গত ৫ আগস্ট সকালে চীনের শান তোং প্রদেশের লাইচৌ শহরের লোনাজমিতে ফসল ফলানোর পরিক্ষামূলক ঘাঁটিতে নানচিং কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডক্টররা সমুদ্রজল দিয়ে নিস্কাশনের মাধ্যমে তোলা সূর্যমূখীর বীজ বিশ্ববিদ্যালয়ে এনে ধারাবাহিক পরিক্ষা করেছেন। শান তোং প্রদেশের লাইচৌ শহরের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ব্যুরোর কর্মকর্তারা মজা করে বলেছেন, এটি একটি অদ্ভূত ব্যাপার। সমুদ্রজল দিয়েও ফসলের চাষ করা যায়। অনুপুবক হিসেবে দিয়ে সমুদ্রজল দিয়ে নিষ্কাশন করা শীত মওসুমের গম চাষভূমিতে, প্রতি একরে ৭১ কেজি গম উত্পাদন সম্ভব হয়েছে। জিরাসোল, হার্বেজ-সহ ৫০টিরও বেশী লোনাজমির উপযোগী নতুন ফসলের চাষ হচ্ছে।
শান তোং প্রদেশের লাইচৌ শহরের উপকূলীয় সীমা রেখার দৈর্ঘ ১০৮ কিলোমিটার। গত শতাব্দির সত্তরের দশক থেকে উপকূলীয় সমতলভূমিতে ভূর্গভস্থ জলের স্তর একটি ঢালার কুপির মতো এলাকা গড়ে উঠে। ১৯৯৫ পর্যন্ত সমুদ্রজল প্রায় ২৭৮ বর্গ কিলোমিটার জমিতে প্রবেশ করেছে। ফলে ৮০ হাজারের বেশি একর আবাদী জমি নিষ্কাশনের সামর্থ্য হারিয়ে গেছে এবং ১১ হাজার একর আবাদী জমি লোনা জমিতে পরিণত হয়েছে। ২০০০ সাল থেকে নানচিং কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রের নির্ধারিত সমুদ্র সীমায় "উপকূলীয় অঞ্চলে লোনাজমিতে অর্থকরী গাছ-পালা পরিক্ষা ও পেশাগতকরণের" বিষয়ে গবেষণার দায়িত্ব নেয়। এই বিশ্ববিদ্যালয় সমুদ্রজলের প্রভাবে গুরুতর ক্ষতিগ্রস্ত শান তোং প্রদেশের লাইচৌ শহরের হৌতেং, ছাংশাং ও চুওয়াং গ্রাম বেছে নিয়ে পরিক্ষা শুরু করে। এ বিষয়ক গবেষণা গ্রুপ লাইচৌ শহরের ১০৮টি স্থানে বহুমুখী সংস্কারের ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করে। এ প্রকল্প চালু হওয়ার পর গত ৫ বছরে আমদানি, বাছাই ও লালন-পালনের মাধ্যমে অবশেষে গম, সুর্যমূখী ও জিরাসোল ইত্যাদি ফসলকে প্রধান পরিক্ষার ফসল হিসেবে নির্ধারিত হয় এবং পালং শাক, এ্যাসপারাগাস, বীট ও মূলা ইত্যাদি শাক-সবজি আর রাডিক্স ইসাটিডিস, হানিসাকল ইত্যাদি ভেষজের চাষ ও গবেষণাও করা হয়। সেগুলোর মধ্যে সূর্যমূখী ফুল ও জিরাসোলের অত্যন্ত ভালো ফলন হয়েছে এবং লোনাজমির উপযোগী ৫০টিরও বেশি নতুন ধরণের ফসলের চাষ হয়েছে।
গত ১০ জুন রাষ্ট্রীয় ৮৬৩ নম্বর পরিকল্পনার অধীন সম্পদ ও পরিবেশ বিষয়ক কার্যালয় বিশেষজ্ঞদের সংগঠিত করে সরেজমিনে গিয়ে নানচিং কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষামূলক কাজ পর্যাবেক্ষণ করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সমুদ্রজলের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত লোনাজমিতে শীতকালীন গমের আবাদীজমিতে প্রতি একরে ৬৩ কেজি থেকে ৭১ কেজি শীতের গম উত্পাদন সম্ভব হয়েছে এবং বৃষ্টি দিয়ে চাষ করা আবাদীজমিতে প্রতি একরে ৪৮ কেজি থেকে ৫০ কেজি শীতের গম উত্পাদন সম্ভব হয়েছে। প্রতি বছর ৭৫ শতাংশে একটানা ৫ বছর ধরে সমুদ্রজল দিয়ে দু'বার করে নিশ্কাসনের পর জিরাসোল অব্যাহতভাবে বড় হয়। সে অর্থকরী গাছ-পালার পরিক্ষায় দুর্লভ ফলনশীলতা, শ্রেষ্ঠ জীবপ্রকৃতি আর লক্ষ্যনীয় অর্থনৈতিক ফলপ্রসূতা দেখা দিয়েছে বলে কৃষিতে মিঠা পানির পরিবর্তে লোনা পানি দিয়ে নিষ্কাশনের ব্যবস্থা এবং প্রাকৃতিক কৃষি প্রকল্প গড়ে তোলার জন্য নতুন পথ খোলা হয়েছে।
বর্তমানে সমুদ্রজলের প্রভাবে গুরুতর ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা শান তোং প্রদেশের লাইচৌ শহরের ৪টি মহকুমা ও ১৮টি গ্রামে লোনাজমিতে ফসলের চাষ করার উপযোগী ফসলের চাষ শুরু হয়েছে। ১৭ হাজার একর জমিতে দ্রত-বর্ধনশীল গাছ এবং ৩৩শো একর জমিতে শীতকালীন গমের চাষ করা হয়েছে। ব্যাপকভাবে জিরাসোল-সহ অর্থনৈতিক ফসলের চাষও করা হয়েছে। এ ব্যবস্থার সুবাদে লক্ষ্যনীয় অর্থনৈতিক ও প্রাকৃতিক ফলপ্রসূতা পাওয়া গেছে।
|