শ্রোতাবন্ধুরাঃ ১৯৬৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল প্রতিষ্ঠিত হয় । এ থেকে প্রতিপন্ন হয় যে , তিব্বত শান্তিপূর্ণ মুক্তি পাওয়ার ১৪ বছর পর চূড়ান্তভাবে ইউরোপের মধ্য শতাব্দির সামন্ততান্ত্রিক ভূমিদাস সমাজ ব্যসস্থা ্থেকে সকলের সমতাভিত্তিক সমাজতান্ত্রিকপ্রাথমিক পর্যায়ে প্রবেশ করেছে । তিব্বতের ১০ লক্ষ মানুষ চীনের সংবিধানে তাদেরকে দেয়া অধিকার অনুসারে তিব্বতে সংখ্যালঘুজাতির স্বশাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন এবং ১২ লক্ষ বর্গ কিলোমিটার এই ভূভাগ পরিচালনা করতে শুরু করেন , যেখানে উচ্চ বংশ , মন্দির আর উচ্চ পর্যায়ের সন্ন্যাসীদের শাসন চালু ছিল ।
তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের গণ কংগ্রেসের স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান ,৬১ বছর বয়স্ক লিছে এই পুরানো ব্যবস্থার প্রত্যক্ষদর্শী । তিনি সংবাদদাতাকে বলেছেন ,
তিব্বতের চিয়াংচি জেলার একটি দরিদ্র কৃষক পরিবারে আমার জন্ম । ছোট বেলায় আমি স্বচক্ষে সামন্ততান্ত্রিক ভূমিদাস ব্যবস্থার প্রতিক্রিয়া , অন্ধকার আর শ্রমজীবিদের প্রতি উচ্চ বংশ , মন্দির আর উচ্চ পর্যায়ের সন্ন্যাসীদের নির্যাতন দেখেছি । ১৯৫১ সালে তিব্বত শান্তিপূর্ণ মুক্তি অর্জন করায় আমি আধুনিক যুগের শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পাই । আমি পর পর স্কুল , বিভাগ , জেলা , আর লাসা শহরের সরকারী সংস্থায় চাকরি করেছি । ১৯৯৫ সালের পর আমি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল সরকারী সংস্থায় চাকরি করেছি । ২০০৩ সালে আমি স্বায়ত্ত- শাসিত অঞ্চলের গণ কংগ্রেসের স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান পদে নিযুক্ত হই । আজ আমি যে সরকারী নেতৃস্থানীয় দায়িত্ব বহন করছি , পুরানো তিব্বতে তা একেবারেই অসম্ভব । আমার মতো তিব্বতী নেতৃস্থানীয় ক্যাডার আরো বেশি আছেন ।
তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল চীনের এমন পাঁচটি প্রাদেশিক পর্যায়ের অঞ্চলের অন্যতম , যেখানে সংখ্যালঘুজাতির স্বশাসন প্রবর্তন করা হয় । তিব্বতও চীনের একমাত্র তিব্বতী জাতিভিত্তিক প্রাদেশিক পর্যায়ের সংখ্যালঘুজাতির স্বশাসিত অঞ্চল ।
লিছে বলেছেন , তিনি যে তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের গণ কংগ্রেসের স্ট্যান্ডিং কমিটিতে কাজ করেন , তা যেমন তিব্বতের স্থানীয় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা সংস্থা , তেমনি তা তিব্বতে স্বশাসন প্রবর্তনের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা । এটা তিব্বতের বিভিন্ন জাতির স্ব-স্ব অধিকার অর্জনের গুরুত্বপূর্ণ নিশ্চয়তা । তিনি মনে করেন যে , তিব্বতের গণ কংগ্রেসের প্রতিনিধিদের কাঠামোতে সংখ্যালঘুজাতির স্বশাসনের বৈশিষ্ট্য প্রতিফলিত হয়েছে ।
তিব্বতের গণ কংগ্রেসে তিব্বতী আর অন্যান্য সংখ্যালঘুজাতির প্রতিনিধিদের সংখ্যা প্রতিনিধিদের মোট সংখ্যার ৭০ শতাংশেরও বেশি । প্রতিনিধিদের মধ্যে যেমন বেশি কৃষক , পশুপালক আর অন্যান্য শ্রমজীবিদের অনুপাত , তেমনি সংখ্যালঘুজাতির ধর্মীয় মহলের উচ্চ পর্যায়ের কিছুসংখ্যক দেশপ্রেমিক ব্যক্তিদের অনুপাতও সংরক্ষিত আছে । এদের মধ্যে বৌদ্ধ ধর্মীয় মহলের প্রবীণ নেতৃবৃন্দ , জীবিত সন্ন্যাসী আর বিদেশ থেকে তিব্বতে ফিরে আসা প্রবাসী তিব্বতীরাও অন্তর্ভুক্ত । প্রতিনিধিদের মধ্যে যারা অনার্স আর আরো উপরের ডিগ্রি পেয়েছেন , তাদের সংখ্যা প্রতিনিধিদের মোট সংখ্যার ৫০ শতাংশ হয়েছে । এখন প্রতিনিধিদের মধ্যে বিশেষজ্ঞ , পন্ডিত আর বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে ।
তিব্বতী জাতির এই উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বলেছেন , চীনের সংবিধান আর সংখ্যালঘুজাতির স্বশাসন আইন অনুযায়ী , সংখ্যালঘুজাতির স্বশাসন অঞ্চল হিসেবে তিব্বত যেমন অন্যান্য প্রাদেশিক পর্যায়ের সরকারী সংস্থার মতো ক্ষমতা , তেমনি এই অঞ্চলের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার যেমন রাজনীতি , অর্থনীতি , সংস্কৃতি আর সমাজের উন্নয়ন প্রভৃতি অধিকার ভোগ করে । তিব্বত যেমন আইন প্রণয়নের অধিকার ভোগ করে , তেমনি তিব্বতের বাস্তব অবস্থা আর বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী নিজের স্বশাসন নিয়মবিধি প্রণয়ন এবং তিব্বতের বাস্তবতা অনুসারে দেশের সংশ্লিষ্ট আইনের সংশ্লিষ্ট ধারার কিছুটা সংশোধন করার অধিকার তিব্বতের আছে ।
এবছরের জুন মাস পর্যন্ত তিব্বতের গণ কংগ্রেস ২৩৭টি আঞ্চলিক আইনবিধি আর আইনবিধির বৈশিষ্ট্যবিশিষ্ট সিদ্ধান্ত ও প্রস্তাব প্রণয়ন করেছে । এই সব আইনবিধিতে রাজনীতি , অর্থনীতি , সংস্কৃতি , শিক্ষা প্রভৃতি ক্ষেত্র অন্তর্ভুক্ত রয়েছে । এটা তিব্বতের আর্থ-সামাজিক দ্রুত বিকাশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে ।
লিছে বলেছেন , ১৯৬৫ সালে তিব্বতের প্রথম গণ কংগ্রেসের প্রথম পূর্ণাংগ অধিবেশন থেকে এখন পর্যন্ত গণ কংগ্রেস প্রতিনিধিদের উথ্থাপিত ৭ হাজারটি আলোচ্য বিষয় , প্রস্তাব আর সমালোচনা পেয়েছে । এই সব আলোচ্য বিষয় আর প্রস্তাব তিব্বতের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের বাস্তবতার সংগে নিবিড় সম্পর্কিত । তাতে পরিপূর্ণভাবে বিভিন্ন জাতির আশা-আকাংক্ষা আর দাবি দেখা দিয়েছে ।
লি ছে বলেছেন , তিনি অঞ্চলের গন কংগ্রেসের স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান নিযুক্ত হবার পরবর্তী দু' বছরে কংগ্রেসের উদ্যোগে ৫টি আইন আর ৫টি আঞ্চলিক আইনবিধির কার্যকরীকরণ নিয়ে যাচাই করা হয়েছে এবং কর্মকর্তাদের নিয়োগ ও পদচ্যুত করা আর সরকারী প্রশাসনিক বিভাগের কাজ তত্ত্বাবধান করা সহ তিব্বতের রাজনীতি , অর্থনীতি , শিক্ষা , পরিবেশ আর শক্তি সম্পদ সুরক্ষা প্রভৃতি বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে ।
তিব্বতে সরকারী সংস্থার কর্মীদের মধ্যে বেশির ভাগই তিব্বতী জাতির । ছেলে মেয়েরা ছোট বেলায় প্রাথমিক স্কুল থেকে ন'বছরমেয়াদী বাধ্যতামূলক শিক্ষা গ্রহণ করতে শুরু করে । তিব্বতে তিব্বতী ভাষা শিক্ষাকে প্রথম স্থানে রাখা হয় । যাবতীয় সরকারী বিজ্ঞপ্তি আর আইনের দলিল তিব্বতী আর হান ভাষায় ছাপানো হয় । ওখানের বেতার আর টেলিভিশনে তিব্বতী ভাষায়ও অনুষ্ঠান প্রচার করা হয় । তিব্বতী জাতি আর ওখানে বসবাসকারী অন্যান্য সংখ্যালঘুজাতির লোকেরা সমান আর সুষমভাবে সহাবস্থানে থাকেন ।
বহু বছর ধরে তিব্বতী জাতির ঐতিহ্যিক সংস্কৃতি আর প্রকাশনা কাজে নিয়োজিত তিব্বতী পন্ডিত কেসানইয়েসি সংবাদদাতাকে বলেছেন ,
বহু বছর ধরে যে সব তিব্বতী গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে , তাতে তিব্বতের ইতিহাস , তিব্বতী চিকিত্সা ও ওষুধ , ক্যালেন্ডার , ধর্ম , সাহিত্য ও কবিতার রচনা প্রভৃতি বিষয় আন্তর্ভুক্ত রয়েছে ।
গত ৪০ বছর ধরে তিব্বতে অর্থনীতি বরাবরই দশ শতাংশের বেশি হারে বেড়ে চলেছে । সমাজ স্থিতিশীল আর জনগণের জীবনযাপনের মান নিরন্তর বাড়ছে ।
|