সাধারণ মানুষ বিজ্ঞানীদের আয়ুর বিষয়ে বেশি জানেন না । তারা সাধারণতঃ মনে করেন যে , মস্তিষ্কের মাত্রাতিরিক্ত কাজের দরুণ বিজ্ঞানীরা দীর্ঘায়ু হতে পারেন না । চীনে প্রৌঢ় বিজ্ঞানীদের স্বাস্থ্যগত সমস্যা ব্যাপকভাবে প্রচার করা হতো , সুতরাং তা সাধারণ মানুষের মনে এক অপ্রীতিকর রেখা এঁকে দিয়েছে ।
১৯০১ সাল থেকে ১৯৫০ সাল পর্যন্ত সময়ের মধ্যে নোবেল পুরস্কার জয়ীদের আয়ু সম্পর্কিত একটি তদন্ত থেকে জানা গেছে ,
এক, নোবেল পুরস্কার জয়ী বিজ্ঞানীদের গড়পড়তা আয়ু ছিল ৭৪.৭ বছর । এতে তারা দীর্ঘায়ু বলে প্রমাণিত হয়েছে । কারণ ১৯৫০ সালে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে নাগরিকদের গড়পড়তা আয়ু শুধু ৬৫ বছর ছিল । নোবেল পুরস্কার জয়ী বিজ্ঞানীদের মধ্যে যারা অকালে মারা গেছেন , তাদের মৃত্যুর কারণ আকস্মিক দুর্ঘটনা আর অন্য অস্বাভাবিক ব্যাপার ।
দুই, বিজ্ঞানীদের মধ্যে মেডিক্যাল পুরস্কার জয়ীরা সবচেয়ে দীর্ঘায়ু । তাদের আয়ু শান্তি ও সাহিত্য পুরস্কার জয়ীদের আয়ুর কাছাকাছি । তবু রসায়ন পুরস্কার জয়ীদের গড়পড়তা আয়ু সবচেয়ে কম । তাদের আয়ু মেডিক্যাল পুরস্কার জয়ীদের চেয়ে ৪ থেকে ৫ বছর কম ।
৩,দীর্ঘায়ু বিজ্ঞানীদের সংখ্যাও কম নয় । তাদের মধ্যে একজন ৯৯ আর দু'জন ৯৮ বছর পর্যন্ত জীবিত ছিলেন ।
সংশ্লিষ্ট বিশ্লেষকরা মনে করেন যে , নোবেল পুরস্কার জয়ীরা যে দীর্ঘায়ু হয়েছেন , তার কয়েকটি প্রধান কারণ এই যে , সর্বপ্রথমে চিকিত্সা বিজ্ঞানের নতুন গবেষণার ফলাফলে প্রকাশিত হয়েছে যে , মস্তিষ্কের কাজে প্রত্যক্ষভাবে মস্তিষ্কের সুস্বাস্থ্য তরান্বিত করা যায় । মস্তিষ্কের সমন্বয় আর সারা দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কার্যকরীতা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সুস্বাস্থ্য আর দীর্ঘায়ুর লক্ষ্য হাসিল করা যায় । যারা পরিশ্রমীভাবে মস্তিষ্ক ব্যবহার করেন , তাদের মস্তিষ্কের রক্তশীলা সবসময় শিথিল অবস্থায় রয়েছে , যাতে তার মাধ্যমে পর্যাপ্ত অক্সিজেন আর পুষ্টিকর পদার্থ সরবরাহ করা যায় , রক্তের আদান-প্রদান তরান্বিত করা যায় এবং সারা দেহের বিভিন্ন ব্যবস্থার কার্যকরীতার সমন্বয় আর একীভুত ব্যবস্থা বজায় রাখা যায় । দ্বিতীয়তঃ এই সব বিজ্ঞানীদের অর্থনৈতিক শর্ত সাধারণ বিজ্ঞানী ও প্রযুক্তিবিদদের চেয়ে ভাল ,সুস্বাস্থ্য অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় বস্তুগত শর্ত তাদের আছে । তৃতীয়তঃ অল্প সংখ্যক বিজ্ঞানী ছাড়া নোবেল পুরস্কার জয়ীরা আরো সহজে জীবনযাপনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে সক্ষম । বাধা-বিঘ্ন আর দুঃখ-কষ্টের সামনে তাদের প্রবল আত্মনিয়ন্ত্রন ও সুস্বাস্থ্য রক্ষার সামর্থ্য আছে ।
১৯০১ সাল থেকে ১৯৫০ সাল পর্যন্ত সময়ের মধ্যে মোট তিন জন নারী বিজ্ঞানী নোবেল পুরস্কার পেয়েছে । তাদের গড়পড়তা আয়ু পুরুষ বিজ্ঞানীদের চেয়ে দশাধিক বছর কম । কিন্তু নোবেল সাহিত্য ও শান্তি পুরস্কার বিজয়ী নারীদের গড়পড়তা আয়ু পুরুষ বিজ্ঞানীদের চেয়েও কম । সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী, নারীদের আয়ু পুরুষদের চেয়ে বেশি । বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে , এ থেকে বোঝা যায় , বিজ্ঞান আর অন্যান্য ক্ষেত্রে নারীরা সাফল্য অর্জন করতে চাইলে তাদের পুরুষদের চেয়ে বেশি মূল্য দিতে হবে । বিশেষ করে নারী বিজ্ঞানীরা তাদের প্রতি সমাজের বিভ্রান্তিকর ধ্যানধারণা কাটিয়ে উঠতে দ্বিগুণ প্রচেষ্টা চালাতে হবে । সেজন্য মানসিক আর দৈহিক দিকে তাদের আরো কঠোর পরিশ্রম করতে হবে । ফলে তাদের আয়ুও অবশ্যই কমে যাবে ।
এখন টেলিভিশন অনুষ্ঠান মাত্রাতিরিক্ত দেখলে শিশুদের স্বাস্থ্যের ক্ষতি সম্বন্ধে আপনাদের কিছু বলা হবে ।
সবাই জানেন যে , টেলিভিশন অনুষ্ঠান মাত্রাতিরিক্ত দেখলে শিশুদের লেখাপড়ার ক্ষতি হবে । অনেক লম্বা সময় ধরে এবং খুব কাছে থেকে টেলিভিশন দেখলে শিশুদের দৃষ্টি শক্তির ক্ষয় হয় । সহিংস আর রক্তক্ষয়ী ঘটনাসম্বলিত অনুষ্ঠান শিশুদের মানসিক শক্তি আর স্বাস্থ্যে ওপর নেতিবাচক প্রভাব ডেকে আনবে । যেমন ধূমপান , দেহের ওজন বেড়ে যাওয়া আর হাই-কোলেস্টেরল ইত্যাদি অস্বাস্থ্যকর জীবনধারা আর রোগ-বালাই হতে পারে । সুতরাং শিশু আর কিশোর-কিশোরীর সুস্বাস্থ্য বিষয়ক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে , শিশুদের অভিভাবকদের উচিত তাদের টেলিভিশন দেখার সময় সীমিত করা । দিনে এক থেকে দুই ঘন্টা উপযুক্ত ।
|