনের জাতীয় পুরাকীর্তি ব্যুরোর প্রাচীন স্থাপত্যকর্ম বিভাগের প্রধান লো চে উন বলেন , রাজপ্রাসাদের স্থাপত্য কর্মগুলো রক্ষার পাশাপাশি রাজপ্রাসাদের চার পাশের পরিবেশ সংরক্ষণও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । রাজপ্রাসাদের স্থাপত্য কর্মগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখার জন্য সংরক্ষণ অঞ্চলের স্থাপত্য কর্মগুলোর উচ্চতা নয় মিটারের বেশী হবে না , অঞ্চলের আবাসিক এলাকা ও রাস্তাগুলো পরিকল্পনা অনুসারে বিন্যাস করা হবে ।

    সংরক্ষণ অঞ্চল রাজপ্রাসাদের বাইরের রাজকীয় নগরকে কেন্দ্র করে গঠন করা হবে । পঞ্চদশ শতাব্দীর সময় গোটা পেইচিং নগর এই প্রাসাদকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে । তখনকার পেইচিং নগর চার ভাগ নিয়ে গঠিত , রাজপ্রাসাদ নগরের কেন্দ্র , তার বাইরের অংশের নাম হলো রাজকীয় নগর , রাজকীয় নগরের বাইরে অন্তর্বর্তী নগর আর অন্তর্বর্তী নগরের বাইরে বহিঃ নগর । রাজকীয় নগরকে রাজপ্রাসাদের বাগান বলা যায় । রাজপ্রাসাদের চার পাশে বিস্তৃত রাজকীয় নগরের দৈর্ঘ্য ২৭৫০ মিটার , চওড়া ২৫০০ মিটার । প্রাচীনকালে রাজকীয় নগরে রাজপ্রাসাদে থাকা লোকদের জন্য পরিসেবামূলক ব্যবস্থা ছিল । পেইচিংয়ের রাজকীয় স্থাপত্যগুলোর মধ্যে রাজপ্রাসাদ সবচেয়ে ভালোভাবে সংরক্ষণ করা হয়েছে । যদিও রাজকীয় নগরের সাতটি দরজার মধ্যে শুধু থিয়েন আন মেন দরজা অক্ষত রয়েছে , তবে রাজকীয় নগরের প্রাচীন স্থাপত্যকর্ম, রাস্তা ও লেনগুলো এখনও বজায় রয়েছে , রাজকীয় পার্কগুলো পেইহাই , চুন নান হাই ও ছিন সান আর রাজার প্রার্থনার মন্দির ইত্যাদি প্রাচীন স্থাপত্যকর্ম এখনও আছে । রাজকীয় নগরের বাইরের অন্তর্বর্তী নগর ও বহিঃনগরের কিছু স্থাপত্যকর্ম নষ্ট হয়েছে , কিন্তু রাজপ্রাসাদের উত্তরপাশের সি সা হাই , দক্ষিণ লো কু সিয়ান , উত্তর লো কু সিয়ান আর কো চি চিয়েন -- এই চারটি প্রাচীন পুরানিদর্শন ভালোভাবে সংরক্ষণ করা হয়েছে , এই সব প্রাচীন স্থাপত্য থেকে প্রাচীন নগরের ঐতিহ্য সম্পর্কে জানা যায় ।

    পেইচিংয়ের রাজকীয় নগর ও রাজপ্রাসাদের উত্তরাংশের শহরাঞ্চল রাজপ্রাসাদের সংরক্ষণ অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত হবে । নিয়ম অনুসারে এই অঞ্চলের নতুন স্থাপত্যের উচ্চতা ৯ মিটারের বেশী হতে পারবে না , স্থাপত্যের রং ও স্টাইলে চার পাশের পরিবেশের সঙ্গে সংগতি রাখতে হবে । যে সব স্থাপত্য এই সব নিয়মের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয় , সংশ্লিষ্ট বিভাগ তা' স্থানান্তরিত করার ব্যবস্থা নেবে । সংরক্ষণ অঞ্চলের প্রাচীন রাস্তা , লেন ও ঐতিহ্যিক বসতবাড়ী রক্ষা করা হবে , ক্ষতিগ্রস্ত প্রাচীন স্থাপত্য মেরামত করা হবে ।

    বিশ্ব সম্পদ রক্ষা বিষয়ের বিশেষজ্ঞ সুই ফিন ফান মনে করেন , এই প্রস্তাব রাজপ্রাসাদ সংরক্ষণে সাহায্য করবে । তিনি বলেছেন , আমরা ঐতিহাসিক সাংস্কৃতিক নগর রক্ষার চেষ্টা করছি । তাই এই প্রাচীন নগরের মূল বিন্যাসের পরিবর্তন করা উচিত নয় । কাজেই এই নগরের প্রাচীন স্থাপত্য মেরামত করতে হবে , বাড়ী ঘরের আগের রং বজায় রাখতে হবে । যেখানে গাছ লাগানো ছিল , মেরামতের পরও একই ধরনের গাছ লাগাতে হবে , এইভাবেই শুধু নগরের আগের রূপ বজায় রাখা যায় ।

    যদিও পেইচিং পুরাকীর্তি ব্যুরো রাজপ্রাসাদ বিশ্ব সম্পদের নামের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার ১৮ বছর পর বিশ্ব সম্পদ সম্মেলনের কাছে রাজপ্রাসাদ সংরক্ষণ অঞ্চল প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দাখিল করেছে , কিন্তু এর আগে পেইচিং পৌর সরকার রাজপ্রাসাদের সংরক্ষণে অনেক ব্যবস্থা নিয়েছে । ১৯৯৯ সালে পেইচিং পৌর সরকারের স্থিরকৃত ২৫টি পুরানিদর্শনের দুই তৃতীয়াংশ রাজকীয় নগরে অবস্থিত । ২০০০ সালে রাজকীয় নগর সংরক্ষণের জন্য পেইচিং পৌর সরকার একটি পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে ।

    চীনের জাতীয় পুরানিদর্শন কমিটির সদস্য , জাতীয় ঐতিহাসিক নগর সংরক্ষণ বিষয়ক বিশেষজ্ঞ কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান চেন সিয়াও সিয়ে বলেছেন , পুরানিদর্শন ও বিশ্বসম্পদ রক্ষা ক্ষেত্রে আমাদের উপলব্ধি ধাপে ধাপে উন্নত হচ্ছে । প্রথম দিকে পুরানিদর্শন রক্ষা ক্ষেত্রে যথেষ্ঠ গুরুত্ব দেয়া হয় নি । তাই পুরানো রাজকীয় নগরের পরিবেশ সংরক্ষণে কড়া ব্যবস্থা নেয়া হয় নি । রাজপ্রাসাদ সংরক্ষণ অঞ্চল প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়ায় প্রাসাদের আশেপাশে স্থাপিত অসামঞ্জ্যপূর্ণস্য স্থাপত্যগুলো অপসারনের ব্যবস্থা নেয়া হবে ।

    জানা গেছে , রাজপ্রাসাদ সংরক্ষণ অঞ্চলের একটি সরকারী অফিস ভবন ছ' তলার একটি দালান । আশেপাশের ঐতিহাসিক নগরের পরিবেশের সঙ্গে সংগতি রাখার জন্য উপরের তিনতলা খুলে ফেলা হয়েছে । চীনের জাতীয় নাট্যানুষ্ঠান ভবন সংরক্ষণ অঞ্চলে স্থাপনের কথা ছিল , কিন্তু তার উচ্চতা নয় মিটার ছাড়িয়ে যাবে বলে এই নির্মাণ প্রকল্প অন্য জায়গায় স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে ।