v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2005-10-19 14:38:49    
ম্যাকাওবাসীদের সুখী জীবন

cri

    ১৯৯৯সালে ম্যাকাওয়ে চীনের সার্বভৌমত্ব পুনর্প্রতিষ্ঠিত হয় । গত পাঁচ বছরে ম্যাকাও বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চলের অর্থনীতি অবিরাম বিকশিত হয়েছে , কর্মসংস্থানের পরিস্থিতি সন্তোষজনক এবং সামাজিক শৃংখলার যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে । নিরাপদ সামাজিক পরিবেশে ম্যাকাওবাসীরা সুষম জীবন উপভোগ করছেন ।

    মি: মা কুয়াং ম্যাকাওয়ের উত্তরাঞ্চলের ইউহান রাস্তার পাশের বাড়িতে থাকেন । বয়স তাঁর আশি বছর । কিন্তু তাঁর কন্ঠস্বর এখনো জোরালো । চলাফেরায় কোনো অসুবিধা নেই তাঁর । প্রতিদিন ভোরবেলায় বিছানা থেকে উঠে তিনি " মিং সিয়াং গে " নামক একটি চায়ের দোকানে চান খেতে যান । এরপর নিকটবর্তী একটি পার্কে কিছুক্ষন পায়চারি করেন ।দুপুরের খাবার খান নিজের বাড়িতে । তাঁর জন্য দুপুরের খাবার পাঠিয়ে দেয় ইউহান পাড়া কমিটির কর্মীরা । তিনি তাঁর বর্তমান জীবন নিয়ে পরম তৃপ্ত বোধ করেন ।

    তিনি বলেছেন ,দশাধিক বছর হলো আমি এই আবাসিক এলাকায় থাকছি ।এখন আমার দেখাশোনার ভার নিয়েছেন পাড়া কমিটি । পাড়া কমিটির কর্মীদের সঙ্গে থাকতে আমার ভালোলাগে । পাড়া কমিটির জন্য সাধ্যমত কিছু কাজও করি । তাঁদের পেয়ে আমার জীবন তাত্পর্যবহ ও হৃদ্যতাপুর্ণ হয়েছে বলে আমি মনে করি ।

    মি: মাকুয়াং যে এলাকায় থাকেন সেই জনসংকুল এলাকা আকাশচুম্বী আবাসিক ভবনে পরিকীর্ণ । তবে বাসিন্দারা সেখানকার একটি ছোটো পার্কে গিয়ে গল্পগুজব, শরীর চর্চা আর পায়চারী করতে পারেন । ম্যাকাও মাতৃভুমির কোলে ফিরে আসার পর পার্কটিতে মাঝেমাঝে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বড় বড় উত্সব উপলক্ষ্যে পাড়া কমিটির আমন্ত্রণে মূলভূভাগের খ্যাতনামা নৃত্য দল এখানে এসে সিংহ নাচ সহ ঐতিহ্যিক নাচও পরিবেশন করে। ম্যাকাওয়ের লোকসংখ্যা চার লক্ষ ষাট হাজার । প্রায় দশ শতাংশই ম্যাকাওবাসী বৃদ্ধবৃদ্ধা ।তাঁদের দৈনন্দিন জীবনের সমস্যা সমাধানে ম্যাকাওয়ের বিশাধিক পাড়া কমিটি গুরুত্বপুর্ণ ভুমিকা পালন করছে । এই প্রসঙ্গে সাধারণ পাড়া কমিটির চেয়ারম্যান মি: উ ইয়ুন সিয়ান বলেছেন :পাড়া কমিটি সর্বদাই বৃদ্ধবৃদ্ধাদের কল্যাণ , চিকিত্সা, বসবাস , ও দৈনন্দিন জীবনের উপরে নজর রাখে । পাড়া কমিটির কর্মীরা জীবনসঙ্গীহারা বৃদ্ধবৃদ্ধা এবং নড়াচড়া করতে পারেন না এমন বৃদ্ধবৃদ্ধাদের জন্য রোজ খাবার পাঠিয়ে দেন , তাঁদের ঘর পরিস্কার করেন এবং তাঁদের জন্য নিত্যব্যবহার্য দ্রব্য কিনেন ।

    ম্যাকাও একটি বিশ্ব বিখ্যাত চিত্ত বিনোদন শহর । গত পাঁচ বছরে ম্যাকাওয়ে যাওয়া মূল ভূভাগের পর্যটকদের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে । পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন ম্যাকাওয়ের রেঁস্তোরা , জুয়াখেলা ও বাড়ি নির্মান শিল্পে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে । সিন মা লু এভিনিওয়ের দু পাশে বহু চীনা রেঁস্তোরা ও পর্তুগীজ রেঁস্তোরা আছে । সি লাই কে নামে একটি রেঁস্তোরা জাঁকজমকপূর্ণ না হলেও ভেতরে রোজ খদ্দেরদের ভীড় জমে । এই রেঁস্তোরার মালিক ওয়াং ছং ইয়াংয়ের বয়স ৪৫ বছর , তিনি বেশ লম্বা, দেখেমনে হয় খুবই সরল । তিনি সি আর আইয়ের সংবাদদাতাকে জানিয়েছেন , তাঁর রেঁস্তোরা খোলা হয়েছে আট বছর আগে । খদ্দেরদের সংখ্যা বছরের পর বছর বাড়ছে , মূল ভূভাগের খদ্দেরদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে সবচেয়ে বেশী । তিনি বলেছেন , ম্যাকাও মাতৃভুমির কোলে ফিরে আসার পরবর্তী পাঁচ বছরে আমার রেঁস্তোরার মুনাফা শতকরা পনেরো ভাগ বেড়েছে । ব্যবসা ভালোই চলছে । মি:ছেন মিং একটি ফলের দোকান চালাচ্ছেন। তিনি হাসিমুখে সি আর আইয়ের সংবাদদাতকে জানিয়েছেন : মাতৃভুমির কোলে ম্যাকাওয়ের প্রত্যাবর্তনের পর ম্যাকাওয়ে বিরাট পরিবর্তন ঘটেছে । কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি পাওয়ায় বেকারদের সংখ্যা অনেক কমেছে । সবাই নিশ্চিন্তে দিন কাটাচ্ছেন । প্রায় চারশো বছর ধরে চীনা সভ্যতা ও পর্তুগালের সংস্কৃতির মিলনে উদ্ভুত হয়েছে ম্যাকাওয়ের স্বতন্ত্র সৌন্দর্য। এখন শতকরা তিনজন ম্যাকাওবাসী পর্তুগীজ বংশধর বা অভিবাসী ।

    ম্যাকাওয়ে রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে একটার পর একটা পর্তুগীজ রেঁস্তোরা, ইমারত ও বইপুস্তকের দোকান চোখে পড়ে ।ম্যাকাওয়ের প্রধান বাণিজ্য এভিনিও-- বাংচাংতাং এভিনিওয়ের পাশে পর্তুগীজ ভাষার বই পুস্তকের দোকানে প্রবেশ করে দেখা যায় , একতলার মেঝের উপরে পর্তুগীজ স্টাইলের পাতলা ইট পাতানো, বুকশেল্ফে ইতিহাস , আইন, সাহিত্য ও শিশু বিষয়ক বই পুন্তক সাজানো । দুতলায় আছে তিনচারটি সোফা ও টিপয় । ক্রেতারা এখানে বিশ্রাম করতে পারেন । এই বইয়ের দোকানের ম্যানেজার ম্যাকাওয়ে বসবাসকারী একজন পর্তুগীজ । তাঁর নাম ছু জিন মিন । ম্যাকাওয়ে কাটিয়েছেন আঠারো বছর ।তাঁর স্ত্রীও ম্যাকাওয়ে চাকরি করেন । তাঁদের একমাত্র মেয়ের বয়স সাত বছর ।ও একটি স্কুলে পড়াশোনা করছে । ছু জিন মিন আনন্দের সংগে সি আর আইয়ের সংবাদদাতাকে জানিয়েছেন , তাঁর মেয়ে হান ভাষাও শিখছে ।

    ম্যাকাওর পরিবর্তন সম্পর্কে মি: ছু জিন মিন বলেছেন ,ম্যাকাও প্রত্যার্বতনের পর নানা ক্ষেত্রে ম্যাকাওয়ের পরিস্থিতির যে এতবেশী উন্নতি হয়েছে , ম্যাকাওয়ের অর্থনীতি যে এত দ্রুত গতিতে বিকশিত হয়েছে এবং ম্যাকাওয়ের পরিবেশ যে এত সুন্দর হয়েছে তা তাঁর কল্পনাতীত । ম্যাকাওয়ে তারঁ জীবন প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন : আমি ম্যাকাওকে ভালবাসি । এখানে আমার অনেক বন্ধু আছে , বিশেষ প্রশাসনিক সরকার ও বন্ধুদের ও উপরে আমরা প্রগাঢ় আস্থা রয়েছে। যদি আমি আরো ৫০ বছর বেঁচে থাকি তাহলে নিশ্চয় ম্যাকাওয়ে থাকব । সম্ভব হলে নিজের একটি বইয়ের দোকান খুলব এবং দোকানের মালিক হব । মি: ছু জিন মিন সি আর আইয়ের সংবাবদাতাকে জানিয়েছেন , ম্যাকাওয়ের প্রত্যাবর্তনের পর ম্যাকাওয়ের নানা সম্প্রদায়ের মধ্যকার সম্পর্ক আরো মধুর হয়েছে । কিছুসংখ্যক পর্তুগীজ যারা অতীতে ম্যাকাও থাকতেন এবং পরে পর্তুগালে স্থানান্তরিত হয়েছিলেন তাঁরা আবার ম্যাকাও ফিরে এসেছেন ।