v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2005-10-12 10:54:45    
চীনের যুব চলচ্চিত্র পরিচালক ওয়াং সিয়াও সুয়াই

cri
    চীনের চলচ্চিত্র মহল ও চলচ্চিত্র অনুরাগীদের মধ্যে ওয়াং সিয়াও সুয়াই এক পরিচিত নাম । তাকে চীনের ষষ্ঠ প্রজন্মের পরিচালকদের প্রধান বলা যায় । চীনে ষষ্ঠ প্রজম্মের চলচ্চিত্র পরিচালকদের বৈশিষ্ট্য হলো তাদের বয়স চল্লিশের কাছাকাছি , চলচ্চিত্র পরিচালনা ক্ষেত্রে প্রাথমিক সাফল্য অজর্ন করেছেন , তাদের পরিচালিত চলচ্চিত্রগুলো দেশের চাইতে বিদেশে বেশী সুনাম পেয়েছে ।

    কিছু দিন আগে ওয়াং সিয়াও সুয়াইয়ের পরিচালিত ' ছিং হোং ' নামে একটি ছায়াছবি ফ্রান্সের কান চলচ্চিত্র উত্সবে যাচাই কমিটির বিশেষ পুরস্কার পেয়েছে , এই পুরস্কার বিশেষভাবে এই চীনা ছবির জন্য দেয়া হয়েছে ।

    ছায়াছবি ' ছিং হোং ' -এ গত শতাব্দীর ৭০ ও ৮০ দশকে চীনের একটি সাধারণ পরিবারের কাহিনী চিত্রিত হয়েছে । ১৯ বছর বয়সী মেয়ে ছিং হোং পশ্চিম চীনের কুইচৌ প্রদেশে থাকেন । ষাটের দশকে প্রত্যন্ত অঞ্চলের গঠনকাজে সাহায্য করার জন্য তার বাবা সপরিবারে চীনের সবচেয়ে আধুনিক শহর সাংহাই থেকে কুইচৌ প্রদেশে যান । ছিং হোংয়ের বাবা গোটা পরিবার নিয়ে আবার সাংহাইয়ে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করেন । ছিং হোং এক স্থানীয় ছেলে সিয়াও কেনের প্রেমে পড়েন । তার বাবা মেয়ের প্রথম প্রেম বন্ধ করার জন্য চেষ্টার কোনো ত্রুটি করেন নি । পরিশেষে সিয়াও কেন ছিং হোংকে ধষর্ণ করে , ছিং হোং আত্মহত্যা করতে চেয়েছিল , সিয়াও কেনকে মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত করা হয় ।

    এই ছবি দেখে দশর্করা বিষন্ন হয়ে পড়েন । তখন চীন রুদ্ধদ্বার সমাজ থেকে ধীরে ধীরে উন্মুক্ত হচ্ছে । ওয়াং সিয়াও সুয়াইয়ের পরিচালিত ছবিগুলোতে সমাজের পরিবতর্নের সময় নাগরিকদের মনের বিরোধ , দ্বন্দ্ব ও অসহায় অবস্থা জীবন্তভাবে প্রতিফলিত হয়েছে । এই ছবির গতি মন্থর । চরিত্রের মানসিক অবস্থা বণর্নার জন্য তিনি সাফল্যের সঙ্গে গত শতাব্দীর সত্তর ও আশির দশকের চীনা নাগরিকদের জীবন যাপনের পরিবেশ সৃষ্টি করেছেন । যেমন তখনকার লোকেরা বেতারে প্রচারিত সঙ্গীতের তালে তালে একসঙ্গে ব্যায়াম করেন , খোলা মাঠে বসে ছায়াছবি দেখেন , রঙ্গীন চেক কাটা কাপড়ের শার্ট ও বেল বটম পরেন আর জ্বালানী হিসেবে নিজে কয়লার গুড়া দিয়ে কয়লা গুল তৈরী করেন , এই ছবিতে এই সব দৃশ্য দর্শকরা দেখতে পান । এই সব দৃশ্য চীনের ৩৫ উর্ধ্ব বয়সের দশর্কদের মনে সেই আমলের জীবন স্মরণ করিয়ে দেয় । ছায়াছবি ' ছিং হোং ' সম্পর্কে ওয়াং সিয়াও সুয়াই বলেছেন , এই ধরনের একটি ছবি পরিচালনা করা আমার অনেক বছরের স্বপ্ন । এর জন্য আমি অনেক বছর প্রস্তুতি নিয়েছি । বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হওয়ার সময় থেকেই আমি কুই ইয়ানের পটভুমিতে একটি ছবি তৈরী করতে চাই , এটা আমার জীবনের একটি অভিজ্ঞতা ।

    ওয়াং সিয়াও সুয়াইয়ের বয়স ৩৯ বছর । তার জন্মের দুই মাস পরই বাবা মার সঙ্গে সাংহাই থেকে কুইচৌ গেলেন । তিনি সেখানে ১৩ বছর ছিলেন । ছোট বেলা থেকেই ওয়াং সিয়াও সুয়াই ছবি আঁকতে পছন্দ করেন । ১৯৮৫ সালে তিনি পরীক্ষার মাধ্যমে পেইচিং ফিল্ম ইন্সটিটিউটের পরিচালক বিভাগে ভর্তি হন । চীনে তথাকথিত সাংস্কৃতিক বিপ্লবের দরুণ চীনে ছায়াছবি তৈরীর কাজ বন্ধ ছিল । সেই সময় এই কাজ দীর্ঘ দশ বছর বন্ধ থাকার পর মাত্র আবার শুরু হয়েছে । সেই সময় চীনের তৈরী ' একজন ও আটজন ' ও ' হলুদ মাটি ' ইত্যাদি শ্রেষ্ঠ ছবিগুলো দেশবিদেশের চলচ্চিত্র মহল ও দশর্কদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে । ফিল্ম ইন্সটিটিউটে অধ্যয়নকালে ওয়াং সিয়াও সুয়াই চীনের ও বিদেশের প্রচুরশ্রেষ্ঠ ছবি দেখেছেন ।

    ১৯৯৩ সালে ওয়াং সিয়াও সুয়াই তার প্রথম ছায়াছবি পরিচালনা করেছেন ।' শীত ও বসন্তের দিনগুলো ' নামে এই ছবিতে প্রেমে পড়া দুজন চিত্রশিল্পীর কাহিনী চিত্রিত হয়েছে । এই দুজন চিত্রশিল্পী দৈনন্দিন জীবনে ধাপে ধাপে নিজেদের উত্সাহ- উদ্দীপনা হারান । শেষে নারী চিত্রশিল্পী বিদেশে গিয়ে অন্য একজনকে বিয়ে করেন আর নায়ক বাস্তব জীবনের নিঃসঙ্গ অবস্থা সহ্য করতে না পেরে মানসিক রোগে আক্রান্ত হন । যুক্তরাজ্যের বি বি সি এই ছবিকে পৃথিবীর এক শ'টি শ্রেষ্ঠতম ছবির অন্তর্ভুক্ত করেছে । এই ছবি চীনের চলচ্চিত্র কর্মীদের অহংকার বলা যায় । এর পরবর্তীকালে ওয়াং সিয়াও সুয়াই ' অতি শীত ' , ' বহনকারী পোল ও মেয়ে ' , ' স্বপ্ন দেখা গ্রাম ' আর ' সতের বছর বয়সীর সাইকেল ' নামে চারটি ছায়াছবি পরিচালনা করেন । এই সব ছবিতে তিনি চীনের সংস্কার অভিযানে সাধারণ চীনা অধিবাসীর জীবন ও সুখ দুঃখ প্রকাশ করেছেন । তিনি তার পরিচালিত ছবিতে চরিত্রের মানসিক অবস্থা চিত্রিত করেছেন এবং জীবনের প্রতি তাদের অনুভূতি ও ভালোবাসা প্রকাশের চেষ্টা করেছেন । তার এই চেষ্টা দেশবিদেশের সহকর্মীদের স্বীকৃতি পেয়েছে । তার পরিচালিত ' বহনকারী পোল ও মেয়ে ' নামক ছবিটি ১৯৯৮ সালের কান চলচ্চিত্র উত্সবে অংশ নিয়েছে । ' সতের বছর বয়সীর সাইকেল ' ছবিটি ৫১ তম বার্লিন চলচ্চিত্র উত্সবের রৌপ্য ভল্লুক পুরস্কার পেয়েছে ।

    ওয়াং সিয়াও সুয়াই একজন স্বাধীন চলচ্চিত্র পরিচালক । তিনি কোনো চলচ্চিত্র স্টুডিওয়ের অধীনে নন । এই ধরনের চলচ্চিত্র পরিচালক চীনে খুব কম। তাকে নিজের জোগাড় করা অর্থ দিয়ে ছায়াছবি তৈরী করতে হয় । এটা সহজ ব্যাপার নয় , এর জন্যযথেষ্ট সাহস লাগে । গত দশ-বারো বছরে ওয়াং সিয়াও সুয়াই তার ছায়াছবিতে চরিত্রের জীবন বণর্নার মাধ্যমে নিজের মনোভাব প্রকাশের চেষ্টা করেছেন । দশর্কদের মূল্যায়নের চেয়ে তিনি নিজের মনোভাব প্রকাশকে বেশী গুরুত্ব দেন । তিনি বলেছেন , ছায়াছবি নিমার্ণ ও পরিচালনার মাধ্যমে বতর্মান সমাজের মূল্যবোধ ও নাগরিকদের মানসিক অনুভূতি প্রকাশ করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ । চীনের চলচ্চিত্র শিল্প এক শ' বছর পথ অতিক্রম করেছে । আজ আমরা যখন এই এক শ' বছরের ছবির মূল্যায়ন করি , আমরা আবিষ্কার করেছি অনেক ছবি ইতিমধ্যে আমাদের মানসিক সম্পদে পরিণত হয়েছে । নাগরিকরা ছায়াছবি উপভোগ করার মাধ্যমে চীনের সংস্কৃতি সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারেন । তাই আমি ছায়াছবি তৈরী থেকে লাভ পাওয়ার চাইতে বতর্মান সমাজের মূল্যবোধ ও নাগরিকদের মানসিক অবস্থা প্রকাশকে বেশী গুরুত্বপূর্ণ মনে করি ।

    যদিও চীনে নিজের উদ্যোগে ছায়াছবি তৈরী ও পরিচালনা সহজ নয় , তার পরিচালিত বেশ কয়েকটি ছবি প্রচারের অনুমতিও পায় নি । কিন্তু ওয়াং সিয়াও সুয়াই হতাশ হন নি । তিনি বলেছেন , তিনি অব্যাহতভাবে তার ছবি তৈরী ও পরিচালনার কাজ চালিয়ে যাবেন এবং তার অনুরাগী দর্শকদের জন্য আরো ভালো ছবি তৈরী করবেন ।