v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2005-10-10 20:16:46    
বিশ্বে বৃহত্তম চাইনিজ সার্চ ওয়েব সাইটের প্রধান কর্মকর্তা লি ইয়েনহোং

cri
    চলতি বছরের আগস্টের এক দিন ৩৭ বছরের একজন চীনা শিল্পোদ্যোক্তা যুক্তরাষ্ট্রের নাসডাক স্টক এক্সচেঞ্জে সেদিনকার সবচেয়ে ব্যস্ততার সময় আগমনী ঘণ্টা বাজিয়ে দিলেন । কারণ সেদিন ছিলো তাঁর পরিচালিত শিল্পপ্রতিষ্ঠান--'পাইতু' নামক চীনা নেটওয়ার্ক প্রযুক্তি কোম্পানির শেয়ার নাসডাক স্টক এক্সচেঞ্জে বিক্রীর জন্য দেয়ার প্রথম দিন । সেই দিনেই 'পাইতু' কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়েছে ৩৫০ শতাংশেরও বেশি, তাতে ১০.৯ কোটি মার্কিন ডলার পুঁজি সংগ্রহ করা হয়েছে । এটা বিদেশে চীনা নেটওয়ার্ক কোম্পানির পুঁজি সংগ্রহের এক নতুন রেকর্ড। চীনা শিল্পোদ্যোক্তার নাম লি ইয়েনহোং। তিনি বিশ্বের বৃহত্তম চাইনিজ সার্চ ওয়েবসাইট--- 'পাইতু' নেটওয়ার্ক প্রযুক্তি কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা।

    ১৯৮৭ সালে ১৯ বছর বয়সে লি ইয়েনহোং পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং তথ্য ব্যবস্থাপনায় পড়ালেখা করেন। ১৯৯১ সালে তিনি উচ্চতর শিক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে যান সেখানে তিনি সাফল্যের সঙ্গে ডক্টরেট ডিগ্রীর যোগ্যতা পরীক্ষা পাস করেন এবং থিসিস রচনা প্রায় সম্পন্ন করেছেন --এমন সময়ে তিনি হঠাত্ ডক্টরেট কোর্স ত্যাগ করেন। তার কারণ প্রসঙ্গে লি ইয়েনহোং বলেছেন, "যুক্তরাষ্ট্রে আড়াই বছর পড়ার পর আমি লক্ষ্য করেছি একাডেমিক গবেষণা আমার পছন্দের কাজ নয় ,বরং যথাশীঘ্র বাস্তব কাজ শুরু করার সিদ্ধান্ত নিলাম। গুরুগম্ভীর তত্ত্ব নয়, বরং প্রযুক্তি জনপ্রিয় করাই আমার পছন্দের কাজ, যাতে তা ক্রমেই বেশি বেশি মানুষের জীবনের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।"

    অনেকের ধারণা, তাড়াতাড়ি বাস্তব কাজ শুরু করার এই সিদ্ধান্তই লি ইয়েনহোংয়ের "পাইতু" কোম্পানি প্রতিষ্ঠা এবং সাফল্যের মূল কারণ। কারণ সেই সময় থেকেই তিনি সার্চ ইঞ্জিন শিল্পের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। প্রথম তিন বছরের বেশি সময় তিনি ডৌ জোন্স কোম্পানিতে ব্যাংকিং তথ্য সংগ্রহ সিস্টেম উন্নয়নের কাজ করেন। তাঁর এই সিস্টেম আজ পর্যন্তও ওয়ালস্ট্রীটের বড় বড় কোম্পানির ওয়েব সাইটে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয় । তা'ছাড়া তিনি ওয়েব পেজের গুণগত মান এবং সার্চ করার মধ্যকার সম্পর্ক নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যে সাফল্য অর্জন করেছেন, তা যুক্তরাষ্ট্রে পেটেণ্ট পেয়েছে। তার চমত্কার প্রযুক্তি নিয়ে লি ইয়েনহোং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিখ্যাত সার্চ ইঞ্জিন সরবরাহকারী ইনফোসীব কোম্পানিতে যোগ দিতে পেরেছেন।

    যুক্তরাষ্ট্রে পর পর দুটো বড় কোম্পানিতে চাকরি করার অভিজ্ঞতা পেয়ে লি ইয়েনহোং স্থিতিশীল চাকরি এবং উচ্চ বেতনের নিশ্চয়তা পেলেন। তিনি তাতে আত্মতৃপ্ত হন নি , বরং ২০০০ সালের জানুয়ারিতে তিনি বন্ধুদের সঙ্গে একত্রে চীনে ফিরে এলেন এবং ১২ লাখ মার্কিন ডলার পুঁজি বিনিয়োগ করে আজকের 'পাইতু' কোম্পানি প্রতিষ্ঠার ঝুঁকি নিলেন । লি ইয়েনহোং এর কারণ ব্যাখ্যা করে বলেছেন, " যুক্তরাষ্ট্রে ছয় বছর কাজ করার সময়ে আমি ক্রমেই সচেতন হয়েছি , শুধু শুধু প্রযুক্তি দিয়ে এই দুনিয়া পরিবর্তন করার সদিচ্ছা বাস্তবায়ন করা যায় না, অনেক সময় প্রযুক্তির প্রয়োগ বাজারের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, তা বাণিজ্যিক নীতির ওপর নির্ভর করে। আমি যে কোম্পানিতে চাকরি করতাম , সেই সময়ে কোম্পানিটি ব্যবসার বেশ কিছু ভাল সুযোগ হারিয়ে ফেলে, সেজন্যই আমি নিজে কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করার সিদ্ধান্ত নিলাম।"

    লি ইয়েনহোং লক্ষ্য করলেন, চীনে নেটওয়ার্কের বিরাট বাজার আছে । সেই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে ইণ্টার্নেটের ব্যবহারের হার ৭০ শতাংশ , পক্ষান্তরে চীনে এই হার ছিল শুধু ৮ শতাংশ। এ ব্যাপারে চীনের বাজারের সম্ভাবনা খুবই বিরাট। তা'ছাড়া চীনা ভাষা ও লিপি সম্পর্কে লি ইয়েনহোংয়ের জ্ঞান মার্কিন প্রকৌশলীদের চেয়ে ঢের বেশি । তাতে 'পাইতু' কোম্পানি পরিচালনার ব্যাপারে তাঁর অনেক সুবিধা হয়।

    কোম্পানিটির কর্মীদের চোখে, লি ইয়েনহোং কাজের ব্যাপারে কড়া হলেও খুব মিশুক প্রকৃতির মানুষ । পাইতু কোম্পানির প্রযুক্তি- ম্যানেজার মাদাম ওয়াং মেংছিউ বলেছেন , "তিনি যুক্তি দিয়েই আমাদের বুঝিয়ে দিতে চেষ্টা করেন, জবরদস্তি করে কাজ করতে হুকুম দেন না। সমস্যা আলোচনার সময়ে আমরা ভাল যুক্তি দেখালে তাঁকেও সহজেই রাজী করতে পারি ।"

    জানা গেছে এখন চীনে চীনা ভাষায় সার্চ করার ক্ষমতা-সম্পন্ন সকল ওয়েবসাইটের মধ্যে পাইতু কোম্পানি ৮০ শতাংশেরও বেশি প্রযুক্তিগত সমর্থন যুগিয়ে দেয়। অনেকের ধারণা , এটা এক স্থিতিশীল আয়-সম্পন্ন ব্যবসা উন্নয়নের পথ। কিন্তু লি ইয়েনহোং ২০০১ সালে তাঁর কোম্পানি একাই পেশাদার সার্চ ওয়েবসাইট চালানোর নতুন ধাঁচ অবলম্বনের প্রস্তাব করলেন। তাতে কোম্পানির ভেতরে তুমুল বিতর্ক হলো । কেউই পুরোপুরি তাঁর প্রস্তাবের প্রতি সমর্থন জানালেন না। পাতুই কোম্পানির প্রধান প্রযুক্তিবিদ কুও ছেং বলেছেন, " পাইতু কোম্পানি প্রতিষ্ঠার শুরুতে তার ব্যবসার ধাঁচ ছিল নিজেই সার্চ ইঞ্জিন চালানো এবং পোর্টাল সাইটগুলোর জন্য পরিসেবা সরবরাহ করা, অর্থাত্ পৃষ্ঠপোষকের ভূমিকা পালন করা । পাইতু কোম্পানি এই ধাঁচ অনুসারেই ব্যবসা চালাতো । তখন তাঁর ওপর প্রচণ্ড চাপ আসে কোম্পানির ভেতর থেকে । ডিরেক্টর্স বোর্ড-সহ কেউই খেয়াল করতে পারেন নি যে ,এই ধাঁচ আর ইণ্টার্নেট উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হতে পারবে না।"

    তবে লি ইয়েনহোং তাঁর স্বাভাবিক প্রকৃতি পরিবর্তন করে নিজের প্রস্তাবে জিদ ধরে থাকলেন। তিনি মনে করেন, শুধু পোর্টাল সাইটগুলোর জন্য সার্চ -প্রযুক্তি সরবরাহ করলে কোম্পানির ব্যবসা আরও বাড়ানো সম্ভব হবে না । তাই তিনি নানা উপায়ে সবাইকে বুঝিয়েসুজিয়ে রাজী করলেন । তিনি সংবাদদাতাকে জানিয়েছেন : " আমি তাঁদেরকে বলেছি, অবশ্যই সামনের দিকে তাকাতে হবে, শুধু বর্তমান বা অতীতের অবস্থা দেখলে কোনো সম্ভাব্য সংকট ধরতে পারবেন না , কিন্তু সামনের দিকে তাকালে আপনি ধরতে পারবেন ,এইভাবে চললে কোম্পানির উন্নয়নের সম্ভাবনা থাকবে না এবং এই কোম্পানির আদৌ কোনোআশা থাকবে না"

    তাঁর এই দৃঢ় সিদ্ধান্তের কল্যাণে আজ পাইতু কোম্পানির হয়েছে বিশ্বের বৃহত্তম চাইনিজ ওয়েব-পেজ লাইব্রেরি, তাতে প্রতিদিন শতাধিক দেশের ১০ কোটি বার 'সার্চ আবেদন' মেটানো যায়। ভবিষ্যতে তিনি চাইনিজ সার্চ ইঞ্জিন উন্নয়ন ও প্রয়োগের ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করে তাঁর কোম্পানি চালাবেন , এমন-কি বেশি বেশি ভাষায় সার্চ পরিসেবা সরবরাহ করবেন।