চার বছর আগে চীন সরকার ও জার্মানী সরকারের যৌথ উদ্যোগে পূর্ব চীনের নানচিং শহরের একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু হয়েছে । সম্প্রতি সি আর আইয়োর সংবাদদাতা সেখানে গিয়ে দেখলেন , একটি ক্লাস রুমে প্রায় তিরিশ জন শিক্ষার্থী কম্পিউটার ব্যবহারের কৌশল শিখছেন ,তাঁদের বয়স ৩০ থেকে ৪০ বছর । এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের পরিচালক জাং ছুংলিন সি আর আর আইয়ের সংবাদদাতাকে জানিয়েছেন : চীন ও জার্মানী সরকারের মধ্যে স্বাক্ষরিত একটি চুক্তি আনুসারে এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে খোলা হয়েছে । নারীদের কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে এটা চীন ও বিদেশের প্রথম দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা প্রকল্প । জার্মানীর সফল অভিজ্ঞতা ব্যবহার করে বেকার নারীদের পেশাগত প্রশিক্ষণ দিয়ে তাঁদের কর্মসংস্থানের পথ সুগম করাই এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র খোলার উদ্দেশ্য।
জানা গেছে , ১৯৯৯ সালে এই প্রকল্প চালু হওয়ার পর নানচিং শহরের বারোটি দৃষ্টান্তমুলক স্থানে নিয়মিতভাবে নতুন ক্ষেত্রে কাজকর্ম করার, নতুন পেশার পরিচয় দেয়ার এবং কর্মসংস্থান অন্বেষণ করার উপদেশ দেয়া হয়, ফলে এক হাজারেরও বেশী বেকার নারী শ্রমিক আবার কাজ পেয়েছেন ।
সাইত্রিশ বছর বয়সী কুও ইয়ো জিন আগে ছিলেন নানচিং শহরের একটি বস্ত্র বয়ন কারখানার শ্রমিক , বছরখানেক আগে তিনি কর্মচ্যুত হন । পছন্দমত চাকরি না পেয়ে তিনি যখন নিজকে বড় অসহায় বোধ করছিলেন,তখন হঠাত খবর পেলেন যে , নানচিং শহরের কর্মসংস্থান অধিদফতর ও জার্মান বিশেষজ্ঞরা যৌথভাবে কর্ম সংস্থানের প্রশিক্ষণ কোর্স চালু করেছে এবং এই প্রশিক্ষণ কোর্সে অংশ নিতে কোনো ফি লাগবে না ।কালবিলম্ব না করে তিনি সেখানি গেলেন । প্রশিক্ষণ কোর্সের শিক্ষার্থী হয়ে তিনি অনেক পেশার জ্ঞান অর্জন করেছেন এবং তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি সঙ্গে সঙ্গে প্রসারিত হয়েছে । তিনি লক্ষ্য করলেন , নানচিংবাসীদের জীবনযাত্রার মান উন্নত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অধিক থেকে অধিকতর সংখ্যক নাগরিক প্রাণী পোষতে শুরু করেছেন । মানুষের মত পোষা প্রাণীকে মাঝেমাঝে চিকিত্সা করাতে হয় । কিন্তু নানচিং শহরে চাহিদার তুলনায় পোষা প্রাণীর চিকিত্সালয় খুবই কম । তাই তিনি তাঁর সঞ্চিত অর্থ দিয়ে বেইথা নামে একটি পোষা প্রাণী চিকিত্সালয় প্রতিষ্ঠিত করলেন । কর্মসংস্থানের পথে তাঁর এই প্রথম পা এগুনো সহজ না হলেও তা থেকে তিনি নতুন অভিজ্ঞা সঞ্চয়ের আনন্দের স্বাদ পেয়েছেন ।
তিনি বলেছেন: নতুন কাজ করতে গিয়ে প্রথমে আমার অনেক বেগ পেতে হয়েছে। আমার সৌভাগ্য এই যে ,প্রশিক্ষণ কোর্সের শিক্ষকরা পোষা প্রাণী চিকিত্সালয়ের স্থান নির্বাচন ,চুক্তি স্বাক্ষর ইত্যাদি নানা বিষয়ে অসুবিধা কাটিয়ে উঠতে আমাকে সাহায্য করেছেন ।
বেইথা পোষা প্রাণী চিকিত্সালয় খোলার পর এক বছর কেটে গেছে ।অনেক শহরবাসীর পোষা বিড়াল ও কুকুর অসুস্থ হলে তাঁর পোষা প্রাণী চিকিত্সালয়ে পাঠানো হয় ।তিনি রোজ খুবই ব্যস্ত এবং তাঁর আয়ও উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে ।
নানচিং গুলুও বিভাগের জন-শক্তি নিয়েগ কেন্দ্র একটি শ্রমজীবী ভাড়া কোম্পানি । এই কোম্পানির জেনারেল ম্যানেজার মি: মেই লেই কোম্পানিটির কার্যপ্রণালী প্রসঙ্গে বলেছেন:আমরা প্রথমে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে শ্রমজীবী ভাড়া চুক্তি স্বাক্ষর করি ,এরপর তাদের প্রয়োজনীয় শ্রমজীবী বেছে বেছে পাঠিয়ে দেই । এখন আমাদের কেন্দ্রের রেজিষ্ট্রেশন করা তিন হাজার শ্রমজীবীর দুই তৃতীয়াংশই কর্মচ্যুত নারী ।
ছত্রিশ বছর বয়সী লি নি হং আগে হিসাব রক্ষক হিসেবে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন । বেকার হওয়ার পর জেনারেল ম্যানেজার মেই লেইয়ের সাহায্যে তিনি নতুন চাকরি পেয়েছেন ।তিনি আনন্দের সঙ্গে সি আএর আইয়ের সংবাদদাতাকে জানিয়েছেন: জন শক্তি নিয়েগ কেন্দ্রের সাহায্যে শুধু আমার নতুন চাকরি যে সহজে পাওয়া গিয়েছে তা নয় ,আমার বৈধ অধিকারও কার্যকরীভাবে সংরক্ষিত হয়েছে ।
জার্মানী সরাকরের সহায়তায় নানচিং শহরের কর্মচ্যুত নারীদের পুনকর্মসংস্থান প্রকল্প যে সার্থকভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে তা সমাজের বিভিন্ন মহলের ভূয়সী প্রশংসা পেয়েছে । নানচিং শহরের গণ সরকার এই প্রকল্পের পরিচালক জার্মানীর ডক্টর মিছায়েলা বাউরকে বেকারদের পুনকর্মসংস্থানের আদর্শ সহয়তাকারীর সম্মানে ভূষিত করেছে ।
নানচিংয়ের কর্মচ্যুত নারীদের পুনকর্মসংস্থানের সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে উত্তর পুর্ব চীনের বেংছি শহরেও অনুরুপ একটি প্রকল্প বাস্তবায়েত হচ্ছে । এই প্রকল্পের কর্মীদের দুটো দল যথাক্রমে জার্মানী ও নানচিং শহরে কর্মচ্যাত নারীদের পুনকর্মসংস্থানের অভিজ্ঞতা শিখছেন । মাদাম উ মিন হুয়া বলেছেন : ভারী শিল্প শহর হিসেবে আমাদের বেংছি শহরে নারী শ্রমজীবীদের চাকরি পাওয়ার সুযোগ অপেক্ষাকৃত কম ।এখানে এসে আমরা বুঝতে পেরেছি যে ,কর্মসংস্থানের পথ সুগম করতে প্রথমে নারীদের চিরাচরিত ধ্যানধারনা পাল্টে দিতে হবে ।বস্তুত: প্রশিক্ষণ নিয়ে কর্মচ্যুত নারীরা ঘরকন্না ও পরিবেবা শিল্পে সহজেই কাজ করার সুযোগ পেতে পারবেন ।
|