v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2005-10-07 19:53:30    
বিশেষ-শ্রেষ্ঠ শিক্ষিকা হো মাওচেন

cri
    চীনাদের মতে শিক্ষকহচ্ছেন মানবজাতির আত্মার নির্মাতা,চীনদেশে শিক্ষকরা ব্যাপকভাবে সম্মানিত হন ।

    বিশেষ-শ্রেষ্ঠ শিক্ষিকা হো মাওচেনের বয়স ৮০-রও বেশি । ৬০ বছর আগে তিনি পেইচিং শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয়ের গনিতশাস্ত্র ও পদার্থবিদ্যা বিভাগ থেকে স্নাতক হন , স্নাতক হওয়ার সময়ে তার বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার সুযোগ হয়েছিল , কিন্তু তিনি ভাল করে জানেন যে ,প্রাথমিক স্কুল বাচ্চাদের দীক্ষাদানের প্রথম বিদ্যাপীঠ , ভিত্তি মজবুত হলে তা ছেলেমেয়েদের পরবর্তীকালের পড়াশুনা আর কাজের অনুকূল হবে । তিনি শিক্ষকের কাজ পছন্দ করেন , তিনি বাচ্চাদের ভালবাসেন ,তাই তিনি বারবার প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষিকা হওয়ার আবেদন জানান । তার অনুরোধে বিশ্ববিদ্যালয় তাকে পেইচিং ২ নং পরীক্ষামূলকপ্রাথমিক স্কুলে পাঠায় ,স্কুলটিতে তিনি প্রায় ৬০ বছর ধরে শিক্ষক হিসেবে কাজ করে আসছেন । ১৯৫৬ সালে তার অসাধারনের কাজের জন্যে তিনি গোটা দেশের প্রথম কিস্তির বিশেষ-শ্রেষ্ঠ শিক্ষিকা নির্বাচিতহন । পরে অনেক ইউনিট তাকে যারযার ইউনিটে আনার চেষ্টা করে , বাচ্চাদের বিদায় দিতে চান না বলে তিনি কথাও যাননি, বরং মনেপ্রাণে স্কুলটিতে শিক্ষকের কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েন ।এ সম্পর্কে তিনি বলেছেন, আমি জানি ,বাচ্চারা মাতৃভূমির ফুল , বাচ্চারা মাতৃভূমির ভবিষ্যতের স্থপতি , মাতৃভূমির শিক্ষাকে ভালবাসার মতো আমি আমার বাচ্চাদের ভালবাসব ।আমার শিক্ষিকার জীবন থেকে আমি বুঝেছি শিক্ষকের কাজ যেমন গৌরবের, তেমনি কঠিন আবার সুখের ।

    কাজের প্রয়োজনেশিক্ষিকা হো গনিত বিদ্যা শেখানো থেকে চীনা ভাষা শেখানোর কাজ শুরু করেন ।তিনি জানেন , আগ্রহ বাচ্চাদের উত্তম শিক্ষক, বাচ্চারা গল্প শুনতে,শিশুতোষ-কবিতা আবৃতি করতে পছন্দ করে । শিশুদের এই বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী ধাঁধার মধ্য দিয়ে তিনি বাচ্চাদের চীনা অক্ষর শিখান । তাছাড়া ,শিক্ষিকা হো ক্লাসের বাইরের সময়ে কিছু রসপূর্ণ খেলার মধ্যে বাচ্চাদের কবিতা রচনা করতে ও প্রবাদ শিখাতেন ।এভাবে যে অক্ষর ,প্রবাদ ইত্যাদি জ্ঞান শেখে তা বাচ্চারা কোনদিনই ভুলতে পারবে না ।

    ৬০ বছরের শিক্ষকতার জীবনে শিক্ষিকা হো একজন ছাত্রকেও হারাননি , তিনি মনে করেন যে , শিক্ষা দান করা যায় না এমন ছাত্র নেই ।আপনি কি উপায়ে এত চমত্কার সাফল্য অর্জন করেছেন এমন প্রশ্ন অনেক লোক তাকে জিজ্ঞেস করেছেন ।তিনি উত্তর দেন, আমার উত্তর হল এক,ভালবাসা না থাকলে শিক্ষা নেই, দুই ,আগ্রহ না থাকলেও শিক্ষা নেই ।

    এক বসন্ত উত্সবের প্রাক্কালে শিক্ষিকা হো এক টেলিফোন পেলেন। টেলিফোনের ওপারে এক মধ্যবয়সী পুরুষ তাকে মা ডাকছিলেন এবং বারবার বলছিলেন যে, মা, মা, আপনি না থাকলে আজকের আমি থাকতাম না।তার কন্ঠস্বর এবং নাম শুনে শিক্ষিকা হোর চোখ দুটো থেকে আনন্দের অশ্রু বের হল এবং সংগে সংগে তার মনে হ্য ইউয়ুনশান নামে ছাত্রের চেহারা ভেসে ওঠে।হো ইউয়ুনশান তখনকাল স্কুলের সবচেয়ে দুষ্ট ছেলে , বিদেশী অতিথিরা স্কুল পরিদর্শনকরতে আসলে তাকে লুকিয়ে রাখা হত। নইলে সে দুষ্টামি করতে পারত ।তার উপস্থিতিতে শিক্ষকরা ক্লাস নিতে পারতেন না ।তাই তাকে নিয়ে শিক্ষকদের মাথা ব্যথা ।নিরুপায় হয়ে স্কুল তাকে অপরাধ সংশোধনস্কুলে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় । শিক্ষিকা হো খবর শুনে স্কুলের পরিচালকের কাছে হ্য ইউয়ুনশানকে নিজের ক্লাসে আনার অনুরোধ করলেন ।হ্য ইউয়ুনশান ক্লাসে আসার আগে তিনি গোটা ক্লাসের ছাত্রছাত্রিদের সংগে হ্য ইউয়ুনশানকে সাহায্যকরার কৌশল নিয়ে আলাপ-পরামর্শকরলেন । হ্য ইউয়ুনশান ক্লাসের অন্য ছেলেমেয়ের চেয়ে দু বছরের বড়,সে লম্বা এবং স্বাস্থ্যবান । তার এই বৈশিষ্ট্য অনুসারে শিক্ষিকা হো ক্লাস-রুমের আশেপাশে এলাকা পরিস্কার করার গ্রুপ নেতার দায়িত্ব তাকে দিলেন।হ্য ইউয়ুনশান খুব মনোযোগের সংগে এই দায়িত্ব পালন করল এবং অনেকবার প্রশংসা লাভ করল ।এরপর শিক্ষক এবং সহপাঠিদের সংগে হ্য ইউয়ুনশানের সম্পর্কঅনেক নিবিড় হল ।পয়লা জুন শিশু দিবসকালে শিশু অগ্রগামী দলের তত্পরতায় অংশ নিতে হ্য ইউয়ুনশানের প্রবল ইচ্ছা হয় , কিন্তু এ সময়ে সে শিশু অগ্রগামী দলের সদস্য নয় , যাতে হ্য ইউয়ুনশান উন্নতি লাভ করে তার জন্যে শিক্ষিকা হোর প্রচেষ্টায় শিশু অগ্রগামী দল হ্য ইউয়ুনশানকে তত্পরতাটিতে অংশ নেয়ার সুযোগ দিল ।শিশু দিবসে শিশু অগ্রগামী দলের উপদেষ্টা সকল ছাত্রছাত্রীর সামনে হ্য ইউয়ুনশানকে খুব প্রশংসা করলেন ।হ্য ইউয়ুনশানের সত্যিই উন্নতি হল ।সে এক ভাল ছেলে ও ভাল ছাত্রে পরিনত হল । এ সম্পর্কেশিক্ষিকা হো বলেন ,একটি শিশুর পরিবতন ও বড় হওয়ার জন্যেএক প্রক্রিয়ারপ্রয়োজন,বাচ্চাদের সাফল্যের পেছনে শিক্ষকের ধৈর্যভালবাসা আর আস্থা দরকার, শিক্ষককে বাচ্চাদের গুণ ও শ্রেষ্ঠতা উপলব্ধি ও অন্বেষণ করতে হবে ।

    কে হ্য ইউয়ুনশানকে সকলের মাথা ব্যথা থেকে সকলের আদরের ছেলেতে রূপান্তরিত করলেন এ সম্পর্কে শিক্ষিকা হো বলেছেন ,ভালবাসা , ভালবাসা হল রোদ,এই ভালবাসায় শক্ত বরফ গলে যেতে পারে । ভালবাসা হল বসন্তকালের বৃষ্টি , এতে শুষ্ক ঘাসে অঙকুরোদগমহতে পারে । ভালবাসা হল যাদু , এই যাদুর স্পর্শেসবজিনিস সোনায় পরিনত হবে ।

    শিক্ষিকা হো ৬০ বছর ধরে শিক্ষকের কাজ করেছেন , এই ৬০ বছরে তিনি কোনোছাত্রছাত্রীর উপর উত্তেজিত হননি, তিনি একজন ছাত্রছাত্রীকেও শাস্তি দেননি, তিনি কখনো অভিভাবকের কাছে ছাত্রছাত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দেন নি , তিনি একজন ছাত্রছাত্রীকেও হারাননি ।

    শিক্ষিকা হো তার এই ভালবাসা দিয়ে শিক্ষাকে আর ছাত্রছাত্রীদের ভালবাসেন । তার প্রভাবে তার পরিবারের তিন প্রজন্মের আটজন স্বেচ্ছায় শিক্ষক হয়েছেন এবং যারযার কাজে শ্রেষ্ঠ সাফল্য অর্জনকরেছেন । ১৯৯১ সালে তাদের এই শিক্ষক-পরিবার নিখিল চীনের শ্রেষ্ঠ শিক্ষক-পরিবার নির্বাচিতহয় ।তার অবদান আর সাফল্যের জন্যে ৫০ দশকে প্রয়াত চেয়ারম্যান মাও , প্রধানমন্ত্রী চৌ এনলাই , ৯০'র দশকে সাবেক প্রেসিডেন্ট চিয়াং চেমিন, প্রধানমন্ত্রীলিফেং তার সাথে সাক্ষাত করেছেন ।২০০৪ সালের চীনের শিক্ষক দিবসের প্রাক্কালে অর্থাত১০ই সেপ্টেম্বরেরআগে প্রধানমন্ত্রী উয়েন চিয়াপাও তার বাসায় গিয়ে তাকে দেখতে যান এবং তার জন্যে অভিলেখন লিখেন :শিক্ষাই যার ভালবাসা ।

    শিক্ষিকা হো নিজের ৬০ বছরের শিক্ষকের অভিজ্ঞতার সারসংকলন করে গৌরবের সংগে বলেছেন , আজ আমি অনুতাপহীনভাবে বলব যে , শিক্ষকের কাজ কঠিন বটে , কিন্তু কাজটি গৌরব ও সুখেরও ,আমার ছাত্রছাত্রীরা দলে দলে বড় হয়ে দেশের মেরুদন্ড, দক্ষ মানুষে পরিনত হয় দেখে আমি গৌরবান্বিত ।