v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2005-10-11 14:21:48    
জাপানী বাহিনীর পরিত্যক্ত রাসায়নিক অস্ত্র

cri
    চলতি বছর চীনা জনগণের জাপানী আগ্রাসন বিরোধী যুদ্ধে বিজয় লাভের ষাটতম বার্ষিকী এবং বিশ্বের ফ্যাসিবাদ বিরোধী যুদ্ধে বিজয় লাভের ষাটতম বার্ষিকী। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ চলার সময় জাপানী বাহিনী চীনে রসায়নিক যুদ্ধ চালিয়ে চীনা জনগণের জন্য ভয়ংকর দুর্বিপাক সৃষ্টি করেছিল । দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের অবসান ঘটার পর জাপানী বাহিনীর পরিত্যক্ত রাসায়নিক অস্ত্র আজো চীনা জনগণের অপ্রত্যাশিত দুর্যোগের কারণ ।

    ৭৮ বছর বয়সী লি ছিং সিয়াং উত্তর চীনের হোপেই প্রদেশের পেই থুয়ান গ্রামে বাস করেন । ৬৩ বছর আগের এক দিন , তাঁর পরিবারের চার জন সদস্য জাপানী আগ্রাসী বাহিনীর নিক্ষিপ্ত বিষাক্ত গ্যাসে প্রাণ হারিয়েছিলেন । সেই কথা স্মরণ করতেই তাঁর মুখের ভাব গম্ভীর হলো , চোখের দৃষ্টিও ম্লান হলো । তিনি সি আর আইয়ের সংবাদদাতাকে জানিয়েছেন , বসন্তকালের একদিন সকালে গুলির আওয়াজে তিনি ঘুম থেকে জেগে উঠলেন । বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতেই জানা গেল , জাপানী আগ্রাসী বাহিনী তথাকথিত নির্মুলীকরণ অভিযান চালাতে গ্রামে ঢুকেছে । গণ -হত্যা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য অধিকাংশ গ্রামবাসী সুড়ংগে আশ্রয় নিলেন । কিন্তু যেটা কল্পনাতীত শেষে তাই ঘটলো । জাপানী সেনারা বিষাক্ত বোমা ও জ্বলন্ত খড় সুড়ংগে নিক্ষেপ করলো । বিষাক্ত গ্যাসে বহু গ্রামবাসী ছটফট করতে করতে মারা গেলেন ।

    লি ছিং সিয়াং বলেছেন , বিষাক্ত গ্যাস ছড়িয়ে পড়া সুড়ংগে দম নেওয়া কষ্টসাধ্য ছিল । অসহ্য জ্বালায় চোখ মেলার উপায় ছিল না । আমার বড় বোন ও ছোটো ভাইরা কখন যে হারিয়ে গেল আমার খেয়াল ছিল না । আট বছর বয়সী ছোটো বোন হাঁপাতে হাঁপাতে আমাকে বলল , ভাইয়া , নড়বার এতটুকু জোরও আমার নেই । পরে জানা গেল,আমার ছোটো বোন , বড় বোন আর দুটো ছোটো ভাই বিষাক্ত গ্যাসে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা গেছে। জাপানী সৈন্যরা আমার বাড়ির ন'টা ঘরে আগুন লাগিয়ে ভস্মীভুতও করেছে ।

    সেইদিনই জাপানী বাহিনীর চালানো রাসায়নিক যুদ্ধে পেই থুয়ান গ্রামের আটশোরও বেশী অধিবাসীর মৃত্যু হয়েছে ।

    প্রকৃত পক্ষে জাপানী বাহিনী সারা চীন দেশে রাসায়নিক যুদ্ধ চালিয়েছিল । চীনের সমাজ বিজ্ঞান একাডেমীর অধ্যাপক বুপিং দীর্ঘকাল ধরে চীনে জাপানী বাহিনীর চালানো রাসায়নিক যুদ্ধ নিয়ে গবেষণা চালিয়েছেন ।তিনি উল্লেখ করেছেন , এক অসমাপ্ত পরিসংখ্যান অনুযায়ী ১৯৩৯ সাল থেকে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সমাপ্তি পর্যন্ত জাপানী জাহিনী চীনে বিশ হাজার বার রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করেছিল । কিন্তু যুদ্ধোত্তরকালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অসাধারণ প্রশ্রয়ের কারণে সেই সব নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞের জন্য জাপানী অপরাধীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয় নি । এই জন্য অধ্যাপক বু পিং তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন , চীনের যারা জাপানী বাহিনীর রাসায়নিক যুদ্ধের শিকার হয়েছেন , তাঁদের বেদনা অবর্ণনীয় ।জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অপরাধীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করার সুযোগ মিলে নি তাঁদের ।

    দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের অবসান ঘটার পরও চীনা জনগণ জাপানী বাহিনীর রাসায়নিক অস্ত্রের হুমকি থেকে মুক্তি পান নি । ১৯৭৪ সালে উত্তর পূর্ব চীনের হেই লং জিয়াং প্রদেশের একটি নদীতে শ্রমিক লি ছেং ও তাঁর সহকর্মীরা নদীর তলায় জমা পলিমাটি তুলে নেওয়ার কাজ করছিলেন ।সহসা পাম্প অকেজো হয়ে গেল।

    লি ছেং বলেছেন , বিকট শব্দ শুনে বোঝা যায় ,আমাদের পাম্পের যান্ত্রিক গোলযোগ হয়েছে । পানির নীচ থেকে পাম্প তুলতেই নাকে এল বিশ্রী দুর্গন্ধ । পাম্পের ঢাকনিতে হাত বুলাতেই আমার হাতে কালো তরল দ্রব্য স্পর্শ করলাম । কিছুক্ষন পর আমার বমি হলো , চোখ থেকে পানি টপটপ করে পড়তে লাগল , মাথাও ঘুরতে লাগল ।

    হাসপাতালে গিয়ে পরীক্ষা করে জানা গেল , লি ছেংয়ের হাতে যে তরল দ্রব্য লেগেছে তা জাপানী বাহিনীর পরিত্যক্ত এক বোমা থেকে নি:সৃত মাস্টার্ড গ্যাস। লি ছেংয়ের মাথা,বাহু,ঊরুদেশে কিছু দিন পর পর ছোটো বড় যে অনেক ফোস্কা দেখা দেয় তা হলুদ পুঁজে পরিপূর্ণ । চিকিত্সার জন্য তাঁকে বছরের পর বছর হাসপাতালে থাকতে হয়েছে ।

    এই প্রসঙ্গে অধ্যাপক বু পিং বলেছেন , আত্মসমর্পনের প্রাক্কালে রাসায়নিক যুদ্ধ চালানোর অপরাধ লুকানোর জন্য জাপান প্রচুর রাসায়নিক অস্ত্র ফেলে দিয়েছে বা মাটির নীচে পুঁতেছে । যুদ্ধের পরে অনেক বছরে জাপান সরকার প্রকাশ্যে রাসায়নিক অস্ত্র তৈরী ও যেখানে সেখানে ফেলে দেওয়ার কথা স্বীকার করে নি।১৯৯১ সালে বাস্তব সত্য ও আন্তর্জাতিক জনমতের চাপে জাপান সরকার বাধ্য হয়ে রাসায়নিক অস্ত্রের সমস্যা স্বীকার করেছে ।

    জাপানী বাহিনীর পরিত্যক্ত বিষাক্ত বোমা চীনা জনগণের জীবনের প্রচ্ছন্ন বিপদে পরিণত হয়েছে । ২০০৩ সালের ৪ আগষ্ট হেই লং জিয়াং প্রদেশের ছিছিহার শহরের একটি কর্মস্থলে মাটি কাটার সময় জাপানী হানাদার বাহিনীর পরিত্যক্ত পাঁচটি ধাতব কলসী আবিস্কৃত হয় । ধাতব কলসী থেকে নি:সৃত মাসটার্ড গ্যাসে ৪৪জন শ্রমিক আহত হন । তাঁদের একজন অবশেষে মারা যান । চীন সরকার এই নিয়ে একাধিকবার জাপান সরকারের কাছে কঠোর মনোভাব প্রকাশ করেন । জাপান সরকার অবশেষে আহত শ্রমিকদের জন্য ক্ষতিপূরণ তিরিশ কোটি জাপানী ইউয়ান দেয়।

    ওয়াং ছেন সেই ৪৪জন আহত শ্রমিকের মধ্যে একজন । তিনি সি আর আইয়ের সংবাদদাতাকে জানিয়েছেন ,শ্বাস নিতে এখনো তাঁর কষ্ট হয় । তাঁর ওজন কমেছে দশ কিলোগ্রাম । ক্ষতিপূরণ বাবদে কিছু টাকা পাওয়া গেলেও নিজের ভবিষ্যত নিয়ে তিনি একেবারে হতাশ হয়েছেন।

    তিনি বলেছেন , ক্ষতিপূরণের টাকা পেয়েও আমার মন প্রসন্ন নয় । চিকিত্সা করাতে মাঝেমাঝে আমাকে হাসপাতালে যেতে হয় , বিষাক্ত গ্যাসের কালো ছায়া এখনো আমার হৃদয়-আকাশ থেকে মিলিয়ে যায় নি ।

    একটি পরিসংখ্যান অনুযায়ী চীনের দু হাজারেরও বেশী নাগরিক জাপানী বাহিনীর পরিত্যক্ত অস্ত্রের চোটে জখম হয়েছেন । মাদাম নিউ হাই ইং তাদের একজন। তিনি সি আর আইয়ের সংবাদদাতাকে জানিয়েছেন , তাঁর বাসনা : জাপানী বাহিনীর পরিত্যক্ত রাসায়নিক অস্ত্রের চীনা শিকাররা যে দারুণ কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন জাপানীরা যেন তা জানতে পারেন ।তিনি বলেছেন , তিনি আশা করেন , জাপান সরকার যথাশীঘ্রই জাপানী বাহিনীর পরিত্যক্ত রাসায়নিক অস্ত্র ধ্বংস করার ব্যবস্থা নেবে, যাতে চীনা জনসাধারণ নিশ্চিন্তে জীবন যাপন করতে পারেন ।