পূর্বকেনিয়ার ভারত মহা সাগরের উপকূলে সিইয়ু নামে এক জেলে গ্রামে মওয়ামাকা শেরিফ নামে এক মেয়ে বসবাস করে ।সবাই বলে থাকেন যে, তিনি নাকি চীনের মিংরাজবংশের নৌবিজ্ঞানী চেন হোর নেতৃত্বাধীন নৌবহরের নাবিকের বংশধর । স্থানীয় সময় ৩০শে জুন রাতে মওয়ামাকা চীনের সাংহাইগামী বিমানে উঠে চীনে তার উত্স ও পুর্বপুরুষ অন্বেষণ করার জন্যেযাত্রা শুরু করেছেন । রওয়ানা হওয়ার আগে তিনি সি আর আইকে এক সাক্ষাতকার দিয়েছেন ।
ঠিক পঞ্চদশ শতাব্দীতে চীনে মিং রাজবংশ ছিল । একজন বিখ্যাত নৌবিজ্ঞানী হিসেবে চেনহ্য ১৪০৪ সালে এক বিরাট নৌবহর নিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব চীনের চিয়াংসু প্রদেশের থাইছাং থেকে রওয়ানা হয়ে তাদের সপ্তম পারস্য অভিমুখী সমুদ্রযাত্রাশুরু করেন ।দীর্ঘ ২৮বছর ধরে চেনহ্য ও তার নৌবহর আফ্রো-এশিয়ার ত্রিশাধিক দেশ ও অঞ্চলে সফর করেছে । দীর্ঘ ইতিহাসে চেন হ্য-এর পারস্যমুখী সমুদ্রযাত্রাথেকে অসংখ্য মর্মস্পর্শী গল্প ও রহস্যপূর্ণ রূপকথার সৃষ্টি হয় । মওয়ামাকার জীবনের গোপনীয়তা এর অন্যতম ।
মওয়ামাকার বয়স ১৯ বছর । তার মার নাম সিয়ে , এই নাম তাদের অঞ্চলে এক বিশেষ নাম । মওয়ামাকা জানিয়েছেন , ছোটোবেলা থেকেই তিনি জানেন যে , তার পূর্বপুরুষ ছিলেন চীনের মিং রাজবংশের নাবিক ।তিনি বলেছেন, ছোটো বেলায় আমার নানী আমাকে জানিয়েছেন যে , আমরা ৫০০ বছর আগে চীনের মিং রাজবংশের নৌবিজ্ঞানী চেন হ্য-এর সঙ্গে পারস্য অভিমুখে সমুদ্রযাত্রাকারীচীনা নাবিকের বংশধর । নানী এভাবে আমাদের পুর্বপুরুষদের কাহিনী বর্ণনা করেন যে , আমাদের পূর্বরুষদের জাহাজ লামু দ্বীপপুণ্জের নিকটে ডুবে যায় ।সৌভাগ্যক্রমেযারা প্রাণেরক্ষা পেলেন ,তারা তীরে উঠে সেখানে বসবাস শুরু করেন এবং অবশেষে স্থানীয় সমাজে মিশে যান ।
চীনের লিপিবদ্ধ ইতিহাস থেকে জানা যায়,চেন হ্য ও তার নৌবহর একদা মিং রাজবংশের ইয়ুংল্য ১৩ সালে অর্থাত১৪১৫ সালে আজকের কেনিয়ার মালিনদি, মাম্বাসা প্রভৃতি ভারত মহা সাগরের উপকূলীয় শহরে গিয়েছিলেন । এটা চীনাদের পূর্ব-আফ্রিকায় আগমনের সবচেয়ে আগের লিপিবদ্ধ ইতিহাস।মওয়ামাকার সিইয়ু গ্রাম ভারত মহা সাগর-উপকূলের লামু দ্বীপপুন্জেই অবস্থিত । ভারত মহাসাগরের নৌপথে অবস্থিত লামু দ্বীপপুন্জ এমন এক গুরুত্বপূর্ণ জায়গা যে চেন হ্য ও তার নৌবহরকে উপরোল্লেখিত পূর্ব-আফ্রিকার উপকূলীয় শহরে যাওয়ার জন্যে জায়গাটি অতিক্রম করতে হতো।এখানকার জলসীমায় অসংখ্য প্রবাল-প্রাচীর আছে ।লামু দ্বীপপুন্জের স্থানীয় লোককাহিনী অনুযায়ী কয়েকশ' বছর আগে চীনাদের এক জাহাজ নিকট জলসীমায় প্রবাল-প্রাচীরের সঙ্গে ধাক্কা লেগে ডুবে যায় ।যারা প্রাণে রক্ষা পেলেন তারা সর্বপ্রথমে দ্বীপপুন্জের দক্ষিণ প্রান্তের এক গ্রামে উঠেন এবং তার পর তারা পরপর সিইয়ু গ্রামে স্থানান্তরিত হন এবং এপর্যন্ত সেখানে বসবাস করছেন ও বংশবিস্তার করছেন । কিন্তু দুঃখের ব্যাপার এই যে , মওয়ামাকার পুর্বপুরুষ চীনা মানুষ , তা প্রমান করার কোনো লিপিবদ্ধ তথ্য বা সরাসরি পার্থিব প্রমান এখনো পাওয়া যায়নি , কিন্তু মওয়ামাকা নিজের পূর্বপুরুষ চীনা মানুষই বলে দৃঢবিশ্বাসী এবং এজন্যে গৌরব বোধকরেন ।তবে সত্যি মওয়ামাকা ও তার পরিবারপরিজনদের চেহারা দেখতে স্থানীয় কেনিয় মানুষের চোখে ভিন্ন এবং চীনাদের সঙ্গে অনেক মিল আছে যে,তাদের ত্বকের রঙ হাল্কা,চেহারা এশিয়ানের কাছাকাছি । মওয়ামাকার বাড়িতে এখনো চীনের তৈরী একটি সবুজ চীনা মাটির বাটি সংরক্ষিতআছে , এটা যুগযুগ ধরে তার পুর্বপুরুষদের রেখে যাওয়া মূল্যবান জিনিষ । নিজে চীনা মানুষের বংশধর বলে দৃঢবিশ্বাসী মওয়ামাকা হাসিমুখে এ সব কথা আমাদের সংবাদদাতাকে জানিয়েছেন।
আমি গৌরব এবং আনন্দবোধ করি যে , আমি চীনাদের বংশধর ।
চীনদেশে ফিরে গিয়ে নিজের উত্স ও পুর্বপুরুষ অন্বেষণ করা মওয়ামাকার বহু বছরের স্বপ্ন ।আজ মওয়ামাকা চীনের চিয়াংসু প্রদেশের থাইছাং শহরের গণ সরকারের আমন্ত্রণে চেন হ্য-এর পারর্স-মুখী সমুদ্রযাত্রার ৬০০তম বার্ষিকী উদযাপনী অনুষ্ঠানে অংশ নিতে চীনে এসেছেন ।তারপর "চেন হ্য-এর পারস্য-মুখী সমুদ্রযাত্রা" শিরোনামে বিরাটাকারের ধারাবাহিক চলচ্চিত্রের প্রথম অনুষ্ঠানে অংশ নিতে তিনি নানচিং ও পেইচিং শহরেও যাবেন।
তার চীন সফর সম্পর্কে মওয়ামাকা আবেগের সঙ্গে বলেছেন, আমি চীন সফরে যেতে পারি বলে আমি অত্যন্ত আনন্দিত । কারণ আমি জানি আমার পুর্বপুরুষ চীনা । আমি সেখানকার মানুষকে দেখতে চাই ।
জানা গেছে , কেনিয়াস্থ চীনা দূতাবাসের বলিষ্ঠ সমর্থন ও সাহায্যে মওয়ামাকা চীনের শিক্ষামন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেয়ে চীন সরকারের শিক্ষাবৃত্তি নিয়ে চীনের বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করবেন ।তিনি বলেছেন, তিনি চীনের ইতিহাস বিশেষ করে চেন হ্য-এর পারশ্য -মুখী সমুদ্রযাত্রাসম্পর্কিতইতিহাস জানার প্রচেষ্টা করবেন। ইতিহাস ছাড়া মওয়ামাকা চীনের চিকিত্সা ও ওষুধ সম্পর্কে অত্যন্ত আগ্রহী ।মওয়ামাকা জানিয়েছেন যে,সিইয়ু গ্রামে স্ব-ঘোষিত চীনাদের বংশধর এমন কিছু লোক এখনো চীনা ওষুধ দিয়ে চিকিত্সা করছেন । মওয়ামাকা বলেছেন, চীনদেশে পড়াশুনা করতে আমি অত্যন্ত আগ্রহী,আমি নিজের জন্যেএক সুন্দর ও উজ্জ্বল ভবিষ্যত সৃষ্টি করতে চাই।
আসন্ন চীন সফর ও ছাত্রজীবনের জন্যে মওয়ামাকা অনেক প্রস্তুতিমূলক কাজ করেছেন ।সি আর আইকে দেওয়া সাক্ষাতকারের ফাঁকে ফাঁকে মওয়ামাকা চীনা ভাষা শেখার চেষ্টাও করেছেন ।কেমন আছেন ? আবার দেখা হবে । ধন্যবাদ । আমি ।চীন …..
বিশুদ্ধ নয় এমন চীনা ভাষা শুনে সামনের শ্যামবর্ণ তবে প্রাচ্যেরমানুষের মতোচোখ বিশিষ্ট কেনিয়ার মেয়ের দিকে তাকিয়ে আমরা সবাই চীনদেশে গিয়ে তার উত্স ও পুর্বপুরুষ অন্বেষণ করার সুযোগ পাওয়ার জন্যে আনন্দবোধ করি এবং আন্তরিকভাবে তার চীন সফরের সাফল্য কামনা করি ।
|