সুপ্রিয় শ্রোতাবন্ধুরা, আপনারা এখন শুনছেন বিশেষ অনুষ্ঠান সুরের ভুবন। আমি লিলি। সুদূর পেইচিং থেকে আপনাদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। আজকের অনুষ্ঠানে আমি চীনের একজন বিখ্যাত গায়ক ওয়াং লুওপিন এবং তঁর গানগুলো সম্বন্ধে আপনাদের কিছু বলবো।
প্রিয় শ্রোতাবন্ধুরা, আপনারা এখন যে গান শুনবেন তার নাম হচ্ছে " সেই সুদূর জায়গায়"। ওয়াং লুওপিন চীনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের সিনচিয়াংয়ের লোকসঙ্গীত অনুসারে এই গান রচনা করেছেন। বহু বছর ধরে এই গান চীনের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের লোকসঙ্গীত হিসেবে চীনে প্রচলিত ছিল। সেই ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত এই গান " বিংশ শতাব্দীতে চীনা গায়কদের আদর্শ গানের" তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তখন ওয়াং লুওপিনের নাম চীনাদের মধ্যে সুপরিচিত হয়ে উঠে। বলা যায়, " সেই সুদূর জায়গা" নামে এই গান হচ্ছে প্রেমের প্রতি ওয়াং লুওপিনের প্রশংসার গান। গানে বলা হয়েছে:
সেই সুদূর জায়গায় একজন সুন্দর মেয়ে আছে,
তাঁর মৃদু লাল মুখ লাল সূর্যের মত।
তাঁর প্রাণবন্ত ও হৃদয় মাতানো চোখ রাতের উজ্জ্বল চাঁদের মত।
আমি একটি ছোট মেষে পরিণত করতে চাই, তাঁর পাশে থাকতে চাই। আচ্ছা, চলুন, গানটি শোনা যাক।
১৯১৩ সালে ওয়াং লুওপিন পেইচিংয়ে জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলা থেকে তিনি পশ্চিমা সঙ্গীত শেখেন এবং ইউরোপে গিয়ে লেখাপড়া করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ১৯৩৭ সালে পশ্চিম চীনের নিংসিয়া পাহাড়ী অঞ্চলের একটি মোটেলের নারী মালিকের কাছ থেকে তিনি প্রথমবারের মতো " ফুল" নামে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের লোকসঙ্গীত শুনেন। এতে সঙ্গীত সম্বন্ধে ওয়াং লুওপিনের মনোভাব ও জীবনের পথ পুরোপুরিভাবে পরিবর্তিত হয়। উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলের লোক সংগীতে ওয়াং লুওপিন গভীরভাবে মুগ্ধ হন এবং তার পর থেকেই তিনি এই লোকসঙ্গীতের সাগরে ঝাঁপিয়ে পড়েন।
ওয়াং লুওপিন চীনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে অর্ধশতাব্দী ধরে দিন কাটিয়েছেন এবং সেখানকার বিভিন্ন উপজাতির সাত শ'রও বেশি গান সংগ্রহ, সংশোধন ও রচনা করেছেন। তাঁর দ্বারা পুনর্লিখিত হওয়ার পর অনেক গান ব্যাপক পর্যায়ে প্রচলিত হয়েছে। এখন আমরা একসাথে তাঁর সংশোধিত ছিহাই অঞ্চলের একটি লোকসঙ্গীত শনবো। গানের নাম" ফুল এবং যুবক"। এই গানের আরেকটি নাম হচ্ছে চার ঋতুর গান। গানে চার ঋতুর দৃশ্য বর্ণনা করার মাধ্যমে প্রেমের প্রতি যুবতীদের নিবেদিত মনোভাব প্রকাশ পেয়েছে। আচ্ছা, বন্ধুরা, এখন গান শুনবো আমরা।
প্রিয় বন্ধুরা, আপনারা যে গান শুনবেন তা হচ্ছে ওয়াং লুওপিনের দ্বারা সিনচিয়াংয়ের লোকসঙ্গীত অনুযায়ী সংশোধন করা হয়। তার নাম হচ্ছে " অর্ধেক চাঁদ উঠছে"। গানের সুর যেমন নমনীয়, তেমনি তেজীয়ান। তা হচ্ছে কবিত্বময় ও ছবির মর্মসম্পন্ন একটি প্রেমের গান। আচ্ছা, এখন আমরা গানটি উপভোগ করবো।
" তাপান শহরের মেয়ে" নামে একটি গান চীনে খুব বিখ্যাত। চীনে প্রায় সবাই এই গান গাইতে পারেন। ১৯৩৯ সালে একটি প্রীতি সম্মিলনীতে ওয়াং লুওপিন উইগুর জাতির একজন গাড়ি চালকের উইগুর ভাষায় গাওয়া এই গান শুনেছেন। পরে তিনি গানের বিষয় অনুবাদ করার জন্যে তাঁর উইগুর জাতির বন্ধুদের কাছ থেকে সাহায্য প্রার্থনা করেন। তারপর তিনি চীনা ভাষায় " তাপান শহরের মেয়ে" নামক এই গান লিখেন। গানে বলা হয়েছে:
প্রাচীনকাল থেকেই সবাই বলেন, তাপান শহর একটি ভালো জায়গা।
সেখানে দৃশ্য খুব সুন্দর, গরু ও ছাগল মোটা ও সবল।
তাপান শহরের মেয়েরা সুন্দর, ছেলেরাও সুদর্শন।
তারা পরিশ্রম করতে পছন্দ করে তাদের আছে নিপুন হাত, তারা সত্ ও উদার। আচ্ছা, এখন আমি "তাপান শহরের মেয়ে" নামে এই গান শোনাবো আপনাদের।
প্রিয় বন্ধুরা, আজকের অনুষ্ঠানের শেষে আমরা একসাথে সিনচিয়াংয়ের আরেকটি লোকসঙ্গীত শুনবো। এই গানের সুর আনন্দদায়ক, কথাও রসিকতায় পরিপূর্ণ। গানে বিয়ের অনুষ্ঠানে সুন্দর নববধুর প্রতি মানুষের প্রশংসা ব্যক্ত করা হয়। আচ্ছা, এখন গানটি শোনা যাক।
সুপ্রিয় শ্রোতাবন্ধুরা, আজকের অনুষ্ঠান এখানে শেষ হল। আমাদের অনুষ্ঠান সম্পর্কে আপনাদের কোনো মতামত থাকলে দয়া করে জানাবেন। আমি আপনাদের মূল্যবান মতামতের অপক্ষায় আছি। আজকের সুরের ভুবন অনুষ্ঠান শোনার জন্যে অসংখ্য ধন্যবাদ।
|