v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2005-10-18 10:07:27    
দ্বিতীয় মহাযুদ্ধকালে সাংহাইয়ের ইহুদীরা

cri
    চলতি বছর চীনা জনগণের জাপানী আগ্রাসন বিরোধী যুদ্ধে বিজয় লাভের ষাটতম বার্ষিকী এবং বিশ্বের ফ্যাসিবাদ বিরোধী যুদ্ধে বিজয় লাভের ষাটতম বার্ষিকী। ৬০ বছর আগে যখন জার্মানীর নাতসিরা উন্মত্ত হয়ে ইহুদীদের নির্যাতন করছিল এবং অনেক দেশ অসহায় ইহুদী শরনার্থীদের আশ্রয় দিতে অস্বীকার করেছিল, তখন সুদূর প্রাচ্যে চীনের সাংহাই শহর তার প্রশস্ত ক্রোড়ে তিরিশ হাজারেরও বেশী ইহুদীকে আশ্রয় দিয়েছিল । তাঁদের মধ্যে ছিল ইনগা নামে একটি মেয়ে ও কুর্ট নামে একটি ছেলে ।

    ১৯৩৯ সালে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ বাঁধার পর ১১ বছর বয়সী কুর্ট ও ৬ বছর বয়সী ইনগা তাঁদের মা-বাবার সঙ্গে যথাক্রমে অষ্ট্রিয়া ও জার্মানী থেকে সাংহাইয়ে পালিয়ে যায় । ১০ বছর পর যুব ইহুদীদের একটি ক্লাবে তাঁদের পরিচয় হয় এবং অনতিকালপর তাদের বিয়েও হয় । ১৯৪৯ সালে তাঁরা ইস্রাইলে স্থানান্তরিত হন। এখন তাঁদের বয়স সত্তরের উপর । তাঁদের পরিবারের ১২ জন সদস্য এখন সুখী জীবন যাপন করছেন ।

    ইনগা সি আর আইয়ের সংবাদদাতাকে জানিয়েছেন , ১৯৩৯ সালের নভেম্বর মাসে জার্মানীর নাত্সীরা তাঁর বাবাকে গ্রেফতার করে বন্দী শিবিরে পাঠায় ।  দিনখানেক পর স্থানীয় কর্তৃপক্ষ কথা দিল যে , তাঁর বাবাকে মুক্তি দেওয়া যায় , তবে শর্ত হলো , তার পরিবারের সবাইকে জার্মানী থেকে চলে যেতে হবে । তখন অনেক ইউরোপীয় দেশ ইহুদীদের গ্রহণ করতে নারাজ । যে একমাত্র স্থানে তাঁরা যেতে পাররেন সে স্থান হলো চীনের সাংহাই ।

    ইনগা বলেছেন , বন্দী শিবির থেকে বাবাকে বের করে আনার আশায় আমার মা আমাকে নিয়ে বার্লিনে গেলেন । যে একটি গণ সংগঠন জার্মানী ছেড়ে বিদেশে যেতে ইহুদীদের সাহায্য করে তার কাছ থেকে খবর পাওয়া গেল যে ,আমারা শুধু সাংহাই যেতে পারি ,কারণ তখন চীনই পৃথিবীর একমাত্র দেশ যেদেশে প্রবেশ করতে ভিসা লাগে না ।আমার মা সাংহাই যাওয়ার জন্য বিনাদ্বিধায় আমাদের পরিবারের জন্য ১১টি জাহাজের টিকিট কিনলেন ।

    ইনগা যখন সাংহাই পৌছে তখন সাংহাই জাপানী হানাদার বাহিনীর খপ্পরে পড়ে নি । ইনগার বাবার একজন চীনা বন্ধু ছিলেন উকিল ।তাঁর সঙ্গে এক অফিস খোলার ইচ্ছা বাবার ছিল । সব ঠিকঠাক হয়ে গেলে ইহুদীদের সহজাত প্রজ্ঞা ও পরিশ্রমের কল্যাণে সাংহাইয়ে তাঁদের উপার্জনের পথ সুগম হবে এবং তাঁরা নতুন করে সুখী জীবন যাপন করতে পারবেন । কিন্তু হানাদার জাপানী বাহিনীর কামানের গর্জনে তাদের সুন্দর স্বপ্ন মিলিয়ে গেল । ইনগার বাবা বেকার হওয়ায় তাঁর মা সেলাইয়ের কাজ করে যে সামান্য টাকা উপার্জন করতেন তাতে কোনো রকমে তাঁদের দিন চলে যেত । তা সত্ত্বেও ইউরোপে অবস্থানরত তাঁর বান্ধবীদের দুরবস্থার সঙ্গে তুলনা করে তিনি নিজকে সৌভাগ্যবান মনে করতেন ।তিনি বলেছেন ,আমরা সাংহাইয়ে আনন্দপূর্ণ সময় কাটিয়েছিলাম । আমরা স্কুলে পড়াশোনা করেছি , এমন সুবর্ণ সুযোগ ইউরোপে আমার সমবয়সী ছেলেমেয়েদের ছিল না । আমি সবসময় মনে করি , চীনই আমাদের বাঁচিয়েছে।

    এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী ১৯৩৩ সাল থেকে ১৯৪১ সাল পর্যন্ত তিরিশ হাজারেরও বেশী ইহুদী শরনার্থী ইউরোপ থেকে সাংহাইয়ে স্থানান্তরিত হয়েছিলেন ।তাঁরা সাংহাইয়ে উপাসনালয় , স্কুল ও হাসপাতাল নির্মান করেছিলেন , নানা রকম ক্লাব, রাজনৈতিক সংগঠন ও বাণিজ্য সমিতি গঠন করেছিলেন এবং সাময়িকী প্রকাশ করেছিলেন । তাঁদের নিজস্ব বাহিনীও গঠিত হয়েছিল । দ্বিতীয় মহাযুদ্ধকালে রাশিয়ান বংশোদ্ভুত বৃদ্ধা শারা রোস সাংহাইয়ে দশ বছর কাটিয়েছিলেন ।তিনি চীনাদের উদার ও করুনাময় হৃদয়ের প্রশংসায় পঞ্চমুখ।তিনি বলেছেন , আমরা চীনাদের কাছ থেকে অনেক শ্রেষ্ঠ গুণ শিখেছি । চীনারা বিনয়ী ,নম্র । শিক্ষিত হোক , আর অশিক্ষিত হোক , তাঁরা সবাই অত্যন্ত ভদ্র । চীনারা সমানচোখে বিদেশীদের দেখতেন । চীনের মত অন্যান্য দেশেও ইহুদীরা যে স্বচছন্দে দিনপাত করতে পারেন তা আমি কল্পনা করতে পারি না ।

    ৯১ বছর বয়সী শারা এখন থাকেন জেরুজালেমে । তাঁর বাড়িতে ঢুকে দেখা যায় , বসার ঘরে চীনা স্থাপত্যশৈলীতে তৈরী পুরনো চারকোণা টেবিল ও টিপয় । দীর্ঘায়ুর প্রতীক-- বকের এক ছবি দেওয়ালে টাঙগানো । সিলিং থেকে কয়েকটি চীনা লন্ঠন ঝুলানো । দেওয়াল-ঘেঁষা আলমারিতে নানা রকম চীনের শিল্পজাত দ্রব্য সাজানো । চীন ছেড়ে ইস্রাইলে গিয়ে সংসার পাতার পর ৬০ বছর কেটে যাওয়া সত্ত্বেও চীনের প্রসঙ্গ তুলতেই তাঁর চোখমুখে কৃতজ্ঞতার দীপ্তি খেলে গেল।

    তিনি বলেছেন চীনের প্রতি আমার ভালবাসা চিরদিন অক্ষুন্ন হয়ে থাকবে । চীনে আমার স্বামী ও ছেলের জন্ম । আমার শ্বশুর শ্বাশুড়ী সমাহিত হয়েছেন চীনে। আমি এক জন ইস্রাইলী, তবে অন্তরের অন্তস্থলে আমি একজন চীনা ।

    অষ্ট্রিয়ার চিকিত্সক জ্যাকোব রোসেনফেল্ড ১৯৩৯ সালে সাংহাইয়ে স্থানান্তরিত হন । দু বছর পর জার্মান মিশনারীর ছদ্মবেশে তিনি সানতং প্রদেশের জাপানী আগ্রাসন বিরোধী ঘাঁটিতে প্রবেশ করে চীনা কমিউনিষ্ট পার্টির নেতৃত্বাধীন প্রতিরোধ যুদ্ধে যোগ দেন । ১৯৪৯ সাল নয়া চীন প্রতিষ্ঠার পর তিনি স্থায়ীভাবে বসবাস করতে ইস্রাইলে চলে যান । ১৯৫২ সালে তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বরণ করেন ।১৯৯৯ সালে ইস্রাইল- চীন মৈত্রী সমিতি ও চীনা দূতাবাসের যৌথ উদ্যোগে তাঁর জীবনের উপর এক প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয় । প্রায় আড়াই লক্ষ লোক এই প্রদর্শনী ঘুরে ঘুরে দেখেছেন ।

    ইস্রাইল- চীন মৈত্রী সমিতির চেয়ারম্যান টেডি কাউফম্যান বলেছেন : জ্যাকোব রোসেনফেল্ডের জীবন ইস্রাইল- চীন মৈত্রীর নিদর্শন । তিনি চীনের মুক্তি ও গঠনকাজে অনন্য অবদান রেখে গিয়েছেন ।

    ৮৪ বছর বয়সী টেডি কাউফম্যান ইস্রাইল- চীন মৈত্রী সমিতির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা । প্রতিবছর তাঁর সমিতির আয়োজিত প্রীতি সম্মিলনীতে দুদেশের সম্পর্কের উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা করা হয় এবং চীনে বসবাসকারি প্রাক্তন ইহুদীদের বংশধর ও ইস্রাইলে অধ্যয়নরত চীনা ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে বৃত্তি বন্টন করা হয় ।

    টেডি কাউফম্যান বলেছেন : চীনে ইহুদীদের বসবাসের ইতিহাস মনে রেখে আমাদের দু দেশ ও দুজাতির বন্ধুত্ব জোরদার করতে হবে । যদি আমরা ইতিহাস ও অতীত ভুলে যাই তাহলে আমাদের ভবিষ্যত উজ্জ্বল হবে না ।